সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে প্রৌকশল বিদ্যা যা শিখে একজন ইঞ্জিনিয়ার নিজেকে সড়ক, ভবন, বিমানবন্দর, টানেল, বাঁধ, সেতু এবং পানি সরবরাহের ব্যবস্থাকরণ নকশা, নির্মাণ, তদারকি, পরিচালনা ও পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে আত্মনিয়োগ করতে পারে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং স্বপ্নের একটি পেশা হিসেবে রূপ নিয়েছে। দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ উন্নত ক্যারিয়ারের আশায় এ পেশাটির দিকে ছুটছেন এবং সফলও হচ্ছেন।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সরকারী বা বেসরকারী উভয় সেক্টরেই কাজ করতে পারেন। একজন সফল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার যে শুধু নকশা প্রণয়ন বা বাস্তবায়নই করেন, তা নয়; তিনি একটি প্রকল্প তদারকি, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণেও অবদান রাখতে পারেন। অনেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পরিকল্পনা, নকশা, নির্মাণ, গবেষণা এবং শিক্ষায় কাজ করেন।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। তার মধ্যে সাধারণ দায়িত্বগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
১। প্রকল্পগুলি পরিকল্পনা ও ডিজাইনের জন্য দীর্ঘ পরিসরের পরিকল্পনা, জরিপ রিপোর্ট, মানচিত্র এবং অন্যান্য ডেটা বিশ্লেষণ করা।
২। প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং ঝুঁকি-বিশ্লেষণের পর্যায়ে নির্মাণ ব্যয়, সরকারী আইন, সম্ভাব্য পরিবেশগত বিপদ এবং অন্যান্য বিষয়গুলি বিবেচনা করা।
৩। স্থানীয়, রাজ্য এবং ফেডারেল এজেন্সিগুলিতে পারমিট অ্যাপ্লিকেশনগুলি সঙ্কলন এবং জমা দেয়া, যা প্রকল্পগুলি বিভিন্ন বিধি মেনে চলে তা যাচাই করে।
৪। ভিত্তিগুলির পর্যাপ্ততা এবং শক্তি নির্ধারণ করতে মাটি পরীক্ষার ফলাফলগুলি পর্যবেক্ষণ করা এবং বিশ্লেষণ করা।
৫। নির্দিষ্ট প্রকল্পগুলিতে ব্যবহারের জন্য কংক্রিট, কাঠ, ডাল বা স্টিলের মতো বিল্ডিং উপকরণগুলির পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করা।
৬। কোনও প্রকল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা নির্ধারণের জন্য উপকরণ, সরঞ্জাম বা শ্রমের জন্য ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুত করা।
৭। শিল্প ও সরকারী মানগুলির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবহন ব্যবস্থা, হাইড্রোলিক সিস্টেম এবং কাঠামোগত পরিকল্পনা এবং নকশা করতে ডিজাইন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা।
৮। বিল্ডিং লোকেশন, সাইটের লেআউট, রেফারেন্স পয়েন্ট, গ্রেড এবং নির্মাণের নির্দেশিকাতে উন্নত স্থাপনের জন্য জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা বা তদারকি করা।
৯। সরকারী ও বেসরকারী অবকাঠামো মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রতিস্থাপন পরিচালনা করা।
এছাড়াও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের বিড প্রস্তাবনা, পরিবেশগত প্রভাব বিবৃতি, বা সম্পত্তি বিবরণের মতো বিষয়গুলিতে অবশ্যই তাদের অনুসন্ধানগুলো মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে হয়। অনেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার একটি নির্মাণ সাইটের তত্ত্বাবধায়ক থেকে শুরু করে সিটি ইঞ্জিনিয়ার, গণপূর্ত পরিচালক এবং সিটি ম্যানেজার পর্যন্ত তদারকি বা প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত হয়ে থাকেন।
তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে, তাদের সুরক্ষা কাজের অনুশীলনগুলি নির্মাণ সাইটগুলিতে অনুসরণ করা হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি অন্যান্য সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা নকশা, নির্মাণ, গবেষণা এবং শিক্ষাদানের কাজ করে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির প্রকল্পগুলিতে কাজের অনুমতিপত্রের নথি প্রস্তুত করে তারা যাচাই করে যে প্রকল্পগুলি ফেডারেল, রাজ্য এবং স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা মেনে চলবে। এই প্রকৌশলীরা বড় আকারের ফটোভোলটাইক বা সৌরশক্তি, প্রকল্পগুলির জন্য কাঠামোগত বিশ্লেষণ পরিচালনা করেন।
তারা বাতাস, ভূমিকম্পের কার্যকরীতা এবং অন্যান্য উত্সগুলি থেকে চাপ সহ্য করার জন্য সৌর অ্যারে সমর্থনযোগ্য কাঠামো এবং বিল্ডিংগুলির দক্ষতার মূল্যায়ন করে। বড় আকারের বায়ু প্রকল্পের জন্য, সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা প্রায়শই বড় বড় ট্রাকগুলি টারবাইনগুলিতে হ্যান্ডল করার জন্য রোডবেড প্রস্তুত করে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা জটিল প্রকল্পগুলিতে কাজ করে এবং তারা প্রকল্পটি সমাপ্ত হতে দেখে কাজের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। তারা সাধারণত বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রের যে কোন একটিতে বিশেষজ্ঞ। যেমন:
Construction engineers: নির্মাণ ইঞ্জিনিয়াররা নির্মাণ প্রকল্পগুলি পরিচালনা করে তা নিশ্চিত করে যে তা পরিকল্পনা এবং নির্দিষ্টকরণ অনুসারে নির্ধারিত এবং নির্মিত হয়েছে। এই প্রকৌশলীরা সাধারণত নির্মাণের সময় ব্যবহৃত অস্থায়ী কাঠামোর নকশা এবং সুরক্ষার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। তারা কোনও প্রকল্পের বাজেটরি, সময়-পরিচালনা এবং যোগাযোগের দিকগুলিও তদারকি করতে পারেন।
