সাংবাদিকতা (Journalism) অত্যন্ত সম্মানজনক একটি পেশা। সাংবাদিক হওয়ার উপায় জানলে দারুণ এই পেশা দিয়ে আপনিও নিজের ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারেন। যদিও একজন ভালো মানের সাংবাদিক হতে চাইলে অনেক লেখাপড়া থাকতে হয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ন্যূনতম এইচএসসি পাশ হলেই চলে।
একজন সাংবাদিক হতে হলে আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে। আমাদের দেশের পত্রিকা, টেলিভিশন এবং অনলাইন নিউজপোর্টালগুলোতে অভিজ্ঞ সাংবাদিক নিয়োগ করা হয়ে থাকে। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট একটি ক্যাটাগরিতে সাংবাদিকতা করতে পারেন। আবার একই সাথে একাধিক বিষয় নিয়েও লেখালেখি করতে পারেন।
যেমন একজন সাংবাদিক শুধুমাত্র অপরাধ বিষয়ক ঘটনাবলী নিয়ে প্রতিবেদন করতে পারেন। আবার তিনি চাইলে একইসাথে অপরাধ, ক্রীড়া, বিনোদন, কিংবা রাজনীতি নিয়েও লেখালেখি করতে পারেন। তবে আপনি যে ক্যাটাগরিতেই লেখালেখি করুন না কেন, আপনার কলমে জোড় থাকতে হবে। তাহলেই আপনি সামনে এগোতে পারবেন।
সাংবাদিকতা কি?
তথ্য সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই এবং সংগৃহীত তথ্য প্রতিবেদন আকারে জনসম্মূখে তুলে ধরাই মূলত সাংবাদিকতা। একজন সাংবিদক তার তৈরি প্রতিবেদনটি প্রিন্ট, টিভি এবং অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন।
একজন সাংবাদিক দেশে বিদেশে ঘটে যাওয়া যেকোন বিষয়ের ওপর লেখালেখি করতে পারেন। মূলত নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের সাংবাদিক ক্যারিয়ার গড়ে ওঠে। যেমন:
- সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিক
- অনুসন্ধানি সাংবাদিক
- কৃষি সাংবাদিক
- ক্রীড়া সাংবাদিক
- বিনোদন সাংবাদিক
- নাগরিক সাংবাদিক
- সাংস্কৃতিক সাংবাদিক
তবে আপনি যে ক্যাটাগরির লেখকই হোন না কেন, সাংবাদিকতা একটি জটিল প্রক্রিয়া। কারণ একটি ঘটনার প্রতিবেদন পাঠক বা দর্শকের সামনে তুলে ধরার জন্য অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। পরবর্তীতে উক্ত তথ্য যাচাই-বাছাই এবং বিশ্লেষণ করে তা চূড়ান্ত রূপ দিতে হয়।
সাংবাদিকতাকে সমাজের দর্পণ বা আয়নার সাথে তুলনা করা হয়। কারণ একজন আদর্শ সাংবাদিকের লেখনীতে সমাজের হাসি-খুশি, দু:খ-দুর্দশা, ভালো দিক ও মন্দ দিক উঠে আসে। একই সাথে সাংবাদিকবৃন্দ লাইফস্টাইল, চিকিৎসা আপডেট, আবহাওয়া, বিজ্ঞান, শিক্ষাও প্রযুক্তিসহ আরও অনেক বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য সরবারহ করে থাকেন।
সাংবাদিক হওয়ার উপায়
সাংবাদিকতা একটি চ্যালিঞ্জিং পেশা। তাই একজন অভিজ্ঞ ও সফল সাংবাদিক হতে হলে আপনাকে সৎ, সাহসী এবং নির্ভিক হতে হবে। পাশাপাশি থাকতে হবে সৃজনশীল লেখনি শক্তি। আজ আমরা কোর্সটিকায় সাংবাদিক হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানবো। একজন সফল সাংবাদিক হতে চাইলে আপনার মধ্যে যে গুণাবলী থাকতে হবে, তা নিচে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হল।
১. সাহস: সাংবাদিকতার জন্য সবার প্রথমেই যা দরকার হয়, তাহলে সাহস; সৎ সাহস। আপনি যদি একজন ক্রাইম রিপোর্টার হয়ে থাকেন, তাহলে তথ্য সংগ্রহের জন্য আপনাকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মূখীন হতে হবে। কখনো কখনো সরেজমিন তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে অপরাধিদের আক্রোশের শিকার হতে পারেন আপনি।
