যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : মধ্যযুগীয় স্কলাস্টিক যুক্তিবিদগণ পূর্ণাঙ্গ আরোহকে নিখুঁত আরোহ বলে অভিহিত করেছেন। তারা পূর্ণাঙ্গ আরোহের সংজ্ঞায় বলেন, কোন তথাকথিত সার্বিক বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেকটি বিশিষ্ট দৃষ্টান্ত পরীক্ষা করার পর সেই তথাকথিত সঠিক বাক্যটিকে সিদ্ধান্ত হিসেবে স্থাপন করার প্রক্রিয়াই হলো পূর্ণাঙ্গ আরোহ। অর্থাৎ, এই আরোহের মাধ্যমে প্রতিটি দৃষ্টান্ত যাচাই করে সেই বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে এটিকে নিখুঁত আরোহ বলা হয়।
যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয় কেন?
উত্তর : কার্যকারণ নীতি অনুসরণ না করার কারণে অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয়।
প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির ওপর নির্ভর করে অবৈজ্ঞানিক আরোহে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এখানে প্রতিকূল দৃষ্টান্তের কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হয় না বলে সিদ্ধান্ত সব সময়ই সম্ভাব্য হয়।
যেমন – ঢাকা শহরে কতিপয় কাক দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো, ‘সকল কাক হয় কালো’। এখানে কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়াই বাস্তব অভিজ্ঞতার সাহায্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই কারণে অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত সর্বদা সম্ভাব্য হয়।
২. অপ্রকৃত আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আরোহমূলক লম্ফ না থাকার কারণে অপ্রকৃত আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না। অপ্রকৃত আরোহের মধ্যে আরোহের মৌলিক বৈশিষ্ট্য আরোহাত্মক উল্লম্ফন বিদ্যমান থাকে না। এ আরোহগুলোকে দেখতে আরোহের মতো মনে হয় কিন্তু এগুলো আসলে আরোহ নয়। তাই অনেকে অপ্রকৃত আরোহের সমালোচনা করে থাকেন।
৩. অবৈজ্ঞানিক আরোহ কি প্রকৃত আরোহ?
উত্তর : হ্যাঁ, অবৈজ্ঞানিক আরোহ প্রকৃত আরোহ।
যেসব আরোহ অনুমানে জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাতে উত্তরণ এবং আরোহমূলক লম্ফ উপস্থিত থাকে তাকে প্রকৃত আরোহ বলে। তাছাড়া প্রকৃত আরোহে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা, কার্যকারণ নীতি অনুসরণ করা হয় এবং সিদ্ধান্ত সার্বিক সংশ্লেষক যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। অবৈজ্ঞানিক আরোহে আরোহের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আরোহমূলক লম্ফ উপস্থিত থাকে। পাশাপাশি প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ কারণে অবৈজ্ঞানিক আরোহ হলো প্রকৃত আরোহ।
৪. নিখুঁত আরোহ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : নিখুঁত আরোহ বলতে পূর্ণাঙ্গ আরোহকে বোঝায়।
মধ্যযুগীয় স্কলাস্টিক যুক্তিবিদগণ পূর্ণাঙ্গ আরোহকে নিখুঁত আরোহ বলে অভিহিত করেছেন। তারা পূর্ণাঙ্গ আরোহের সংজ্ঞায় বলেন, কোন তথাকথিত সার্বিক বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেকটি বিশিষ্ট দৃষ্টান্ত পরীক্ষা করার পর সেই তথাকথিত সঠিক বাক্যটিকে সিদ্ধান্ত হিসেবে স্থাপন করার প্রক্রিয়াই হলো পূর্ণাঙ্গ আরোহ। অর্থাৎ, এই আরোহের মাধ্যমে প্রতিটি দৃষ্টান্ত যাচাই করে সেই বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে এটিকে নিখুঁত আরোহ বলা হয়।
৫. ‘আরোহের প্রাণশক্তি” বলতে কী বোঝ?
