৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ২য় অধ্যায় : ধর্মগ্রন্থে ধর্মের কথা থাকে, মানুষের কল্যাণের কথা থাকে। ঈশ্বরের মাহাত্ম, দেব-দেবীর উপাখ্যান, সমাজ ও জীবন সম্পর্কে নানা উপদেশমূলক কাহিনী প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থের বিষয়বস্তু ধর্মগ্রন্থ পাঠ করলে আমাদের কল্যাণ হয়। বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীমদৃতগবদৃগীতা, শ্রীশ্রীচণ্ডী প্রভৃতি আমাদের ধর্মগ্রন্থ। বেদ আমাদের আদি ধর্মগ্রন্থ। এ অধ্যায় থেকে আমরা সংক্ষেপে পুরাণ ও শ্রীশ্রীচণ্ডী সম্পর্কে জানব।
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ ধর্মগ্রন্থের ধারণাটি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে এমন একটি গ্রন্থ বা পুস্তক, যাতে ধর্মবিষয়ক তথ্যাবলি ও নির্দেশাবলি থাকে। যেমন : হিন্দুধর্মগ্রন্থগুলো হলো : বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, শ্রীশ্রীচণ্ডী প্রভৃতি। এগুলোর মধ্যে বেদ আদি ধর্মগ্রন্থ। এসব ধর্মগ্রন্থে মানুষের কল্যাণের পথ সম্পর্কে লেখা থাকে। এতে ঈশ্বরের মাহাত্ম্য, দেব-দেবীর জীবনাচরণ সম্পর্কে ধারণা থাকে।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ পুরাণের মূল শিক্ষা কীভাবে কাজে লাগাবে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মানুষকে উন্নত জীবনযাপন সম্পর্কে অবগত করা পুরাণের মূল শিক্ষা বা বিষয়বস্তু। পুরাণে সুন্দর জীবনযাপনের জন্য উপদেশ ও নীতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আমরা এসব শিক্ষা কাজে লাগানোর জন্য নিয়মিত পুরাণ পাঠ করব। এর মর্মার্থ বুঝব। এর প্রতিটি উপদেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করব। তাহলে আমরা পুরাণের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে নিজেদের জীবন সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারব।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ রাজা সুরথ কেন রাজ্যহারা হলেন?
উত্তর : রাজা সুরথ ছিলেন পুরাকালের চৈত্র বংশের একজন রাজা। শত্র“রা তার রাজ্য আক্রমণ করে। এ আক্রমণে তিনি পরাজিত হন। ফলে তার রাজ্য শত্র“রা ছিনিয়ে নেয়। আর রাজা সুরথ রাজ্যহারা হন।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ মহিষাসুর বধের উদ্দেশ্য বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : মহিষাসুর বধের উদ্দেশ্য ছিল দৈত্যদের হাত থেকে স্বর্গরাজ্য রক্ষা করে দেবতাদের ফিরিয়ে দেওয়া। মহিষাসুর ছিলেন দৈত্যরাজ। তিনি দেবতাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের পরাজিত করেন। স্বর্গের সিংহাসনে বসেন। দেবতারা তখন ব্রহ্মার কাছে গেলে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও অন্যান্য দেবতাদের তেজ মিলে দেবী দুর্গা রূপ নেন। তিনি দৈত্য মহিষাসুরকে শূলাঘাতে বধ করে দেবতাদের স্বর্গরাজ্য ফিরিয়ে দেন।
