সেরা ৫ টি গল্পের বই : বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের মানসিক গঠন পাল্টাতে থাকে। তাই আমাদের মনের ক্ষিদেরও তারতম্য দেখা যায়। তেমনিভাবে আমাদের বই পড়ার অভ্যাস, বিষয়-বস্তু অনুসারে বইয়ের নির্বাচন পাল্টাতে থাকে। তবু কিছু কিছু বই থাকে যেগুলি পড়ার পরেও তার রেশ রয়ে যায় অনেক অনেকদিন, হয়তো-বা জীবনের শেষ পর্যন্ত।
সেরা ৫ টি গল্পের বই
আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে সামান্য যা কিছু পড়েছি তার মধ্য থেকে ৫ টি বাংলা বইয়ের নাম নির্বাচন করা খুবই চাপের ব্যাপার। তবুও প্রশ্নানুযায়ী অনেক কাটছাট করে আমার পড়া ৫টি সেরা বাংলা বইয়ের নাম দিলাম।
১. চাঁদের পাহাড় – বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় রচিত চাঁদের পাহাড় হল একটি অনবদ্য রোমাঞ্চকর উপন্যাস, যার প্রতিটি পাতায় রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা। উপন্যাসের মূল চরিত্র শঙ্কারকে কেন্দ্র করে রুদ্ধশ্বাস অভিযান, লোমহর্ষক ঘটনাক্রম, কষ্ট, সাহস, বীরত্ব আর বন্ধুত্বের নানা উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে থাকে উপন্যাসের কাহিনী। এই উপন্যাসের একটি লাইন আজও আমার মনে দাগ কেটে রেখেছে- “মানুষের আয়ু মানুষের জীবনের ভুল মাপকাঠি।” এই বইটি ১০ এ ৯ রেটিং দেওয়া যায়।
২. শ্রীকান্ত – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
চার খন্ডে লেখা শ্রীকান্ত হল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি জীবনিমূলক উপন্যাস। মূল চরিত্র শ্রীকান্তকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঘটনার সমাবেশ। তৎকালীন আর্থ-সামাজিক গঠনের একটা পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায় এই উপন্যাসে। শ্রীকান্ত উপন্যাসের একটি সংলাপ ‘মরার আবার জাত কি!’– এই সহজ সরল অথচ গম্ভীর বিষয়টি আপনাকে পড়া থামিয়ে ভাবতে বাধ্য করবেই। একটা উপন্যাস, উপন্যাসের চরিত্র, আখ্যান একশ বছর পরেও পাঠককে আকর্ষণ করে, ধরে রাখে- ঔপন্যাসিকের সৃজন ক্ষমতা কত প্রবল হলে এটা সম্ভব! এই বইটি ১০ এ ৮ রেটিং দেওয়া যায়।
৩. ফেলুদা সমগ্র – সত্যজিৎ রায়
ফেলুদা পড়েননি এমন শিক্ষিত বাঙালি খুবই কম আছেন। সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম সৃষ্ট চরিত্র ২১ নম্বর রজনী সেন রোডের বাসিন্দা প্রদোষ মিত্র (ফেলুদা), তার খুড়তুতো ভাই তপেশরঞ্জন মিত্র (তোপসে) এবং লেখক লালমোহন গাঙ্গুলি (জটায়ু) বাঙালির মননে চির অমর স্থান দখল করে নিয়েছে। ফেলুদা রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে সাধারণত শারীরিক শক্তি বা, অস্ত্র ব্যবহার করেন না। ব্যবহার করেন “মগজাস্ত্র”। সত্যজিৎ রায়ের কলমের কারসাজিতে, ফেলুদার পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতার অসাধারণত্বে এই বই সকল বাঙালির সেরার তালিকায় থাকবেই থাকবে। এই বইটি ১০ এ ১০ রেটিং দেওয়া যায়।
৪. রাজসিংহ – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
আমার মতে এটি একটি বিশুদ্ধ ঐতিহাসিক উপন্যাস। বঙ্কিমচন্দ্রের অসামান্য লেখনীর গুণে এই উপন্যাস একবার পড়া শুরু করলে, শেষ না করে ওঠা যাবে না। এই উপন্যাস সম্পর্কে আমার কথা নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বক্তব্য পড়ুন– “এক-একটি খণ্ড এক-একটি নির্ঝরের মতো দ্রুত ছুটিয়া চলিয়াছে। প্রথম-প্রথম তাহাতে কেবল আলোকের ঝিকিঝিকি এবং চঞ্চল লহরীর তরল কলধ্বনি – তাহার পর ষষ্ঠ খণ্ডে দেখি ধ্বনি গভীর স্রোতের পথ গভীর এবং জলের বর্ণ ঘনকৃষ্ণ হইয়া আসিতেছে, তাহার পর সপ্তম খণ্ডে দেখি কতক-বা নদীর স্রোত, কতক-বা সমুদ্রের তরঙ্গ, কতক-বা অমোঘ পরিণামের মেঘগম্ভীর গর্জন, কতক-বা তীব্র লবণাশ্রুনিমগ্ন হৃদয়ের সুগভীর ক্রন্দনোচ্ছ্বাস, কতক-বা কালপুরুষলিখিত ইতিহাসের অব্যাকুল বিরাট বিস্তার, কতক-বা ব্যক্তিবিশেষের মজ্জমান তরণীর প্রাণপণ হাহাধ্বনি। সেখানে নৃত্য অতিশয় রুদ্র, ক্রন্দন অতিশয় তীব্র এবং ঘটনাবলী ভারত-ইতিহাসের একটি যুগাবসান হইতে যুগান্তরের দিকে ব্যাপ্ত হইয়া গিয়াছে।” এই বইটি ১০ এ ৯ রেটিং দেওয়া যায়।
৫. রাজর্ষি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রাজর্ষি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। প্রেমের অহিংস পূজার সঙ্গে হিংস্র শক্তিপূজার বিরোধিতাই মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। উপন্যাসটি মানবতার পক্ষে এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। নানা কাহিনীর ঘাত-প্রতিঘাতের পর এই উপন্যাসের শেষে দেখা যায় যে অজ্ঞান রাক্ষসী পাষাণ মূর্তি রঘুপতি গোমতীর জলে ফেলে দেয় এবং গোবিন্দ মাণিক্যের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পপণ করে। পরবর্তীতে এই উপন্যাস এর উপর ভিত্তি করে রচিত হয় তাঁর বিখ্যাত নাটক ‘বিসর্জন’। এই বইটি ১০ এ ১০ রেটিং দেওয়া যায়।
► ► আরো দেখুন: ঘরে বসে টাকা ইনকাম করার উপায় কি?
এই ৫ টি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমি মনে করি যারা নতুন পাঠক, তারা বই পড়ার যে কি মজা এবং কেনো বই পড়বেন এ সকল যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। এই বিখ্যাত বইগুলোসহ আরো দেশী ও বিদেশী ভাষায় অনুবাদ করা যেকোন বই পড়তে বাংলা বই – ডিজিটাল লাইব্রেরী ভিজিট করুন।
Discussion about this post