সাহসী জননী বাংলা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন : কবি কামাল চৌধুরীর “খুলি ও সাগর দৃশ্য’ কাব্যের অন্তর্গত ‘সাহসী জননী বাংলা” কবিতাটি তার কবিতা সংগ্রহ গ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে-“ভীতু’ ও “ভেতো* বলে যাদের অভিহিত করা হয়েছিল, সে মিথ্যাচার ব্যর্থ করে দিয়ে বাঙালি জাতি তাদের শৌর্ষের মহিমায় জয় করে নেয় স্বাধীনতা।
মুক্তির পতাকা তাদের হাতে। শত্রুর আসুরিক আচরণ, বিকট উল্লাস আর নৃশংসতা স্বল্প সময়ে পরাভূত করা সম্ভব হয় এ দেশের মানুষের মনে কাব্যময় গ্লিধতার সঙ্গে সাহসের ইস্পাতদৃঢ়তা আছে বলে। অনাদি অতীতের সংগ্রাম, ভাষার জন্য রক্তদানের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধকালে ছিল বাঙালির প্রেরণার বাতিঘর। এদেশের জনজীবনের বিভিন্ন বীকে আছে প্রতিরোধ ও সংগ্রামের এতিহ্য।
গ্রামবাংলার মানুষ সমন্বিত সংহতিতে পরাভূত করে অশুভ শক্তিকে । আসলে এসবই বাংলাজননীর প্রাণের উত্তপ্ত স্পন্দনজাত, তার মাটি থেকে উঠে আসা সাহসের ফোয়ারাম্নাত। সমস্ত বাধাবিঘ্র অতিক্রম করে এই বীর জাতি বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে ফিরে এসেছে দেশমাতৃকার ক্রোড়ে। কবিতাটিতে দৃত্ত উচ্চারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে।
সাহসী জননী বাংলা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
১. যখন হানাদারবধ সংগীতে
ঘৃণার প্রবল মন্ত্রে জাগ্রত
স্বদেশের তরুণ হাতে
নিত্য বেজেছে অবিরাম
মেশিনগান, মর্টার গ্রেনেড।
ক. মধ্যরাতে কারা এসেছিল?
খ. বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের অনুভব ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার অনুভবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ – ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ভাবনা ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সামগ্রিক পরিচয় নয়Ñ মূল্যায়ন করো।
২. লক্ষ লক্ষ হা-ঘরে দুর্গত
ঘৃণ্য যম-দূত-সেনা এড়িয়ে সীমান্তপারে ছোটে,
পথে পথে অনশনে অন্তিম যন্ত্রণা রোগে ত্রাসে
সহস্রের অবসান, হন্তারক বারুদে বন্দুকে
মূর্ছিত-মৃতের দেহ বিদ্ধ করে, হত্যা-ব্যবসায়ী
বাংলাদেশ-ধ্বংস-কাব্যে জানে না পৌঁছল জাহান্নামে
এ জন্মেই;
বাংলাদেশ অনন্ত অক্ষত মূর্তি জাগে ॥
ক. মুক্তিযুদ্ধকালে কোটি বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে নির্বাসিত জীবন যাপনে বাধ্য হয়?
খ. ‘তোদের রক্তাক্ত হাত মুচড়ে দিয়েছি নয় মাসে’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে প্রথম পাঁচ চরণে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার মূলভাবকেই তুলে ধরেছেÑ কথাটি বিশ্লেষণ করো।
৩. “একবার মরে ভুলে গেছে আজ মৃত্যুর ভয় তারা।
শাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়;
জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।”
ক. কার্তুজ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘এসেছি আবার ফিরে…… রাতজাগা নির্বাসন শেষে’- চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ভাবনা ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সামগ্রিক পরিচয় নয়।- মূল্যায়ন করো।
৪. দুঃসাহসী এক বিপ্লবী বাঙালি ছিলেন সূর্যসেন। ব্রিটিশদের শাসন শোষণ থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার বাসনায় তিনি সশস্ত্র সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন। চট্টগ্রামকে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত করার জন্য গড়ে তোলেন ‘চট্টগ্রাম বিপ্লবী বাহিনী’। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামকে ইংরেজমুক্ত করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু বেশিদিন তা রক্ষা করতে পারেন নি। ১৯৩৩ সালে তিনি গ্রেফতার হন। চরম নির্যাতনের পর তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয়।
ক. ‘কার্তুজ’ শব্দের অর্থ কী?