প্রকৃত সত্য তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন মহল হতে ক্রমাগত হুমকি, সময় বিশেষ প্রাণনাশের হুমকিও আসবে। কিন্তু একজন সফল সাংবাদিক হতে হলে এসব হুমকিতে ভয় পেলে চলবে না। তাই আপনার ভেতরে যদি নির্ভিক এবং সৎ সাহস কাজ করে, তবেই আপনি সাংবাদিকতাকে জয় করতে পারবেন।
২. লেখনী শক্তি: আপনি যদি পেশাদার কোন গণমাধ্যমে কাজ করতে চান, তাহলে প্রতিদিনই আপনাকে নিত্য নতুন প্রতিবেদন লিখতে হবে। কিন্তু আপনার ভেতরে যদি সৃজনশীল লেখনী শক্তি না থাকে, তাহলে প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয়ের ওপর আপনি লিখতে পারবেন না। তাই বিশ্লেষণধর্মী লেখা উপহার দেয়ার জন্য আপনার ভেতরে সৃজনশীল লেখনী শক্তি থাকা অত্যাবশ্যক।
ব্লগিং, সংবাদ সংস্থা বা অন্যান্য মিডিয়া আউটলেটের জন্য একজন ফ্রিল্যান্স লেখক হওয়া লেখালেখিতে অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি উপায়। মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে এমন জিনিসগুলো সম্পর্কে লিখুন এবং যে কোনও অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি গল্প খুঁজে পাওয়ার আপনার ক্ষমতা প্রদর্শন করুন।
এতে করে আপনি আপনার সিভিতে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত করতে পারবেন। সম্ভাব্যভাবে এটি আপনাকে একটি এন্ট্রি-লেভেলের চাকরি দিতে এবং সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ারের পথে সাহায্য করবে।
৩. উপস্থপনা: আপনি যে কেবল প্রিন্ট মিডিয়ায় সাংবাদিকতা করবেন, তাই নয়; চাইল কোন টেলিভিশন চ্যানেলেও কাজ করতে পারেন। টেলিভিশনে কাজ করতে হলে আপনাকে ক্যামেরার সামনে আসতে হবে। আর ক্যামেরার সামনে আসতে হলে আপনার কথা বলার ভঙ্গি, শারীরিক ভাষা এবং শব্দচয়ন অত্যন্ত পরিপাটি হতে হবে।
ক্যামেরার সামনে আপনি নিজেকে যতটা সুন্দরভাবে উপস্থপন করতে পারবেন, আপনার প্রতিবেদনটিও ততটা চিত্তাকর্ষক হবে। ফলে আপনার কাজের প্রতিষ্ঠান তথা দর্শকদের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
৪. যোগাযোগ ও সম্পর্ক: সংবাদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের তাগিদে আপনাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষের সাথে যোগাযোগ থাকতে হবে। যেমন প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন হতে পারে।
৫. নেটওয়ার্কিং: সম্পাদক, সংবাদ প্রতিবেদক এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অন্যান্য সাংবাদিকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করুন। একজন পেশাদার সাংবাদিক হওয়ার পথে আপনার কাজ করার সময় এই লোকেরা তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং সহায়ক পরামর্শ দিতে পারে। আপনার নেটওয়ার্ক যত বড় হবে, রেফারেন্স হিসেবে আপনার নামটি তত বেশি মনে পড়বে।
সাংবাদিক হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা
যদিও সাংবাদিকতা জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার বাধা-ধরা কোন নিয়ম নেই, তবে নূন্যতম এইচএসসি পাশ করাকে বাধ্যতামূলক মনে করা হয়। দেশের নামি ও জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলো স্নাতক (অনার্স) বা স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) চায়। কিছু ভালো মানের অনলাইন পোর্টালে অনার্স পড়ুয়াদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
তবে আপনি যদি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে থাকেন, তাহলে শুধু সাংবাদিকতার ওপর ২ বছরের বিশেষায়িত কোর্স করতে পারেন। বর্তমানে দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাংবাদিকতার ওপর ডিগ্রী দিয়ে তাকে। পাশাপাশি আপনি চাইলে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) থেকেও একটি কোর্স করে নিতে পারেন।
