সেই দিন এই মাঠ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর : পৃথিবীতে মানুষের অবস্থানকাল ক্ষণস্থায়ী হলেও প্রকৃতি চিরবহমান বলেই কবি না থাকলেও চালতাফুল শিশিরের জলে ভিজবে। ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গের মাধ্যমে কবি জীবনানন্দ দাশের সৌন্দর্য চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
মরণশীল বলে কবিকে একদিন এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে। ফলে শিশিরে ভেজা চালতাফুলে সৃষ্টি হওয়া সৌন্দর্য অবলোকন করার সুযোগ তাঁর আর ঘটবে না। কিন্তু চালতাফুল একইভাবে ফুটবে। আগের মতোই ভোরের শিশিরে গা ভেজাবে। আর তা জীবিত কোনো মানুষের সৌন্দর্যবোধকে ঠিকই পরিতৃপ্ত করবে।
সেইদিন এই মাঠ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল’—বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘পৃথিবীর এই সব গল্প বেঁচে থাকবে চিরকাল’—বলতে কবি বুঝিয়েছেনে প্রকৃতির বহমানতা চিরকাল বেঁচে থাকবে।
পৃথিবীর প্রবহমানতা চিরন্তন। ব্যক্তিমানুষ এক সময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু চালতাফুল আগের মতোই ভিজে শিশিরের জলে, লক্ষèীপেঁচা গান গায়। খেয়া নৌকার যাতায়াত, পৃিথবীর কলরব সবই চলতে থাকে প্রকৃতির নিয়মে। তাই কবি বলেছেন, ‘পৃিথবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল’। অর্থাৎ পৃথিবীর এই বহমানতা কালক্রমে চলতেই থাকে।
২. ‘পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল।’—উক্তিটি বুঝিয়ে বলো।
উত্তর: পৃথিবীতে প্রকৃতি চিরকালীন। এখানে সুন্দরের সাধনা, নতুনের আরাধনা চিরকাল চলতে থাকে। পৃথিবীতে কখনো সুন্দরের অভিপ্রায় ও স্বপ্নের আবাহন শূন্য হয় না। সে তার আপন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকে। আলোচ্য চরণটিতে এটিই বলা হয়েছে।
প্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। সে কখনোই তার আপন রূপ-রস-গন্ধ হারিয়ে ফেলে না। সে সব সময়ই তার নিজ বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে চিরকাল প্রাণময় থাকে। প্রকৃতির যে রহস্যময় সৌন্দর্য ও আনন্দের বিস্তার তার কোনো অবশেষ নেই। প্রকৃতির মধ্যে বিচিত্র গন্ধের আস্বাদ, মৃদুমন্দ কোলাহলের আনন্দ, কিংবা পুষ্পের সৌন্দর্য কখনোই শেষ হয় না। প্রকৃতির এইসব সৌন্দর্যই গল্প হয়ে পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে।
৩. ‘আমি চলে যাব বলে’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ‘আমি চলে যাব বলে’ বলতে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বোঝানো হয়েছে।
পৃথিবীতে কেউই চিরস্থায়ী নয়। প্রত্যেক মানুষকেই একসময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। তবে কবি জানেন যে তিনি একা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও প্রকৃতির বহমানতা শেষ হবে না। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সবকিছুই চলমান থাকবে। বিষয়টি বোঝাতে কবি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
৪. এই নদী নক্ষত্রের তলে সেদিনো দেখিবে স্বপ্ন—কেন?
উত্তর: প্রকৃতির রূপ-ঐশ্বর্য চির বহমান বলে ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় কবি উপরিউক্ত কথাটি বলেছেন।
প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্য জীবনানন্দ দাশের কবিতার প্রাণ। কবির চোখে নদী যেন নক্ষত্রখচিত আকাশের নিচে বসে বসে স্বপ্ন দেখে। আর এই স্বপ্ন দেখার কোনো শেষ নেই। কেননা প্রকৃতি তার আপন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে চিরকাল প্রাণময় হয়ে থাকবে।
৫. কবি চলে গেলেও চালতাফুল শিশিরের জলে ভিজবে কেন?
