লাইব্রেরি প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : পৃথিবীব্যাপী জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্ঞানের শাখাগুলোরও বিস্তৃতি ঘটছে। অর্থাৎ যত দিন যাচ্ছে জ্ঞানের স্বতন্ত্র বিভিন্ন ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হচ্ছে। একজন ব্যক্তির পক্ষে জ্ঞানের এই সবগুলো শাখায় বিচরণ করা সম্ভব নয়। জ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রই অনেক বেশি বিস্তৃত, প্রসারিত। একজন ব্যক্তির মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতাও মোটামুটি সীমিত। তাই কোনো মানুষ চাইলেও সব বিষয়ে সমান দক্ষ বা সর্ববিদ্যাবিশারদ হয়ে উঠতে পারবে না।
লাইব্রেরি প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘জাতির জীবন ধারা গঙ্গা-যমুনার মতো দুই ধারায় প্রবাহিত’—বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: লেখক ‘জাতির জীবনধারা গঙ্গা-যমুনার মতো দুই ধারায় প্রবাহিত’ বলেছেন, যা দিয়ে তিনি জাতির জীবনের দুই মূল দিকের কথা উল্লেখ করেছেন। একটি হল আত্মরক্ষা বা স্বার্থ প্রসার, যা জাতির দৈনন্দিন কাজকর্মের দিক, যেমন: অর্থ উপার্জন, ব্যক্তিগত উন্নতি ইত্যাদি। আর অন্যটি হল আত্মপ্রকাশ বা পরার্থ বৃদ্ধি, যেখানে জাতি সৃষ্টিশীলতা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মানবিক কল্যাণে মনোযোগ দেয়। লেখক জানান, যে জাতি শুধু প্রথম দিকটির দিকে মনোযোগী থাকে, সে কখনও উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে না, কারণ মানসিক ও আত্মিক উন্নতি ছাড়া জাতির সঠিক বিকাশ সম্ভব নয়।
২. ‘এখানে ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারী সম্রাট, খেয়ালমতো গড়ে তোলে তার কল্পনার তাজমহল’—কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ‘এখানে ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারী সম্রাট, খেয়ালমতো গড়ে তোলে তার কল্পনার তাজমহল’—বলতে বই সংগ্রহের বিষয়ে ব্যক্তির স্বাধীন রুচি ও পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ব্যক্তিমনের খেয়ালমতো গড়ে ওঠে। এটা হয়ে ওঠে ব্যক্তির মনের প্রতিবিম্ব। ব্যক্তি যে ধরনের রচনা ভালোবাসে তার প্রাচুর্য আর যে ধরনের রচনা অপছন্দ করে, তার অনুপস্থিতিই ব্যক্তিগত লাইব্রেরির বৈশিষ্ট্য।
ব্যক্তির পছন্দের বিষয়ে কারো বাধা দেওয়ার অধিকার নেই, আপত্তি করার সুযোগ নেই। এখানে সে স্বাধীন, স্বতন্ত্র। সম্রাট শাহজাহান যেমন নিজের রুচি ও কল্পনাকে প্রাধান্য দিয়ে তাজমহল গড়ে তাঁর শিল্পী মনের পরিচয় দিয়েছিলেন, তেমনি ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতেও ব্যক্তি নিজের রুচি ও শিল্পী মনের পরিচয় দিতে পারে।
৩. ‘লাইব্রেরি জাতির সভ্যতা ও উন্নতির মানদ-’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মানব সভ্যতার ক্রম অগ্রগতির ধারায় মানুষের অর্জিত জ্ঞান, মহৎ অনুভব সঞ্চিত হয়ে থাকে লাইব্রেরিতে। এর মাধ্যমে পূর্বপুরুষের জ্ঞান সঞ্চারিত হয় উত্তর-পুরুষের কাছে। লাইব্রেরি সম্পন্ন ব্যক্তি সত্যিকার বৈদগ্ধ ও চিত্তপ্রকর্ষের অধিকারী হয়। জাতীয় জীবনধারার দুটি দিকের দ্বিতীয় দিকটি হলো আত্মপ্রকাশ বা পরার্থ বৃদ্ধি। এদিকে রয়েছে সৃজনশীলতার আনন্দ। যে জাতি এই দিকের সাধনা করে, সে জাতি উঁচু জীবনের অধিকারী হয়। কারণ বুদ্ধির জাগরণ ও বিকাশ ঘটাতে হলে বই পড়তেই হবে। সে জন্য ‘লাইব্রেরিই একটি জাতির সভ্যতা ও উন্নতির মানদ-’ এ কথা বলা হয়েছে।
৪. ‘এক ব্যক্তির পক্ষে সর্ববিদ্যাবিশারদ হওয়া অসম্ভব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বর্তমান বিশ্বে জ্ঞানের অসংখ্যা শাখা-প্রশাখা রয়েছে। একজন ব্যক্তির পক্ষে জ্ঞানের এই সর্বময় বিস্তৃত শাখায় বিচরণ করা সম্ভব নয়।
পৃথিবীব্যাপী জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্ঞানের শাখাগুলোরও বিস্তৃতি ঘটছে। অর্থাৎ যত দিন যাচ্ছে জ্ঞানের স্বতন্ত্র বিভিন্ন ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হচ্ছে। একজন ব্যক্তির পক্ষে জ্ঞানের এই সবগুলো শাখায় বিচরণ করা সম্ভব নয়। জ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রই অনেক বেশি বিস্তৃত, প্রসারিত। একজন ব্যক্তির মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতাও মোটামুটি সীমিত। তাই কোনো মানুষ চাইলেও সব বিষয়ে সমান দক্ষ বা সর্ববিদ্যাবিশারদ হয়ে উঠতে পারবে না। এক্ষেত্রে তার সীমাবদ্ধতা থাকবেই। যে ব্যক্তি গণিত ভালো বোঝে, সে সাহিত্যেও যে সমান পারদর্শিতা দেখাতে পারবে, এমন কোনো কথা নেই। আবার একইভাবে যে ইতিহাস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে, সে পদার্থবিজ্ঞান না— ও বুঝতে পারে। তাই এ কথা বলা হয়েছে।
