লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর : মজিদ ধর্মকে ব্যবহার করে মহব্বতনগরের লোকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু সেই লোকজনই আউয়ালপুরের পিরের কাছে গিয়েছে। মজিদ আউয়ালপুরে গিয়ে দেখে মহব্বতনগরের বহুলোক ভিড়ের মধ্যে আছে কিন্তু কেউ আজ মজিদকে লক্ষ করছে না। পির যেন তাদের কাছে সূর্য আর মজিদ হলো ক্ষুদ্র প্রদীপ। সূর্যের প্রখর আলোয় প্রদীপের আলো যেমন ম্লাণ হয়ে যায়, তেমনি পিরের কাছে মজিদ আজ ক্ষীন।
মজিদ ঠিকই জানে প্রাণধর্মের যাঁতাকলে পিষ্ট হবে একদিন তার প্রথা-ধর্ম। সকল বাধা ছিঁড়ে একদিন সত্য বেড়িয়ে আসবে। সে বোঝে যেদিন মানুষ সজাগ হবে সেদিন তার মিথ্যা ফাঁদ ভণ্ডামির দিন শেষ হবে; জয় হবে মানবতার সুনিশ্চিত। তাই তিনি যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অশিক্ষিত, মূর্খ গ্রামবাসীদের নিয়ে সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে খেলায় নেমেছেন, তা বড়ই সাংঘাতিক।
লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘মনে হয় এটা খোদাতালার বিশেষ দেশ।’—উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: নোয়াখালি অঞ্চলের জনজীবনে অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও ধর্মীয় কাজে কার্পণ্য না থাকায় লেখক ব্যঙ্গ করে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
নোয়াখালি অঞ্চলের মানুষের জীবনে অভাব থাকলেও দেখা যায় ভোরবেলায় মক্তবে কচিকণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে উঠে আমসিপারা পড়ার কোলাহল। পরনে কাপড় নেই, পেটে ভাত নেই, ল্যাংটা ক্ষুধাতুর ছেলেরা সেই কোলাহলের অংশীদার। তারা জীবনকে যতটা ভালোবাসে মৃত্যুকে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ভয় পায়। তাই লেখক কিছুটা ব্যাঙ্গাত্বক ভাষায় বলেছেন, এটি হয়তো খোদাতালার বিশেষ একটি অঞ্চল যেখানে মানুষ এতটা ধর্ম সংলগ্ন।
২. মজিদ যে খেলা খেলতে যাচ্ছে তা সাংঘাতিক কেন?
উত্তর: পাছে তার ভণ্ডামি ধরা পড়ে যায়—এই ভয় ও সন্দেহের জন্যে মজিদ তার খেলাকে সাংঘাতিক বলেছে।
মজিদ ঠিকই জানে প্রাণধর্মের যাঁতাকলে পিষ্ট হবে একদিন তার প্রথা-ধর্ম। সকল বাধা ছিঁড়ে একদিন সত্য বেড়িয়ে আসবে। সে বোঝে যেদিন মানুষ সজাগ হবে সেদিন তার মিথ্যা ফাঁদ ভণ্ডামির দিন শেষ হবে; জয় হবে মানবতার সুনিশ্চিত।
তাই তিনি যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অশিক্ষিত, মূর্খ গ্রামবাসীদের নিয়ে সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে খেলায় নেমেছেন, তা বড়ই সাংঘাতিক।
৩. ‘কিন্তু তারও যে বাঁচবার অধিকার আছে সেই কথাটাই সে সাময়িক চিন্তার মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে।’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা মজিদের নিজস্ব ভাবনার একটি দিক উদঘাটিত হয়েছে।
মজিদ সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য মধুপুর ছেড়ে নতুন আশায় মহব্বতনগর গ্রামে এসেছে। তার মূল সিদ্ধান্ত হলো টিকে থাকা ও সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য যা করা প্রয়োজন, তাই তাকে করতে হবে। ন্যায়-অন্যায়, সুনীতি, দুর্নীতি হলো মানুষেরই সৃষ্টি, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিতে তারও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই সে মিথ্যা প্রতারণার কথা জেনেও এই কঠিন দুঃসাহসী কাজে নেমে পড়ে।
৪. ‘মাটি-এ গোস্বা করে’—এ কথার ভাবার্থ কী?