উত্তর: পৃথিবীতে মানুষের অবস্থানকাল ক্ষণস্থায়ী হলেও প্রকৃতি চিরবহমান বলেই কবি না থাকলেও চালতাফুল শিশিরের জলে ভিজবে।
‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গের মাধ্যমে কবি জীবনানন্দ দাশের সৌন্দর্য চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মরণশীল বলে কবিকে একদিন এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে। ফলে শিশিরে ভেজা চালতাফুলে সৃষ্টি হওয়া সৌন্দর্য অবলোকন করার সুযোগ তাঁর আর ঘটবে না। কিন্তু চালতাফুল একইভাবে ফুটবে। আগের মতোই ভোরের শিশিরে গা ভেজাবে। আর তা জীবিত কোনো মানুষের সৌন্দর্যবোধকে ঠিকই পরিতৃপ্ত করবে।
৬. ব্যক্তিমানুষের মৃত্যু ঘটলেও সব শেষ হয়ে যায় না কেন?
উত্তর: মানুষের মৃত্যু ঘটলেও পৃথিবীর বহমানতা বজায় থাকে বলে ব্যক্তি মানুষের মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে যায় না।
মানুষ মরণশীল বলে একসময় তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। কিন্তু প্রকৃতিতে থাকে চিরকালীন ব্যস্ততা। নদীর স্রোতধারা বহমান থাকে, মাঠে থাকে চঞ্চলতা, চালতাফুলে জমে শীতের শিশির। ব্যক্তিমানুষের মৃত্যুর রেশ কোথাও লেগে থাকে না। সবকিছু আপন গতিতেই চলে। মানুষের মৃত্যু আছে কিন্তু জগতের সৌন্দর্যের মৃত্যু নেই, মানুষের স্বপ্নেরও মরণ নেই। এ কারণেই ব্যক্তিমানুষের মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে যায় না।
৭. “চারিদিকে শান্ত বাতি-ভিজে গন্ধ মৃদু কলরব”—বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তর: “চারিদিকে শান্ত বাতি-ভিজে গন্ধ-মৃদু কলরব”—লাইনটি দ্বারা নদীপাড়ের শীতকালের সন্ধ্যা বোঝানো হয়েছে। শীতকালে চারদিক কুয়াশায় ভেজা থাকে। নদীর ঘাটে তখন সারা দিন মাছ ধরা নৌকার ভিড় জমে। জেলেরা মাছ নিয়ে হাটে যায়।
দরদাম করে মাছ বিক্রি করে। তখনও নৌকায় কুপি বাতি ধীরে ধীরে জ্বলতে থাকে। কবির মতে এ আলো খুবই শান্ত। নদীর বুক ধরে ভেসে আসা হিম বাতাস যেন ভেজা গন্ধ নিয়ে কবির নাকে প্রবেশ করে। আলোচ্য লাইন দ্বারা এটাই নির্দেশ করা হয়েছে।
৮. ‘এশিরিয়া ধুলো আজ বেবিলন ছাই হয়ে আছে’—বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এশিরিয়া ধুলো আজ-বেবিলন ছাই হয়ে আছে’—বলতে সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।
‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় কবি বলেছেন, মানুষের গড়া পৃথিবীর অনেক সভ্যতা বিলীন হয়ে গেছে। এশিরীয় ও বেবিলনীয় সভ্যতা এখন ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ প্রকৃতির ধ্বংস নেই। প্রকৃতি নিজ রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে চিরকাল প্রাণময়।
প্রকৃতির অফুরন্ত সৌন্দর্য কখনই শেষ হয় না। তাই এশিরিয়া ও বেবিলনের সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে মানবসৃষ্ট সভ্যতার নিশ্চিত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে সেইদিন এই মাঠ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post