সাত ভাই চম্পা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : ‘সাত ভাই চম্পা’ একটি রূপকথা-জাতীয় গল্প। গল্পটিতে দেখা যায়, ছোটো রানির সন্তান হলে বড়ো রানিরা হিংসায় ফেটে পড়ে। তারা ছোটোরানির সাতটি ছেলে ও একটি মেয়েকে হাঁড়িতে করে সরা-চাপা দিয়ে পাঁশগাদায় পুঁতে রাখে। একসময় সাতটি ছেলে সাতটি চাঁপা ফুলগাছ এবং মেয়েটি একটি পারুল ফুলগাছে পরিণত হয়। মালি পূজার জন্য একদিন সেই বাগানে ফুল তুলতে গেলে পারুল তার ভাইদের ডেকে বলে ‘সাত ভাই চম্পা জাগো রে’।
ভাইয়েরা মালিকে ফুল না দিয়ে একে একে রাজা, বড়োরানিদের এবং সব শেষে ঘুঁটে-কুড়ানি ছোটোরানিকে ডেকে পাঠায়। ছোটোরানিকে নিয়ে আসার পর বড়োরানিদের ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে। রাজা বড়োরানিদের রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দেন এবং ছোটোরানি, সাত রাজপুত্র ও রাজকন্যা পারুলকে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসেন। মানুষের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করলেও সত্য একদিন প্রকাশ পায়।
সাত ভাই চম্পা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
রুহিন ও তুনীন দুই ভাই। নির্জন বালুচর দিয়ে দুই ভাই হাঁটছিল দূরে কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে। দুপুর গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। হঠাৎ বড় ভাই রুহিনের পায়ে কী যেন একটা ঠেকল। দুই ভাই ভালো করে লক্ষ করে বুঝতে পারল এটি একটি মাটির জালা। জালাটির ঢাকনা তুলতেই বিরাটকায় এক দৈত্য বেরিয়ে এলো। দৈত্য বেরিয়ে এসে বলল, আমি জ্বিনের বাদশাহ, আমাকে একজন এর মধ্যে প্রায় বিশ বছর বন্দি করে রেখেছিল। তোমরা আমাকে মুক্ত করে খুবই উপকার করেছ। আমি তোমাদের উপকারের প্রতিদানস্বরূপ যা চাইবে তা-ই দিতে চাই; তবে শর্ত হলো- একজন যা চাইবে অপরজন তার দ্বিগুণ পাবে। ছোট ভাই তুনীন সব সময় বড় ভাইকে ঈর্ষা করত। তাই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইল না। সে ভেবেচিন্তে বলল, আমার এক হাত, এক পা লুলা এবং এক চোখ ও এক কান অন্ধ ও বধির করে দাও।
ক. দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার কোন বইয়ের জন্য বাঙ্গালি পাঠকসমাজে অধিক পরিচিত?
খ. ছোট রানি কীভাবে ঘুঁটে কুড়ানি হলো? বুঝিয়ে বলো।
গ. উদ্দীপকের ছোট ভাই তুনীনের আচরণে বড় রানিদের সাদৃশ্য ফুটে ওঠে কীভাবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র—যৌক্তিক বিচার কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ নামক বইয়ের জন্য বাঙালি পাঠকসমাজে অধিক পরিচিত।
খ. বড় রানিদের গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে ছোট রানি ঘুঁটে কুড়ানি হলো।
রাজার সাত রানি থাকলেও ছোট রানি শান্ত হওয়ার কারণে রাজা তাকে বেশি ভালোবাসেন। আবার ছোট রানির সন্তান হওয়ার সংবাদ শুনে বড় রানিরা গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। ছোট রানি সাতটি পুত্র এবং একটি কন্যাসন্তান জন্ম দিলে বড় রানিরা মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং রাজাকে মিথ্যা কথা বলে। তারা সন্তানের পরিবর্তে ইঁদুর ও ব্যাঙের ছানা দেখালে রাজা ছোট রানিকে রাজ্য। থেকে বের করে দেন। আর এ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ছোট রানি পথে পথে ঘুটে কুড়ানি হলো।
