ময়নামতীর চর কবিতা ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ : ‘ময়নামতীর চর’ কবি বন্দে আলী মিয়া রচিত একটি শিশুতোষ কবিতা। এ কবিতায় কবি ময়নামতী নামক একটি চরের প্রতিদনিকার দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি এই চরকে ঘিরে মানুষের কাজকর্ম এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের ছবি এঁকেছেন।
কবিতার আমরা দেখতে পাই- ময়নামতির চরটি শুকনো এবং আগাছায় ভরা। একসময় সেখানে প্রমত্তা নদী থাকলেও এখন শুকনো চর। এ চরের তীরেই প্রতিদিন সকালে চাষীরা লাঙল দিয়ে জমি চাষ করেন। চরে এখন সামান্য পানি রয়েছে, যেখানে বাস করে খরশুলা আর দাঁড়িকানা মাছ।
ময়নামতীর চর কবিতা ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
গাঙচিল পাখিরা এই মাছগুলো খেয়ে জীবনধারণ করে। রাখাল এই চরেই তার গরুর পাল চড়ায়। গরুগুলোও যে যার মত চরে ঘুরে বেড়ায়। গোচর পাখি এবং বক গরুর শরীর থেকে উকুন এবং আঠালু পোকা ঠোকরিয়ে খায়। এভাবেই ময়নামতীর চরে গড়ে উঠেছে চমৎকার এক জীববৈচিত্র।
তবে শুধু পশুপাখিই না, মানুষেরও জীবীকার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই চর। চাষীরা নতুন এই চরে কলাই বুনছে, আখ চাষ করছে। সেই আখ বন্য শূকরে আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সারারাত পাহারা দিচ্ছে। এভাবেই ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় আমরা একটি বাস্তব দৃশ্য কল্পনা করতে পারি, যেখানে পশুপাখি আর মানুষের সহবস্থানের কথা সুনিপুণভাবে চিত্রায়িত হয়েছে।
কবি পরিচিতি
কবি: বন্দে আলী মিয়া
জন্ম—মৃত্যু: ১৫ই ডিসেম্বর ১৯০৬ (রাধানগর, পাবনা) — ২৭শে জুন, ১৯৭৯ (রাজশাহী)
উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম: ময়নামতির চর, অনুরাগ, পদ্মানদীর চর, মধুমতীর চর, ধরিত্রী, অরণ্য, গোধূলী, ঝড়ের সংকেত, জীবনের দিনগুলো, বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
পুরস্কার/সম্মাননা: শিশু সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন।
কবিতা বুঝি
শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা দলে ভাগ হও। ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো। (মূল বইয়ের ১২৬ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার লেখক কে?
উত্তর: ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার লেখক কবি বন্দে আলী মিয়া।
২. ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় কবি কিসের বর্ণনা দিয়েছেন?
উত্তর: ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় কবি ময়নামতী নামে একটি চরের বর্ণনা দিয়েছেন।
৩. এ কবিতায় কী কী প্রাণীর উল্লেখ রয়েছে?
উত্তর: এ কবিতায় কুমির, খরশুলা ও দাঁড়িকানা মাছ, গাঙচিল, গরু, উকুন, বক, শালিক, বরাহ প্রভৃতি পশুপাখি ও প্রাণীর উল্লেখ রয়েছে।
৪. ময়নামতীর চরটি কেমন?
উত্তর: ময়নামতীর চরটি আগাছায় ভরা এবং শুকনো।
৫. চাষী কখন লাঙল দিয়ে জমি চাষ করেন?
উত্তর: চাষী প্রতিদিন সকালে লাঙল দিয়ে জমি চাষ করেন।
৬. কুমিরেরা কীভাবে রোদ পোহায়?
উত্তর: কুমিরেরা পাশাপাশি শুয়ে রোদ পোহায়।
৭. গাঙচিল কীভাবে মাছ খায়?
উত্তর: গাঙচিল প্রথমে ছোঁ মেরে মাছ শিকার করে। তারপর একের পর এক আছার দিয়ে মাছটাকে নিস্তেজ করে ফেলে। সবশেষে মাছটির মাথা, পেটি এবং লেজ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।
৮. কবিতায় উল্লেখিত গরুর পালের অবস্থা বর্ণনা কর।
উত্তর: কবিতায় দেখা যাচ্ছে, কিছুটা দূরে একপাল গরু এলোমেলো বিচরণ করছে। এর মধ্যে ষাঁড়গুলো দড়ি ছিড়ে স্বাধীনভাবে চলছে। কিছু গরু বসে বসে ঝিমাচ্ছে এবং কিছু গরু ঘাস খাচ্ছে। কিছু গরু আবার শুয়ে শুয়ে জাবর কাটছে এবং নিশ্বাস ছাড়ছে।
৯. গোচর পাখিরা কী করছে?
উত্তর: গোচর পাখিরা গরুর গায়ে থাকা উকুন এবং আঠালু পোকা ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে।
১০. শালিক পাখি কী করছে?
উত্তর: শালিক পাখির কোনো কাজ নেই বলে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে।
ময়নামতীর চর কবিতা ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
১১. আখের খামারে কারা পাহারা দিচ্ছে?
উত্তর: যারা নতুন চরের পলি জমিতে কুলাই বুনেছে, তারাই রাতভর আখের খামারে পাহারা দিচ্ছে।
১২. কবিতায় আখের খেত পাহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে চাষীরা কোন পদ্ধতি অবলম্বন করেন?
