সকল ব্যক্তিই চায় তার ত্বক যেন ফর্সা হয়। কিন্তু, কত জনের ত্বক আর ফর্সা হয়। বাজার এখন ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে ভর্তি। যেগুলো ব্যবহার করে সাময়িক সময়ের জন্য ফর্সা হওয়া গেলেও স্থায়ী ক্ষতি হয়। এই ক্রিমগুলো ব্যবহারের একপর্যায়ে ক্যান্সারের মতো মরণব্যধি রোগেরও নজির রয়েছে। ভেতর থেকে স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় অনেক রয়েছে। যেগুলোকে প্রাকৃতিকভাবে ফর্সা হওয়ার উপায় বলতে পারেন।
বর্তমান বাজারে অনেক ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। এগুলো প্রোডাক্ট সবগুলো কেমিক্যাল-যুক্ত। এভাবে চেহারা সুন্দর করার উপায় অনুসরণ করার কারণে এসব কেমিক্যাল ত্বককে ভেতর থেকে নষ্ট করে দেয়। যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়ে থাকে। একমাত্র প্রাকৃতিকভাবে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমেই এই ক্ষতির হাত থেকে রেহায় পাওয়া সম্ভব।
ত্বক সাময়িকভাবে ফর্সা করার অনেক উপায় রয়েছে। তার মধ্যে কিছু রয়েছে ক্ষতিকর আর কিছু রয়েছে ন্যাচারাল। তবে আমরা আজকে আপনাকে জানাবো স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার ঘরোয়া উপায় ও বিভিন্ন ধরনের ফেইকপ্যাক তৈরি করে আপনার ত্বককে কীভাবে স্থায়ীভাবে ফর্সা করবেন।
স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায়
স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার ঘরোয়া উপায় গুলো জানার পূর্বে আমাদের ত্বক কীভাবে কালো হয়ে থাকে তা জানা প্রয়োজন। মূলত ত্বক কি কারণে কালো হয় সেটি জানলে আমরা সেটির প্রতি ব্যবস্থা নিতে পারবো এবং ত্বক যে কারণে কালো হয়ে গেছে সেই অনুযায়ী ত্বক কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো অনুসরণ করে আমরা ত্বক ফর্সা করতে পারবো।
ত্বক কালো হওয়ার কারণ
ত্বক কালো হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তবে মূল কারণ হচ্ছে মেলানিন নামক এক ধরনের রঞ্জক পদার্থের কারণে। যার শরীরে মেলানিন উপস্থিত থাকে না, তার শরীর সাদা হয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আর যাদের শরীরে মেলানিনের উপস্থিতি বেশী থাকে তাদের ত্বক মূলত কালো হয়ে থাকে।
শরীরে মেলানিনের পরিমাণ নির্ভর করে জাতিসত্তা, বংশগতি ও সূর্যালোকে আমরা কতক্ষণ সময় থাকি তার উপর। স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি মানুুষের ত্বকে মেলানিন বিদ্যমান তবে যেসব মানুষ রৌদ্রে বেশীক্ষণ সময় অবস্থান করে, তাদের শরীরে মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকে। যার ফলে তাদের ত্বক দিন দিন কালো ও তৈলাক্ত হতে থাকে। আগে আমাদের তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিয়ে হবে। তারপর আমাদের সেই কালো হয়ে যাওয়া ত্বককে ফর্সা করতে হবে।
শরীরে প্রধান রন্জক পদার্থ মেলানিন ছাড়াও আরও কিছু কারণ রয়েছে যার জন্য ত্বক দিন দিন কালো হয়ে থাকে। তার মধ্যে প্রধান কারণগুলো হচ্ছে ত্বকের যত্ন না নেওয়া, বৃষ্টিতে ভিজে, শীতে ত্বকের যত্ন না নেওয়ার কারণে, অসুস্থতা, দীর্ঘসময় ধরে রান্নাঘরে কাজ করা। উক্ত কারণে আপনার ত্বক কালচে ও বিবর্ণ হয়ে গেলে স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার ঘরোয়া উপায় গুলো অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমে ফর্সা হওয়া সম্ভব।