খ. সাহসী জননী বাংলার বুকে চাপা মৃতের আগুন কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো।
ঘ. ‘উদ্দীপকের প্রকাশিত চেতনাই ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার মূলভাব’ – উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো।
৫. জয় বাংলা বাংলার জয়
হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়
কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধ রাতে
নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।
ক. বাঙালিরা হানাদারদের কী কেটে দিয়েছে?
খ. জাগে, নীলকমলেরা জাগে- কেন?
গ. উদ্দীপকের শেষ চরণের ভাবটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সাথে কীভাবে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়’- এমন প্রত্যয়ের কারণ ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. আমরা পাকিস্তানি হানাদারদের রক্তাক্ত হাত কয় মাসে মুচড়ে দিয়েছি?
উত্তর : আমরা পাকিস্তানি হানাদারদের রক্তাক্ত হাত নয় মাসে মুচড়ে দিয়েছি।
২. বাঙালিরা কিসে মাত হবে বলে পাকিস্তানিরা ভেবেছিল?
উত্তর : বাঙালিরা অস্ত্রে মাত হবে বলে পাকিস্তানিরা ভেবেছিল।
৩. ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাংলাদেশকে কিসের দেশ বলা হয়েছে?
উত্তর : সাহসী জননী বাংলা কবিতায় বাংলাদেশকে চির কবিতার দেশ বলা হয়েছে।
৪. অ আ ক খ বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরে শেষে কী হয়ে গেল?
উত্তর : অ আ ক খ বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরে শেষে ঘৃণার কার্তুজ হয়ে গেল।
৫. সাহসী জননী বাংলার বুকে কিসের আগুন?
উত্তর : সাহসী জননী বাংলার বুকে চাপা মৃতের আগুন।
৬. বুড়িগঙ্গা, পদ্মার নদীতীরের গ্রামে কী পড়েছে?
উত্তর : বুড়িগঙ্গা, পদ্মার নদীতীরের গ্রামে ডাকাত পড়েছে।
৭. ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় মধ্যরাতে কাদের আসার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় মধ্যরাতে হানাদারদের আসার কথা বলা হয়েছে।
৮. ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় কাদের জেগে থাকার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় নীলকমলদের জেগে থাকার কথা বলা হয়েছে?
৯. কবিতার হাতে কী?
উত্তর : কবিতার হাতে রাইফেল।
১০. ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতা কিসে ভোজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় প্রতিশোধে ভোজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
১১. হিন্দু পুরাণ মতে দেবতাদের শত্রু কারা?
উত্তর : হিন্দু পুরাণ মতে দেবতাদের শত্রু অসুররা।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘তোদের অসুর নৃত্য…. ঠা ঠা হাসি …. ফিরিয়ে দিয়েছি’Ñ চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : পাকিস্তানি হানাদারদের নিষ্ঠুরতার জবাব বাঙালি কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছে-এ অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালির ওপর অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন চালায়। অসুর নৃত্য, ঠা ঠা হাসি ইত্যাদির প্রতীকে কবিতায় তাদের সেই ধ্বংসলীলাকেই নির্দেশ করা হয়েছে।
কিন্তু বাঙালি চুপচাপ নির্যাতন সহ্য করেনি। বরং প্রতিশোধের প্রবল মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধে পাকবাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে। ফলে শত্রুদের ছোড়া তীরে অবশেষে তারা নিজেরাই বিদ্ধ হয়েছে।
২. কবি বাংলাদেশকে ‘চির কবিতার দেশ’ বলেছেন কেন?
