একজন স্বাভাবিক মানুষের উচ্চতা বাড়ে সাধারণত ১৮-২০ বছর বয়সে। এরপর উচ্চতা বাড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। ২০ বছরের পরে উচ্চতা একদমই বাড়বে না, তা নয়। ২০ বছরের পরে যদি উচ্চতা বাড়াতে হয় তাহলে চলতে হবে নিয়মানুযায়ী। ২০ বছরের পর লম্বা হতে চাইলে মেনে চলতে হবে লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম গুলো, পরিবর্তন আনতে হবে লাইফস্টাইলে। তাহলেই লম্বা হওয়া সম্ভব।
একজন মানুষ কতটা লম্বা হবে তার ৬০%-৮০% নির্ভর করে তার জিনের উপর। বাকী ২০%-৪০% খাদ্যাভাস, শরীরচর্চা ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। অর্থ্যাৎ, আপনি যদি আপনার খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে পারেন, প্রতিনিয়ত শরীরর্চচা করতে পারেন ও কিছু নিয়ম অনুযায়ী চলতে পারেন তাহলে আপনিও লম্বা হতে পারবেন।
একজন মানুষের খাদ্যাভাসে ঠিক কি কি পরিবর্তন আনতে হবে, কি কি ব্যায়াম করতে হবে ও ঠিক কি কি নিয়ম অনুযায়ী চললে লম্বা হওয়া সম্ভব। সেই সকল বিষয় নিয়েই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে।
লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম
লম্বা হওয়ার জন্য খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে, লাইফস্টাইলে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে, সাথে কিছু ব্যায়াম ও করতে হবে। লম্বা হওয়ার জন্য যেসব উপায় ও যেসব ব্যায়াম করতে হবে আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে সেগুলো বিভিন্ন ভাগে সাজানো হয়েছে।
লম্বা হওয়ার জন্য খাদ্যাভাস ও লাইফস্টাইলে যেসব পরিবর্তন আনতে হবে চলুন সেগুলো ক্রমান্বয়ে জেনে আসা যাক।
১. রোদে হাঁটা
লম্বা হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়গুলোর মধ্যে উত্তম উপায় হচ্ছে রোদে হাঁটা। রোদের মধ্যে থাকে অতিবেগুনি রশ্মি। এই অতিবেগুনি রশ্মি শরীরের সংস্পর্শে এসে ভিটামিন ডি তৈরী করে। ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের হাড় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে হাড়ের বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না।
ভিটামিন ডি পেতে হলে দিনে সর্বনিম্ন ৩০ মিনিট রোদ পোহাতে হবে। যাদের শরীরে মেলানিন এর পরিমান বেশী অর্থ্যাৎ যারা একটু শ্যামলা বা কালো বর্ণের তাদের রোদ পোহানোর সময়টা ১৫-২০ মিনিট বৃদ্ধি করতে হবে। কেননা মেলানিন, শরীরে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ভিটামিন ডি তৈরীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩ টা এই সময়ের রোদে অতিবেগুনি রশ্মির পরিমান বেশী থাকে।
রোদ পোহানোর সময় সানস্ক্রিন/সানব্লক এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। শরীরে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ভিটামিন ডি তৈরীতে এগুলো বাঁধা দিয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে সকাল সকাল রোদ পোহানো ভালো। কেননা, দুপুরে তাপমাত্রা বেশী থাকে। যা আপনার শরীরের জন্য মোটেও ভালো হবে না।
২. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