মেলানিন কমানোর উপায়
আমাদের শরীরে মেলানিনের তারতম্য জাতিসত্তা, বংশগতি ও সূর্যালোক এই তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। জাতিসত্তা ও বংশগতির কারণে আমাদের শরীরে যে মেলানিন বিদ্যামান তা কমানোর চিকিৎসা কিংবা কোন পদ্ধতি আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
তবে, সূর্যালোকে বেশী থাকার ফলে শরীরে মেলানিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সেজন্য সূর্যালোকে গেলে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো আমরা যতই অনুসরণ করি না কেন কোনভাবে মেলানিন কমাতে না পারলে স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
শসার মাধ্যমে মেলানিন কমান: ত্বকের যত্নে শসা খুবই ভালো কাজ করে। সূর্যালোকের কারণে ত্বকে মেলানিনের মাত্রা বেড়ে গেলে সেই মেলানিন কমাতে শসা খুবই কার্যকরী উপায়। তবে শসা কাজ করার গতি খুবই কম। শসা দিয়ে মেলানিন দূর করতে অনেক সময় লেগে যায় এবং প্রতিনিয়ত এটি ব্যবহার করতে হয়। শসার মাধ্যমে মেলানিন দূর করতে কিংবা অসুখের ছাপ ত্বক থেকে সরাতে চাইলে শসাকে কেটে কিংবা শসা দিয়ে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে।
মেলানিন কমানোর খাবার: অনেক ধরনের খাবার রয়েছে যে খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে মেলানিনের পরিমাণ কমানো সম্ভব। সে খাবারগুলো হচ্ছে- টমেটো, দুধ, ডিম, মাখন, গাজর, ড্রাই ফুডস সবুজ শাক সবজি। উক্ত খাবারগুলো দৈনিক খাবারের তালিকায় রাখলে শরীরে মেলানিনের মাত্রা অনেকখানি কমে আসবে।
বিভিন্ন কারণে কালো হওয়া ত্বক ফর্সা করার উপায়
মেলানিন ছাড়াও ত্বক বিভিন্ন কারণে কালো হয়ে থাকে। দেখা যায় যারা খুব বেশী চুলার কাছে থাকেন, বেশী রোদে থাকেন, বিষণ্ণতা থাকেন, ঘুমের সমস্যায় আছে এমন আরও অনেক কারণ আছে যার প্রভাবে ত্বকে কালচে ভাব হওয়া, বলিরেখা তৈরি হওয়া, ত্বক কালো হয়ে যাওয়া ও ত্বক ভাজ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় গুলোর মাধ্যমে ত্বকের এসব সমস্যা অতি সহজেই দূর হয়ে যাবে।
উক্ত কারণে যদি আপনার ত্বক কালো হয়ে থাকে তাহলে আপনার ত্বক যে কারণে কালো হয়েছে সেই কারণটি আগে সমাধান করুন। যদি ঘুমের সমস্যার কারণে ত্বক কালো হয়ে তাহলে সময় অনুযায়ী ঘুমান, যদি ত্বকের যত্ন না নেওয়ার কারণে ত্বক কালো হয়ে থাকে তাহলে ত্বকের যত্ন নেওয়া শুরু করুন। তারপর নিম্নোক্ত দেওয়া উপায়গুলো অনুসরণ করুন।
খাদ্যদ্রব্য ব্যবহারের মাধ্যমে স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায়
স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার ঘরোয়া উপায় হিসেবে অনেক উপায় রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘরে ব্যবহৃত এমন অনেক খাদ্যদ্রব্য আছে যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সহজেই আমাদের ত্বক ফর্সা করতে পারি।
দুধ, মধু ও কাঁচা হলুদ: ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার বেশ পুরোনো। প্রতিদিন এক গ্লাস অল্প গরম দুধে হাফ চামচ পরিমাণ কাঁচা হলুদ ভালোভাবে মিশিয়ে পান করা। এর সাথে মধু মিশালে এর কার্যকারিতা ও স্বাদ অনেক বৃদ্ধি পাবে। এভাবে নিয়মিত কাঁচা হলুদযুক্ত দুধ পান করলে গায়ের রঙ উজ্জ্বল হবে।
