হাত ধুয়ে নাও একটি শিক্ষামূলক গল্প, যেখানে স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অন্তু, যে চঞ্চল ও প্রাণোচ্ছল হলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাসে অনিয়ম করে। মামার আগমনের মাধ্যমে সে হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা শেখে।
খাওয়ার আগে, টয়লেটের পরে হাত ধোয়া না হলে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে—এই বিষয়টি গল্পে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মামার বোঝানোর পর অন্তু সচেতন হয় এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। গল্পটি শিশুদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হাত ধুয়ে নাও
অন্তু খুব হাসিখুশি ছেলে। পড়াশুনায় ভালো, খেলাধুলায়ও বেশ। কিন্তু একটু চঞ্চল। মামাকে মা জানিয়েছিল, আজকাল অন্তর শরীরটা সব সময় ভালো যায় না। প্রিয় ভাগিনাকে অনেক দিন দেখেননি মামা। তাই ছুটি নিয়ে দেখতে এসেছেন। অন্তু বাইরে খেলা করছিল।
মামার আসার কথা শুনে ছুটে ঘরে চলে আসে। ঘরে ঢুকেই সুগন্ধটা পায় সে। মামার হাতে ওর প্রিয় খাবার বিরিয়ানি। বিরিয়ানি দেখেই মামার দিকে হাত বাড়ায় সে। তর সইছে না। প্যাকেট খুলে নিয়েই হাত দিয়ে খাবলে খেতে শুরু করে।
-“কী যে মজা, মামা…।” অন্তুর কথা শেষ না হতেই মামা ওর হাতটি সরিয়ে দেয় খাবার থেকে। বলেন, “অন্তু, এভাবে কেউ খায় নাকি?”
অন্তু গাল ফুলিয়ে হাতটাই চেটেপুটে খেতে থাকল। অমনি আবার মামা ওর হাত চেপে ধরলেন।
– “অন্তু, এভাবে খায় না।”
ভিতর থেকে মাও এসে অন্তুকে বকাবকি করলেন এভাবে খাওয়ার জন্য।
-“আহ্ বুবু, তুমি আবার বকছ কেন? এটা মামা-ভাগিনার ব্যাপার। আমি দেখছি।”
এবার মামা ওকে খাবার ঘরের পাশে হাত ধুতে নিয়ে গেলেন। সাবান দিয়ে অন্তুর হাত ধুইয়ে দিলেন। বিরিয়ানির প্যাকেটের পাশে বসিয়ে দিয়ে বলেন, “নাও এবার খাও। তোমার জন্যই তো আনা।” খেতে খেতে অন্তুর নাকে সর্দির পানি এসে যায়। ও সেটা বাঁ হাত দিয়ে টিপে শার্টে মুছে নেয়। মামা দেখে আবার চোখ পাকান।
মা বলতে থাকেন, “বুঝলি সান্টু, ছেলেটাকে এত দেখে-শুনে রাখি, তারপরেও দ্যাখ, আজকাল ওর যেন অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। ভাবছি ভালো ডাক্তার দেখাব।”
বাবা তাতে যোগ করেন “সান্টু, তোমার জানা ভালো ডাক্তার কেউ আছেন?”
“আচ্ছা, আমি দুদিন আছি। একটু দেখে নিই। হাত ধুয়ে নাও মনে হয়, ওর কোনো বিশেষ অসুখ নেই। ওর দরকার স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আরও সতর্ক হওয়া।” একটু পরেই দেখা গেল অন্তু টয়লেট থেকে বের হচ্ছে। তারপর সোজা ছুটে চলে গেল খেলতে।
সন্ধ্যায় মামা অন্তুর সঙ্গে কিছু সময় কাটালেন। ওর সারা দিনের চলাফেরা, মুখ-হাত ধোয়া, গোসল করা, খাওয়া-দাওয়া, সবকিছু সম্পর্কে আলোচনা করলেন। পরদিন বিকেলে অন্তুর সঙ্গে মামা মাঠে গেলেন। ঘরে ফিরে মামা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অন্তুর মুখ-হাত ধোয়ালেন। মা দেখে মুচকি হেসে বলেই ফেললেন, “আমার কথা তো শোনো না বাছা। এখন মামা এসেছে বলে কত ভালো ছেলে।”
বাবা হেসে বললেন, “না, অন্তু তো বরাবর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর ভালো ছেলে।”
মামা বলেন, “হ্যাঁ, ভালো ছেলে বটে, তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কতটা সেটাই তো দেখছি।”
তারপর অন্তুকে বাবা-মার সামনে বসিয়ে মামা বললেন, “আমি সব দেখলাম ভাগিনা। তোমার একটা অভ্যাস ভালো করতে হবে। আর তা হচ্ছে হাত ধোয়া। তুমি ঠিকমতো হাত ধোও না, হাত পরিষ্কার করো না। বিশেষ করে খাওয়ার আগে ও পরে আর টয়লেট করার পর। নাকের সর্দিও যেমন-তেমন করে মোছ। এগুলো মোটেই ভালো নয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রথম