উত্তর: আখের খেত পাহারা দিতে গিয়ে চাষিরা খেতের কোণায় বাঁশ পুঁতে ঘর তৈরি করেছে। ঘরের ভিতরে বাখারি উপর বিচালির শয্যা বানিয়েছে। প্রবল শীতের মধ্যেও মাঠের মাঝখানে আগুনের মশাল জ্বালিয়ে হাত দিয়ে তালি বাজিয়ে খেত পাহারা দেয়। যাতে রাতের বেলা পদ্মার ওপার থেকে শূকর এসে আখের খেত নষ্ট না করে।
১৩. কবিতায় উল্লেখিত শূকরের পাল কোথা থেকে এবং কীভাবে আসে?
উত্তর: শূকরের পাল চরের ওপার থেকে পদ্মা নদী সাঁতরে আখের খেতে আসে।
১৪. শূকরের পাল আখের খেতে ঢুকে কী করে?
উত্তর: শূকরের পাল আখের খেতে ঢুকে আখ খায় এবং আখ ভেঙে নষ্ট করে।
১৫. এই কবিতার প্রধান বিষয় কী?
উত্তর: এ কবিতার প্রধান বিষয় ময়নামতীর চরের প্রাত্যাহিক চিত্র এবং এ চরকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবনযাত্রার ছবি।
বুঝে লিখি
‘ময়নামতীর চর’ কবিতাটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১২৬ নম্বর পৃষ্ঠা)
‘ময়নামতীর চর’ কবি বন্দে আলী মিয়া রচিত একটি শিশুতোষ কবিতা। এ কবিতায় কবি ময়নামতী নামক একটি চরের প্রতিদনিকার দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি এই চরকে ঘিরে মানুষের কাজকর্ম এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের ছবি এঁকেছেন। কবিতার আমরা দেখতে পাই- ময়নামতির চরটি শুকনো এবং আগাছায় ভরা।
একসময় সেখানে প্রমত্তা নদী থাকলেও এখন শুকনো চর। এ চরের তীরেই প্রতিদিন সকালে চাষীরা লাঙল দিয়ে জমি চাষ করেন। চরে এখন সামান্য পানি রয়েছে, যেখানে বাস করে খরশুলা আর দাঁড়িকানা মাছ। গাঙচিল পাখিরা এই মাছগুলো খেয়ে জীবনধারণ করে। রাখাল এই চরেই তার গরুর পাল চড়ায়। গরুগুলোও যে যার মত চরে ঘুরে বেড়ায়। গোচর পাখি এবং বক গরুর শরীর থেকে উকুন এবং আঠালু পোকা ঠোকরিয়ে খায়। এভাবেই ময়নামতীর চরে গড়ে উঠেছে চমৎকার এক জীববৈচিত্র।
তবে শুধু পশুপাখিই না, মানুষেরও জীবীকার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই চর। চাষীরা নতুন এই চরে কলাই বুনছে, আখ চাষ করছে। সেই আখ বন্য শূকরে আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সারারাত পাহারা দিচ্ছে। এভাবেই ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় আমরা একটি বাস্তব দৃশ্য কল্পনা করতে পারি, যেখানে পশুপাখি আর মানুষের সহবস্থানের কথা সুনিপুণভাবে চিত্রায়িত হয়েছে।
জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজি
‘ময়নামতীর চর’ কবিতাটির সাথে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না, তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১২৭ নম্বর পৃষ্ঠা)
‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় উল্লেখিত চরটির সাথে আমার দেখা একটি চরের কিছু বিষয়ের মিল রয়েছে। আমার বাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে একটি চর রয়েছে, নাম মনপুরা। বিশাল এ চরের যেদিকে চোখ যায়, শুধু ধুধু বালি। তবে মরুভূমির মত উত্তপ্ত এ চরের বুকেও মানুষ বসবাস করে। চরের পুরোটা জুড়েই বালি থাকায় এখানে ধান চাষ সম্ভব না। তাই স্থানীয় কৃষকরা মনপুরা চরে তরমুজ, আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদি চাষ করে থাকে।
কৃষকরা সারাদিন তাদের ক্ষেতে পরিশ্রম করে রাতে তাদের কুড়ে ঘরে বিশ্রাম নেয়। চরটি নদীর নিকটবর্তী হওয়ায় চরের মানুষজন নৌকায় যাতায়াত করে থাকেন। এই চরে আখ চাষ চোখে না পড়লেও তরমুজ চাষ হয় অনেক। কিন্তু এই তরমুজ চাষ নিয়েও চাষীদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। কারণ রাত হলেই বন্য শূকরের দল হামলে পড়ে তরমুজ খেতে।
তাই কৃষকরা তরমুজ খেতের চারিদিকে সুউচ্চ বেড়া দিয়ে রাখেন। যাতে শূকর এখানে প্রবেশ করতে না পারে। শুধু শূকরই না, নিরিবিলি-নিস্তব্দ এই চরে রাত হলেই বাড়ে চোরের উপদ্রপ। তাই কৃষকরা রাত জেগে তাদের কষ্টের ফসল পাহাড়া দেয়। তবে আপাতদৃষ্টিতে চরের জীবনকে অনেক সুন্দর মনে হলেও আসলে ঠিক তা নয়। এখানকার জীবন অনেক কঠিন।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ময়নামতীর চর ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post