উত্তর : আরোহের প্রাণশক্তি বলতে আরোহাত্মক উল্লম্ফনকে বোঝায়।
আরোহ অনুমানে জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাতে, নিরীক্ষিত থেকে অনিরীক্ষিতে গমন করা হয়। আর যে বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তা হলো আরোহাত্মক উল্লম্ফন। এজন্য আরোহাত্মক উল্লম্ফনকে আরোহের প্রাণ বলা হয়।
৬. সাদৃশ্য অনুমানকে কেন প্রকৃত আরোহ বলা হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : সাদৃশ্যানুমানে আরোহাত্মক উল্লম্ফন বিদ্যমান এবং এখানে জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাতে গমন করা হয়, তাই সাদৃশ্যানুমানকে প্রকৃত আরোহ বলা হয়।
সাদৃশ্যানুমান একটি আরোহমূলক যুক্তিপদ্ধতি। এ অনুমানে আরোহমূলক লম্ফের সাহায্যে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত অনুমিত হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত হয় সম্ভাব্য। যে কারণে দুটি বিষয়ের মৌলিক সাদৃশ্য যত বেশি হবে সাদৃশ্যানুমানের সম্ভাবনার মাত্রা তত বেশি হবে। তাই যে অনুমানে দুটি বিষয়ের মধ্যে আনুপাতিক সমতা পরিলক্ষিত হয় তাকে সাদৃশ্যানুমান বলে। আর এ কারণে যুক্তিবিদ মিল এটিকে প্রকৃত আরোহ বলে অভিহিত করেছেন।
৭. অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত নয় কেন?
উত্তর : অবৈজ্ঞানিক আরোহে কার্যকারণ সম্পর্ক অনুপস্থিত থাকে। এই প্রকার আরোহে প্রতিকূল দৃষ্টান্তবিহীন অবাধ অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা যায়। যেহেতু কার্যকারণ সম্পর্ক ব্যতীত কেবল অবাধ অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে এখানে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাই এ প্রকার আরোহের সিদ্ধান্তের নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
৮. প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতিকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলা হয় কেন?
উত্তর : আরোহের আকারগত দিক প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির ওপর নির্ভর করে বলে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতিকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।
আরোহ অনুমানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয়। আর এই বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে সার্বিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ভিত্তি হলো প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতানীতি। আমরা বিশ্বাস করি প্রকৃতি একরূপ আচরণ করে এবং প্রকৃতি নিয়মানুবর্তী। প্রকৃতির একরূপতায় বিশ্বাস থাকার কারণে আমরা কয়েকটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। তাই প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতিকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।
৯. কার্যকারণ নীতিকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলা হয় কেন?
উত্তর : আরোহের আকারগত দিক কার্যকারণ নিয়মের ওপর নির্ভর করে বলে, কার্যকারণ নিয়মকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।
যুক্তিবিদ বেইনের মতে, কারণ হলো কার্যের সাথে আবশ্যিকভাবে যুক্ত পূর্ববর্তী ঘটনা। তাই, প্রত্যেক কার্যের কারণ আছে। কারণের ফলাফল হিসেবে কার্য সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয় যা আরোহকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ, কার্যকারণ আরোহের ভিত্তি। তবে সব ধরনের আরোহ এর ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়।
১০. ‘সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : সাদৃশ্যানুমানে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত অনুমিত হয়, এজন্য সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয় না, বরং সম্ভাব্য হয়। অর্থাৎ, কিছু জানা সাদৃশ্যের ভিত্তিতে নতুন কোনো বিষয়ের সাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হয় না। ফলে সিদ্ধান্ত নিশ্চিত না হয়ে সম্ভাব্য হয়। যেমন- ‘পৃথিবীর মতো মঙ্গলগ্রহেও মাটি, পানি ও বায়ু আছে। পৃথিবীতে মানুষ বাস করে। অতএব, মঙ্গলগ্রহেও মানুষ বাস করে।’ মঙ্গলগ্রহেও মানুষ বাস করে সিদ্ধান্তটি এটি সম্ভাবনামূলক, নিশ্চিত নয়।
►► আরো দেখো: যুক্তিবিদ্যা ১ম ও ২য় পত্রের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা, উপরের Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে সম্পূর্ণ যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তরসহ সংগ্রহ করে নাও।
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post