উত্তর: মাটিতে রহীমা শব্দ করে হাঁটার ফলশ্র“তিতে মজিদ এ উক্তিটি করে।
মাটিতে তৈরি দেহ একদিন মাটিতে মিশে যাবে। মাটিকে আঘাত করে হাঁটলে মৃত্যুর পর মাটি বদলা নিবে—এমন কুসংস্কার একনও গ্রাম বাংলায় প্রচলিত। মজিদের প্রথমা স্ত্রী রহীমা মাটিতে আওয়াজ করে হাঁটলে তা মজিদের পছন্দ হয় না। তাই মজিদ স্ত্রীকে ধর্মের মোড়কে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য শাসন করেছে, মজিদ চায় রহীমার মনে যেমন স্বামীর ভয় থাকবে, অনুরূপ চলনেও।
৫. মজিদ রহীমার প্রতি গুরুগম্ভীর হয়ে পড়ে কেন?
উত্তর: রহীমাকে মজিদ তার ও মাজারের প্রতি ভয় সঞ্চার ও ধর্মের মোড়কে জড়ানো নিজের কথার মর্ম বোঝানোর জন্য গম্ভীর হয়ে পড়ে।
মজিদ মহব্বতনগরে স্থায়ী আসন পাতার পাশাপাশি রহীমা নামের এক যৌবন প্রাপ্ত তরুণীকে বিয়ে করে। কিন্তু সাদা-সিধে রহীমার চালচলন একটু বেসামাল। হাঁটার সময় মাটিতে শব্দ করে হাঁটে যা মজিদের পছন্দ নয়। তাই মজিদ তার প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য রহীমার প্রতি গুরুগম্ভীর হয়ে পড়ে।
৬. ‘কুৎসা রটনা বড় গর্হিত কাজ’Ñকেন?
উত্তর: কুৎসায় মানুষের মান-মর্যাদার হানি ঘটে বলে তা বড় গর্হিত কাজ।
অনেক সময় মানুষ শয়তানের ফাঁদে পড়ে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে আপন মানুষেরও কুৎসা রটনা করে। কিন্তু সে বোঝে না ভালো মানুষ কখনো কুৎসা রটনা করে না; কুৎসা বড় খারাপ কাজ। হাসুনির মায়ের মা স্বামীর বিরুদ্ধে যে কুৎসিত বক্তব্য দিয়েছে তা চরম কুৎসা। কুৎসা রটনাকারী সর্বত্র ঘৃণিত এবং মানুষের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ায়।
৭. ‘সে ঝংকার মানুষের প্রাণে লাগে, কানে লাগে।’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ‘লালসালু’ উপন্যাসের এই তাৎপর্য পূর্ণ উক্তিটি মজিদের কোরআনের আয়াত পড়ার ঝঙ্কারের প্রতি ইঙ্গিত করেছে।
তাহের-কাদেরের বাপের শালিসের দিন সুচতুর মজিদ কোরআনের আয়াত পড়ে তা ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে উপস্থিত উৎসুক জনতার মনে ধর্মের ভয় জোগানোর চেষ্টা করে এবং সফলতা লাভ করে। মজিদের সুরেলা গলার ঝঙ্কার দ্বারা ঘরময় যেন ঝঙ্কৃত হচ্ছিল এবং সে ঝঙ্কার উপস্থিত জনতার কানে বাজছিল এবং প্রাণকে স্পর্শ করছিল। অর্থাৎ মজিদের কোরআন পড়ার সুমধুর সুরে তারা মোহিত হয়ে পড়েছিল।
৮. যে জিনিস বোঝার নয়, তার জন্য কৌতূহল প্রকাশ করা অর্থহীন কেন?
