লখার একুশে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর আবুবকর সিদ্দিক : রূপকধর্মী এই গল্পটিতে একুশে ফেব্রুয়ারি অবিনাশী প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। এ গল্পে অতি সাধারণ এক কিশোর লখা। সে কথা বলতে পারে না। কিন্তু তাতে কীই-বা আসে-যায়। লখা উঁচু ডালে উঠে লাল ফুল সংগ্রহ করে শহিদ মিনারে যায় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। কথা বলতে না পারলেও তার মুখ দিয়ে আঁ আঁ আঁ আঁ ধ্বনির মধ্য দিয়েই বেরিয়ে আসে বাঙ্গালির গর্বের উচ্চারণ -“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি”।
লখার একুশে গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ইশতিয়াক এবার বৃত্তি নিয়ে জাপানে লেখাপড়া করতে চলে আসায় শহিদ দিবস উদ্যাপন করতে পারবে না। অথচ প্রতিবছর সে প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ করত- বক্তৃতা, আবৃত্তি, আলোচনা শুনত, সে-কথা মনে করে তার চোখ জলে ভরে আসে। মনে মনে কিছু করার জন্য ইচ্ছা পোষণ করে। অতঃপর ইশতিয়াক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও এর ইতিহাস সহপাঠীদের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা করে।
ক. লখা রাতে কোথায় ঘুমায়?
খ. ‘জিতে গেছি আমি। গর্বে বুক ফুলে ওঠে লখার।’—কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ‘লখা ও ইশতিয়াক দুজনের কাছে শহিদ দিবস ভিন্ন আঙ্গিকে এসেছে।’—ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘ইশতিয়াকের শহিদ দিবস উদ্যাপনের আকাক্সক্ষা লখার শহিদ দিবস উদ্যাপনের আকাক্সক্ষারই প্রতিফলন।’—বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. লখা রাতে ফুটপাতে কঠিন শানের উপর ঘুমায়।
খ. ‘জিতে গেছি আমি। গর্বে বুক ফুলে ওঠে লখার।’—কথাটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে লখার আত্মবিশ্বাস, সাহস এবং সফলতা।
নিজের সীমাবদ্ধতা ও শারীরিক কষ্ট সত্ত্বেও লখা তার লক্ষ্য অর্জন করেছে। শহিদ মিনারে ফুল দেওয়ার জন্য সে রক্তলাল ফুল সংগ্রহ করতে গাছে উঠে নিজের শরীরকে আঘাতপ্রাপ্ত করেছে। তবুও, ফুল পেয়ে তার মনে হয়েছে সে এক বড় বিজয় অর্জন করেছে। এই বিজয় তার জন্য শুধু একটি ফুল সংগ্রহ নয়, বরং শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিজের সাধ্যমত চেষ্টা ও ত্যাগের প্রতীক। এটি তার আত্মতৃপ্তি এবং সম্মানবোধের প্রকাশ।
গ. লখা ও ইশতিয়াক দুজনের কাছে শহিদ দিবস তাদের নিজ নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা ও অবস্থার কারণে ভিন্ন আঙ্গিকে এসেছে।
‘লখার একুশে’ গল্পে লখা ফুটপাতের এক টোকাই শিশু, যার জীবন সংগ্রাম, দারিদ্র্য ও অবহেলায় ভরা। ভাষার গভীর তাৎপর্য বা শহিদ দিবসের ইতিহাস সে হয়তো জানে না, তবে তার শিশুসুলভ অনুভূতিতে এই দিনটি অন্যরকম। সে নিজের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও শহিদ মিনারে ফুল দিতে যায়। তার শরীর রক্তাক্ত, তবু সে লাল ফুল নিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে যায়। তার গাওয়া ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি তার কণ্ঠে সঠিকভাবে ফোটে না, কারণ সে জন্মবোবা। কিন্তু তার অঙ্গভঙ্গি, উদ্যম ও লাল ফুলের গুচ্ছ তাকে একুশের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে উপস্থাপন করে।
