শিল্পকলার নানা দিক অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানারকম বস্তুর প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের প্রয়োজনীয় এ বস্তুগুলোর প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী হলেই হয়। কিন্তু মানুষ এ বস্তুগুলো শুধু প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী করেই সৃষ্টি করে না, এর সঙ্গে থাকে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। কারণ, প্রয়োজন মেটাবার পর মানুষের মনের স্বাভাবিক সৌন্দর্যবোধ থেকেই দৃষ্টি পড়ে বস্তুটির সৌন্দর্যের দিকে। আর এজন্যই প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না।
শিল্পকলার নানা দিক অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন মিলিয়েই মানুষের সৌন্দর্যের আশা পূর্ণ হয়’—কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিসকে সুন্দর রূপ দিয়ে গড়ে মানুষ তার সৌন্দর্যের চাহিদা পূরণ করে।
মানুষ স্বভাবত সৌন্দর্য পিয়াসী। নিত্যদিনের প্রয়োজনে তাকে নানা জিনিস ব্যবহার করতে হয়। প্রয়োজনীয় জিনিসটির মাঝেও মন সুন্দর খোঁজে। তাই মানুষের মন প্রয়োজনীয় জিনিসটিকে সুন্দররূপে সাজায়। ব্যবহারটি হলো প্রয়োজন এবং সৌন্দর্য সৃষ্টি অপ্রয়োজন। এই দুই নিয়েই সৌন্দর্যের চাহিদা পূরণ হয়।
২. শিল্পকলা চর্চা সকলের পক্ষে অপরিহার্য কেন?
উত্তর: সুন্দর আর আনন্দের জন্য সর্বোপরি ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার জন্য শিল্পকলা চর্চা সবার পক্ষে অপরিহার্য।
আমাদের সংস্কৃতি বা কালচার গড়ে উঠেছে নানান শিল্পকলার কারুকাজ দিয়ে। সব শিল্পীর একটি দায়িত্ব আছে—তা হলো দেশের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা। শিল্পচর্চার ধারা দেখে একটি দেশকে ও দেশের মানুষকে চেনা যায়, জানা যায়। এজন্য শিল্পকলার চর্চা সবার পক্ষে অপরিহার্য।
৩. ‘সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে।’ কারণ প্রয়োজন মেটানোর জন্য সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় না।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরা নানা ধরনের বস্তু ব্যবহার করি। প্রয়োজন মেটাবার পর বস্তুটির সৌন্দর্য আমাদের চোখে ধরা পড়ে। যখন আমরা বস্তুটিকে ব্যবহার করি তখন তার সৌন্দর্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। এমনকি বস্তুটি সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সঙ্গে এই সৌন্দর্যের সম্পর্ক নেই। তাই সব সুন্দরই সরাসরি প্রয়োজনের বাইরে।
৪. শিল্পকলা সৃষ্টি হয়েছে কেন?
উত্তর: মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে, সুন্দরকে অন্য মানুষের মধ্যে বিস্তার করতে চেয়েছে। তাই সৃষ্টি হয়েছে শিল্পকলা।
মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন সে তার সেই আনন্দকে, প্রকাশ করতে চায় নানা রূপে। তাই সৃষ্টি হয়েছে চিত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক। পুরাকালের গুহা মানুষ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানুষ নিজের পাওয়া আনন্দকে, সুন্দরকে অন্য মানুষের মধ্যে বিস্তার করতে চেয়েছে। নিজের মানসিকতাকে ভাগ করে নিতে চেয়েছে সকলের সাথে। তাই সৃষ্টি হয়েছে নানা আঙ্গিকের শিল্পকলা। যেমন: চিত্রকলা, নৃত্যকলা, সংগীতকলা ইত্যাদি কলা।
৫. ‘নন্দনতত্ত্ব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: সুন্দরকে জানার যে জ্ঞান তার নাম নন্দনতত্ত্ব।
যে কাজ মানুষকে আনন্দ দেয়, খুশি করে তাকে সুন্দর বলা হয়। আর এ সুন্দরকে জানার জ্ঞানকে নন্দনতত্ত্ব বলে। নন্দনতত্ত্ব মানে সুন্দরকে বিশ্লেষণ করা। সুন্দরকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা। শিল্পীর শিল্পকে সৌন্দর্যের দৃষ্টিকোণ থেকে পরীক্ষা বা বিশ্লেষণ অথবা রচনা করার পদ্ধতিই হলো নন্দনতত্ত্ব। শিল্প সাহিত্য ইত্যাদির সৌন্দর্য সংক্রান্ত মতবাদ বা জ্ঞানই নন্দনতত্ত্ব।
৬. শিল্পের সৃষ্টি হয়েছে কেন?
