হরেক রকম খেলনার মেলা ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় : এই শিখন অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীরা ফেলে দেয়া বাতিল জিনিসপত্র দিয়ে খেলনা বানিয়ে একটা মেলার আয়োজন করবে। এখানে বিভিন্ন ধাতব/অধাতব জিনিস; যেমন- ফেলে দেয়া বোতল বা কৌটা, টিস্যু রোল, নষ্ট কলম, কার্ডবোর্ডের বাস্ক, রাবার ব্যান্ড থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু ব্যবহার করতে পারে।
শুরুতে তাদের একটা বা দুটা খেলনার উদাহরণ দেয়া হবে যেগুলো বানানোর মাধ্যমে তাদের নিজেদের এ ধরনের কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা তৈরি হবে। খেলনাগুলোয় বস্তুর বিভব শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হবে যা পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষার্থীরা শক্তির রূপান্তরের ধারণা অর্জন করবে।
হরেক রকম খেলনার মেলা ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায়
এছাড়া রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে বর্জ্য কাজে লাগানোর আইডিয়াও খুঁজে পাবে। সবশেষে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন খেলনা বানানোর পরিকল্পনা করবে এব এবং বিভিন্ন দলের বানানো খেলনা প্রদর্শন করে একটা মেলার আয়োজন করবে।
সব দলের ক্ষেত্রেই শক্তির রূপান্তরের ঘটনা থাকতে হবে এই হলো শর্ত। সব দল খেলনা বানানোর পর তা নিয়ে মেলা বা প্রদর্শনীর আয়োজন করবে, যেখানে দলের সদস্যরা তাদের খেলনা চালিয়ে দেখাবে এবং এতে শক্তির রূপান্তরের ঘটনা ব্যাখ্যা করবে।
প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন (মূল বই: পৃষ্ঠা ৫৮)
খেলনা নৌকা বানানোর ধাপসমূহ : (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ৫৮)
এই সেশনের পূর্বেই ফেলে দেওয়া কিছু উপকরণ যেমন- ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের পানির বোতল, বেশ কিছু রাবার ব্যান্ড, কয়েকটা পাটকাঠি অথবা পেন্সিল, একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের খাবারের চামচ, সুপার গ্লু অথবা ভালোমানের আঠা জোগাড় করে নাও ।
সেশনের শুরুতে শিক্ষকের নির্দেশনায় কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে যাও।
এবার একটি প্লাস্টিকের বোতলের দুই পাশে দুইটি পাটকাঠি অথবা পেন্সিল এমনভাবে লাগাও যেনো বোতলের নিচের দিকে ২-৩ ইঞ্চি বাড়তি অংশ থাকে।
কাঠি দুইটিকে রাবারব্যান্ড অথবা সুতার সাহায্যে খুব ভালো করে বোতলের সঙ্গে বেঁধে দাও।
দুইটি প্লাস্টিকের খাওয়ার চামচের হাতল সমানভাবে কেটে গ্লু বা আঠার সাহায্যে দুই প্রান্তকে বিপরীতমুখী করে লাগিয়ে নাও।
প্লাস্টিকের চামচ অথবা সুপার গ্লু না পাওয়া গেলে বিকল্প হিসেবে যেকোনো অ্যালুমিনিয়াম অথবা টিনের কৌটা আয়তাকার আকৃতিতে কেটে পিটিয়ে সোজা করেও ব্যবহার করতে পারো সেক্ষেত্রে ধাতব টুকরোটি রঙ করে নেওয়া যেতে পারে যাতে মরিচা না পড়ে।
তারপর বোতলের সঙ্গে লাগানো কাঠির অথবা পেন্সিলের বাড়তি অংশটির সঙ্গে দুইটি রাবারব্যান্ড যুক্ত করে নাও।
রাবারব্যান্ডের ভেতরে চামচ অথবা ধাতব বস্তুর আয়তাকার টুকরোটিকে আড়াআড়িভাবে ঢুকিয়ে খুব আটসাট করে পেঁচিয়ে নাও।
ব্যাস তোমার খেলনা প্রস্তুত। এবার এটিকে জলাশয়ে অথবা চৌবাচ্চায় ছেড়ে দিয়ে দেখো তো কেমন করে চলে!