৫. ‘ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ব্যক্তিমনের খেয়ালমতো গড়ে ওঠে’—বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ব্যক্তির নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা এবং নিজস্ব রুচি অনুযায়ী সজ্জিত করা পুস্তকের সমাহার।
লাইব্রেরি মূলত তিন প্রকার। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে ব্যক্তির রুচিবোধ প্রতিবিম্বিত হয়। অর্থাৎ একজন মানুষের ঠিক যে ধরনের বই পড়তে পছন্দ, সেধরনের বই দিয়েই সে তার লাইব্রেরি গড়ে তোলে। একজন ব্যক্তি যদি কবিতার বই পছন্দ করে, তাহলে সে কবিতার বই দিয়ে লাইব্রেরিকে সজ্জিত করবে। অপরদিকে কেউ যদি বিজ্ঞান বা ইতিহাসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়, অথবা কথাসাহিত্য পছন্দ করে, তাহলে সে সেই ধরনের বই দিয়েই লাইব্রেরিকে সজ্জিত করতে পারবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ব্যক্তির পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। কেউ এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, অথবা কারও পরামর্শ গ্রহণ করারও কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। এখানে ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারী সম্রাট, যে তার ইচ্ছা অনুযায়ী কল্পনার তাজমহল গড়ে তুলতে পারবে।
৬. ‘বাইরের পারিপাট্যের সঙ্গে তা মানসিক সৌন্দর্যেরও পরিচয় দেয়।’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বইয়ের সংগ্রহের মাধ্যমে ঘরে লাইব্রেরি গড়ে তুললে তা ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং একই সাথে তা ব্যক্তির অন্তর্জগতের সৌন্দর্যের স্বরূপকে প্রকটিত করে।
বই জ্ঞানী মানুষের নিত্যসঙ্গী। যারা প্রকৃত জ্ঞান অন্বেষণে আগ্রহী, তারা নিয়মিত বই পড়েন। বইয়ের সাথেই তাদের সখ্য। অনেকে এতটাই বইপ্রেমী যে, ব্যক্তি উদ্যোগে বাসাবাড়িতে লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। এক্ষেত্রে সেটা ব্যক্তিগত বা পারিবারিক লাইব্রেরির যে-কোনো প্রকার হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তির রুচিবোধের প্রকাশ ঘটে। সারি সারি বই সুন্দরভাবে শেলফে সাজিয়ে রাখলে তা ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। একই সাথে একজন ব্যক্তির রুচিবোধ কেমন, সেটা তার বইয়ের সংগ্রহ এবং শেলফে বইগুলো সাজিয়ে রাখার ধরন দেখে বুঝতে পারি। অর্থাৎ লাইব্রেরি বাহ্যিক পারিপাট্যের সাথে ব্যক্তির মানসিক রুচিবোধের প্রকাশ ঘটায়।
৭. ‘একের রুচির ওপর বহুর অত্যাচার অশোভন, তেমনি বহুর রুচির ওপর একের জবরদস্তি অন্যায়।’—বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটিতে পারিবারিক লাইব্রেরি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যেখানে পরিবারের সকল সদস্যের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। লাইব্রেরি তিন প্রকার। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পারিবারিক লাইব্রেরি। পারিবারিক লাইব্রেরি মূলত পরিবারের সদস্যদের মর্জিমাফিক গড়ে ওঠে। একটা পরিবারে অনেক সদস্য থাকেন। এই সদস্যদের সবার রুচি এক নয়। প্রত্যেকের রুচিবোধে রয়েছে ভিন্নতা। তাই বই পড়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের রুচি আলাদা আলাদা। কেউ সাহিত্যের বই পছন্দ করে, কেউ আবার বিজ্ঞানভিত্তিক, কেউ ইতিহাসভিত্তিক, আবার কেউ ধর্মীয় বই পছন্দ করেন। পারিবারিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হয়। অর্থাৎ সবার রুচির দিকে খেয়াল রেখেই বই সংগ্রহ করতে হয়। এক্ষেত্রে একজনের রুচিবোধ, পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
৮. ‘অনবরত বাঁধানো পুস্তকগুলো হাতড়াতে হাতড়াতে তাদের চামড়ার তলে একটি মন সুপ্ত রয়েছে, সে সম্বন্ধে তাঁরা সচেতন হয়ে উঠবেন।’
উত্তর: বই মানুষকে উদার হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। বইয়ের সংস্পর্শে থাকা মানুষ কখনো কঠোর হতে পারে না।
নিয়মিত বই পড়ার ফলে মানুষের মন নির্মল ও পবিত্র হয় ওঠে, কলুষতা মুক্ত হয়। আমাদের সমাজে যারা ধনী এবং সম্পৎশালী হিসেবে পরিচিত, তারা স্বভাবতই একটু অহংকারী স্বভাবের হয়ে থাকে। লেখকের মতে, তারা যদি বই কেনে তাহলে এই বইগুলো পড়ার ফলে তারা তাদের নিষ্কলুষ মনকে আবিষ্কার করতে পারবে। অর্থাৎ তারা অনেক বেশি উদার হিসেবে নিজেদের আবিষ্কার করবে।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা বই থেকে লাইব্রেরি প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, বর্ণনামূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post