শরীরে ভিটামিন ও মিনারেল এর অভাব থাকলে আপনি যতই লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম গুলো অনুসরণ করুন না কেন। আপনি লম্বা হতে পারবেন না। আপনাকে সুষম খাদ্য ও ফলমূল খেতে হবে। লম্বা হওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাবার হচ্ছে- মাছ, ডিম, দুধ ও আপেল। সাথে দিনে তিন সময় সুমষ খাদ্য নিশ্চিত করা। অবশ্যই জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকুন। সাথে প্রয়োজনীয় পরিমানে প্রোটিন খাওয়া।
৩. পরিমাণমত বিশ্রাম
লম্বা হওয়ার উপায়গুলোর সর্বোত্তম ও সহজ উপায় হচ্ছে বিশ্রাম নেওয়া/ঘুমানো। কারণ, আমরা যখন ঘুমাই/বিশ্রাম নেই কেবল তখনই আমাদের শরীরে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়। গ্রোথ হরমোন আমাদের শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য অনেকটাই দায়ী।
৪. দেহভঙ্গি
হাঁটা-চলা ও বসার সময় ঘাড়, পিঠ ও কোমড় সোজা করে রাখা। কুঁজো হয়ে চলাফেরা করলে মেরুদন্ডে ব্যথা সৃষ্টি হয়। যা আপনার মেরুদন্ডের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।
৫. ক্যলসিয়াম
ভিটামিন ডি এরপরে যে পুষ্টিগুনটি লম্বা হওয়ার জন্য খুবই জরুরী তা হচ্ছে ক্যালসিয়াম। শরীরে কোন কারনে গ্রোথ হরমোন উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হলে ক্যালসিয়াম খাওয়ার ফলে সেই সমস্যাটি দূর হয়ে যায়। ক্যাসসিয়াম সমৃদ্ধ কিছু খাবার হচ্ছে- দুধ, কলা, পালংশাক, বাদাম, কমলার রস।
অনেকে শরীরে ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য ক্যালসিয়াম এর ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। যদি একান্তই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া সম্ভব না হয়। কেবল তাহলেই ক্যালসিয়াম এর ট্যাবলেট খান। কেননা, ট্যাবলেট এর চেয়ে খাবারে অনেক বেশী পরিমান ক্যালসিয়াম থেকে থাকে।
৬. ফিজিক্যালি এক্টিভ থাকা
এমন অনেকে আছেন যারা সারাদিন অলস শুয়ে বসে সময় কাটান। এভাবে থাকলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোন নিঃসরন হতে বাধাগ্রস্থ হয়। শরীরে হরমোন নিঃসরণ বাধাগ্রস্থ হলে আপনি লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম গুলো যতই অনুসরন করুন না কেন ফল পাবেন না। অবশ্যই সারাটাদিন ফিজিক্যালি ও মেন্টালি এক্টিভ থাকার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে লম্বা হওয়ার জন্য যেসব ব্যায়াম এর কথা বলা হয়েছে সেসব ব্যায়াম করতে পারেন। এতে আপনি ফিজিক্যালি ও মেন্টালি এক্টিভ থাকবেন।
৭. মানসিক চাপমুক্ত থাকুন
লম্বা হতে চাইলে মানসিক চাপমুক্ত থাকাটা অতিপ্রয়োজনীয়। মানসিক চাপে থাকলে শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। হরমোন নিঃসরণ বাধাপ্রাপ্ত হলে শরীরের গ্রোথ স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হয় না। লম্বা হতে চাইলে চাপমুক্ত থাকুন।
৮. মাদক বর্জন
যেকোন ধরনের নেশা থেকে দুরে থাকতে হবে। এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য শরীরে হরমোন নিঃসরণ এর পরিমান অনেক কমিয়ে দেয়। শারীরিক ও মানষিক স্বাস্থ্য নষ্ট করে। তাই ধুমপান, জর্দ্দা, তামাক, গুল বা অন্যান্য কোন মাদক গ্রহণ করলে সেগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।
লম্বা হওয়ার জন্য যেসব ব্যায়াম করতে হবে
