সুভা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর
১. ‘পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার’- কথাটির মধ্য দিয়ে লেখক বাকপ্রতিবন্ধী সুভার বিয়ের বয়স হওয়া সত্যেও বিয়ে দিতে না পারায় পিতা-মাতার হৃদয়ের নীরব কষ্টকে বোঝাতে চেয়েছেন। সুভা বাণীকণ্ঠের ছোট মেয়ে। সে কথা বলতে পারে না। বাণীকণ্ঠ তার বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় ছোট মেয়ে সুভাকে বিয়ে দিতে পারেননি। তাই সুভার ভবিষ্যৎ নিয়ে বাণীকন্ঠ এবং তার স্ত্রী উভয়েই চিন্তিত। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তাদের উভয়ের হৃদয় নীরব কষ্টের সৃষ্টি হয়। লেখক সে কষ্টকেই বলেছেন – পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার।
২. সুভাকে সুভার মা বিধাতার অভিশাপ মনে করে কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কথা বলতে না পারায় সুভাকে সুভার মা বিধাতার অভিশাপ মনে করেন। ‘সুভা’ গল্পে সুভা জন্ম থেকেই বোবা। তার অনুভব ও অনুভূতি থাকলেও মা তাকে মেনে নিতে পারেনি। সে সুভাকে তার গর্ভের কলঙ্ক মনে করত। কারণ মায়েরা কন্যা সন্তানকে নিজের অংশ মনে করে।
ফলে মেয়ের কোন সমস্যা বা ত্রুটিকে মায়ের নিজের ত্রুটি বলে ধরে নেয়া হয়। সুভার মায়ের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সুভা কথা বলতে না পারায় সুভাকে সুভার মা বিধাতার অভিশাপ মনে করে। সে নিজের ত্রুটির কথা স্মরণ করে সুভাকে দেখলে বিরক্তিবোধ করত।
৩. ‘সুভা’ গল্পে ‘গ্রামলক্ষ্মী স্রোতস্বীনী’ কথাটি দ্বারা কী বোঝান হয়েছে?
উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে ‘গ্রামলক্ষ্মী স্রোতস্বীনী’ কথাটি দ্বারা চণ্ডীপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ছোট নদীকে বোঝান হয়েছে। সুভাদের গ্রামের নাম চণ্ডীপুর। এই গ্রামের পাশ দিয়ে ছোট নদীটি বয়ে গেছে গৃহস্থঘরের মেয়ের মত। নিরলসভাবে তার ছুটে চলা।
দুই তীরে অবস্থিত দুই গ্রামের সবার সঙ্গেই যেন নদীটির ভাব-সম্পর্ক রয়েছে। তার জল গ্রামের সবার জন্য প্রয়োজন। দুই ধারে লোকালয় এবং তরুচ্ছায়ঘন তীর, নিচ দিয়ে যেন ‘গ্রামলক্ষ্মী স্রোতস্বীনী’ দ্রুত পায়ে নানা মঙ্গল কাজ করে চলছে।
৪. সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত প্রতাপের কাছে নিজের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর জন্য। প্রতাপ যখন ছিপ ফেলে জলের দিকে চেয়ে থাকত, তখন সুভা তার কাজে সাহায্য করতে চাইত। সে কাজের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাইত যে এই পৃথিবীতে সেও একজন প্রয়োজনীয় লোক।
অথচ সুভা সেসব কিছুই করতে পারত না। আর এ কারণেই সে বিধাতার কাছে প্রার্থনা করত- যাতে অলৌকিক ক্ষমতাবলে কোন একটি কাজ করে সে প্রতাপের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
৫. ‘তুমি আমাকে যাইতে দিও না, মা’ – উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: নিজের চিরচেনা জগৎকে আঁকড়ে ধরে সুভা প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে। বাকপ্রতিবন্ধী সুভাকে বিয়ে দেয়ার জন্য তার পিতা তাকে কোলকাতায় নিয়ে যেতে চায়। কোলকাতায় যাওয়ার আগের দিন সুভা তার চির পরিচিত জগৎ নদীর ধারে এসে লুটিয়ে পড়ে। দুই বাহু প্রসারিত করে সে যেন ধরণীকে আঁকড়ে ধরতে চায়।
কারণ সে তার এই চিরচেনা প্রকৃতি ছেড়ে আর অন্য কোথাও যেতে চায় না। সে চায় ধরণীও তাকে যেন জড়িয়ে রাখুক। তাকে যেন যেতে না দেয়। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে সুভার এই মনের ভাবই প্রকাশ পেয়েছে।
৬. সুভা পিতামাতার মনে সর্বদাই জাগরূক ছিল কেন? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: জন্ম থেকেই কথা বলতে না পারায় সুভা পিতামাতার মনে সর্বদাই জাগরূক ছিল। ‘সুভা’ গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা। সে জন্মগত বোবা। সে বিধাতার অভিশাপরূপে জন্মগ্রহণ করেছে মনে করে নিজেকে আড়াল করে রাখত এবং কষ্ট পেত।
তার মা তাকে গর্ভের কলঙ্ক বলে মনে করত। সুভার কথা বলতে না পারার বেদনা তার বাবা-মা কখনোই ভুলতে পারত না। তাই সুভা পিতামাতার মনে সর্বদাই জাগরূক ছিল।
