মেলা আহসান হাবীব : পৃথিবীর চারদিকে যদি আমরা দৃষ্টি দিই তবে দেখতে পাই বাগানে ফুলের মেলা, গাছে গাছে পাখির মেলা আর আকাশে তারার মেলা। এ হলো প্রকৃতির জগৎ। অন্যদিকে পৃথিবীর শিশু-কিশোরদের রয়েছে একটা আলাদা জগৎ।
আর এটিও একটি মেলার মতো। আকাশের নীলের মধ্যে যে উদারতা রয়েছে, ফুলের মধ্যে যে পবিত্র সুবাস রয়েছে, পাখির গানের মধ্যে যে সুর রয়েছে সবই পেয়েছে শিশু-কিশোররা। প্রতিদিন আকাশ নিঙড়ে যে রোদ ওঠে, সেখান থেকে তারা নেয় জীবনের উত্তাপ, সাত-সাগরের বুক থেকে তারা নেয় ভালোবাসার ঢেউ।
তাই তারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে দেয় নবীন প্রাণের আশার আলো। কচি সবুজ ভাইবোনদের হাসি-খুশির মধ্যে লক্ষ লক্ষ সবুজ মনের স্নেহ-প্রীতির প্রকাশ ঘটেছে, দেশ-কালের সীমানা ভেঙে তারা অন্তরের ভালোবাসা দিয়ে গড়তে চাচ্ছে একটি সুন্দর জগৎ, সাজানো বাগানের মতো সুন্দর পৃথিবী।
মেলা আহসান হাবীব
এ পৃথিবী হবে সকল মানুষের জন্য একটা অভিন্ন পৃথিবী। পৃথিবীর সকল শিশু-কিশোরের ভাষা এক নয়। তবু সব পাখির গানের মধ্যে যেমন একটা সুরের ঐক্য আছে, তেমনি পৃথিবীর শিশু- কিশোরদের মনের ভাষার মধ্যেও একটা মিল আছে। পৃথিবীর সব মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে স্নেহ- ভালোবাসা পূর্ণ একটা সমাজ যদি গড়ে তোলে, তবে এ পৃথিবীর মধ্যে আর কোনো বিবাদ থাকবে না। তখন পৃথিবী হবে একটা দেশ, মানবসমাজ হবে একটা পরিবার। তখন কত সুন্দর হবে এ পৃথিবী!
বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি আহসান হাবীব। তিনি ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে: ‘রাত্রিশেষ’, ‘ছায়াহরিণ’, ‘সারাদুপুর’, ‘আশায় বসতি’ ইত্যাদি। তাঁর লেখা শিশুতোষ গ্রন্থগুলো বেশ জনপ্রিয়। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে কবি আহসান হাবীব ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
মেলা কবিতার শুরু এখানে
ফুলের মেলা পাখির মেলা
আকাশ জুড়ে তারার মেলা
রোজ সকালে রঙের মেলা
সাত সাগরে ঢেউয়ের মেলা।
আর এক মেলা জগৎ জুড়ে
ভাইরা মিলে বোনরা মিলে
রং কুড়িয়ে বেড়ায় তারা
নীল আকাশের অপার নীলে
ফুলের বুকে সুবাস যতো
বুকে-মুখে নেয় মেখে তাই
পাখির কলকণ্ঠ থেকে
সুর তুলে নেয় তারা সবাই।
রাতের পথে পাড়ি যখন,
তারার অবাক দীপ জ্বেলে নেয়।
রোজ সকালের আকাশপথে
আলোর পাখি দেয় ছেড়ে দেয়
সাত সাগরের বুক থেকে নেয়
ঢেউ তুলে নেয় ভালোবাসার।
জগৎ জুড়ে যায় ছড়িয়ে,
যায় ছড়িয়ে আলো আশার।
ভালোবাসার এই যে মেলা
এই যে মেলা ভাই-এর বোনের,
এই যে হাসি এই যে খুশি
এই যে প্রীতি লক্ষ মনের
ভাই-বোনদের কবি সবুজ
আপনি গড়া এই যে মেলা,
এই মেলাতে নিত্য চলে।
আপন মনে একটি খেলা।
সারা বেলাই সেই এক খেলা
গড়বে নতুন একটি বাগান,
অনেক ফুল আর অনেক পাখি
সব পাখিদের আলাদা গান –
তার মাঝেই একটি সুরে
সবারই সুর যায় মিলিয়ে
এক দুনিয়া এক মানুষের
স্বপ্ন তারা যায় বিলিয়ে
মেলা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
১। হেমন্তের এক পড়ন্ত বিকেলে এক বাউল নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন। এক পাশে নদী। নদীতে ভেসে চলেছে রং-বেরঙের পালতোলা নৌকা। ঝাঁকে ঝাঁকে নানা রকমের পাখি উড়ছে। কোনোটি সাদা, কোনোটি কালো। আর এক পাশে ধানখেত। যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। এমন মোহনীয় পরিবেশে বাউল তাঁর একতারায় সুর তোলে-
নানান বরণ গাভীরে ভাই একই বরণ দুধ, জগত ভরমিয়া দেখলাম একই মায়ের পুত।
ক. নীল আকাশে রং কুড়িয়ে বেড়ায় কারা?
খ. ‘গড়বে নতুন একটি বাগান’- কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় ‘মেলা’ কবিতার যে বিষয়বস্তুর মিল পাওয়া যায় তার বর্ণনা দাও।
ঘ. ‘বাউলের এই গানের মর্মকথাই তো মেলা কবিতার মূলভাব’। যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দাও।
◉ আরও দেখুন: সপ্তম শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই থেকে মেলা আহসান হাবীব কবিতাটি আলোচনা করা হয়েছে। এই বইয়ের যে সৃজনশীল প্রশ্নগুলো রয়েছে, তার উত্তরও তোমরা কোর্সটিকায় পেয়ে যাবে। সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধানের জন্য উপরের ‘সৃজনশীল সমাধান’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post