এই নৌকাটির ক্ষেত্রে কী ঘটছে আসলে? কেন পানিতে ছেড়ে দেয়া মাত্রই এটা চলতে শুরু করল বলতে পারো? এই শক্তি কোথা থেকে আসলো? একই রকম ঘটনা কি আর কোথাও ঘটতে দেখেছ? দলের সবার সাথে আলোচনা করে নিচের ফাঁকা জায়গায় তোমার মতামত লিখে রাখো। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ৬০)
উত্তর : নৌকাটি পানিতে রাখার পর সেটি শক্তি লাভ করেছে। এই শক্তি নৌকাটিকে চলতে শুরু করতে সাহায্য করেছে।
রাবার ব্যান্ডটিকে পেঁচিয়ে বিকৃত করার কারণে তার মধ্যে বিভবশক্তি স্থিতি শক্তি জমা হয়। এই স্থিতিশক্তিই পরবর্তীতে গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
এরকম ঘটনা আরও বিভিন্ন জায়গায় ঘটতে দেখেছি। দলের সবার সাথে আলোচনা করে নিচে আমার মতামত লিখলাম-
১. গুলতি মারার সময় রাবারের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
২. ধনুক থেকে তীর ছোড়ার সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
৩. একটি বস্তুকে মাটি থেকে উপরে তুলে রাখলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
৪. স্প্রিংকে সংকুচিত করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
৫. কোনো বস্তুকে টান টান করে রাখলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
অন্যান্য দলের সাথে মুক্ত আলোচনায় যোগ দাও। তাদের ভাবনা শুনে দেখো, কোন শক্তির ফলে নৌকায় গতির সঞ্চার হলো? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ৬০)
উত্তর : অন্যান্য দলের সাথে মুক্ত আলোচনা করে তাদের ভাবনা শুনে বুঝলাম রাবার ব্যান্ডের বিভব শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে নৌকায় গতির সঞ্চার করেছে।
এবার ভেবে দেখো, তোমাদের নৌকা যখন চলছিল, পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় এসময়ে কী কোনো কাজ সম্পন্ন হয়েছে? তোমার উত্তর লিখে রাখো। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ৬০)
উত্তর : আমাদের অনুসন্ধানী বই অনুসারে পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় কাজ হলো-
কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগের ফলে যদি বলের দিকে বস্তুটি কিছু দূরত্ব অতিক্রম করে তবে বল এবং ঐ দূরত্বের গুণফলকে কাজ বলে।
অর্থাৎ কাজ = বল × দূরত্ব
∴ W = Fs
যখন নৌকা চলছিল তখন নৌকার উপর বল প্রয়োগ করা হয়েছিল এবং নৌকাতে গতির সঞ্চারের কারণে কিছুটা দূরত্ব অতিক্রম করেছিল। তাই এসময় কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তৃতীয় ও চতুর্থ সেশন (মূল বই: পৃষ্ঠা ৬১)
নৌকাটিকে গতিশীল করতে শক্তির যোগান এলো কোথা থেকে? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ৬১)
উত্তর : নৌকাটিকে গতিশীল করতে শক্তির যোগান এসেছে রাবারব্যান্ডের মধ্যকার স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তি থেকে।
ভেবে দেখো আর কোন কোন ক্ষেত্রে এরকম গতিশক্তি আর স্থিতিশক্তির পারস্পরিক রূপান্তর দেখা যায়? (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ৬১)
উত্তর : যেসব ক্ষেত্রে গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তির পারস্পরিক রূপান্তর হয়-
ঘটনা :
১. গুলতি মারার ঘটনা।
এখানে গুলতি যখন টানা হয় তখন এর রাবারের মধ্যে স্থিতিশক্তি জমা হয় এবং ছেড়ে দেওয়ার সময় স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
২. কোনো বস্তুকে মাটি থেকে উপরে তুলে ছেড়ে দেওয়া।
কোনো বস্তুকে মাটি থেকে উপরে তোলা হলে তার মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয়। বস্তুটিকে ছেড়ে দিলে তখন স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৩. স্প্রিংকে সংকুচিত করে ছেড়ে দেওয়া।
স্প্রিংকে যখন সংকুচিত করা হয় তখন স্প্রিংয়ের মধ্যে স্থিতিশক্তি জমা হয়। স্প্রিংকে ছেড়ে দিলে এ স্থিতিশক্তিই পরবর্তীতে গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
কী ধরনের খেলনা বানাতে চাও সেটা আগে দলের সবাই মিলে ঠিক করো। এরপর খেলনা বানানোর পরিকল্পনা, খসড়া নকশা, উপকরণের তালিকা তৈরি করার পালা। পরিকল্পনা করার সময় দলের সদস্যদের সবাই এককভাবে বা জোড়ায় বসে খেলনার পরিকল্পনা ও নকশা দাঁড় করাও। তুমি একা বা তোমার বন্ধুর সাথে মিলে বসে একটা নকশার পরিকল্পনা করো, তোমাদের আইডিয়াটা নিচের ছকে এঁকে রাখো। কী ধরনের উপকরণ লাগতে পারে তাও আলোচনা করে দেখো এবং ছকের নির্দিষ্ট জায়গায় লিখে রাখো। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ৬২)প্রত্যেকটা
দল সকল সদস্যসহ তাদের তৈরিকৃত খেলনাটি চালিয়ে কীভাবে বিভব শক্তি থেকে গতিশক্তির রূপান্তর হচ্ছে তা ব্যাখ্যা কর। (বিজ্ঞান অনুশীলন বই: পৃষ্ঠা ৬৪)
গুলতির রাবার যখন টানা হয় তখন রাবারে স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন হয়ে বিকৃত হয়ে যায়। রাবার বিকৃত হওয়ার কারণে তার মধ্যে বিভব শক্তি জমা থাকে। রাবার যখন টেনে ছেড়ে দেওয়া হয় তখন এই বিভব শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে মাটির গুলিটি গতি লাভ করে এবং অনেক দূরে গিয়ে পড়ে।
গুলতির রাবার যখন টানা হয় তখন তার মধ্যে বিভব শক্তি জমা হয়। এরপর যখন ছেড়ে দেওয়া হয় তখন এ বিভব শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ শক্তি এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হয়। এতে শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। এটিই শক্তির নিত্যতা সূত্র।
আমাদের দলের প্রদর্শনকৃত খেলনাটি হলো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার । এখানে বিদ্যুৎ শক্তিকে গতিশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ শক্তি গতিশক্তি এবং শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ায় শক্তির কোনো অপচয় হয়নি। কেবল এক শক্তি থেকে অন্য শক্তিতে রূপান্তর ঘটেছে। এটিই শক্তির নিত্যতা সূত্র।
খেলনাটিতে ফেলে দেওয়া প্ল্যাস্টিকের বোতল এবং কোমল পানীয় এর ক্যান ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো ব্যবহার না করলে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হতো। অর্থাৎ বোতল এবং ক্যানের রিসাইক্লিং করা হয়েছে।
বাড়ির কাজ
নিচের ছবিতে কোন ক্ষেত্রে কীভাবে শক্তির রূপান্তর হচ্ছে তা তীর চিহ্নের পাশে লেখ।
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের হরেক রকম খেলনার মেলা ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। উপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তর সংগ্রহ করে নাও।
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post