৭. সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে গেল কেন? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: কলকাতায় যাওয়ার আয়োজন শুরু হলে সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে গেল। কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা মেয়ের বিয়ের কথা চিন্তা করে বিদেশে যান। ফিরে এসে স্ত্রীকে সপরিবারে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। কথা বলতে না পারলেও সুভা বোঝে তার পিতা তাকে এই চিরচেনা পরিবেশ থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চাইছে।
একটা অনির্দিষ্ট আশঙ্কায় সে সর্বদা বাবা-মায়ের সাথে সাথে থাকতে শুরু করে। নিজের চিরচেনা পরিবেশ ও বন্ধুদের ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবে কুয়াশা ঢাকা ভোরের মত সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে যায়।
৮. প্রতাপকে নিত্যান্তই অকর্মণ্য লোক কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: জীবনের প্রতি উদাসীন আচরণের জন্য প্রতাপকে নিত্যান্তই অকর্মণ্য লোক বলা হয়েছে। প্রতাপকে তার বাবা-মা সংসারের দায়দায়িত্ব দিয়ে দায়িত্বশীল করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে কোন ভালো ফলাফল পাওয়া যায়নি। বরং প্রতাপ চলছে তার নিজের ইচ্ছেমত।
সে ছিপ ফেলে মাছ ধরে। গ্রামের অন্যদের কাজ করে দেয়ার জন্য তার আন্তরিকতা ও আগ্রহের সীমা নেই। সে অন্যের প্রয়াজন মেটাতে অত্যন্ত উদার ও সচেতন। সেই দিক থেকে সে গ্রামের সবার উপযোগি সরকারি সম্পত্তির মত। শুধু নিজ সংসার ও বাড়ির দায়িত্বের প্রতিই সে উদাসীন। এ কারণেই সুভা গল্পে তাকে নিত্যান্তই অকর্মণ্য লোক বলা হয়েছে।
৯. ‘তাহার মর্ম তাহার ভাষা অপেক্ষা সহজে বুঝিত’-কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে.
উত্তর: ‘তাহার মর্ম তাহার ভাষা অপেক্ষা সহজে বুঝিত’-কথাটি দ্বারা সুভার পশুপ্রেম বোঝানো হয়েছে। সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু দলের মাঝে দুটি গাভীও ছিল। তাদের নাম সর্বশী ও পালুঙ্গি। সুভা কথা বলতে পারত না বলে কখনো তাদের নাম ধরে ডাকতে পারেনি।
সুভা কথা বলতে না পারলেও তারা সুভার পায়ের আওয়াজ চিনতে পারত। তার কথাহীনতার মাঝে একটা করুণ সুর ছিল। আর এই করুণ সুরের মর্ম তারা খুব ভালোভাবেই বুঝত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা সুভার পশুপ্রেমই বোঝানো হয়েছে।
১০. সুভা গল্পে ‘চিরনিস্তব্ধ হৃদয়-উপকূল’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘চিরনিস্তব্ধ হৃদয়-উপকূল’ বলতে বাকশক্তিহীন সুভার মনতে বোঝানো হয়েছে। সুভা গল্পের গল্পকারের মতে প্রকৃতি যেন সুভার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়, প্রকৃতি সুভার হয়ে কথা বলে। নদীর কলধ্বনী, কোলাহল, মাঝির গান, পাখির ডাক প্রভৃতি যেন সমুদ্রের স্রোতের মত এসে সুভার চিরনিস্তব্ধ হৃদয় উপকূলের কাছে এসে ভেঙে পড়ে।
মূল প্রকৃতির হাজারো শব্দ সমারোহের মধ্যে সুভার বাকহীন হৃদয় আকুল হয়। কারণ সে কথা বলতে পারে না। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা সেই বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।
১১. ‘মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপ্রেক্ষা শ্রেষ্ঠ’ কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’ উক্তিটি দ্বারা মাছ ধরার সময়ে নীরপ পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা বোঝানো হয়েছে। মাছ পানির নিচে বাস করলেও পানির ওপরে হওয়া সামান্য শব্দও সে শুনতে পায়। ছিপ দিয়ে মাছ ধরার সময় টোপ দিয়ে মাছ একত্রিত করার চেষ্টা করা হয়। টোপের খাবারের লোভে মাছ যখন এক স্থানে জড়ো হয় তখন ছিপে বেশি মাছ ওঠে।
কিন্তু যদি পরিবেশ কোলাহলপূর্ণ হয়, তবে ভয় পেয়ে মাছ পালায়। এ কারণেই মাছ ধরার স্থানে চুপ থাকতে হয়। আর যেহেতু সুভা কথা বলতে পারে না এবং সে বাক্যহীন, তাই প্রতাপের মাছ ধরার সময় সে সর্বাপেক্ষা সঙ্গী। ‘মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’ উক্তিটি দ্বারা নীরব ও নিশ্চুপ অবস্থার কথা বলা হয়েছে।
১২. বাণীকণ্ঠকে কেন লোকে নিন্দা করতে শুরু করে?