অপরদিকে উদ্দীপকের ইশতিয়াক জাপানে পড়াশোনা করছে এবং শহিদ দিবস থেকে দূরে রয়েছে। তবে সে দিবসটি পালনে উদাসীন নয়। তার মধ্যে দিবসটি নিয়ে আবেগ ও দায়িত্ববোধ কাজ করে। শারীরিকভাবে প্রভাতফেরিতে অংশ নিতে না পারলেও সে শহিদ দিবসের তাৎপর্য ও ইতিহাস আন্তর্জাতিক পরিম-লে তুলে ধরার পরিকল্পনা করে। এটি দেখায় যে ইশতিয়াকের কাছে শহিদ দিবস শুধু আবেগের বিষয় নয়, এটি জ্ঞানভিত্তিক ও বৈশ্বিক যোগাযোগের একটি মাধ্যম।
তাই বলা যায় যে, লখা ও ইশতিয়াকের অভিজ্ঞতা ভিন্ন হলেও, তাদের উভয়ের কাছে শহিদ দিবস গভীর গুরুত্ব বহন করে। একজন শহিদ দিবসকে উপলব্ধি করে সরল আবেগ ও কর্মের মাধ্যমে, আর অন্যজন তা চেতনা ও শিক্ষার আলোকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চায়। এই ভিন্নতার মধ্যেও তাদের মাঝে এক অভিন্ন সুর কাজ করে: মাতৃভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
ঘ. ‘ইশতিয়াকের শহিদ দিবস উদ্যাপনের আকাক্সক্ষা লখার শহিদ দিবস উদ্যাপনের আকাক্সক্ষারই প্রতিফলন।’—এই উক্তি সত্য, কারণ তাদের ভিন্ন পটভূমি, সামাজিক অবস্থান, এবং কার্যপদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও শহিদ দিবস উদ্যাপনে তাদের মধ্যে একই রকম প্রেরণা ও আবেগ কাজ করে।
লখার শহিদ দিবস উদ্যাপন সরাসরি তার হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা ও অনুভূতি থেকে উৎসারিত। লখা দারিদ্র্যের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। ভাষা আন্দোলন বা শহিদ দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে তার জ্ঞানের ঘাটতি থাকতে পারে, কিন্তু তবুও সে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উদগ্রীব। তার আকাক্সক্ষা সরল এবং ত্যাগে ভরা। লখা রক্তাক্ত গায়ে, খালি শরীরে, নানা বাধা পেরিয়ে রক্তলাল ফুল নিয়ে শহিদ মিনারে পৌঁছায়। এটি ভাষা ও আত্মত্যাগের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক।
অপরদিকে ইশতিয়াক জাপানে থেকেও শহিদ দিবস উদ্যাপনের গভীর ইচ্ছা পোষণ করে। তার আকাক্সক্ষা হলো শহিদ দিবসের তাৎপর্য ও বাংলা ভাষার আন্দোলনের ইতিহাস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা। ইশতিয়াকের শহিদ দিবস উদ্যাপন তার শিক্ষিত মন ও সাংস্কৃতিক সচেতনতার প্রতিফলন। যদিও সে সরাসরি প্রভাতফেরিতে অংশ নিতে পারে না, তার পরিকল্পনা শহিদ দিবসের তাৎপর্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চায়।
লখা ও ইশতিয়াকের আকাক্সক্ষা ভিন্ন পন্থায় প্রকাশ পেলেও মূলত তারা একই লক্ষ্য বহন করে-শহিদ দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা ও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা। ইশতিয়াকের পরিকল্পনা লখার সরল আবেগের পরিণত ও আন্তর্জাতিক রূপ। তাই বলা যায়, ইশতিয়াকের আকাক্সক্ষা লখার আকাক্সক্ষারই বিস্তৃত এবং চেতনাপূর্ণ প্রতিফলন।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। তোমরা নিশ্চয়ই আজ শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে শহিদ মিনারে উপস্থিত হয়েছ। আজ তোমাদের সাথে শামিল হওয়ার জন্য দূর দেশে বসে মন কাঁদছে আমারও।
ইতি,
তোমার বন্ধু
হাসান
ক. কী দেখলে বুক কাঁপে লখার?
খ. লখার দিন কাটে কীভাবে?