দুধের ও হলুদের ব্যবহার করার আরও একটি উপায় রয়েছে সেটি হচ্ছে দুধ যখন গরম করবেন তখন দুধের মধ্যে দেড় ইঞ্চি পরিমাণ কাঁচা হলুদ কেটে দেওয়া। এভাবে দুধ যখন গরম হয়ে সম্পূর্ণ হলুদ রং ধারণ করবে সেই দুধ পান করুন। এভাবে প্রতিদিন একবার করে পান করতে থাকুন।
ঘৃতকুমারীর ব্যবহার: স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে ঘৃতকুমারী কতটা কার্যকর তা কারোরই অজানা নয়। প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ফর্সা করার অন্যতম উপায় হচ্ছে ঘৃতকুমারীর ব্যবহার। প্রথমে ঘৃতকুমারী থেকে জেলটি সংগ্রহ করে ত্বকের মধ্যে বসিয়ে দিতে হবে। তারপর ঘৃতকুমারী জেলটি ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ২/৩ দিন ব্যবহার করুন।
পেঁপের ব্যবহার: ত্বকের মধ্যে বিদ্যমান কোষগুলো যখন মারা যায় তখনও তারা ত্বকের মধ্যেই থেকে যায়। যার ফলে ত্বক দিন দিন কালো হতে শুরু করে। পেঁপে ব্যবহারের ফলে ত্বকে থাকা মৃত কোষগুলো বেরিয়ে আসে। এরজন্য একটি পাকা পেঁপে নিয়ে ভালোভাবে পেস্টের মতো তৈরি করে মুখে লাগাতে হবে। তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
দই এর ব্যবহার: দই হচ্ছে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। যা ত্বককে আরও ফর্সা করে তোলে। দই ব্যবহার করতে এক চামচ পরিমাণ দই ত্বকে ভালোভাবে মাখিয়ে নিন। তারপর শুকিয়ে গেলে ফেসওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এভাবে এক সপ্তাহ এক নাগাড় ব্যবহার করতে হবে।
ফেসপ্যাক ব্যবহার করে স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায়
ফেসপ্যাক ব্যবহার করার মাধ্যমে ত্বককে স্থায়ীভাবে ফর্সা করে তোলা সম্ভব। যেভাবে ফেসপ্যাক তৈরি করবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক-
যা যা উপকরণ লাগবে: ৩ চামচ দুধ, ১ চামচ লেবুর রস ও ১ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা।
যেভাবে তৈরি করবেন: প্রথমে একটি বাটিতে হলুদ বাটা ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তারপর সেখানে দুধ দিয়ে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত না ফেসপ্যাকটি মসৃণ হয়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন: ফেসপ্যাকটি তৈরি করা হয়ে গেলে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর যতক্ষণ না শুকিয়ে যায় অপেক্ষা করতে হবে। শুকিয়ে গেলে টিস্যু কিংবা নরম কোন কিছু দিয়ে মুছে ফেলুন। তারপর একটু দেরিতে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। অবশ্যই ফেসপ্যাকটি লাগানোর পরে রোদের মধ্যে হাঁটাচলা করবেন না। নাহলে এর কার্যকারিতা নষ্ট হবে।
শেষ কথা
স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো জানলাম কিন্তু মানলাম না কিংবা দুদিন মানলাম তারপর আবার বাদ দিলাম এমন করলে ফর্সা হওয়ার জন্য যে উপায়ই ব্যবহার করুন না কেন ফর্সা হওয়াটা কঠিনই। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত, নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে তবেই ফর্সা হওয়া সম্ভব। স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়া কঠিন তবে অসম্ভব নয়। তাই উপরোক্ত উপায়গুলো ধৈর্য সহকারে অনুসরণ করতে থাকুন।
Discussion about this post