ষষ্ঠ শ্রেণির মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৪ : সুপ্রিয় শিক্ষকমণ্ডলী, ২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় আপনাকে সহায়তা দেওয়ার জন্য এই নির্দেশিকা প্রণীত হয়েছে। আপনারা ইতোমধ্যেই জানেন যে নতুন শিক্ষাক্রমে গতানুগতিক পরীক্ষা থাকছে না, বরং সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।
ইতোমধ্যে অনলাইন ও অফলাইন প্রশিক্ষণে নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন নিয়ে আপনারা বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক সহায়িকাতেও মূল্যায়নের প্রাথমিক নির্দেশনা দেয়া আছে এবং ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে আপনারা সফলভাবে শিখনকালীন মূল্যায়ন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছেন।
ষষ্ঠ শ্রেণির মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৪
তারপরেও, সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মূল্যায়ন বিধায় এই মূল্যায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আপনাদের মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। এই নির্দেশিকা সেসকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় আপনার ভূমিকা ও কাজের পরিধি সুস্পষ্ট করতে সাহায্য করবে।
যে বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে
১. নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়বস্তুভিত্তিক নয়, বরং যোগ্যতাভিত্তিক। এখানে শিক্ষার্থীর শিখনের উদ্দেশ্য হলো কিছু সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন । কাজেই শিক্ষার্থী বিষয়গত জ্ঞান কতটা মনে রাখতে পারছে তা এখন আর মূল্যায়নে মূল বিবেচ্য নয়, বরং যোগ্যতার সবকয়টি উপাদান- জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সমস্বয়ে সে কতটা পারদর্শিতা অর্জন করতে পারছে তার ভিত্তিতেই তাকে মূল্যায়ন করা হবে।
২. শিখন-শেখানো প্রক্রিয়াটি অভিজ্ঞতাভিত্তিক ৷ অর্থাৎ শিক্ষার্থী বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মধ্য দিয়ে যোগ্যতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে। আর এই অভিজ্ঞতা চলাকালে শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাজ এবং আচরন পর্যবেক্ষণ করে মূল্যায়ন চালিয়ে যাবেন। প্রতিটি অভিজ্ঞতা শেষে পারদর্শিতার সূচক অনুযায়ী শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জনের মাত্রা রেকর্ড করবেন
৩. নম্বরভিত্তিক ফলাফলের পরিবর্তে এই মূল্যায়নের ফলাফল হিসেবে শিক্ষার্থীর অর্জিত যোগ্যতার (জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ) বর্ণনামূলক চিত্র পাওয়া যাবে।
৪. শিক্ষক সহায়িকা অনুযায়ী একটি অভিজ্ঞতা চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী যে সকল কাজের নির্দেশনা দেওয়া আছে শুধুমাত্র ওই কাজগুলকেই মূল্যায়নের জন্য বিবেচনা করতে হবে বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনা বাইরে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত কাজ করানো যাবেনা।
৫. অভিজ্ঞতা পরিচালনার সময় যেখানে শিক্ষা উপকরণের প্রয়োজন হয়, শিক্ষক নিশ্চিত করবেন যেন উপকরণ গুলো বিনামূল্যের, স্বল্পমূল্যের এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য (রিসাইকেল) উপাদান দিয়ে তৈরি। প্রয়োজনে বিদ্যালয় এইসব শিক্ষা উপকরণের ব্যায়ভার বহন করবে।
মূল্যায়ন পরিচালনায় শিক্ষকের করণীয়
শিক্ষার্থীরা কোনো শিখন যোগ্যতা অর্জনের পথে কতটা অগ্রসর হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণের সুবিধার্থে প্রতিটি একক যোগ্যতার জন্য এক বা একাধিক পারদর্শিতার সূচক (Performance Indicator, PI) নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি পারদর্শিতার সূচকের আবার তিনটি মাত্রা নির্ধারণ করা যোগ্যতাসমূহের পারদর্শিতার সূচকসমূহ এবং তাদের তিনটি মাত্রা পরিশিষ্ট-১ এ দেয়া আছে।
প্রতিটি পারদর্শিতার সূচকের তিনটি মাত্রাকে মূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহের সুবিধার্থে চতুর্ভুজ, বৃত্ত, বা ত্রিভুজ (ロ 〇 △) দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে)। শিখনকালীন ও সামষ্টিক উভয় ক্ষেত্রেই পারদর্শিতার সূচকে অর্জিত মাত্রার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জনের মাত্রা নির্ধারিত হবে। অর্জিত মাত্রা নিরূপণ করবেন ও রেকর্ড করবেন। এছাড়া শিক্ষাবর্ষ শুরুর ছয় মাস পর একটি এবং বছর শেষে আরেকটি যান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের পূর্বনির্ধারিত কিছু কাজ (এসাইনমেন্ট, প্রকল্প ইত্যাদি) সম্পন্ন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া
অর্জিত মাত্রা নিরূপণ করবেন ও রেকর্ড করবেন। এছাড়া শিক্ষাবর্ষ শুরুর ছয় মাস পর একটি এবং বছর শেষে আরেকটি যান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের পূর্বনির্ধারিত কিছু কাজ (এসাইনমেন্ট, প্রকল্প ইত্যাদি) সম্পন্ন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া চলাকালে এবং প্রক্রিয়া শেষে একইভাবে পারদর্শিতার সূচকসমূহে শিক্ষার্থীর অর্জিত মাত্রা নির্ধারণ করা হবে। প্রথম ছয় মাসের শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং যাম্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের তথ্যের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীর যাণ্মাসিক একাডেমিক ট্রাগত্রিস্ট তৈরি হবে। প্রথম যাণ্মাসিক রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুত করা হবে।
ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন
- ২০২৪ সালের বছরের মাঝামাঝিতে বিষয়ের যাম্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন ও বছরের শেষে বাৎসরিক সামষ্টিক মুল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। পূর্ব ঘোষিত এক সপ্তাহ ধরে এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালিত হবে। স্বাভাবিক ক্লাসরুটিন অনুযায়ী বিষয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য অর্পিত কাজ সম্পন্ন করবে।
- সামষ্টিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অন্তত এক সপ্তাহ আগে শিক্ষার্থীদেরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বুঝিয়ে দিতে হবে এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন শেষে অর্জিত পারদর্শিতার মাত্রা রেকর্ড করতে হবে।
- শিক্ষার্থীদের প্রদেয় কাজের নির্দেশনা, সামষ্টিক মূল্যায়ন ছক, এবং শিক্ষকের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য নির্দেশাবলী সকল প্রতিষ্ঠানে সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েকদিন পূর্বে বিদ্যালয়ে প্রেরণ করা হবে।
আচরণিক নির্দেশক
পরিশিষ্ট ৫-এ আচরণিক নির্দেশকের একটা তালিকা দেয়া আছে। শিক্ষক বছর জুড়ে পুরো শিখন কার্যক্রম চলাকালে শিক্ষার্থীদের আচরণ, দলীয় কাজে অংশগ্রহণ, আগ্রহ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে এই নির্দেশকসমূহে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা নির্ধারণ করবেন। পারদর্শিতার নির্দেশকের পাশাপাশি এই আচরণিক নির্দেশকে অর্জনের মাত্রাও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ট্রা্গক্রিপ্টের অংশ হিসেবে যুক্ত থাকবে। আচরণিক নির্দেশকগুলোতে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা শিক্ষক বছরে শুধুমাত্র দুইবার ইনপুট দিবেন। ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সময় একবার এবং বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সময় একবার।
মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চর্চা করার সময় জেন্ডার বৈষম্যমূলক ও মানব বৈচিত্রহানীকর কোন কৌশল বা নির্দেশনা ব্যবহার করা যাবেনা। যেমন- নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, লিঙ্গবৈচিত্র্য ও জেন্ডার পরিচয়, সামর্থ্যের বৈচিত্র্য, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদির ভিত্তিতে কাউকে আলাদা কোনো কাজ না দিয়ে সবাইকেই বিভিন্ন ভাবে তার পারদর্শিতা প্রদর্শনের সুযোগ করে দিতে হবে। এর ফলে, কোন শিক্ষার্থীর যদি লিখিত বা মৌখিক ভাব প্রকাশে চ্যালেঞ্জ থাকে তাহলে সে বিকল্প উপায়ে শিখন যোগ্যতার প্রকাশ ঘটাতে পারবে।
একইভাবে, কোন শিক্ষার্থী যদি প্রচলিত ভাবে ব্যবহত মৌখিক বা লিখিত ভাবপ্রকাশে স্বচ্ছন্দ না হয়, তবে সেও পছন্দমত উপায়ে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারবে। অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীর বিশেষ কোন শিখন চাহিদা থাকার ফলে, শিক্ষক তার সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান থাকেন এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কাজেই এ ধরণের শিক্ষার্থীদেরকে তাদের দক্ষতা/আগ্রহ/সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে তাদের শিখন উন্নয়নের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
নিচের লিংক থেকে সংগ্রহ করুন
- বাংলা
- ইংরেজি
- গণিত
- বিজ্ঞান
- ডিজিটাল প্রযুক্তি
- জীবন ও জীবিকা
- ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা
- শিল্প ও সংস্কৃতি
- ইসলাম শিক্ষা
- হিন্দু ধর্ম শিক্ষা
মূল্যায়নে অ্যাপসের ব্যবহার
জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে ২০২৪ সালে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সকল বিষয়ের শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শিক্ষকগণ “নৈপুণ্য” আ্যাপটি ব্যবহার করে সম্পন্ন করবেন। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ও মূল্যায়ন সংশ্লিষ্ট কাজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণের অংশগ্রহণে এবং শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তকরণের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। কারিকুলাম অনুযায়ী শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়নের পারদর্শিতার নির্দেশক অর্জনে শিক্ষার্থী কোন পর্যায়ে রয়েছে সেই তথ্য বিষয় শিক্ষকরা ইনপুট দিলে শিক্ষার্থীর জন্য স্বয়ংক্রিয় রিপোর্ট প্রস্তুত করে দিবে এই ‘নৈপুণ্য’ আ্যাপ।
আরো দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির সকল বিষয়ের মূল্যায়ন নির্দেশিকা
ষষ্ঠ শ্রেণির মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৪ মূলত শিক্ষাকদের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রকাশ করেছে। উপরে দেওয়া লিংক থেকে সম্পূর্ণ নির্দেশিকা পারদর্শিতার সূচকসহ সংগ্রহ করে নিন। নির্দেশনাটি সংগ্রহ করতে কোনো অসুবিধা হলে কোর্সটিকার ফেসবুক পেজে ইনবক্স করুন। আর আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করতে পারেন এই লিংক থেকে।
Discussion about this post