কাজই হলো ঠিকমতো হাত ধোয়া। তোমার নখগুলো পরিষ্কার নয়। রোগবালাইয়ের শুরু কিন্তু এখান থেকেই।”
“দ্যাখো মামা, আমার হাত তো… পরিষ্কার দেখাচ্ছে।” অন্তু বলার চেষ্টা করে।
মামা বললেন, “পরিষ্কার দেখালেই হাত আসলে পরিষ্কার হয় না। আমরা হাত দিয়ে অনেক কিছু ধরি, অনেকের সাথে হাত মেলাই। এই সব কিছুতেই জীবাণু থাকতে পারে যা হাতে লেগে যায়। খাওয়ার আগে অথবা টয়লেট করার পর সাবান দিয়ে হাত না ধুলে এমনটা হয়।
এই রকম জীবাণু খালি চোখে দেখা যায় না। তাই ভালো করে হাত ধোয়া না হলে ওইসব জীবাণু খাবারের সঙ্গে আমাদের পেটে চলে যায়। আর বেশিরভাগ পেটের রোগ, সর্দি-জ্বর ওইসব জীবাণু থেকেই হয়। কাজেই কিছু খাওয়ার আগে দু হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।”
“এটা একটা অভ্যাস। ভালো করে হাত ধোয়ার অভ্যাস করলেই দেখবে তোমার অসুখ-বিসুখ কমে গেছে।”
অন্তুর বাবা বলেন, “আমিও তো অন্তুকে বলি। যখন বলি তখন করে। কিন্তু সব সময় কি করে?”
মা বললেন, “শুনলে তো বাবুসোনা! মামার কথা মনে থাকে যেন।”
মামা এবার অন্তুকে অনেক আদর করলেন। অন্তু খুশি হয়ে বলল, এখন থেকে সে খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিবে। টয়লেট করার পর খুব ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করবে।
অন্তু আর যা-ই হোক, মামার কথা ফেলবে না। কারণ সে মামার মতো হতে চায়। ঘুমোতে যাবার আগে অন্তু মামার কাছে কথা দেয়, ঠিকমতো হাত ধোবে। সবাইকে বলবে, “যদি সুস্থ থাকতে চাও, তো হাত ধুয়ে নাও।”
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
চঞ্চল, খাবলে, খাওয়া, চেটেপুটে, অসুখ-বিসুখ, টয়লেট, জীবাণু, ভাগিনা, সতর্ক, অভ্যাস
২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
অসুখ-বিসুখ, চঞ্চল, খাবলে খেতে, চেটেপুটে, রোগ বালাই
ক. চড়ুই পাখি অনেক হয়।
খ. ক্ষুধার্ত লোকটি খাবার পেয়ে থাকল।
গ. মজার আচার পেয়ে সবাই খাচ্ছে।
ঘ. শরীরের যত্ন না নিলে লেগেই থাকবে।
ঙ. থেকে বাঁচার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা চাই।
৩. বাংলা ভাষায় অনেক রকমের শব্দ রয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি। এই লেখাটিতে টয়লেট, বিরিয়ানি, জরুরি- এগুলো বিদেশি শব্দ। এরকম আরও শব্দ জেনে নিই এবং তা দিয়ে বাক্য রচনা করি।
রিক্সা, সরকারি, আদালত, বেঞ্চ, স্টেডিয়াম, স্টেশন, বাস
৪. প্রশ্নগুলোর উত্তর মুখে বলি ও লিখি।
ক. অন্তু মামার কাছ থেকে কী সম্পর্কে জেনেছিল?
খ. কেন অন্তুর অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে?
গ. সব সময় হাত পরিষ্কার না রাখলে কী হয়?
ঘ. হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখার সঙ্গে আর কী করতে হয়?
ঙ. হাত পরিষ্কার দেখালেও হাতের মধ্যে জীবাণু কেমন করে থাকে?
চ. কী অভ্যাস করলে অসুখ-বিসুখ অনেক কমে যায়?
ছ. অন্তু মামাকে কী কথা দিয়েছিল?
৫. গোসল করা কেন দরকার- পাঁচটি বাক্যে বলি ও লিখি।
৬. বিপরীত শব্দ লিখি এবং তা দিয়ে একটি করে বাক্য লিখি।
সুগন্ধ — দুর্গন্ধ — আবর্জনার দুর্গন্ধে পরিবেশ নষ্ট হয়।
হাত — পা — বাইরে থেকে এসে হাত-পা ধুয়ে নিতে হয়।
প্রিয় —
বকা —
হিসাব —
সোজা —
৭. কর্ম-অনুশীলন।
ক. কেন আমরা হাত ধুয়ে থাকি তা বলি।
খ. শ্রেণিকক্ষে হাত ধোয়ার অভিনয় করে দেখাই।
◉ আরও দেখুন: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে হাত ধুয়ে নাও গল্পটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post