মেলা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : আমরা চারদিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাই বাগানে ফুলের মেলা, গাছে গাছে পাখির মেলা আর আকাশে তারার মেলা, এ হলো প্রকৃতির জগৎ। অন্যদিকে পৃথিবীর শিশু-কিশোরদের রয়েছে একটা আলাদা জগৎ, আরেকটা মেলা। আকাশের নীলের মধ্যে যে উদারতা রয়েছে, ফুলের মধ্যে যে পবিত্র সুবাস রয়েছে, পাখির গানের মধ্যে যে সুর রয়েছে— সবই পেয়েছে শিশু-কিশোররা।
শিশুরা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে দেয় নবীন প্রাণের আশার আলো। কচি সবুজ ভাইবোনদের হাসি-খুশির মধ্যে লক্ষ লক্ষ সবুজ মনের স্নেহ-প্রীতির প্রকাশ ঘটেছে। দেশ-কালের সীমানা ভেঙে তারা অন্তরের ভালোবাসা দিয়ে গড়তে চাচ্ছে একটি সুন্দর জগৎ, সাজানো বাগানের মতো সুন্দর পৃথিবী। পৃথিবীর সব মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে স্নেহ-ভালোবাসাপূর্ণ একটা সমাজ যদি গড়ে তোলে, তবে এ পৃথিবীর মধ্যে আর কোনো বিবাদ থাকবে না। তখন সমগ্র পৃথিবী হবে একটা দেশ, সমগ্র মানবসমাজ হবে একটা পরিবার।
মেলা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
হেমন্তের এক পড়ন্ত বিকেলে এক বাউল নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন। এক পাশে নদী। নদীতে ভেসে চলেছে রং-বেরঙের পালতোলা নৌকা। ঝাঁকে ঝাঁকে নানা রকমের পাখি উড়ছে। কোনোটি সাদা, কোনোটি কালো। আর এক পাশে ধানখেত। যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। এমন মোহনীয় পরিবেশে বাউল তাঁর একতারায় সুর তোলে—
নানান বরণ গাভীরে ভাই একই বরণ দুধ,
জগত ভরমিয়া দেখলাম একই মায়ের পুত।
ক. নীল আকাশে রং কুড়িয়ে বেড়ায় কারা?
খ. ‘গড়বে নতুন একটি বাগান’—কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় ‘মেলা’ কবিতার যে বিষয়বস্তুর মিল পাওয়া যায় তার বর্ণনা দাও।
ঘ. ‘বাউলের এই গানের মর্মকথাই তো মেলা কবিতার মূলভাব’। যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দাও।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভাইরা মিলে, বোনরা মিলে নীল আকাশে রং কুড়িয়ে বেড়ায়।
খ. ‘গড়বে নতুন একটি বাগান’—বলতে কবি এক সুন্দর, সমৃদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখানে ‘বাগান’ রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভালোবাসা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির প্রতীক। নতুন প্রজন্ম পারস্পরিক বন্ধন, মানবিকতা ও আশার আলোয় একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করবে, যেখানে সবাই মিলেমিশে বাস করবে। কবি বোঝাতে চেয়েছেন, ভালোবাসা ও সহযোগিতার মাধ্যমে মানুষ একটি সুসমন্বিত বিশ্ব গড়ে তুলতে পারে, যেখানে সবার স্বপ্ন ও সুর একসূত্রে মিলবে।
গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় ‘মেলা’ কবিতার মূল ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায়, যা প্রকৃতির সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য এবং সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।
উদ্দীপকের বর্ণনায় বাউল নদীর পাড় দিয়ে হাঁটছেন, চারপাশে রঙিন পালতোলা নৌকা, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি, সবুজ ধানখেত—সব মিলিয়ে এক মোহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এই দৃশ্য ‘মেলা’ কবিতার বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন সুরের এবং প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কবিতায় যেমন ফুল, পাখি, আকাশ, সমুদ্রের ঢেউ, আলো ও ভালোবাসার মেলার কথা বলা হয়েছে, তেমনি উদ্দীপকের দৃশ্যেও প্রকৃতির রঙ-বেরঙের অনুপম সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।
