সুচেতনা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর : সভ্যতার ধ্বংসাত্মক দিকগুলোকে স্বীকার করলেও একেই শেষ সত্য বলে না মানার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে প্রশ্নোক্ত চরণে।
মানুষের জীবনের বিফলতা ও সফলতার দ্বন্দ্ব অতীতেও ছিল এখনো আছে। সভ্যতার বিকাশের পাশাপাশি বহু যুদ্ধ-রক্তপাত-প্রাণহানি সংঘটিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। কিন্তু একে শেষ সত্য হিসেবে মেনে নিলে মানুষ গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হবে এবং সমাজের কল্যাণসাধন বাধাগ্রস্থ হবে। সভ্যতার এই ধ্বংসাত্মক দিককে পৃথিবীর শেষ সত্য বলে মানতে পারছেন না আশাবাদী কবি। আর তাই তিনি বলেছেন, এই পৃথিবীর রণ-রক্ত-সফলতা সত্য; তবু শেষ সত্য নয়।
সুচেতনা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর
১ কবিতায় “সুচেতনা” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কবিতায় “সুচেতনা” বলতে বোঝানো হয়েছে এক শুভ চেতনা বা ইতিবাচক মানসিক অবস্থা, যা কবির কাছে অনেক দূরের এক দ্বীপের মতো। এটি সহজে মানুষের মনে ধরা দেয় না। কবির বিশ্বাস, এই চেতনা মানবসমাজের অন্ধকার, ব্যাধি, এবং বিপর্যয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে সত্য, ভালোবাসা এবং কল্যাণের পথ দেখায়। এই শুভ চেতনা এক আলোকবর্তিকার মতো কাজ করে, যা মানবতার মুক্তির সম্ভাবনা বহন করে।
২. ‘ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিক’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: একটি সুন্দর মানবসমাজ নির্মাণে যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়েও অক্লান্তভাবে চেষ্টা করে যান, তাঁদের বোঝাতে কবি ‘ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিক’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন।
কবি জানেন পৃথিবীর ক্রমমুক্তির মাধ্যমে একটি ভালো মানবসমাজ নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন কাজ। তার জন্য সামষ্টিক মানুষের সুচেতনার উজ্জীবন ও দীর্ঘ সময়ব্যাপী সাধনার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কবি বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হলেও নিরলস শ্রম ও মেধা দিয়ে যাবেন একটি মানবিক সমাজ নির্মাণে। কবি শ্রদ্ধার সঙ্গে এমন মানুষগুলোকে বিশেষিত করেছেন ‘ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিক’ শব্দবন্ধে।
৩. ‘এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা সত্য, তবুও শেষ সত্য নয়।’ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সভ্যতার ধ্বংসাত্মক দিকগুলোকে স্বীকার করলেও একেই শেষ সত্য বলে না মানার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে প্রশ্নোক্ত চরণে।
মানুষের জীবনের বিফলতা ও সফলতার দ্বন্দ্ব অতীতেও ছিল এখনো আছে। সভ্যতার বিকাশের পাশাপাশি বহু যুদ্ধ-রক্তপাত-প্রাণহানি সংঘটিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। কিন্তু একে শেষ সত্য হিসেবে মেনে নিলে মানুষ গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হবে এবং সমাজের কল্যাণসাধন বাধাগ্রস্থ হবে। সভ্যতার এই ধ্বংসাত্মক দিককে পৃথিবীর শেষ সত্য বলে মানতে পারছেন না আশাবাদী কবি। আর তাই তিনি বলেছেন, এই পৃথিবীর রণ-রক্ত-সফলতা সত্য; তবু শেষ সত্য নয়।
৪. ভালো মানব-সমাজা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘ভালো মানব-সমাজ’ বলতে কবি জীবনানন্দ দাশ সেই মানবসমাজকে বুঝিয়েছেন, যেখানে মানুষ সফলতা-বিফলতা দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হয়ে শুভ চেতনার আলো জ্বেলে আলোকিত পৃথিবী নির্মাণ করবে।
কবি দেখেছেন, সমকালের নানা সংকটে মানবসমাজ বিপর্যস্ত। সকলেই অর্থ-ক্ষমতা-আধিপত্য চিন্তায় মগ্ন। ভালোবাসার পরিণতিতে পৌছাতেও ঘটে অনেক রক্তপাত। এমন অবস্থাতেও কবি বিশ্বাস করেন মানুষ সত্য ও মঙ্গলচিন্তার আলোকিত পথে পৃথিবীর ক্রমমুক্তি ঘটাবে। সমাজের এই শুভ ও মঙ্গলকামী মানুষের দ্বারা যে মানবিক বোধসম্পন্ন সমাজ নির্মিত হবে, তা-ই কবির কাছে ‘ভালো মানব-সমাজ’ রূপে বিবেচিত।
৫. ‘সুচেতনা’ কবিতায় কবি নির্জনতা প্রত্যাশা করেছেন কেন?
