নতুন বছরের রমজান মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মাঝে রোজার প্রস্তুতি শুরু হয়। রোজা রাখার জন্য অনেক ইসলামী বিধিবিধান রয়েছে। যার জন্য মানুষ মূলত রোজা রাখে। ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে রোজা রাখার উপকারিতা অনেক।
রোজার নিয়ত করে সেহেরির মাধ্যমে একটি রোজার শুরু হয়। সারাদিন পানাহার হয়ে বিরত থেকে, রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো খেয়াল রেখে ইফতারের দোয়া পড়ে ইফতারের মাধ্যমে একটি রোজার সমাপ্তি ঘটে। রোজা দিলে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার হতে বিরত থাকতে হয়।
সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার হতে বিরত থাকার কারণে শরীরে অনেক ধরনের ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। আজকে আমরা সেগুলোই জানবো।
রোজা রাখার উপকারিতা
রোজা রাখার ফলে শরীরে অতিরিক্ত খাদ্য প্রবেশ হতে পারে না। অতিরিক্ত খাদ্য ও জাঙ্ক ফুড’ই আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের মূলমন্ত্র। রোজার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যর উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হতে পারি।
চলুন জেনে নেওয়া যাক রোজা রাখলে কোন ব্যক্তি কি কি উপকারিতা লাভ করবে।
১. হার্ট ভালো রাখে
এলডিএল কোলেস্টেরল হার্টের শত্রু। এই কোলেস্টেরল’টি রক্তনালীতে জমে গিয়ে রক্তনালী ব্লক করে ফেলে যার ফলে হার্টে এট্যাক হয়ে থাকে। রোজা রাখার ফলে শরীরে এলডিএল কোলেস্টেরল এর মাত্রা তুলনামূলকভাবে কমে আসে।
যেসব ব্যক্তিদের হার্ট এট্যাক এর সম্ভাবনা রয়েছে তারা রোজা রাখার মাধ্যমে এলডিএল কোলেস্টেরল কমিয়ে আনতে পারে। ইফতারে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া হতে বিরত থাকুন। নয়তো এলডিএল কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমার সম্ভাবনা খুবই কম।
২. শরীরের চর্বি ও মেদ-ভুড়ি কমিয়ে থাকে
রোজা রাখার ফলে শরীরে চর্বির পরিমাণ কমতে শুরু করে। রোজা রাখলে খাদ্য খাওয়ার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ চলে আসে। সেই সাথে অতিরিক্ত খাদ্য না খাওয়ার কারণে শরীরে চর্বি ও মেদ-ভুড়ি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে।
৩. রোজা রাখার উপকারিতা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
রোজা রাখলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের মানসিক পরিবর্তন আসে। মানসিক পরিবর্তনের ফলে মস্তিষ্ক হতে এক ধরনের নিউরোট্রিফিক ফ্যাক্টর নিঃসৃত হয়ে থাকে। এই নিউরোট্রিফিক ফ্যাক্টর ও মানসিক পরিবর্তনের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি হতে শুরু করে।
৪. রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
রোজা রাখার উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হচ্ছে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। রোজা রাখলে খাবারের উপর নিয়ন্ত্রণ আসে এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানাহার হতে বিরত থাকার জন্য শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বেড়ে যায়।
ইনসুলিনের কার্যকারিতা বেড়ে গিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে। ইতোমধ্যে আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে রোজা দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেবেন।
৫. রোজা রাখার উপকারিতা শরীরে প্রদাহ কমিয়ে আনে
বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার কারণে প্রদাহ হয়ে থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে যেমন: হার্ট, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস কিংবা ক্যান্সারের কারণে প্রদাহ হয়ে থাকে। রোজা রাখলে শরীরে প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
৬. খারাপ অভ্যাসগুলো কমে আসতে শুরু করে
এমনও অনেক মানুষ আছেন যাদের বিড়ি, সিগারেট ও জর্দাসহ বিভিন্ন ধরনের খারাপ অভ্যাস রয়েছে। তারা শত চেষ্টা করেও এসব খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে না। এসব অভ্যাস ছাড়ার জন্য রমজান মাস উত্তম একটি সময়।
রমজান মাসে পুরো একমাস নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানাহার হতে বিরত থাকতে হয়। একমাস নিয়মিত রোজা রাখলে এসব অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
সবশেষে যা জানা দরকার
রোজা রাখার উপকারিতা অনেকগুলো রয়েছে। তার মধ্যে আমরা কিছু উপকারিতার কথা আলোচনা করেছি। আমাদের শরীরে রোগ বেশী হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ। রোজার মাসে খাদ্য গ্রহণের উপর নিয়ন্ত্রণ আসে। সেই সাথে শরীরেও অনেক ইতিবাচক ধরনের পরিবর্তন করা লক্ষ্য করা যায়।
Discussion about this post