উত্তর : বাংলাদেশে কবিতার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নির্দেশ করতে কবি কামাল চৌধুরী ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাংলাদেশকে ‘চির কবিতার দেশ’ বলেছেন। বাংলাদেশ শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম তীর্থভূমি। কবিতার ঐশ্বর্যে এদেশের সংস্কৃতি পরিপূর্ণ। এদেশে রয়েছে কবিতার সমৃদ্ধ এক ঐতিহ্য। কবিতার জন্য বাংলা ও বাঙালি জাতি পৃথিবীখ্যাত। তাই ‘কবিতার দেশ’ বললে যেন বাংলাদেশকেই বোঝানো হয়। আলোচ্য কবিতায় এই উপমা প্রদানের মাধ্যমে কবি সেই চেষ্টাই করেছেন।
৩. ‘কিন্তু কী ঘটল শেষে, কে দেখাল মহা প্রতিরোধ’ কবি এ কথা বলেছেন কেন?
উত্তর : পাকবাহিনীর অবমূল্যায়নের সমুচিত জবাব বাঙালি দিয়েছিল সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ার মাধ্যমে- এ প্রসঙ্গটিই উঠে এসেছে আলোচ্য চরণে। পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠীর ধারণা ছিল বাঙালি একটি মেরুদণ্ডহীন ভীতু জাতি। অন্যায়, অবিচার তারা সবসময় মুখ বুঝে সইবে। ভেবেছিল অস্ত্রের জোরে ধ্বংস-মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে বাঙালিকে শৃঙ্খলিত করে রাখা যাবে। কিন্তু তাদের সে ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়। বাঙালির বিপুল বিক্রমের সামনে তাদের সমস্ত শক্তি তুচ্ছ প্রমাণিত হয়। তাই কবি উষ্মাভরে তাদের কাছে আলোচ্য প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছেন।
৪. ‘শেষে হয়ে গেল ঘৃণার কার্তুজ’Ñ কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : ভাষা আন্দোলন থেকে প্রেরণা নিয়ে বাঙালি স্বাধীনতার সংগ্রামে দ্বিগুণ দৃঢ়তার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে- আলোচ্য চরণটির মমার্থ এটিই। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালির ইতিহাসের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি প্রথম পাকিস্তানিদের অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সেই ধারাবাহিকতার চূড়ান্ত লগ্ন উপস্থিত হয় ১৯৭১ সালে। ১৯৫২ থেকে জমতে থাকা সমস্ত অন্যায়ের জবাবে মহা বিস্ফোরণ ঘটে যায় বাঙালির মাঝে। ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতি তাদের প্রতিশোধস্পৃহাকে আরো শানিত করে।
৫. ‘অ আ ক খ বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরে’ কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি পরবর্তী সময়ে বাঙালির সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরণার বাতিঘর হিসেবে কাজ করেছে- আলোচ্য চরণটিতে এটিই বলা হয়েছে। বাঙালির বীরত্ব আর শৌর্যের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিবাদের প্রথম স্তম্ভ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এর মাধ্যমেই বাঙালির মাঝে স্বাধিকার চেতনার বীজ বপন হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তারা নিরন্তর নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে চলেছে। আর সেই পথে প্রেরণা জুগিয়েছে ভাষার জন্য বাঙালির সুমহান আত্মত্যাগ।
৬. কবিতার হাতে রাইফেল – কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে কবিতার প্রেরণাদাত্রীর ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়ার কথা বলা হয়েছে আলোচ্য চরণে। কবিতা বাঙালির জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ১৯৭১ সালে বাঙালি কবিরা তাঁদের কবিতাকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কবিতাতে উঠে এসেছিল বাঙালির প্রতিরোধ ও মুক্তির কথা। এ কারণেই রূপকার্থে আলোচ্য কথাটি বলা হয়েছে।
উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে নিরীহ বাঙালি সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post