৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ গান : কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বিদ্রোহী কবি হিসেবেও তাঁর পরিচিতি আছে। তাঁর লেখা “চল্ চল্ চল্” গানটি বাংলাদেশের রণসংগীত।
তিনি নানা বিষয় নিয়ে গান লিখেছেন এবং সেসব গানে নতুন নতুন সুর দিয়েছেন। এছাড়া তিনি গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ ও নাটক লিখেছেন। ‘অগ্নি-বীণা”, “বিষের বাঁশী” “সাম্যবাদী” “মৃত্যুক্ষুধা”, ‘শিউলিমালা’”, “যুগবাণী” ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। নিচে কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান দেওয়া হলো।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ গান
মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম
মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল,
মোরামোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম বিধাতার মত নির্ভয়
মোরা প্রকৃতির মত স্বচ্ছল।।
মোরা আকাশের মত বাঁধাহীন
মোরা মরু সঞ্চার বেদুঈন,
বন্ধনহীন জন্ম স্বাধীন
চিত্তমুক্ত শতদল।।
মোরা সিন্ধু জোঁয়ার কলকল
মোরা পাগলা জোঁয়ার ঝরঝর।
কল-কল-কল, ছল-ছল-ছল
মোরা দিল খোলা খোলা প্রান্তর,
মোরা শক্তি অটল মহীধর।
হাসি গান শ্যাম উচ্ছল
বৃষ্টির জল বনফল খাই-
শয্যা শ্যামল বনতল।।
গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ
ঝঞ্ঝা: ঝড়।
উদ্দাম: বাধাহীন।
নির্ভয়: ভয়হীন।
প্রকৃতি: চারপাশের জগৎ। সচ্ছল: পরিপূর্ণ।
মরু-সঞ্চর বেদুইন: মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো যাযাবর।
রাজ-আইন: রাজার আইন।
উদ্খুল: মুষল, মুগুর।
শতদল: পদ্ম।
সিদ্ধু-জোয়ার: সাগরের জোয়ার।
পাগলা-ঝোরা: উদ্দাম বঝরনা।
ঝরা-জল: ঝরে পড়া
জল। দিল-খোলা: প্রাণখোলা।
প্রান্তর: মাঠ
অটল: টলানো যায় না এমন।
মহীষর: পাহাড়।
মুক্ত-পক্ষ: ডানা-খোলা।
নভ-চর: যা আকাশে চরে বেড়ায়।
উচ্ছল: চঞ্চল।
বনফল: বুনো ফল।
শয্যা: বিছানা। শ্যামল: ঘন সবুজ।
বন-তল: বনভূমি।
দরিয়া: সাগর।
মুক্তধারা: বাধাহীন স্রোত।
গান বুঝি
উপরের গানে কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো। (মূল বইয়ের ১৪৬ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ গানটির রচয়িতা কে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম।
২. ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ দ্বারা কবি বুঝিয়েছেন- আমরা ঝড়ের মতো বাধাহীন। কোনো অপশক্তিই আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।
৩. এ গানে কবি কাদের ‘উদ্দাম’ ও ‘চঞ্চল’ বলেছেন?
উত্তর: এ গানে কবি তরুণদের ‘উদ্দাম’ ও ‘চঞ্চল’ বলেছেন।
৪. মরুভূমিতে বাসকারীদের কবি কী বলেছেন?
উত্তর: বেদুইন।
৫. বেদুইন কারা?
উত্তর: মরুভূমিতে বসবাসকারী যাযাবর, যাদের স্থায়ী কোনো বাসস্থান নেই, তাদের বেদুইন বলা হয়।
৬. কবি কেন নিজেকে বেদুইন বলেছেন?
উত্তর: কবি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মরুর বেদুইনদের মতই দুর্ধর্ষ হতে চান। তাই নিজেকে তিনি বেদুইন বলেছেন।
৭. ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ গানে ‘শতদল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘শতদল’ শব্দের অর্থ পদ্ম।
৮. ‘মোরা সিন্ধু জোয়ার’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: সিন্ধু শব্দের অর্থ সাগর। সাগরের জোয়ারকে যেমন বেঁধে রাখা যায় না, ঠিক তেমনি কবি এবং কবির মত যারা দুঃসাহসী তাদেরও বেঁধ রাখা যাবে না।
৯. ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ গানটিতে কবির কোন সত্তার পরিচয় পাওয়া যায়?
উত্তর: ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ গানে কবির বিদ্রোহী সত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।
বুঝে লিখি
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গানটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১৪৬ নম্বর পৃষ্ঠা)
কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ গানটিতে তারুণ্যের বিভিন্ন ইতিবাচক দিকের কথা উপস্থাপন করা হয়ছে। কবির ভাষায়, তারুণ হল- ঝড়ের মতো উদ্দাম, ঝরনার মত চঞ্চল। তারুণ্যের এ সময়টি প্রকৃতির মত পরিপূর্ণ, বিধাতার মত ভয়হীন। তারুণ্য আকাশের মতো বাধাহীন, বেদুইনের মত যাযাবর।
তারুণ্য কোনো আইন মানে না, কোনো বাধা-নিষেধ পরোয়া করে না। তরুণরা জন্ম-স্বাধীন। তরুণদের মন বিকশিত ফুলের ন্যায় উন্মুক্ত। এই গানে কবি তারুণ্যের শক্তিকে সাগরের কলকল ধ্বনির সাথে তুলনা করেছেন। ঝরনার পাগলা ফোয়ারার সাথে তুলনা করেছেন। এই তারুণের অন্তর উন্মুক্ত প্রান্তরের মত উদার। তবে প্রয়োজনবোধে পাহারের মত অবিচল। তারুণ্যের ভেতরের এই অসীম প্রাণশক্তিই তারুণ্যকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যার ফলে তরুণরা দেশ-জাতির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে।
গানের বৈশিষ্ট্য খুঁজি
কবিতার সাথে গানের কী কী পার্থক্য আছে, দলে আলোচনা করে বের করো। গানের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করো। (মূল বইয়ের ১৪৭ নম্বর পৃষ্ঠা)
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ছকভিত্তিক উদ্দীপকটি পিডিএফ উত্তরমালায় দেখো। )
গান কী? গান কাকে বলে?
সুর করে গাওয়া কথাকে গান বলে। গানের মধ্যে বিশেষ কোনো আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশ পায়। গানের কথা যাঁরা লেখেন, তাঁদের বলা হয় গীতিকার। গীতিকাররা গানের কথাকে কবিতার মতো করে লেখেন। এই কথা অনুযায়ী গানের নানা রকম নাম হয়, যেমন: পল্লিগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত ইত্যাদি। গানের কথায় নানা রকম সুর থাকে। সুর হলো কণ্ঠস্বরের ওঠা-নামা। সুরের এককের নাম স্বর।
এই স্বর মূলত সাতটি: সা রে গা মা পা ধা নি। যাঁরা গানে সুর দেন, তাঁদের বলে সুরকার। গানে নানা রকম তাল থাকে। গানের সুর ও তাল ঠিক রাখার জন্য অনেক রকম বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়, যেমন: হারমোনিয়াম, তবলা, একতারা, তানপুরা, গিটার ইত্যাদি। যাঁরা বাদ্যযন্ত্র বাজান, তাঁদের বলা হয় বাদক বা যন্ত্রশিল্পী। গানের কথা, সুর ও তাল মেনে যিনি গান পরিবেশন করেন, তাঁকে বলা হয় গায়ক বা শিল্পী।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ গান শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post