উত্তর: মানুষের নিজের আনন্দকে, সুন্দরকে অন্যের মাঝে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হয়েছে শিল্প।
সব মানুষই জীবনে আনন্দকে পাওয়ার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর আমরা আনন্দ বুঝি রূপ-রস-স্পর্শ-গন্ধ ইত্যাদির সাহায্যে। মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন সে নানা ভাবে তার এ আনন্দকে প্রকাশ করতে চায়। তাই নানা রূপের মাধ্যমে সে নিজেকে প্রকাশ করে। মানুষের এই আনন্দকে প্রকাশ করার ইচ্ছা থেকেই শিল্পের সৃষ্টি হয়েছে।
৭. শুধু প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না কেন?
উত্তর: প্রয়োজনের বাইরে মানুষের মনে রয়েছে স্বাভাবিক সৌন্দর্যবোধ। তাই প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানারকম বস্তুর প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের প্রয়োজনীয় এ বস্তুগুলোর প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী হলেই হয়। কিন্তু মানুষ এ বস্তুগুলো শুধু প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী করেই সৃষ্টি করে না, এর সঙ্গে থাকে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। কারণ, প্রয়োজন মেটাবার পর মানুষের মনের স্বাভাবিক সৌন্দর্যবোধ থেকেই দৃষ্টি পড়ে বস্তুটির সৌন্দর্যের দিকে। আর এজন্যই প্রয়োজন মিটলেই মানুষ খুশি হয় না।
৮. আনন্দকে আমরা কীভাবে বুঝি? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আনন্দকে আমরা বুঝি রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ ইত্যাদির সাহায্যে ও ইন্দ্রিয়সকলের সাহায্যে।
সব মানুষই জীবনের আনন্দ পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ। আমরা আমাদের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আনন্দকে বুঝি। চোখের দেখা, মনের অনুভূতি, স্পর্শ, গন্ধ ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা আনন্দকে বুঝি।
৯. ‘যে কাজ সকলকে আনন্দ দেয়, খুশি করে, তাই সুন্দর’।—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘শিল্পকলার নানা দিক’ রচনায় লেখক শিল্পের বৈশিষ্ট্য ও সুন্দরের ধারণা ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘যে কাজ সকলকে আনন্দ দেয়, খুশি করে তাই সুন্দর’।
শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে সুন্দরকে প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতি জগতে নানাভাবে সুন্দরের প্রকাশ ঘটে। কখনো রেখার সাহায্যে, কখনো রঙের সাহায্যে, কখনো মাটি বা পাথরের সাহায্যে সুন্দরকে সৃষ্টি করা হয়, যা মানুষকে আনন্দ দেয়। এ প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে, যে কাজ সকলকে আনন্দ দেয় খুশি করে, তাই সুন্দর।
১০. ‘আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আনন্দের মধ্য দিয়েই মানুষের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় এবং সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে জীবনীশক্তি।
আনন্দ মানুষের মনকে বিষণ্নতা থেকে মুক্তি দেয়। তাই আনন্দ লাভের জন্য মানুষ নানারকম চেষ্টা করে। রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ প্রভৃতির মধ্য দিয়ে আনন্দকে অনুভব করা যায়। মানুষ যখন আনন্দ পায় তখন সে তার মনকে নানা রূপে প্রকাশ করতে চায়। এভাবে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন শিল্পকলা। তাই বলা যায়, আনন্দ প্রকাশ জীবনীশক্তির প্রবলতারই প্রকাশ।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা বই থেকে গণঅভ্যুত্থানের কথা অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, বর্ণনামূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post