Geo-technical engineers: ভূ-প্রযুক্তিগত প্রকৌশলীরা রাস্তায় ও ভবন থেকে রানওয়ে এবং বাঁধ পর্যন্ত নির্মিত বস্তুর ভিত্তি শক্ত কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে। তারা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা নির্মিত কাঠামো, যেমন ভবন এবং টানেলগুলি কীভাবে পৃথিবীর সাথে (মাটি ও শিলা সহ) যোগাযোগ করে তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। এছাড়াও, তারা রক্ষণাবেক্ষণ প্রাচীর এবং টানেলের জন্য নকশা এবং পরিকল্পনা করে।
Structural engineers: কাঠামোগত প্রকৌশলীরা তাদের শক্তি এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য বড় প্রকল্পগুলি যেমন বিল্ডিং, সেতু বা বাঁধগুলির নকশা করে এবং মূল্যায়ন করে।
Transportation engineers: পরিবহন প্রকৌশলীরা রাস্তাঘাট এবং মহাসড়কগুলির মতো প্রতিদিনের ব্যবস্থা, নকশা, পরিচালনা এবং পরিচালনা রক্ষণাবেক্ষণ করে। তবে এরা বিমানবন্দর, শিপ পোর্ট, গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং বন্দরের মতো বৃহৎ প্রকল্পগুলিও পরিকল্পনা করে।
বাংলাদেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির ক্ষেত্র
১। সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে ২য় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরী লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।
২। বিদ্যমান সরকারী ও বেসরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসমূহে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (সিভিল) হিসেবে চাকুরী লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।
৩। ভোকেশনাল স্কুলসমূহে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (সিভিল) হিসেবে চাকুরী লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।
৪। বিভিন্ন কন্সট্রাকশন ফার্মে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে চাকুরী লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।
৫। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপ-সহকারী প্রকৈশলী (সিভিল) পদে চাকুরী লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।
৬। বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল)/সুপারভাইজার পদে চাকুরী লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।
৭। বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকুরী লাভ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার যোগ্যতা
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চালু হওয়া ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর কোর্স আছে। তবে একজন শিক্ষার্থীকে এ কোর্সের ব্যাপারে সর্বোপরি সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে থাকা বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সিটিউট।
যোগ্যতা: ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম এসএসসি পাস (সাধারণ/ ভোকেশনাল/ দাখিল/ সমমান) এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি হতে হয়। এতে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষা: আপনি ইচ্ছে করলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন: বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও পিএইচডি এর অন্তর্ভুক্ত। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তির ক্ষেত্রে এইচএসসি (বিজ্ঞান) বা সমমান থেকে পাশ করতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৫.৫০ থাকা বাধ্যাতামূলক।
‘ও’ লেভেল পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২ টি বিষয়ে উর্ত্তীর্ণ হতে হবে। অথবা ডিপ্লোমা-ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে) কমপক্ষে জিপিএ ২.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
তবে বুয়েট, কুয়েট, এবং রুয়েটে ভর্তি হতে চাইলে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতিতে ৫ এর স্কেলের কমপক্ষে জিপিএ ৪.০ পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে খরচ হতে পারে আনুমানিক ৩/৫ লাখ টাকা। আরেকটু বেশি খরচ করতে পারলে দেশের বাইরে ইউক্রেন, চীন, রাশিয়াসহ অনেক দেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চ শিক্ষা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের আয় কেমন?
একজন সফল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার চাকরিতে নতুন যোগদান করলে মাসিক বেতন ৩০,০০০ বা ৪০,০০০ টাকা সম্মানী পেয়ে থাকেন। একটু অভিজ্ঞতা থাকলে ৫০,০০০ বা ৯০,০০০ থেকে শুরু হয় এবং ১৫ থেকে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে মাসে লক্ষাধিক বেতনে চাকরি করতে পারে।
শেষ কথা
যাদের মেধা এবং আগ্রহ রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে লেগে থাকার ধৈর্য্য, তারা নির্দ্বিধায় এ পেশায় আসতে পারেন। বর্তমান বাংলাদেশে বাড়তি জনসংখ্যার আবাসন সমস্যা নিরসনে নির্মিত বচ্ছে বহুতল ভবন। আর এ জন্য দরকার হচ্ছে প্রচুর দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
তাই এ চাহিদা পূরণে আপনি যদি নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পারেন, আপনার জন্য অপেক্ষা করছে উচ্চ মানের ক্যারিয়ার। যেখানে আপনি পাবেন ভালো জীবন ব্যবস্থা, মানানসই স্যালারী এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপে কোর্সটিকার পক্ষ থেকে আপনার জন্য রইলো শুভ কামনা।
এইচএসসি শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে জয়েন করো HSC Candidates, Bangladesh ফেসবুক গ্রুপে। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post