উত্তর: আল্লাহর মহিমা ও মর্ম বোঝা সকলের পক্ষে সম্ভব নয় বলে তার জন্য অহেতুক কৌতূহল প্রকাশ করা অর্থহীন।
মজিদ মহব্বতনগরের লোকজনকে শিক্ষা দিয়েছে যে, জন্ম মৃত্যু, রোগ-শোক সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। সৃষ্টির মর্ম সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা বেশ কঠিন। তবে এটি বুঝতে হবে যে, আল্লাহ যা কিছু করেন তা মানুষের ভালোর জন্যই করেন। সেজন্য আল্লাহর কাজকর্মের ব্যাপারে বান্দার এত কৌতূহল না হওয়াই ভালো। বস্তুত এটি মানুষকে দমিয়ে রাখার অপকৌশল।
৯. আল্লাহর ওপর এত ভরসা সত্ত্বেও মজিদের চোখে জ্বালাময়ী ছবি ভেসে ওঠে কেন?
উত্তর: মজিদের ভেতরে পশুবৃত্তির কারণেই তার চোখে জ্বালাময়ী ছবি ভেসে ওঠে।
সে যতই মুখে আল্লাহ, রসূল, দ্বীনের কথা বলুক, তার ভেতরে রয়েছে পশুবৃত্তি। তাই তো তার ঘরে যৌবন ব্যাপ্ত সুঠাম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সে কাজের মেয়ে হাসুনির মার জন্য আকুলি বিকুলি করে, কামনার আগুনে পোড়ে। গ্রামবাসীর সাথে আল্লাহ রসুলের কথা বলতে গিয়েও চোখে তার ভেসে ওঠে ভোর রাতে দেখা হাসুনির মার জ্বালাময়ী দেহ, উন্মুক্ত গলা কাঁধ ও বাহুর উজ্জ্বলতা।
১০. মজিদের মন থম থম করে কেন?
উত্তর: মজিদের মন থম থম করে এজন্য যে, আউয়ালপুরের পির সাহেবের আগমনে সে সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছে।
মজিদ ওপরে যাই বলুক, ভেতরে ভেতরে সে তার নিজের শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন। পির সাহেবের মতো তার রুহানী শক্তি নেই, আউয়ালপুরে পিরের আগমনে লোকজনতার মাজারে কম আসে। সবাই নতুন পিরকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে, তার পায়ে একটু চুমু দিতে চায়। এইসব দৃশ্য দেখে মজিদ গম্ভীর হয়ে যায় এবং মাজারের রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রমে তার মনটা থম থম করে।
১১. মজিদের ক্রোধ হয় কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরে নতুন পিরের আগমনে তার মাজার ব্যবসার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গ্রামবাসীর ওপর ক্রোধ হয়।
রাতে শোয়ার সময় মজিদের স্ত্রী রহীমা পির সাহেবের অলৌকিক শক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে। এতে মজিদ বোঝে ব্যাপারটা অনেক দূর এগিয়েছে। তাছাড়া পরদিন মজিদ দেখে তার এলাকার লোকজনও পিরের কাছে ছুটে চলেছে। এতে মজিদের মনে গাঁয়ের লোকজনের প্রতি ভীষণ ক্রোধ হয়। মূলত আউয়ালপুরের নতুন পিরের আগমনে মজিদের ভীত নড়ে ওঠে।
১২. ‘এ বিচিত্র বিশাল দুনিয়ায় কী যাবার জায়গার কোনো অভাব আছে?’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: গাঁয়ের লোকজনের প্রতি ক্রুদ্ধ মজিদের মনোভাবের পরিচয় আলোচ্য বাক্যটিতে প্রকাশ পেয়েছে।