উত্তর: প্রাকৃতিক শান্তি ও নির্জনতায় শুভচেতনা বিরাজিত বলে কবি ‘সুচেতনা’ কবিতায় নির্জনতা প্রত্যাশা করেছেন।
সভ্যতার রক্তক্ষয়ী হানাহানি, মারণপ্রবণতা, সফলতা-বিফলতার দ্বন্দ্ব কবিকে বিমূঢ় করে দিয়েছে। তিনি অনুভব করেছেন পৃথিবীর গভীরতর অসুস্থতা। পৃথিবীকে অসুস্থতা থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজন শুভচেতনার আলোকিত পথ। কবির বিশ্বাস নগরের যন্ত্রণাক্লিষ্ট জীবনে সুচেতনার অস্তিত্ব নেই। সুচেতনা বিরাজিত প্রাকৃতিক শান্তি ও নির্জনতায়। তাই ‘সুচেতনা’ কবিতায় কবি নির্জনতা প্রত্যাশা করেছেন।
৬. ‘মাটি পৃথিবীর টানে মানবজন্মের ঘরে কখন এসেছি’ – চরণটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘মাটি-পৃথিবীর টানে মানবজন্মের ঘরে কখন এসেছি— চরণটিতে কবির ইহজাগতিক বোধ ও পৃথিবীর প্রতি দায়বন্ধতার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
জীবনের অপার ক্লান্তির মাঝেও ক্লান্তিহীন কাজের মাধ্যমে কবি একটি ভালো মানবসমাজ নির্মাণ করতে চান। সেই আকাঙ্ক্ষায় মাটি ও পৃথিবীর টানে যেন তিনি পৃথিবীতে মানবরূপ লাভ করেছেন। ব্যক্তিক ও সামষ্টিক সংকট প্রত্যক্ষ করে হয়তো চকিতে কবি মানবজন্ম লাভে অর্থহীনতায়। কথা বলেছেন তবুও বলা যায়, মাটি ও পৃথিবীর প্রতি দায়বদ্ধতার কারণেই তাঁর পৃথিবীতে আসা। কবি অন্তত তা-ই মনে করেন।
৭. ‘এই পথে আলো জ্বেলে- এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে’ – বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘এই পথে আলো জ্বেলে’- এ-পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে।’— বলতে কবি বুঝিয়েছেন, শুভ, কল্যাণ ও মঙ্গলচিন্তার আলোকিত পথে পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে।
অর্থ-ক্ষমতা-আধিপত্যকামী সভ্যতায় স্বার্থমগ্ন মানুষ সুচেতনা থেকে দূরে অবস্থিত। সফলতা-বিফলতার দ্বন্দ্বে পৃথিবী আজ অসুস্থ—গভীর গভীরতর অসুখ তার। তবু কবি বিশ্বাস করেন ধ্বংস ও ভাঙনের শক্তিগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে নতুন পৃথিবী সৃজনে। প্রগতিশীল মানুষদের নিরন্তর প্রয়াসে একদিন পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে। আর পৃথিবীর সেই মুক্তি হবে— শুভ, কল্যাণ ও মঙ্গলচিন্তার আলোকিত পথে।
সুচেতনা কবিতার অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর
৮. কবির প্রাণ অনেক রূঢ় রৌদ্রে ঘুরেছে কেন?
উত্তর: পৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতো ভালোবাসার জন্য কবির প্রাণ অনেক রূঢ় রৌদ্রে ঘুরেছে।
প্রেম,সত্য ও কল্যাণের প্রতিষ্ঠা সহজ নয় এই পৃথিবীতে। অনেক রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিয়েই পৌঁছাতে হয় ভালোবাসার পরিণামে কবি জীবনানন্দ দাশ মানুষের মঙ্গলে, কল্যাণে বিশ্বাসী। তাঁর প্রাণ পৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতো ভালোবাসা দিতে চেয়েছে। আর মানুষকে ভালোবাসতেই কবির প্রাণ অনেক রূঢ় রৌদ্র ঘুরেছে অর্থাৎ অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে।
৯. কবি মানবসমাজে সুচেতনা প্রত্যাশা করেছেন কেন?