গ. ঈর্ষাপরায়ণ ও স্বার্থপরতার মাধ্যমে উদ্দীপকের ছোট ভাই তুনীনের আচরণে গল্পের বড় রানিদের সাদৃশ্য ফুটে ওঠে।
ঈর্ষাপরায়ণ ও স্বার্থপর ব্যক্তি অন্যের ভালো দেখতে পারে না। পরের কল্যাণ বা ভালো কিছু দেখলে এ শ্রেণির মানুষ নিজে নিজে হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। এরা অপরের ক্ষতি করতে কখনো দ্বিধা করে না।
উদ্দীপকের ছোট ভাই তুনীন একজন ঈর্ষাপরায়ণ ও প্রচণ্ড স্বার্থপর ব্যক্তি। সে এতটাই মন্দ যে নিজের বড় ভাইয়ের ক্ষতি করতেও পিছপা হয়নি। তাকে যখন কলসির দৈত্য প্রস্তাব দিয়েছে; আর সে তখন বড় ভাই বুহিনের ধ্বংস কামনা করে নিজের এক হাত, এক পা লুলা বা এক চোখ অন্ধ হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পে রাজার সাত রানি থাকলেও রাজা ছোট রানিকে বেশি ভালোবাসেন।
আবার ছোট রানির সন্তান হওয়ার কথা শুনে বড় রানিরা ঈর্ষায় জ্বলতে থাকে। এ জন্য বড় রানিরা ছোট রানিকে রাজ্যছাড়া করতে গভীর ষড়যন্ত্র করে। ছোট রানির সাত পুত্র এবং এক কন্যাসন্তানের জন্ম হলে বড় রানিরা তা গোপন করে রাজার কাছে ইদুর ও ব্যাঙের ছানার কথা বলে। আর এভাবেই উদ্দীপকের তুনীনের আচরণে গল্পের বড় রানিদের ঈর্ষাপরায়ণতার সাদৃশ্য ফুটে ওঠে।
ঘ. সামগ্রিক বিচারে উদ্দীপকটি ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পের একটি খণ্ডচিত্র—উক্তিটি যথার্থ।
আমাদের সমাজে ভালো-মন্দ, ধনী-গরিব, স্বার্থপার-পরোপকারী ইত্যাদি শ্রেণির মানুষ বসবাস করে। সাধারণত ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তি পরের কল্যাণ বা মঙ্গল চায় না। এরা অপরের সুখ-শান্তি দেখে ভেতরে ভেতরে জ্বলতে থাকে। কিন্তু এদের পারিণাম কখনো ভালো হয় না।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রুহিন ও তুনীন নামের দুই ভাই নির্জন বালুচরে হাঁটার সময় একটা মাটির জালার সন্ধান পায়। সেই জালার মুখ খুলতেই এক বিরাট দৈত্য এসে নিজেকে জ্বিনের বাদশাহ বলে পরিচয় দেয়। আর জানায়, তাদের এক ভাই যা চাইবে অপর ভাই তার দ্বিগুণ পাবে। ছোট ভাই তুনীন বড় ভাইয়ের সবকিছুতে ঈর্ষা করত বলে সে নিজের এক হাত, এক পা, এক চোখ অন্ধ করার কথা বলে।
যাতে তার বড় ভাইয়ের দুই হাত, পা, দুই চোখ, কান নষ্ট হয়ে যায়; আর সে একা সবকিছুর মালিক হয়। ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পে রাজা ছোট রানিকে বেশি ভালোবাসে এবং তার সন্তান হওয়ার সংবাদে অনেক খুশি হয়। কিন্তু বড় রানিরা ছোট রানির ক্ষতি করতে তার সাত সন্তানের পরিবর্তে কয়েকটি ইদুর ও ব্যাঙের ছানা রাজাকে দেখায়। কিন্তু, অনেক বছর পর সাত ভাই চম্পা এবং বোন পারুলের মাধ্যমে রাজা তার ভুল বুঝতে পেরে বড় রানিদের কঠিন শাস্তি দেন। আর ছোট রানি, সাত পুত্র ও এক কন্যা নিয়ে রাজা মনের সুখে রাজপুরীতে চলে আসেন।
উপরের বিচার-বিবেচনার আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পের একটি খণ্ডাংশ মাত্র। কারণ উদ্দীপকে ছোট ভাইয়ের শুধু ঈর্ষাপরায়ণতার কথা জানা যায়; যা গল্পের একটি অংশমাত্র।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে সাত ভাই চম্পা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post