সাত ভাই চম্পা গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর : ‘সাত ভাই চম্পা’ একটি রূপকথা-জাতীয় গল্প। গল্পটিতে দেখা যায়, ছোটো রানির সন্তান হলে বড়ো রানিরা হিংসায় ফেটে পড়ে। তারা ছোটোরানির সাতটি ছেলে ও একটি মেয়েকে হাঁড়িতে করে সরা-চাপা দিয়ে পাঁশগাদায় পুঁতে রাখে। একসময় সাতটি ছেলে সাতটি চাঁপা ফুলগাছ এবং মেয়েটি একটি পারুল ফুলগাছে পরিণত হয়।
মালি পূজার জন্য একদিন সেই বাগানে ফুল তুলতে গেলে পারুল তার ভাইদের ডেকে বলে ‘সাত ভাই চম্পা জাগো রে’। ভাইয়েরা মালিকে ফুল না দিয়ে একে একে রাজা, বড়োরানিদের এবং সব শেষে ঘুঁটে-কুড়ানি ছোটোরানিকে ডেকে পাঠায়। ছোটোরানিকে নিয়ে আসার পর বড়োরানিদের ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে। রাজা বড়োরানিদের রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দেন এবং ছোটোরানি, সাত রাজপুত্র ও রাজকন্যা পারুলকে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসেন।
সাত ভাই চম্পা গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—১: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও :
ক. রাজা ছোট রানিকে কেন সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন?
খ. ছোট রানি কীভাবে ঘুঁটে কুড়ানি হয়ে গেলেন? আলোচনা করো।
১ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. রাজা তাঁর সাত রানির মধ্যে ছোট রানিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন কারণ তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত, সরল ও মৃদুভাষী। অন্য রানিরা নিজেদের অবস্থান নিয়ে গর্ব করতেন এবং অহংকারে মাটিতে পা দিতেন না। তারা নিজেদের দেমাগী স্বভাবের কারণে অন্যদের অবহেলা করতেন। কিন্তু ছোট রানি এসব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিলেন। তিনি ছিলেন অহংকারহীন, বিনয়ী এবং সবার প্রতি সদয়।
রাজা এই নম্রতা ও দয়ালু স্বভাবের জন্যই ছোট রানিকে সবচেয়ে বেশি স্নেহ করতেন। তবে রাজা ছোট রানিকে ভালোবাসলেও, গল্পের একপর্যায়ে দেখা যায়, তিনি অন্যদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ছোট রানির প্রতি অন্যায় করেন। বড় রানিদের মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করে ছোট রানিকে রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দেন, যা প্রমাণ করে যে তিনি আবেগপ্রবণ হলেও সবসময় সুবিচার করতে পারেননি।
খ. ছোট রানি ছিলেন রাজপ্রাসাদের অন্যতম প্রধান রানি, যাকে রাজা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। কিন্তু রাজ্যের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী না থাকায় রাজা চিন্তিত ছিলেন। বহুদিন পর ছোট রানি অন্তঃসত্ত্বা হলে রাজা অত্যন্ত খুশি হন এবং রাজ্যে আনন্দের ঘোষণা দেন। তিনি প্রাসাদের নিয়ম অনুসারে ছোট রানির কোমরে সোনার শিকল বেঁধে দেন এবং বলেন, ‘যখন সন্তান হবে, তখন শিকলে নাড়া দিও, আমি এসে সন্তান দেখব।’
কিন্তু রাজ্যের অন্য বড় রানিরা ছোট রানির এই আনন্দ সহ্য করতে পারলেন না। তারা ছিলেন ঈর্ষান্বিত ও ষড়যন্ত্রকারী। তাই যখন ছোট রানির সন্তান প্রসবের সময় এলো, তখন তারা আঁতুড়ঘরে গিয়ে গোপনে নবজাতকদের বদলে ব্যাঙ, ইঁদুর ও কাঁকড়া এনে রাখলেন। এরপর তারা শিকলে নাড়া দিলেন, রাজা এসে এই দৃশ্য দেখে ক্ষুব্ধ হলেন এবং ছোট রানিকে রাজপ্রাসাদ থেকে তাড়িয়ে দিলেন।
এই ঘটনা ছিল ছোট রানির জীবনে সবচেয়ে বড় অন্যায় ও দুর্ভাগ্যের কারণ। রাজপ্রাসাদ থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েন। নিজের পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য এবং বেঁচে থাকার তাগিদে তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করতে বাধ্য হন। একসময় তিনি গ্রামের পথে পথে ঘুঁটে কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন।
একসময়ের রাজপ্রাসাদের সবচেয়ে ভালোবাসার রানির এই বিবর্ণ জীবন ছিল ষড়যন্ত্রের নির্মম পরিণতি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ্য বদলায়, যখন তার হারিয়ে যাওয়া সন্তানরা চম্পা ফুল ও পারুল ফুলের রূপ ধরে রাজাকে সত্য জানায়। সত্য প্রকাশিত হলে রাজা তার ভুল বুঝতে পারেন এবং ছোট রানিকে আবার সম্মানের সঙ্গে রাজপ্রাসাদে ফিরিয়ে নেন।
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—২: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও :
ক. রাজা ছোট রানিকে রাজপুরী থেকে বের করে দিলেন কেন?