এছাড়া, বাউলের গানের মূলভাব ও ‘মেলা’ কবিতার অন্তর্নিহিত বার্তায় মিল রয়েছে। বাউলের গানে বলা হয়েছে, গরুর রঙ আলাদা হলেও দুধের রঙ এক—ঠিক তেমনই পৃথিবীতে মানুষের চেহারা-রঙ ভিন্ন হলেও সবাই একই মানবজাতির অংশ। ‘মেলা’ কবিতাতেও এই ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের বৈচিত্র্যের মাঝে একতার সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে।
সুতরাং, উদ্দীপকের বর্ণনায় ‘মেলা’ কবিতার প্রকৃতির রঙিন মেলা ও বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের ভাবনার প্রতিফলন পাওয়া যায়।
ঘ. ‘বাউলের এই গানের মর্মকথাই তো মেলা কবিতার মূলভাব’—উক্তিটি পুরোপুরি যৌক্তিক। কারণ উভয়ই বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের কথা বলে।
বাউল গানে বলা হয়েছে—‘নানান বরণ গাভীরে ভাই, একই বরণ দুধ, জগত ভরমিয়া দেখলাম, একই মায়ের পুত।’ অর্থাৎ গরুর গায়ের রঙ যেমন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু দুধের রঙ সব সময় এক, তেমনি পৃথিবীর মানুষ চেহারা, ভাষা, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে আলাদা হলেও তারা সবাই একই মানবজাতির অন্তর্ভুক্ত।
‘মেলা’ কবিতাতেও একই ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে। কবি আহসান হাবীব প্রকৃতির নান্দনিক রূপের মধ্যে সৌহার্দ্য, ভালোবাসা ও ঐক্যের মেলবন্ধন খুঁজে পেয়েছেন। ফুল, পাখি, আকাশ, ঢেউ, আলো—সব কিছু যেন একটি বৃহত্তর মিলনের প্রতীক।
এটি স্পষ্টতই বাউল গানের ভাবনার সঙ্গে মিলে যায়। কবিতায় যেমন প্রকৃতির বৈচিত্র্যের মাঝে মানুষের মিলনের কথা বলা হয়েছে, তেমনি বাউল গানের মূল বক্তব্যও একটাই—বৈচিত্র্যের মাঝেও মানুষের আত্মিক ঐক্য বিরাজমান।
সবশেষে বলা যায় যে, বাউলের গান ও ‘মেলা’ কবিতার মূলভাব একই—পৃথিবীতে বৈচিত্র্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত সব মানুষই এক অভিন্ন সত্তা। তাই বলা যায়, বাউলের এই গানের মর্মকথাই ‘মেলা’ কবিতার মূলভাব।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
হামিদ স্যার শিশুদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, আজকের শিশুই দেশের ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুরাই ভবিষ্যতে নানারকম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নেতৃত্ব দিবে। তাই আজকের শিশুকে যোগ্য হয়ে গড়ে ওঠার জন্য সকলকেই সুযোগ দিতে হবে। তারা যেন সুনাগরিক হয়ে দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে পারে, সেই ব্যবস্থাই আমাদেরকে করতে হবে।
ক. আহসান হাবীব কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘লক্ষ মনের প্রীতি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘মেলা’ কবিতার কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে? নিরূপণ কর।
ঘ. উদ্দীপকের হামিদ স্যারের বক্তব্যকে তুমি কতটুকু প্রাসঙ্গিক মনে কর? ‘মেলা’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আহসান হাবীব পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
খ. ‘লক্ষ মনের প্রীতি’ বলতে কবি বিশ্বের সব মানুষের ঐক্যকে বুঝিয়েছেন।
পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ ছাড়া পৃথিবীতে সুখশান্তি আসবে না। তাই কবি বলেছেন, পৃথিবীর সব মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে স্নেহ-ভালোবাসাপূর্ণ একটি সমাজ যদি গড়ে তোলে, তবে এ পৃথিবীর মধ্যে আর কোনো বিবাদ থাকবে না। কবি ‘লক্ষ মনের প্রীতি’ বলতে সেই ঐক্যকেই বুঝিয়েছেন।
গ. উদ্দীপক ‘মেলা’ কবিতার শিশুদের অপার সম্ভাবনার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।
কবি আহসান হাবীব তার ‘মেলা’ কবিতায় শিশু-কিশোরদের অপার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের কথা বলেছেন। তিনি ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল শিশু-কিশোরের মিলন বা একতার উৎসবকে অন্য এক রকমের মেলা বলেছেন। ঐ মেলায় প্রধান সারথি শিশুরা, তারা সেখানে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াবে, সে কাজে বাধা প্রদান করা অনুচিত।
