৭ম শ্রেণির গণিত ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান ২০২৪ : আমরা চারদিকে বিভিন্ন আকৃতি (Shape) ও আকারের (Size) বস্তু দেখতে পাই। কিছু চলো আমরা কিছু বস্তু তুলনা করে দেখি। তোমরা উপরের ছক থেকে বুঝতে পারছ যে কিছু জিনিস দেখতে হুবহু সমান, আবার কিছু দেখতে একই রকম, কিন্তু সমান নয়।
যেমন আম গাছের যে দুইটি পাতা তুলনা করবে তারা দেখতে একই রকম হলেও আকারে তাদের ভিন্নতা রয়েছে। আবার তোমাদের যেকোনো দুইজনের গণিত বই সবদিক থেকেই একই রকম। জ্যামিতিক আকৃতিগুলোর ক্ষেত্রেও এমন দেখা যায়।
৭ম শ্রেণির গণিত ৬ষ্ঠ অধ্যায় সমাধান ২০২৪
দুইটি আকৃতি একেবারে সবদিক থেকে একইরকম হতে পারে আবার একই ধরণের দুইটি আকৃতির আকারে ভিন্নতা থাকতে পারে। এই ধারণাগুলোর খুব সুন্দর নাম রয়েছে, সর্বসমতা ও সদৃশতা। আমরা আর কিছু কাজের মাধ্যমে এই ধারণাগুলোকেই এই অধ্যায়ে বুঝবো।
এই মাত্র কিছু জিনিসের যে তুলনা করেছি সেগুলোর মাঝে একটি তুলনা ছিল তোমাদের দুইটি গণিত বইয়ের। তাদের আকার আকৃতি এবং ওজন সবকিছুই মিলে গিয়েছিল। কিছু জ্যামিতিক আকৃতিও এমন সব দিক থেকে মিলে যেতে পারে। দুইটি ব্রিভুজকে যদি আমরা তুলনা করতে চাই, তাহলে দেখবো তাদের তিনটি কোণ এবং তিনটি বাহুই মিলে যায় কি না। এমনভাবে সব দিক যদি মিলে যায় তাহলেই আমরা দুটিকে
আকৃতিকে বলবো সর্বসম। সবকিছুই সমান হচ্ছে তাই আমরা সংক্ষেপ করে তাদেরকে সর্বসম বলছি। দুটি জ্যামিতিক আকৃতি সর্বসম কি না তা দেখার জন্য একটি উপায় হচ্ছে তাদের অংশগুলো পরিমাপ করে মিলিয়ে দেখা। যেমন ত্রিভুজের ক্ষেত্রে সবকয়টি কোণ এবং বাহু। আমরা দুইটি জ্যামিতিক আকৃতির চিত্রকে সরাসরি তুলনা করতে পারি একটিকে আরেকটির উপরে রেখে। চলো আমরা একটি খেলার মাধ্যমে সেটির উপায় বের করি। কাগজের এরোপ্লেন আমরা সবাই এবারে একটি করে কাগজের এরোপ্লেন বানিয়ে সেগুলো উড়াবো এবং তাদের মাঝে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার আকৃতি খুঁজে বের করবো।
সর্বসমতা ও সদৃশতা
ধাপ-১: প্রত্যেক শিক্ষার্থী একটি করে কাগজ নিয়ে কাগজে কলম দিয়ে একটি চিহ্ন দিয়ে রাখো। তোমরা চিহ্নিত কাগজ দিয়ে প্লেন তৈরি করবে।
ধাপ-২: প্রথমে কাগজটিকে চিত্রের মত করে দৈর্ঘ্য বরাবর সমান ২ অংশে ভাঁজ করো। এবারে ভাঁজ খুললে কাগজের মাঝ বরাবর একটি ভাঁজের দাগ দেখা যাবে। প্রয়োজনে ভাঁজ করার প্রক্রিয়াটি একাধিক বার শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নাও।
ধাপ-৩: এবার চিত্রের মত করে কাগজের উপরের বাম পাশের অংশকে মাবখানের দাগটির সাথে মিলিয়ে ভাঁজ করো। একইভাবে, উপরের ডান পাশের অংশটিও চিত্রের মত করে ভাঁজ করো।
ধাপ-৪: চিত্রের মত করে আবারো বাম এবং ডান পাশের অংশকে মাঝের দাগ বরাবর মিলিয়ে ভাঁজ করো।
ধাপ-৫: আরো একবার বাম এবং ডান পাশের অংশকে মাঝের দাগ বরাবর ভাঁজ করো। ভাঁজ করার পর কেমন দেখাবে তা চিত্র থেকে মিলিয়ে নাও।
