সিঁথি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : শহিদদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা এবং তাঁদের আত্মদানের মূল্য যেন অযথা না যায়, সেজন্য কবি উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন যে, এই সংগ্রামের মূল্য যদি ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হয়, তবে দেশ পঙ্গু হয়ে যাবে, অর্থাৎ জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা ও কল্যাণের প্রতি উপেক্ষা হতে পারে, যা দেশকে রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে দুর্বল করে ফেলবে।
সিঁথি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
প্রথম অংশ: তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে খা-বদাহন?
দ্বিতীয় অংশ: সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্য হতে চলেছে-
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।
ক. শাহাদাত বলতে কী বোঝো?
খ. ‘গোরস্থানে কান্দে শহিদ—
পঙ্গু যেন হয় না দ্যাশ।’ এখানে কীসের আশঙ্কা ব্যক্ত হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের প্রথম অংশটিতে ‘সিঁথি’ কবিতায় ছাত্র-জনতার আত্মদানের বিষয়াট কীভাবে ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশটি ‘সিঁথি’ কবিতার মূল বক্তব্য।—ব্যাখ্যা কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শাহাদাত বলতে শহীদ হওয়াকে বোঝায়।
খ. ‘গোরস্থানে কান্দে শহিদ—পঙ্গু যেন হয় না দ্যাশ’ কথার মধ্য দিয়ে কবি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
শহিদদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা এবং তাঁদের আত্মদানের মূল্য যেন অযথা না যায়, সেজন্য কবি উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন যে, এই সংগ্রামের মূল্য যদি ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হয়, তবে দেশ পঙ্গু হয়ে যাবে, অর্থাৎ জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা ও কল্যাণের প্রতি উপেক্ষা হতে পারে, যা দেশকে রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে দুর্বল করে ফেলবে।
গ. উদ্দীপকের প্রথম অংশটিতে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা / তোমাকে পাওয়ার জন্যে / আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?’—এই প্রশ্নের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অবর্ণনীয় ত্যাগ ও আত্মদানের প্রয়োজন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উঠে আসে। এখানে রক্তের স্রোত এবং কঠিন সংগ্রামের চিত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের জন্য দেশবাসীর প্রচেষ্টার দৃশ্যমানতা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
‘সিঁথি’ কবিতায়ও ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আত্মদান এবং সংগ্রাম প্রকৃতভাবে ফুটে উঠেছে। কবিতার মধ্যে যেমন ‘মরা পুতরে কোলে নিয়া মা ফিরছে অটোতে’—এমন দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে, তেমনি ‘কাফন শ্যাষ / গোরস্থানে কান্দে শহিদ’—এমনও চিত্র প্রতিস্থাপিত হয়েছে, যেখানে ছাত্ররা রক্ত দিয়েছিল, তাদের মৃত্যুর পরেও তাদের আত্মদানের মূল্য অটুট রয়েছে।
কবিতায় ছাত্র-জনতার আত্মদানের মাধ্যমে, যা ‘সিঁথি’তে বর্ণিত, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং তার যন্ত্রণাদায়ক সত্য তুলে ধরা হয়েছে। তাঁরা যাঁরা প্রাণ দিয়েছে, তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করেছে। এভাবে ‘সিঁথি’ কবিতায় স্বাধীনতার সংগ্রামের পেছনে ছাত্র-জনতার রক্ত ও আত্মদানের প্রমাণ মিলেছে, যা উদ্দীপকের রক্তগঙ্গা এবং খা-বদাহনের চিত্রের সাথে মিলে স্বাধীনতা অর্জনের যন্ত্রণাদায়ক কিন্তু বিজয়ী যাত্রাকে চিত্রিত করেছে।
ঘ. ‘উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশটি ‘সিঁথি’ কবিতার মূল বক্তব্য।’—উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকের কথায় ‘সেই তেজী তরুণ যার পদভারে একটি নতুন পৃথিবীর জন্য হতে চলেছে—সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা’—এখানে স্বাধীনতার জন্য তরুণদের আত্মনিবেদন এবং তাদের সংগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। তারা একটি নতুন পৃথিবী, নতুন সমাজের জন্য সংগ্রাম করছে। ‘সিঁথি’ কবিতায়ও এটাই প্রতিফলিত হয়েছে।
কবিতার মধ্যে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের আত্মদান এবং সংগ্রাম, তাদের ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগ্রাম চলতে থাকে। কবিতার ‘মরা পুতরে কোলে নিয়া মা ফিরছে অটোতে / রক্তভেজা খাটিয়ায়’—এই চিত্রের মাধ্যমে দেখা যায়, তরুণরা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে। তারা জানতো যে, তাদের মৃত্যুর বিনিময়ে এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
কবিতার মূল বক্তব্য স্বাধীনতার জন্য তরুণদের ত্যাগ এবং সংগ্রামের মধ্যে নিহিত। তারা একটি নতুন পৃথিবীর জন্য রক্ত দিয়েছে, এবং তাদের সংগ্রাম সার্থক হয়েছে। ‘সিঁথি’ কবিতায় ও উদ্দীপকের কথায় একই বার্তা নিহিত রয়েছে—স্বাধীনতা একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন, যা তরুণদের সংগ্রামের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
আরও দেখো—সপ্তম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
সপ্তম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের সপ্তবর্ণা বাংলা বই থেকে সিঁথি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৪টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post