সুখ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : জীবন পুষ্পশয্যা নয়। প্রতিকূলতার বেড়াজালে আবদ্ধ সংসারের চারদিক। সংসারে বসবাসকারী মানুষগুলোকে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কষ্ট দেখে যারা ভয় পায় তারা জীবনে সুখ লাভ করতে পারে না। বীরযোদ্ধার মতো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে সব হতাশা ও কষ্ট জয় করে নিতে হবে। ‘যাও বীরবেশে কর গিয়া রণ’—পঙ্ক্তিটিতে কবি এই জীবনসংগ্রামের কথাই বলেছেন।
সুখ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. সংসারকে সমর-অঙ্গন বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: সংসারকে ‘সমর-অঙ্গন’ বলা হয়েছে, কারণ জীবন এক কঠিন সংগ্রামের নাম। সুখ ও সাফল্য অর্জনের জন্য মানুষকে বাধা-বিপত্তি ও দুঃখ-কষ্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। ঠিক যেমন একজন যোদ্ধা যুদ্ধক্ষেত্রে সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হয়, তেমনই মানুষকে জীবনযুদ্ধে আত্মত্যাগ, পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে জয়ী হতে হয়। কবি মানুষকে বীরের মতো এ সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ প্রকৃত সুখ অর্জনের পথ কখনোই সহজ নয়, বরং তা কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমেই পাওয়া যায়।
২. ‘তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?’—কবি এ চরণে কোন সুখের কথা বুঝিয়েছেন?
উত্তর: কবি ‘তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?’ চরণটি দিয়ে পরের উপকার করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ রয়েছেÑএ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি মনে করেন, নিঃস্বার্থভাবে অন্যের জন্য জীবন উৎসর্গ করাই প্রকৃত আনন্দের উৎস। নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে যদি মানুষ পরের কল্যাণে কাজ করে, তবে সে আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে, যা ভোগবিলাসে পাওয়া যায় না। তাই কবি পরার্থপরতার মধ্যেই প্রকৃত সুখের সন্ধান করেছেন এবং এটিকেই সর্বোচ্চ সুখ হিসেবে দেখিয়েছেন।
৩. ‘এ ধরা কি শুধু বিষাদময়’—এ চরণটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘এ ধরা কি শুধু বিষাদময়?’—এ চরণটি দ্বারা সুখ-সন্ধানী মানুষকে উদ্দেশ্য করে কবি উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
জগতে সুখসন্ধানী মানুষেরা অল্প দুঃখ যন্ত্রণা দেখে জীবনকে নিরর্থক মনে করে। নিজের দুঃখের কথা ভেবে ভেবে শুধু মনের কষ্টই বাড়ায়। তাদের এ ভাবনাটিকেই কবি উদ্ধৃত উক্তিটির মাধ্যমে ধরিয়ে দিতে চেয়েছেন।
৪. ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’—বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: উদ্ধৃত উক্তিটির মাধ্যমে সমাজের মানুষের পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কথা বোঝানো হয়েছে।
পারস্পরিক ত্যাগের মাধ্যমেই মানবসমাজ গড়ে ওঠে। অন্যকে বাদ দিয়ে এ সমাজে কেউ একলা বেঁচে থাকতে পারে না। তাই নিজেকে সবার মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে প্রকৃত সুখের স্বাদ লাভ করতে হবে।
৫. ‘যাও বীরবেশে কর গিয়া রণ’—কবি এখানে কোন রণের কথা বলেছেন—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘যাও বীরবেশে কর গিয়া রণ’—কবি এখানে রণ বলতে জীবন সংগ্রামের কথা বলেছেন।
জীবন পুষ্পশয্যা নয়। প্রতিকূলতার বেড়াজালে আবদ্ধ সংসারের চারদিক। সংসারে বসবাসকারী মানুষগুলোকে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কষ্ট দেখে যারা ভয় পায় তারা জীবনে সুখ লাভ করতে পারে না। বীরযোদ্ধার মতো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে সব হতাশা ও কষ্ট জয় করে নিতে হবে। ‘যাও বীরবেশে কর গিয়া রণ’—পঙ্ক্তিটিতে কবি এই জীবনসংগ্রামের কথাই বলেছেন।
৬. ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে।’—একথাটি বলেছেন কেন?
উত্তর: মানুষ সামাজিক জীব। তাই শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য পৃথিবীতে আসেনি।
সমাজে বাস করতে গিয়ে মানুষ একে অপরের সহযোগিতা অনুভব করে। মানুষের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। তাই একের সুখে-দুঃখে অন্যকে এগিয়ে আসতে হয়। অপরের কল্যাণ করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত থাকে। মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যায়। তখন সে অপরের কল্যাণের কথা ভাবতে পারে না। পারস্পরিক ত্যাগের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে মানবসমাজ। তাই বলা হয়েছে, “আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে।”
৭. প্রকৃত সুখী কারা- বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: এ পৃথিবীর সমর-অঙ্গনে যারা বীরের মতো সংগ্রাম করে জয়ী হয় তারা এবং পরের কল্যাণকে যারা নিজ জীবনে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন তারা প্রকৃত সুখী। যারা নিজের কথা ভাবে না পরের দুঃখে যারা দুঃখী হয়, পরের কারণে যারা মরতেও প্রস্তুত এমন নিঃস্বার্থ পরোপকারীরাই প্রকৃত সুখী।
৮. “পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন মন সকলি দাও’’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: পরের জন্য নিজের স্বার্থ ত্যাগ করাই প্রকৃত সার্থকতা—কবি আলোচ্য চরণদ্বয়ে এটি বোঝাতে চেয়েছেন।
আমরা সবাই জীবনে সুখী হতে চাই। কিন্তু শুধু নিজের কথা ভাবার মধ্যে প্রকৃত সুখ নেই। নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে, নিজের জীবন-মনকে পরের উপকারে নিয়োজিত করাই প্রকৃত সুখ। অন্যকে আপন ভেবে অন্যের সেবা ও কল্যাণের মাধ্যমে যে অন্যের মঙ্গলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে সেই প্রকৃত সুখী।
৯. সংসারকে সমর-অঙ্গন বলা হয়েছে কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: জীবনে চলতে গেলে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আসে তা বোঝানো হয়েছে ‘সমর-অজ্ঞান’ শব্দটি দ্বারা।
মানুষের জীবনে চলার পথে অনেক ধরনের বাধাবিপত্তি আসে। কিন্তু সবকিছু পার করে মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। এসব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে মানুষের জীবনকে জয় করা, যুদ্ধে জয়ী হওয়ার মতো। জীবনের একেকটি সমস্যার সমাধান করা একেকটি যুদ্ধ জয় করার সমান। আর তাই কবি সংসারকে সমর-অজ্ঞান বা যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
১০. কারা প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারে না?
উত্তর: আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর ও সমাজ বিচ্ছিন্ন মানুষ প্রকৃত সুখ লাভকরতে পারে না।
সমাজে একশ্রেণীর মানুষ আছে যারা খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক। সমাজের অন্য সবার কথা ভুলে তারা কেবল নিজের স্বার্থ দেখে। ফলে সে হয়ে পড়ে স্বার্থপর ও সমাজ বিচ্ছিন্ন। আর সমাজ বিছিন্ন মানুষ প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারে না।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের চারুপাঠ বাংলা বই থেকে সুখ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য মোট ১০টি অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post