আউয়ালপুরে নতুন পিরের আগমনে দলে দলে লোক ঐ পিরের কাছে যাওয়ায় মজিদের মাজারে লোকজন আসা কমে যায়। এতে মজিদ চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং গ্রামবাসীর এই ধরনের কাজ তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতরাই শামিল মনে করে। তাই ক্রুদ্ধ হয়ে মজিদ বলেছে, এখানে যদি তার ভালোভাবে থাকবার উপায় না থাকে, তাহলে অন্যত্র সে তার ভবিষ্যৎ দেখবে। বাক্যটিতে মুখোশের আড়ালে মজিদের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে।
১৩. মজিদ আউয়ালপুরে গেল কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরের পির সাহেবের প্রসার ঘটলে তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাবে—একথা ভেবে মজিদ আউয়ালপুরে গেল।
মজিদ অত্যন্ত চতুর এবং কূটকৌশলী একজন মানুষ। সে বুঝতে পেরেছিল মহব্বতনগরের লোকদের ফিরিয়ে আনতে না পারলে তার ধর্মব্যবসায় মন্দা পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, একবার তার প্রতি কারো অবিশ্বাস বা সন্দেহ দেখা দিলে তা ক্রমান¦য়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, নিজের অবস্থান অটুট রাখার জন্য, নতুন পিরের কারসাজি সরিয়ে দেওয়ার জন্য সে আউয়ালপুরে যায়।
১৪. ‘যেন বিশাল সূর্যোদয় হয়েছে, আর সে আলোয় প্রদীপের আলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আলোচ্য অংশটুকু দ্বারা আউয়ালপুরের পির সাহেবের সঙ্গে মজিদের তুলনা করা হয়েছে।
মজিদ ধর্মকে ব্যবহার করে মহব্বতনগরের লোকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু সেই লোকজনই আউয়ালপুরের পিরের কাছে গিয়েছে। মজিদ আউয়ালপুরে গিয়ে দেখে মহব্বতনগরের বহুলোক ভিড়ের মধ্যে আছে কিন্তু কেউ আজ মজিদকে লক্ষ করছে না। পির যেন তাদের কাছে সূর্য আর মজিদ হলো ক্ষুদ্র প্রদীপ। সূর্যের প্রখর আলোয় প্রদীপের আলো যেমন ম্লাণ হয়ে যায়, তেমনি পিরের কাছে মজিদ আজ ক্ষীন।
১৫. পির সাহেব হামলা করতে চায়নি কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরের পির আউয়ালপুরে স্থায়ী নয়। তাছাড়া তার বয়স হয়েছে তাই সে মহব্বতনগরে হামলা করতে চায়নি।
আউয়ালপুর থেকে মহব্বতনগর অনেকটা দূর, প্রায় তিন গ্রাম ব্যবধান। এত দূরে এসে হামলা করা তেমন সুবিধার হবে বলে পির সাহেব মনে করেন নি। তাছাড়া বয়সের কারণে এখন সে জরাক্রান্ত ও দুর্বল, যৌবনের তেজ নেই। এই বয়সে দাঙ্গা-হাঙ্গামা তার পছন্দের নয় বলে মহব্বতনগরে সে হামলা করতে উৎসাহ দেখায়নি।
১৬. মজিদের মনে অস্বস্তি কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরে মজিদের মতো অনুরূপ এক ধর্মব্যবসায়ীর আগমনে তার মনে অস্বস্তি বিরাজ করে।
মজিদ আউয়ালপুরের পিরের সম্পর্কে মহব্বতনগরের লোকজনকে বুঝিয়েছে, ঐ পির আসলে ভ- এবং বিপদগামী। মজিদের বক্তৃতায় আবিষ্ট হয়ে মহব্বতনগরের কিছু যুবক পিরের আস্তানায় হামলা করেছে। মজিদ আশঙ্কা করছে যে পির সাহেবের সাঙ্গপাঙ্গরা এ হামলার বদলা নেবে। কিন্তু কোনো খোঁজ খবর না পাওয়ায় মজিদের মনে রাত-দিন অস্বস্তি লেগে রয়েছে।
১৭. আমেনা আউয়ালপুরের পিরের সাহায্য চায় কেন?