উত্তর: সুভার বিয়ে না দেওয়ায় লোকে বাণীকণ্ঠকে নিন্দা করতে শুরু করে। সুভা বাণীকণ্ঠের তৃতীয় মেয়ে। সুভা বোবা হওয়ায় তার বিয়ে দিতে অসুবিধা হচ্ছিল। অন্যদিকে সুভার বয়স বাড়ছিল, তবু তার বাবা তাকে বিয়ে দিতে পারছিলেন না। এ কারণে সবাই বাণীকণ্ঠকে নিন্দা করতে শুরু করেছিল।
তার ওপর বাণীকণ্ঠ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন, তারা দুবেলা মাছ-ভাত খেতে পারতেন বলে তার শত্রুরও শেষ ছিল না। গ্রামের লোকজন তাদের একঘরে করারও গুঞ্জন তোলে।
১৩. বাণীকণ্ঠের বিদেশ যাওয়ার কারণ কী? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: বাণীকণ্ঠের বিদেশ যাওয়ার কারণ সুভার জন্য পাত্র ঠিক করা। বাণীকণ্ঠ সুভার বিয়ে দেয়ার কথা ভাবেন। তার মনে হয় দিন দিন সুভার বয়স বেড়েই যাচ্ছে। আর সুভা কথা বলতে না পারায় তার জন্য বর পাওয়াটাও কষ্টকর ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। সুভার বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সমাজের মতে সুভা আইবুড়ো মেয়ে।
এ কারণে সমাজেও সুভার নামে নিন্দা রটেছে। সমাজ বাণীকণ্ঠকে একঘরে করে দেয়ার হুমকিও দিয়েছে। এ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এবং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাণীকণ্ঠ সুভার জন্য পাত্র ঠিক করতে বিদেশে যায়।
১৪. প্রতাপের দ্বারা সংসারের উন্নতির আশা বাবা-মা ত্যাগ করেছিলেন কেন?
উত্তর: প্রতাপ নিত্যান্তই অকর্মণ্য ছিল বলে তার দ্বারা সংসারের উন্নতির আশা বাবা-মা ত্যাগ করেছিলেন। প্রতাপ বাবা-মায়ের নিত্যান্তই অকর্মণ্য ছেলে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে দিয়ে সংসারের উন্নতির কোন কাজ করানো সম্ভব হয়নি। মা-বাবা তাকে নিয়ে প্রত্যাশা বাদ দিয়েছিলেন।
সে অবহেলায় সময় কাটানোর জন্য অপরহ্ণে নদীর তীরে ছিপ ফেলে মাছ ধরত। এভাবে অনেকটা সময় কাটানো যায়। আসলে প্রতাপ ছিল প্রচণ্ড অলস প্রকৃতির একজন মানুষ।
১৫. বাবা ছোট মেয়েটির নাম সুভা রেখেছিলেন কেন?
উত্তর: অন্য দুই মেয়ের নামের সাথে মিলিয়ে রাখার জন্য বাবা ছোট মেয়েটির নাম সুভা রেখেছিলেন। সুভাষিণী ছিল বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান। সংক্ষেপে সবাই তাকে সুভা বলে ডাকত।
►► আরো দেখো: সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
►► আরো দেখো: সুভা গল্পের (MCQ) নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
সুভার বড় দুই বোনের নাম সুকেশিনী ও সুহাসিনী। তিন বোনের নামের সাথে মিল রাখার জন্য তৃতীয় মেয়ের নাম সুভাষিণী রেখেছিলে বাবা বাণীকণ্ঠ। তার নাম রাখার সময় জানতেন না যে সুভা বড় হয়ে কথা বলতে পারবে না।
শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে সুভা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর গুলো ডাউনলোড করে নাও। অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post