উদ্দীপকের হামিদ স্যার শিশুদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, আজকের শিশুই দেশের ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুরাই ভবিষ্যতে নানারকম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নেতৃত্ব দিবে। তার এই বক্তব্যে ‘মেলা’ কবিতার শিশুদের অপার সম্ভাবনার দিকটিকেই ইঙ্গিত করে।
ঘ. উদ্দীপকের হামিদ স্যারের বক্তব্যকে আমি সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক মনে করি। ‘মেলা’ কবিতায় কবি মেলা বলতে যা বুঝিয়েছেন তা হলো শিশু-কিশোরের মিলনমেলা। শিশুদের এই মিলনমেলার মাধ্যমেই পৃথিবী একদিন উজ্জ্বল হবে। উদ্দীপকের হামিদ স্যার শিশুদের অপার সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাই তিনি আজকের শিশুকে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন। ‘মেলা’ কবিতায় শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাদের যোগ্য নেতৃত্বের দ্বারাই পৃথিবী সকল মানুষের সুন্দর আবাসভূমিতে পরিণত হবে।
পৃথিবীর সকল শিশু-কিশোরের ভাষা এক নয়। তবুও সব পাখির গানের মধ্যে যেমন একটা সুরের ঐক্য আছে, তেমনি পৃথিবীর শিশু-কিশোরদের মনের ভাষার মধ্যেও একটা মিল আছে।
উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, পৃথিবীর সব মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে স্নেহ-ভালোবাসাপূর্ণ একটা সমাজ যদি গড়ে তোলে, তবে এই পৃথিবীর মধ্যে আর কোনো বিবাদ থাকবে না। এ দায়িত্ব আগামী দিনের শিশুদেরই নিতে হবে। তাই উদ্দীপকের হামিদ স্যারের বক্তব্য আমি সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক মনে করি।
মেলা কবিতা আহসান হাবীব
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে বাংলা শিক্ষক বললেন, ’৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আমরা পেয়েছি এই মুক্ত আকাশ-বাতাস, পেয়েছি ছায়া সুনিবিড়-শান্তির নীড়, এই বাংলাদেশ। প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘তোমরা আজকের শিশু-কিশোররা আগামী দিনের স্বপ্ন। শুধু দেশ ও জাতির জন্য নয়, শিশুরা সারা বিশ্বের সম্ভাবনা।’
ক. নীল আকাশে রং কুড়িয়ে বেড়ায় কারা?
খ. কবি আহসান হাবীব ‘আলোর পাখি’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
গ. বাংলা শিক্ষকের বক্তব্যে ‘মেলা’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে—ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “প্রধান শিক্ষক মন্তব্যে ‘মেলা’ কবিতার মূল বক্তব্যই ফুটে উঠেছে”—বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সুজন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা চান তাদের সন্তান সুন্দর পৃথিবীর আলো বাতাসে বেড়ে উঠুক। মুক্ত মনে সকল মানুষকে ভালোবাসতে শিখুক, কাছে টানুক। এজন্য তিনি শিশুটিকে প্রতিদিন বিকালে খেলার মাঠে নিয়ে যেতেন। চলাফেরার স্বাধীনতা দিতেন। মুক্ত মনে সবার সাথে মেশার সুযোগ করে দিতেন। যেন সে ভেদাভেদহীনভাবে বেড়ে ওঠে।
ক. ‘নিত্য’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. মেলা বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. সুজনের বাবার চাওয়ার সাথে ‘মেলা’ কবিতার বিষয়বস্তু কতটুকু সাদৃশ্যপূর্ণ? নির্ণয় কর।
ঘ. ‘শিশুরা মুক্ত মনের অধিকারী, তারা নতুন পৃথিবীর সন্ধান দেয়’ মন্তব্যটি ‘মেলা’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—সপ্তম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
সপ্তম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের সপ্তবর্ণা বাংলা বই থেকে মেলা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৪টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post