লম্বা হতে চাইলে লাইফস্টাইল পরিবর্তন এর পাশাপাশি ব্যায়ামগুলো গুলো করাও জরুরী। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক লম্বা হওয়ার ব্যায়ামগুলো-
১. সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শরীরকে সামনের দিকে হেলিয়ে হাতের তালুদ্বয় মাটিতে লাগানো। এভাবে কয়েক মিনিট থাকা। এভাবে করলে পায়ের মাসেল এর উপর প্রভাব পড়ে। যা আপনার উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
২. ঝুলা: উঁচু কোন কিছুকে ধরে ঝুলে থাকা। এভাবে ঝুলার সময় বডিকে ঢিলেঢালা রাখতে হবে। সর্বনিম্ন ৪-৫ মিনিট থেকে শুরু করে ১০ মিনিট পর্যন্ত ঝুলে থাকা।
৬. সাতার কাটা: সাঁতার কাটার সময় আমাদের শরীরের প্রায় প্রত্যকটি অঙ্গ নড়াচড়া করতে হয়। সাঁতার কাটার সময় আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। সাঁতার কাটা গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধিতেও সহায়ক। লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম গুলোর মধ্যে সাঁতার কাটা হচ্ছে অধিক কার্যকরী একটি উপায়।
৩. সোজা হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ানো। খেয়াল রাখতে হবে কাঁধ যেন দেয়ালে লেগে থাকে। এভাবে দাঁড়িয়ে হাতদুটো দেয়াল বরাবর উপরে তোলা এবং নিচে নামানো। এভাবে কয়েকমিনিট করলে আপনার মেরুদন্ড সোজা থাকবে।
৪. সাইকেল চালানো: সাইকেল চালিয়েও লম্বা হওয়া সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে আপনার সাইকেলটি সামান্য পরিবর্তন করতে হবে। আপনাকে আপনার সাইকেলের সিটটি এমন উচ্চতায় নিতে হবে যেন সাইকেল চালানোর সময় আপনার পা পুরোপুরি সোজা হয়ে যায়। এভাবে সাইকেল চালালে আপনার পায়ের পেশী শক্ত হবে। এবং আপনার উচ্চতাও বৃদ্ধি পাবে। তবে, সাইকেলের সিটটি এতটাও উঁচু রাখবেন না যেন আপনার পা ব্যাথা হয়ে যায়।
৫. দড়ি লাফ: যেসব বাচ্চারা লাফালাফি বেশী করে তারা তুলনামূলক কম সময়ে লম্বা হয়। আপনিও যদি দৈনিক আধা ঘন্টা দড়ি লাফ দেন তাহলে আপনার উচ্চতাও বাড়বে। লাফানোর সময় বা লাফানো শেষে পানি না খেয়ে লাফানো শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে বিশ্রাম নিয়ে পানি খাওয়া উচিত। উক্ত ব্যায়ামগুলো অনুসরণ করে আপনিও আপনার উচ্চতা বৃদ্ধি করতে পারেন।
আরো দেখুন: ১০টি খাবারের নাম যা খেলে চেহারা সুন্দর হয়
শেষ কথা
অনেকে কিছুদিন লম্বা হওয়ার ব্যায়াম গুলো করার পরে বাদ দিয়ে দেন। তারপর বলেন এই ব্যায়াম করে বা সকল নিয়মগুলো মেনে চলার পরেও আমি কোন লাভ পাইনি। তাৎক্ষণিক কোন কিছু করতে চাইলে সেটা কখনো সুফল বয়ে আনে না।
লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম গুলো সর্বনিম্ন ৬ মাস মেনে চলুন। তাহলেই ফলাফল পাবেন। নয়তো আপনি মন থেকে যতই লম্বা হতে চান না কেন, বাস্তবে সেটা প্রয়োগ না করলে কখোনই সুফল পাওয়া সম্ভব না।
অবশ্যই প্রতিনিয়ত শরীরকে এক্টিভ রাখার চেষ্টা করবেন। অলস শরীরে কোন কিছুই সম্ভব নয়। ফিজিক্যালি এক্টিভ থেকে ব্যায়াম গুলো করুন ও আর্টিকেলে দেওয়া বাকি নিয়মগুলো মেনে চলুন। ইনশআল্লাহ সফলতার ছোঁয়া পাবেন।
আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের কোর্সটিকা ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করতে পারেন এই লিংক থেকে।
Discussion about this post