উত্তর: কবি মানবসমাজকে সকল বিপর্যয় থেকে মুক্তি দিতে সুচেতনার প্রত্যাশা করেছেন।
সভ্যতার বিকাশে অনেক রক্তপাত ও জীবনের অবসান ঘটেছে। প্রেম, সত্য ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও অগণিত প্রাণহানি ও রক্তপাতের পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এতদসত্ত্বেও পৃথিবীকে এগিয়ে যেতে হয়, এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য শুভ চেতনা বা সুচেতনার প্রসার ঘটাতে হবে। তবেই সকল বিপর্যয় থেকে মানবসমাজ মুক্ত হবে বলে কবির প্রত্যাশা।
১০. মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে।’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: মানবজীবনে নানা রূঢ়তা থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর প্রতি, পৃথিবীর মানুষের প্রতি যে মানুষের দায়বদ্ধতা ও ঋণ রয়েছে কবি তাই বুঝিয়েছেন।
এই পৃথিবীর রণ-রক্ত-সফলতার দ্বন্দ্বে মানবজীবন আন্দোলিত। ভালোবাসার পরিণামে পৌঁছাতেও মানুষকে পাড়ি দিতে হয় রক্তাক্ত পথ। সভ্যতার মারণপ্রবণতায় অসুস্থ পৃথিবীর যন্ত্রণা মানুষকে ক্লিষ্ট করে। তবুও কবি মনে করেন এই পৃথিবী মানুষকে জীবন উপভোগের যে সুযোগ দিয়েছে তার জন্য পৃথিবীর প্রতি মানুষের ঋণ ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। মানুষকে পৃথিবীর কল্যাণে নিয়োজিত হতে হবে।
১১. “পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন’- উক্তিটি ব্যাখা কর।
উত্তর: ‘পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন’ – উক্তিটিতে কবির সমসাময়িককালে পৃথিবীতে বিরাজমান ধ্বংসোন্মুখ অবস্থার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
মানবপ্রেমী কবি তাঁর সমকালীন পৃথিবীতে মানুষে মানুষে বিরাজমান অসহিষ্ণুতার ভয়ংকর রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন। অগণিত প্রাণহানি, রক্তপাতের ঘটনা তাঁকে মর্মাহত করেছে। এই ধ্বংসাত্মক রূপকে তিনি পৃথিবীর ‘গভীর গভীরতর অসুখ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন; যার পরিসমাপ্তিই কবির একমাত্র প্রত্যাশা।
১২. “শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত সূর্যোদয়”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কবি এই চরণে বলেছেন যে যত অন্ধকারই থাকুক না কেন, তার পরেই সূর্যোদয় আসে। পৃথিবীর বিপর্যয়, হিংসা আর অবক্ষয়ের মধ্যেও মুক্তির সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। এই অনন্ত সূর্যোদয়ই মানবতার চিরন্তন আশার প্রতীক। শুভ চেতনার আলো একদিন সমস্ত অন্ধকার দূর করে পৃথিবীকে নতুন করে আলোকিত করবে।
১৩. কবি কেন সুচেতনাকে একটি দ্বীপের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তর: কবি সুচেতনাকে দ্বীপের সঙ্গে তুলনা করেছেন, কারণ এটি কল্পনার মধ্যে অবস্থিত এক বিচ্ছিন্ন, নির্জন স্থান। দ্বীপ যেমন চারদিক থেকে জলরাশিতে ঘেরা থাকে, তেমনি এই শুভ চেতনা চারপাশের হিংসা, ব্যাধি, এবং নৈতিক অবক্ষয় থেকে আলাদা। এটি সকলের মধ্যে সর্বদা বিরাজ করে না। তবে, যে মানুষ এই চেতনার সন্ধান পায়, সে মানুষ সত্যিকারের মুক্তি ও শান্তির পথ খুঁজে পায়।
১৪. “শিশির শরীর ছুঁয়ে সমুজ্জ্বল ভোরে”- তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এই চরণে ভোরের শিশিরের স্পর্শ আর সূর্যের আলোকে মিলিয়ে এক নতুন শুরুর আভাস দিয়েছেন কবি। রাতের অন্ধকার কেটে গিয়ে যেমন নতুন দিনের সূচনা হয়, তেমনি শুভ চেতনার বিকাশ ঘটলে মানবজীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। এটি মুক্তি, শান্তি আর আশার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
১৫. কবি কীভাবে পৃথিবীর গভীর অসুখের কথা তুলে ধরেছেন?
উত্তর: কবি পৃথিবীর গভীর অসুখ বলতে মানুষের মধ্যে বিরাজমান হিংসা, যুদ্ধ, নৈতিক অবক্ষয় এবং স্বার্থপরতার কথা বলেছেন। তিনি লক্ষ্য করেছেন যে পৃথিবী এক বিশাল সংকটের মধ্যে ডুবে আছে, যেখানে মানুষ নিজের স্বার্থে অন্য মানুষকে আঘাত করছে। শুভ চেতনার বিকাশ মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যেতে পারে ।
◉ আরও দেখ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বই থেকে সুচেতনা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। আমি আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post