পিআইবি থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে হলে আপনাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অথবা স্বীকৃত অন্য যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় হতে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি এবং এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত যেকোন ২টি পরীক্ষায় কমপক্ষে ২য় শ্রেণি বা জিপিএ-৩ গ্রেড প্রাপ্ত হতে হবে।
তবে সংবাদপত্রসহ যেকোন গণমাধ্যম, বিজ্ঞাপন এবং জনসংযোগে কর্মরতদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তাই আপনার যদি এমন কোন সুবিধা থেকে থাকে, তবে অবশ্যই আবেদনপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র দাখিল করবেন।
কোথায় করবেন সাংবাদিকতা?
শুরুতেই আপনি কোথাও বেতনভুক্ত সাংবাদিক হিসেবে চাকরি পাবেন না। এর জন্য কিছুটা সময় লাগবে। নির্দিষ্ট এই সময়ে অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করুন। এতে করে লেখালেখির ওপর আপনার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে। অনলাইনে এমন অনেক প্লাটফর্ম আছে, যেখানে আপনি লেখালেখি করে উপার্জন করতে পারবেন।
অথবা চাইলে নিজের একটি নিউজ পোর্টাল তৈরি করে সেখান থেকেও ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারেন। সুতরাং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিজের লেখা অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশ করতে থাকুন। কোন লেখাগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন।
ব্যস, আপনাকে আর কিছু করতে হবে না। যা করার সেটা এবার সংবাদপত্রের মালিকরাই করবে। আপনার ডাক চলে আসবে কোন সংবাদপত্র বা মিডিয়া হাউজের কাছ থেকে। তবে একটি ভুল কখনোই করবেন না। কোন সংবাদ মাধ্যমের অফিসে গিয়ে কাজের জন্য আর্জি জানাবেন না।
সুযোগ বুঝে এরা বিনা পয়সায় খাটিয়ে আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তার থেকে ভালো, নিজের একটি অনলাইন পোর্টাল খুলে লিখতে থাকুন। এতে করে মাস শেষে আপনার ভালো একটি উপার্জন আসবে, পাশপাশি লেখার অভিজ্ঞতাও বৃদ্ধি পাবে।
শেষ কথা
সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। এটি সমাজের দর্পণ স্বরূপ। যদিও অনেকে বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে এসে মহৎ এই পেশাটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। দীর্ঘ এই আলোচনায় আমরা সাংবাদিক হওয়ার উপায় গুলো তুলে ধরেছি। আশা করছি এগুলো অনুসরণের ফলে আপনি একজন আদর্শ সাংবাদিক হয়ে উঠতে পারবেন।
ভবিষ্যতে চাকরির সম্ভাবনা কেমন হবে তা এককথায় বলা সহজ নয়। প্রতিনিয়তই সংবাদ ও সাংবাদিকতার ধরন, গণ্ডি, কার্যক্রম ও প্রযুক্তিগত প্যাটার্ণ সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। কখনো এই পরিবর্তন আনছে ভালো কিছু। আবার কখনো নিয়ে আসছে শূন্যতা।
এসব কিছুর পাশাপাশি বাড়ছে প্রতিযোগিতাও। সবমিলে সাংদিকতা সেক্টরের জব মার্কেট কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে। তবে আপনি যদি কৌশলী ও সাম্প্রতিক সাংবাদিকতার পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য অর্জন করতে পারেন, তাহলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে চাকরি কিংবা কর্মক্ষেত্রের কোন অভাব হবে না।
Discussion about this post