সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য মিত্র দেশের ভূমিকা : ভারতের পর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় মিত্রশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েতের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তার প্রতিপক্ষ আমেরিকা ও চীনকে হীনবল করা সম্ভব হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে আশ্বাস দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বা চীন যুদ্ধে সম্পৃক্ত হলে তারা এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে। ২৫ মার্চ গণহত্যার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারত। দ্বিতীয়টি সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভারত তথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য মিত্র দেশের ভূমিকা
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের অনুরোধে সাড়া দিয়ে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ ও অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদানে সম্মত হয়। যার ফলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী শক্তিশালী হয়ে উঠে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধের জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে একাধিকবার ভেটো প্রদান করে। ভারতীয় বাহিনী ঢাকা দখল করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যে কোনো প্রকারে যুদ্ধবিরতির পদক্ষেপ বানচাল করাই ছিল এ ভেটো দানের উদ্দেশ্য।
জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ব্যর্থ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে সপ্তম নৌবহর প্রেরণ করে বঙ্গোপসাগরে। এর প্রতিক্রিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ৬ ও ১৩ ডিসেম্বর পারমাণবিক মিসাইলবাহী দুটো ডুবোজাহাজ বঙ্গোপসাগরে প্রেরণ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের এ পদক্ষেপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর প্রত্যাহার করে নেয়।
সুতরাং বলা যায় যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে। মস্কোর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ সরকারের প্রকৃতি যেন মস্কোপন্থি হয় এবং এ লক্ষ্যে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ভারতকে সাহায্য করা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন যে নীতি গ্রহণ করেছিল তা সার্থক ও সফল হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল। কাজেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এ বৃহৎ শক্তির ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।
অন্যান্য মিত্র দেশের ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বন্ধুর ভূমিকা পালন করে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা জোরালোভাবে বাঙালির স্বাধীনতার লড়াইকে সমর্থন জানান। শরণার্থীদের জন্য অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দেয়। একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাক্রম সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানাতে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১ আগস্ট ১৯৭১ লন্ডনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বাঙালিদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমাবেশ হয়। গণমাধ্যম ও সে দেশের জনগণ চুপচাপ ছিল না। গণহত্যার কয়েক দিনের মধ্যেই হাউস অব কমন্স সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ২৯ মার্চ হাউস অব কমন্স সভায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ-বিষয়ক সচিব স্যার অ্যালেস ডগলাস হিউম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোয় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পাকিস্তানকে তাদের সামরিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানান।
৫ এপ্রিল ১৯৭১ হাউস অব কমন্স সভার আলোচনায় ডগলাস হিউম ও অন্য সদস্যরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি প্রয়োগের তীব্র সমালোচনা করেন। হাউস অব কমন্স সভার সদস্যরা পাকিস্তান সরকারকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মীমাংসায় রাজনৈতিক সমঝোতাকে বেছে নিতে অনুরোধ করেন।
ব্রিটিশ সরকার ছাড়াও বেসরকারিভাবে ব্রিটিশ জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ছিল। ব্রিটেনের ডেইলি টেলিগ্রাফ, গার্ডিয়ান, নিউ স্টেটসম্যান, টাইমস, ইকোনমিস্ট, সানডে টাইমস, অবজারভার, বিবিসিসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যম মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন ও বাঙালিদের দুর্দশা বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরে।
আরো দেখো: ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য মিত্র দেশের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post