খ. বড় রানিদের মুখে আর হাসি ধরে না—কেন? ব্যাখ্যা করো।
২ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. রাজা ছোট রানিকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং তার মা হওয়ার সংবাদে রাজ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু বড় রানিরা ঈর্ষান্বিত হয়ে ছোট রানির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেন।
যখন ছোট রানি সন্তান প্রসব করেন, তখন বড় রানিরা ধূর্ততার আশ্রয় নেন। তারা শিশুগুলোকে গোপনে মাটির হাঁড়িতে ভরে পাঁশগাদায় পুঁতে ফেলেন এবং রাজাকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য কিছু ব্যাঙ, ইঁদুর ও কাঁকড়া এনে বলেন যে এগুলোই ছোট রানির গর্ভজাত সন্তান।
রাজা যখন এই দৃশ্য দেখেন, তখন তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত হন। তিনি ভাবেন যে ছোট রানির গর্ভ থেকে মানুষের পরিবর্তে ভয়ানক প্রাণী জন্মেছে, যা ছিল সামাজিকভাবে অপমানজনক ও অলৌকিক ব্যাপার। এতে তিনি এতটাই রেগে যান যে ক্ষোভের বশে ছোট রানিকে রাজপুরী থেকে বের করে দেন এবং তাকে পরিত্যাগ করেন।
তবে, এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো রাজা মূলত বড় রানিদের মিথ্যার শিকার হন। তিনি সত্য যাচাই না করেই আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নেন, যা ছোট রানির জীবনে চরম দুর্দশা ডেকে আনে।
খ. ছোট রানির গর্ভধারণের খবর শুনে বড় রানিরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। কারণ রাজা ছোট রানিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন এবং তার সন্তান জন্মালে স্বাভাবিকভাবেই সে রাজ্যের উত্তরাধিকারী হতো। এতে তাদের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে যেত।
তাই তারা ষড়যন্ত্র করে ছোট রানির নবজাতক সন্তানদের মাটি চাপা দিয়ে রাজাকে প্রতারিত করেন। রাজা যখন ব্যাঙ, ইঁদুর ও কাঁকড়া দেখে ক্ষুব্ধ হন এবং ছোট রানিকে রাজপুরী থেকে বের করে দেন, তখন বড় রানিরা স্বস্তি অনুভব করেন।
তারা মনে করতে থাকেন, এখন আর তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই, রাজপুরীতে ছোট রানির স্থান নেই, এবং তারা নিজেদের ইচ্ছামতো রাজা ও রাজ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন।
এই ষড়যন্ত্র সফল হওয়ার পর বড় রানিদের মনে আনন্দ ও তৃপ্তি জন্মে, তাই গল্পে বলা হয়েছে ‘বড় রানিদের মুখে আর হাসি ধরে না’। অর্থাৎ, তারা এতটাই খুশি হন যে নিজেদের উচ্ছ্বাস লুকাতে পারেন না।
তবে, তাদের এই আনন্দ স্থায়ী ছিল না। শেষ পর্যন্ত সাত চম্পা ও এক পারুল ফুল হয়ে তাদের হারানো সন্তানরা ফিরে এলে সত্য উন্মোচিত হয় এবং রাজা তাদের কঠিন শাস্তি দেন। তখন তাদের সেই হাসি চিরতরে মুছে যায়।
সাত ভাই চম্পা দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—৩: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও :
ক. রাজা মনের দুঃখে থাকেন কেন?
খ. বড়োরানিদের মাটিতে পা পাড়ে না কেনো?
৩ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. রাজা ছিলেন এক বিশাল রাজ্যের অধিপতি। তার ছিল সাতজন রানি, অগাধ সম্পদ ও শক্তিশালী রাজত্ব, কিন্তু এত কিছু থাকার পরেও তিনি একটি বড় দুঃখে ভুগছিলেন। তার কোনো সন্তান ছিল না, যা তাকে মানসিকভাবে কষ্ট দিত।
সন্তান না থাকার কারণে তিনি চিন্তিত ছিলেন, কারণ তার মৃত্যুর পর রাজ্য শাসন করার মতো উত্তরাধিকারী কেউ থাকবে না। একজন রাজার কাছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে যোগ্য উত্তরাধিকারীর ওপর।
এই অভাববোধ তাকে প্রতিনিয়ত বিষণœ করে তুলত এবং তিনি মনের দুঃখে থাকতেন। তবে, যখন ছোট রানি গর্ভবতী হন, তখন তার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, কারণ অবশেষে তিনি উত্তরাধিকারী পেতে চলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বড় রানিদের ষড়যন্ত্রের কারণে এই সুখ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
খ. বড়োরানিদের মাটিতে পা পড়ে না, কারণ তারা অত্যন্ত অহংকারী ও গর্বিত ছিলেন। তারা নিজেদের রাজপরিবারের মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে অত্যন্ত শ্রেষ্ঠ মনে করতেন এবং সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করাকে অপমানজনক বলে ভাবতেন। তাদের মধ্যে ক্ষমতা ও সৌন্দর্য নিয়ে প্রচণ্ড আত্মগরিমা কাজ করত, বিশেষ করে যেহেতু তারা রাজপ্রাসাদে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন, তাই তারা কখনো সাধারণের মতো আচরণ করতেন না।
এছাড়া, রাজা ছোট রানিকে বেশি ভালোবাসতেন, যা বড়োরানিদের মধ্যে অহংকারের সঙ্গে ঈর্ষার আগুনও জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তারা মনে করতেন যে ছোট রানি তাদের চেয়ে নিচু স্তরের, তাই তাকে তারা অবজ্ঞা করতেন। তাদের এই অহংকার ও দেমাগী স্বভাবই পরবর্তীতে তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়, যখন রাজা তাদের সত্যিকারের চরিত্র বুঝতে পারেন এবং কঠোর শাস্তি দেন।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে সাত ভাই চম্পা গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post