গ. হাসানের আবেগের মধ্যে লখার আবেগের প্রতিফলন কীভাবে ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “লখা ও হাসানের মতো মানুষের আবেগই শহিদদের যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে।”—মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ছায়া দেখলে বুক কাঁপে লখার।
খ. লখার দিন কাটে নানারকম খেলে, বন্ধুদের সাথে মারামারি করে আর দুষ্টুমি করে।
লখার মা সকাল হলেই ভিক্ষা করতে বেরিয়ে যায়। লখার দিন কাটে গুলি খেলে, ছেঁড়া কাগজ কুড়িয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি করে আর খাবারের দোকানের এঁটোপাতা চেটে। এরপর খিদে পেটে নিয়ে যখন ফুটপাতের কঠিন শানে মায়ের পাশে ঘুমাতে যায় তখন সে খিদের কষ্ট ভুলে যায়। এভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে লখার দিন কাটে।
গ. হাসানের শহিদের স্মরণে শহিদ বেদিতে ফুল দেবার আবেগের মধ্য দিয়ে লখার আবেগের প্রতিফলন ঘটেছে।
‘লখার একুশে’ গল্পে লখা একটি বাক্প্রতিবন্ধী টোকাই ছেলে। ফুল কেনার সামর্থ্য না থাকলেও সে অতি কষ্ট করে ফুল সংগ্রহ করে। শীতের কষ্ট, সাপের ভয়, কাঁটার আঘাত সব সহ্য করে সে ফুল সংগ্রহ করে। তারপর সে ফুল নিয়ে প্রভাতফেরিতে সবার সাথে অংশগ্রহণ করে। সবার সাথে গেয়ে ওঠে আঁ আঁ আঁ আঁ (আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো) এতে সে আত্মতৃপ্তি পায় শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারার আনন্দে।
উদ্দীপকের হাসান দূর দেশে থাকায় সে লখার মতো সরাসরি শহিদ মিনারে ফুল দিতে পারে না। সে কারণে অতীত স্মৃতির কথা মনে করে তার মন কেঁদে ওঠে। তাই সে বন্ধুর কাছে পত্র লিখেছে। আর এভাবেই একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপনের চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে লখা ও হাসানের আবেগের মধ্যে। হাসানের শহিদ দিবস উদ্যাপনের আবেগের মধ্য দিয়ে লখার শহিদ দিবস উদ্যাপনের আবেগই প্রকাশ পায়।
ঘ. ‘লখা ও হাসানের মতো মানুষের আবেগই শহিদদের যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে’—এ উক্তিটি যথার্থ।
‘লখার একুশে’ গল্পে লখার মাঝে আমরা অমর শহিদদের প্রতি হৃদয় নিংড়ানো একুশের আবেগ দেখতে পাই। সে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে, একুশে ফেব্রুয়ারির আগের রাতে ফুল সংগ্রহের জন্য অসহ্য কষ্ট সহ্য করে এবং শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দেয়। লখা ‘আঁ আঁ আঁ আঁ’ করে সবার সঙ্গে গলা মিলিয়ে ভাষা শহিদদের স্মরণ করে। অর্থাৎ লখা নিজে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শহিদ দিবস উদ্যাপন করছে। অন্যদিকে দূর দেশ থেকে হাসান তার বন্ধুকে ভাষা শহিদের প্রতি আবেগ প্রকাশ করেছে।
বন্ধুদের সাথে মারামারি করে হাসান দূর দেশে থাকার কারণে বন্ধুদের সাথে শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতে পারবে না। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি উদ্যাপনের জন্য মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল।
উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায় যে, ‘লখা ও হাসানের মতো মানুষের আবেগ শহিদদের যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে’।
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
জমির মিয়া একজন প্রতিবন্ধী, সে বৃদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে তিনি তার দুটি পা ও একটি হাত হারিয়ে এ পঙ্গুত্ব বরণ করেন। কিন্তু তিনি আজও পুরোদস্তুর একজন মুক্তিযোদ্ধা। এখন তিনি যুদ্ধ করেন কলম দিয়ে, দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উন্মোচন করেন। আর বিজয় দিবস এলে তিনি আজও প্রাণের আবেগে সহযোদ্ধাদের স্মরণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ক. ‘মেঙে’ শব্দের অর্থ কী?
খ. লখাকে কেন ভারি মজার দুষ্টু ছেলে বলা হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের জমির মিয়ার সাথে লখার সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. ‘লখা ও জমির মিয়া লাখো বাঙালির প্রতিচ্ছবি’—উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আনছার আলী একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। দুনিয়ায় সে খাওয়া, ঘুরে বেড়ানো আর ঘুমানো ছাড়া কিছু বোঝে না। কিন্তু শহিদ দিবস এলে সকাল থেকে তার মাঝে অদ্ভুত এক চেতনা জেগে ওঠে। যেন অন্য কোনো মানুষ তার ওপর ভর করে তার জড়তাকে দেয় গতি। ধুলা আর কাদা দিয়ে উঁচু ঢিবি তৈরি করে। তারপর সেখানে কিছু বুনো ফুল দিয়ে চারপাশটা ঢেকে দেয়। আর এসব করতে গিয়ে অজান্তে তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
ক. লখা কী করে মনটাকে শক্ত করে নিল?
খ. লখার আঁ আঁ আঁ আঁ শব্দ দিয়ে কোনটি প্রকাশ পায়?
গ. আনছার আলী চরিত্রের সাথে লখা চরিত্রের সাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. ‘শহিদদের প্রাপ্য হলো বাঙালির অন্তরের সৃষ্ট ভালোবাসা’—‘লখার একুশে’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—সপ্তম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
সপ্তম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের সপ্তবর্ণা বাংলা বই থেকে লখার একুশে গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৪টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post