ধাপ-৬: সম্পূর্ণ কাগজটিকে একটু উপরে তুলে দুই হাত দিয়ে ধরো। এবার মাঝ বরাবর নিচের দিকে ভাঁজ করো। তারপর চিত্রের মত করে হাতের দুই আঙুল দিয়ে মাঝের অংশটুকু ধরো।
ধাপ-৭: আমরা এখন প্লেন উড়ানোর প্রতিযোগিতা করবো। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী তোমরা একজন করে প্লেন নিয়ে আসবে এবং নির্দিষ্ট জায়গায় দীড়িয়ে প্লেন ছুড়বে। সবাই চেষ্টা করবে নিজেদের প্লেন চিহ্নিত জায়গাটির একদম কাছাকাছি রাখতে। যার প্লেন চিহ্নিত স্থানের সবচেয়ে কাছে গিয়ে পড়বে সে বিজয়ী হবে।
এবারে এসো আমরা প্লেনটির বিভিন্ন অংশের জ্যামিতিক আকৃতিগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখি। ধাপ ৩ পর্যবেক্ষণ করো, সেখানে আমরা দুই অংশের শীর্ষকে ভীজ করে পাশের আকৃতিটি পেয়েছিলাম। এখান থেকে তোমরা বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি খুঁজে বের করো। তোমাদের জন্য দুইটি ত্রিভুজ বের করে দেখানো হলো। তাদের বাহু এবং কোণগুলো পরিমাপ করে নিচের ছকটি পূরণ করো।
এবারে আরেকটি কাগজ নিয়ে প্লেন তৈরির ধাপ ৩ পর্যন্ত আগাও। দুইপাশে উৎপন্ন ত্রিভুজের সমান করে কাগজ কেটে নাও। তারপরে ধাপ ৪ এর মত করে আরেকটি ভাঁজ করো এবং আবারো দুইপাশে উৎপন্ন ত্রিভুজের
আকৃতিকে দুই পাশেই কাগজ কেটে নাও। এবারে এই দুই জোড়া ত্রিভুজেরই একইরকম বাহুগুলোর একটিকে আরেকটির উপরে বসাও। একটি ত্রিভুজকে আরেকটি ত্রিভুজের উপরে সমানভাবে পতন ঘটাচ্ছি আমরা, তাই আমরা এইভাবে মিলিয়ে দেখাকে বলবো সমাপতন (superposition) |
একটি ত্রিভুজ আরেকটি ত্রিভুজের উপরে সমাপতিত হয়েছে এক্ষেত্রে। একইভাবে আমরা যেকোনো জ্যামিতিক ক্ষেত্রকেই পরীক্ষা করে দেখতে পারি তারা সমাপতিত হচ্ছে কী না। দুইটি ক্ষেত্র যদি সমাপতন করলে মিলে যায়, তাহলে তারা সর্বসম হবে। সুবিধাজনক ব্যাপার হলো, দুইটি ত্রিভুজ সর্বসম কিনা তা জানতে আমাদের সবসময় ছয়টি উপাদানই জানতে হবে না।
আবার আমাদের ত্রিভুজকে কেটে নিয়ে একটিকে আরেকটির উপরে সমাপতন করেও সবসময় পরীক্ষা করতে হবে না। নির্দিষ্ট কিছু অংশ তুলনা করেই আমরা বলতে পারবো দুইটি ত্রিভুজ সর্বসম কিনা। চলো আমরা দেখি একটি ত্রিভুজ দেয়া থাকলে সবচেয়ে কম কী পরিমাণ তথ্য ব্যবহার করে আমরা আরেকটি সর্বসম ত্রিভুজ আকতে পারি।
আমরা আসলে এটিকে এভাবেও বলতে পারি যে, সবচেয়ে কম কী পরিমাণ তথ্য দেয়া থাকলে, আমরা একটি নির্দিষ্ট ত্রিভুজই পাবো। আগের শ্রেণিতে তোমরা চাঁদা, রুলার এবং কম্পাস ব্যবহার করতে শিখেছ নিশ্চয়ই। আমরা এবারে হাতে কলমে বেশ কিছু ত্রিভুজ নিজেরা এঁকে দেখবো কখন কোন তথ্য ব্যবহার করে আমরা একটিই ত্রিভুজ পেতে পারি।
চলো আমরা চিন্তা করে দেখি, সর্বসমতার এই বৈশিষ্ট্যগুলো যুক্তিতে ব্যবহার করে আমরা ব্রিভুজের অন্য কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য বের করতে পারি কি না। ত্রিভুজের বাহু ও কোণ নিয়ে কিছু সম্পর্ক দেয়া থাকলে অন্য কোনো সম্পর্ক পাওয়া যাবে কি না তা বের করতে আমরা চেষ্টা করবো দুইটি সর্বসম ত্রিভুজ বের করার।