উত্তর: আমেনা সন্তান কামনার জন্য আউয়ালপুরের পিরের সাহায্য চায়। খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবি পীরের অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাসী। ব্যাপারীর সাথে বহুদিন ঘর করেছে সে, কিন্তু তার কোনো সন্তান হয় না। তার বিশ্বাস, পির সাহেবের পানিপড়া খেলে সে সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হবে। সে জন্য আমেনা বিবি মাতৃত্ব পূর্ণ করার জন্য আউয়ালপুরের পিরের সাহায্য চায়।
১৮. ধলা মিঞা আউয়ালপুরে যেতে চায় না কেন?
উত্তর: আউয়ালপুর ও মহব্বতনগরের মাঝপথে দেবংশি তেঁতুল গাছটির ভয় এবং পিরের সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে ধলা মিঞা আউয়ালপুরে যেতে চায় না।
খালেক ব্যাপারী তার সম্বন্ধী ধলা মিঞাকে আমেনা বিবির জন্য আউয়ালপুর থেকে গোপনে পির সাহেবের পানিপড়া আনতে বলে। ধলা মিঞা ভাবে পানিপড়া আনতে হলে শেষ রাতে যাত্রা শুরু করে ভোর হওয়ার পূর্বেই ফিরে আসতে হবে। পথের মাঝে তেঁতুল গাছের ভূতপ্রেতের আস্তানা এবং পির সাহেবের সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে ধলা মিঞা আওয়ালপুরে যেতে চায় না।
১৯. ‘সে অন্দরের লোক, আর তার তাগিদটা বাঁচা মরার মতো জোরালো।’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ লাইনটিতে আমেনা বিবির জন্য পানিপড়া আনার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে।
আমেনা বিবির বিবাহের দীর্ঘ ত্রিশ বছর পরও তার সন্তান হয় না। এজন্য সে মাতৃত্ব হৃদয় পূর্ণ করবার জন্য পিরের সাহায্য চায়। পিরের পানিপড়া খেলে তার ইহজীবনের দুঃখ ঘুচে যাবে, সে সন্তানবতী হবে; পাবে মাতৃত্বের স্বাদ। তাই মজিদ নতুন পিরের কাছে মহব্বতনগরের লোকজনকে যেতে নিষেধ ও তার সাথে দাঙ্গা করা আমেনা বিবি মোটেও পছন্দ করেনি।
২০. ‘সজ্ঞানে না জানলেও তারা একটা, পথ তাদের এক’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এ লাইনটিতে মহব্বতনগরের দুই শক্তিশালী মানুষ মজিদ ও খালেক ব্যাপারীর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।
মহব্বতনগরের দুই শক্তিশালী মানুষ মজিদ আর খালেক ব্যাপারী। খালেক ব্যাপারী বিস্তর জমি জমার মানুষ এবং সে গ্রামের মাতব্বরও। অন্যদিকে মজিদ হলো মাজারের খাদেম। খালেক ব্যাপারীর দৃষ্টিতে সে হলো সমাজের মূল। তাঁর কথায় সমাজ ওঠে বসে।
মজিদের যেমন খালেক ব্যাপারীর প্রয়োজন, তদ্রুপ অলৌকিক শক্তিধর যাকে গ্রামবাসী শ্রদ্ধা, ভয় ও ভক্তি করে, সে মজিদকে খালেক ব্যাপারী হটায় না। তাই বলা যায়, মজিদ আর খালেক ব্যাপারী একই পথের পথিক।
◉ আরও দেখ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বই থেকে লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। আমি আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post