উদাহরণঃ একটি ত্রিভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান হলে তাদের বিপরীত কোণগুলোও পরস্পর সমান হবে। সমাধানঃ এখানে আমরা চেষ্টা করবো ব্রিভুজকে দুইটি ত্রিভুজে ভাগ করে নিয়ে সর্বসম দেখাতে। তাহলেই কোণ দুইটিকে সমান দেখানো আমাদের জন্য সহজ হবে। ধরে নিচ্ছি চিত্রের মত একটি ত্রিভুজ ABC দেয়া আছে যার AB ও AC বাহদ্বয় পরস্পর সমান। এবারে আমরা A বিন্দু থেকে BC বাহুর উপরে মধ্যমা অঙ্কন করি যেটি 80 বাহকে D বিন্দুতে ছেদ করে।
এবারে চলো আমরা ত্রিভুজ ABD এবং ত্রিভুজ ACD এর তুলনা করে দেখি। প্রশ্নের শর্তানুসারে বাহ AB এবং বাহু AC পরস্পর সমান। আরেকদিকে খেয়াল করো, AD যেহেতু মধ্যমা, BD = DC। সবশেষে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে AD রেখাংশটি দুইটি ত্রিভুজেই আছে।
যেহেতু দুইটি ত্রিভুজ ABD এবং ACD তে তিনটি করে বাহু পরস্পর সমান, আমরা তাদেরকে সর্বসম বলতে পারি। কাজেই কোণ ACB ও কোণ ABC অবশ্যই পরস্পর সমান হবে। অতএব আমরা দেখালাম যে একটি ত্রিভুজের দুইটি বাহ সমান হলে তাদের বিপরীত কোণগুলোও পরস্পর সমান হবে। ত্রিভুজের দুই বাহু সমান হলে আমরা তাকে সমদ্বিবাহু (Isosceles) ত্রিভুজ বলি।
সদৃশতা (similarity)
অধ্যায়ের শুরুতে আমরা বিভিন্ন জিনিসের তুলনা করেছি। সেখানে কিছু জিনিসের আকৃতি একই হলেও তাদের আকার একইরকম ছিল না। এমন বস্তুকে আমরা বলি সদৃশ বস্তু। চলো আমরা একটি দলগত কাজের মাধ্যমে দেখি জ্যামিতিক আকৃতি কখন সদৃশ হয়।
দলগত কাজ: দুইটি ভিন্ন মাপের লাঠি, একটি স্কেল, লম্বা সুতা এবং চাঁদা নিয়ে সূর্যের আলো পড়েছে এমন একটি স্থানে ক্লাসের সবাই যাই। লাঠিগুলোর দৈর্ঘ্য শুরুতে পরিমাপ করে নিই। তারপর সূর্যের আলোতে লম্বা করে দুইজন সেই লাঠিগুলো ধরে রাখি। লক্ষ করি যে, মাটিতে লাঠিগুলোর ছায়া পড়েছে। এবারে সেই ছায়ার দৈর্ঘ্য মেপে নিই। লাঠির উপরের প্রান্ত এবং ছায়ার শেষ প্রান্ত বরাবর সুতা টানটান করে ধরি। তারপর দুইটি লাঠির জন্য সুতার দৈর্ঘ্যও মেপে নিই।
তোমরা এখান থেকে বুঝতে পারছ যে ছায়ার অনুপাত সবসময় লাঠির অনুপাতের সমান হবে। অর্থাৎ আমরা যদি ছোট কোনো বস্তুর উচ্চতা এবং তার ছায়া পরিমাপ করতে পারি, তাহলে বড় বস্তুর ছায়া জেনে আমরা সেই বস্ধুটির খাড়া অবস্থায় উচ্চতা বের করতে পারবো। জ্যামিতিক যে বৈশিষ্ট্যের জন্যে আমরা এটি করতে পারছি তার নাম হচ্ছে সদৃশতা।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির গণিত সকল অধ্যায়ের সমাধান
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, ওপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে তোমার ৭ম শ্রেণির গণিত ৬ষ্ঠ অধ্যায় সর্বসমতা ও সদৃশতা class 7 সমাধান ২০২৪ সংগ্রহ করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post