প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ পুরাণ পাঠের আবশ্যকতা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : আমাদের জীবনে পুরাণের গুরুত্ব অনেক বেশি। পুরাণে বর্ণিত রয়েছে সুন্দর জীবন গড়ে তোলার উপায়সমূহ। এ গ্রন্থে সত্যনিষ্ঠা, অহিংসা, ক্ষমা, শান্তি ও ত্যাগের মহিমার কথা বলা হয়েছে। তাই এ গ্রন্থ পাঠ করা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। পুরাণ নিয়মিত পাঠ করলে আমরা ধর্মপথে পরিচালিত হতে পারব। পুণ্য অর্জন করতে পারব। ঈশ্বরের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব। পুরাণে গল্পের আলোকে সকলকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান করার প্রচেষ্টা রয়েছে। এজন্য আমরা পুরাণ পাঠ করব। পুরাণের আলোকে জীবন গড়ে তুলব।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ পুরাণ শুধু একটি বিষয় নিয়েই রচিত হয়নিÑ কথাটি যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : আমাদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ পুরাণ। এ গ্রন্থের বিষয়বস্তু অনেক। এসব বিষয়বস্তুর আলোকে একে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মনে হয়েছে। এ পাঁচটি বৈশিষ্ট্য হলো :
১. সর্গ, ২. প্রতিসর্গ ৩. বংশ, ৪. মন্বন্তর ও ৫. বংশানুচরিত।
১. সর্গ : সর্গ শব্দের অর্থ সৃষ্টি। এখানে জগতের সৃষ্টি রহস্য আলোচিত হয়েছে।
২. প্রতিসর্গ : প্রতিসর্গ অর্থ পুনরায় সৃষ্টি। জগতের বিনাশ হয়ে পুনরায় আবার সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি এখানে উল্লিখিত হয়েছে।
৩. বংশ : এখানে বিভিন্ন দেবতা ও ঋষিদের বর্ণনাই হলো বংশ।
৪. মন্বন্তর : এক মনু থেকে আরেক মনুর কালের পূর্ব পর্যন্ত সময়কে বলা হয় মন্বন্তর।
৫. বংশানুচরিত : ঋষি, রাজা ও দেবতাদের জীবনচরিত এখানে আলোচিত হয়েছে।
এসব ছাড়াও বর্ণাশ্রম, ধর্ম, শ্রাদ্ধ, দান, পূজা, ব্রত, তীর্থস্থান ও অন্যান্য ধর্মীয় আচার সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। তাই বলা যায়, পুরাণ শুধু একটি বিষয় নিয়েই রচিত হয়নি।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ শ্রীশ্রীচণ্ডীর শিক্ষা কীভাবে সমাজের মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করা যায়- বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : শ্রীশ্রীচণ্ডীতে দেবী দুর্গার অন্যায় দমন করার কাহিনি উল্লিখিত হয়েছে। এসব কাহিনি থেকে আমরা অন্যায় না করা, অন্যায়ের কুফল এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজেদের সক্রিয় হওয়ার শিক্ষা পাই। এছাড়াও আমরা ঐক্য ও শক্তির শিক্ষা পাই। এ শিক্ষা আমরা নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি। এমনকি সমাজের মঙ্গলের জন্যও এ শিক্ষা ব্যবহার করতে পারি। সমাজের সকলেই অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকতে পারি। অন্যায় দেখলে তার বিরোধিতা করে দমন করতে পারি। এভাবে সকলে মিলে এসব কাজ করলে যে কোনো সমাজেই মঙ্গল আসবে।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ শ্রীশ্রীচণ্ডী পাঠের মাহাত্ম্য সমাজ জীবনের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সমাজজীবনের আলোকে শ্রীশ্রীচণ্ডীর মাহাত্ম্য অনেক। সমাজের সকলকে একতাবদ্ধভাবে যে কোনো অন্যায়-অবিচার দূর করতে শ্রীশ্রীচণ্ডীর শিক্ষা দেয়। এ শিক্ষা আমরা অর্জন করতে পারি নিয়মিত চণ্ডী পাঠ করার মাধ্যমেই। শ্রীশ্রীচণ্ডী নারীশক্তিকে পূজা করার কথা বলে। এতে নারীর প্রতি সম্মান বাড়ে। শত্রুর কবল থেকে দেশকে রক্ষা করারও শিক্ষা দেয় চণ্ডী। এসব উপদেশ আমরা নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি। এমনকি সমাজজীবনেও কাজে লাগাতে পারি। সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি।
৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ২য় অধ্যায়
১. সঞ্জয় দুর্ধর্ষ ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির হলেও সন্তানবৎসল। সে সামান্য ব্যাপারেই রাগান্বিত হয়ে তুলকালাম কা- বাধায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তার স্বার্থে আঘাত লাগলে মারধর পর্যন্ত করে। অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ কেড়ে নেয়। এসকল কারণে সকলেই তাকে অপছন্দ করে। অথচ প্রচুর দানধ্যান করে বলে তাকে ত্যাগ করতে পারে না। তারই ছেলে দেবজিৎ আবার সম্পূর্ণ বিপরীত। সে অমায়িক ও দয়ালু এবং পরোপকার ও সমাজসেবামূলক কাজ করতে ভালোবাসে। দেবজিৎ বাবার অনৈতিক কর্মকা- একেবারেই পছন্দ করে না। অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করে বলে প্রায়ই বাবার সাথে দ্বন্দ্ব হয়।
ক. শ্রীশ্রীচণ্ডীতে কতগুলো মন্ত্র আছে?
খ. শ্রীশ্রীচণ্ডী কোন পুরাণের অন্তর্গত?
গ. সঞ্জয়ের চরিত্রের সাথে মহিষাসুরের চরিত্রের তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. ‘শ্রীশ্রীচণ্ডীর শিক্ষা দেবজিৎ-এর চরিত্রে অনেকটাই প্রতিফলিত হয়েছে’- কথাটি মূল্যায়ন কর।
২. পূর্ণিমা গল্প শুনতে ভালোবাসে। সে এমন সব গল্প পড়ে ও শোনে যাতে মানুষের কল্যাণের কথা আছে। আছে প্রাচীন বংশতালিকা ও জীবনের উত্থান পতনের অনেক গল্প। এতে কয়েকজন দেবতার কথা বলা হয়েছে। এর বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে।
ক. ‘পুরাণ’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কীভাবে উপপুরাণ রচিত হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে কোন গ্রন্থের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়টি বলতে একটিমাত্র গ্রন্থকে বোঝায় না।Ñ এ মতের সাথে তুমি কি একমত? মতামত দাও।
৩. মানবচরিত্রের যেমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তেমনি একটি গ্রন্থেরও নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এগুলোর মাধ্যমে সৃষ্টির কথা, তত্ত্ব প্রভৃতি বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মন্বন্তর সম্পর্কে বর্ণনা। শিখা প্রতিদিন গ্রন্থটি পাঠ করে। তার মতে, জীবনে এটির গুরুত্ব অপরিসীম।
ক. পুরাণের বৈশিষ্ট্য কয়টি?
খ. মন্বন্তর বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কোন গ্রন্থের বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে শিখার সর্বশেষ ধারণার সাথে তুমি কি একমত? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
৪. দিব্যা ‘ক’ পূজা উপলক্ষে মামার বাড়ি বেড়াতে এসেছে। সে ছোট বিধায় এ পূজা সম্পর্কে কিছু জানে না। তখন তার দিদিমণি তাকে অসুরবধ, দেবীর আবির্ভাব, দেবীর কৃপা প্রভৃতি সম্পর্কে বর্ণনা করেন। এভাবে দিব্যা দেবী ও তার পূজা সম্পর্কে জানতে পারে। দেবী হলেন দেবতাদের শক্তির মিলিত রূপ।
ক. শ্রীশ্রীচণ্ডী কোন পুরাণের অংশ?
খ. কেন শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন?
গ. উদ্দীপকে কোন দেবীর ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সর্বশেষ কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
►► আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির অন্যান্য বিষয়ের শীট
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে ৭ম শ্রেণি হিন্দুধর্ম শিক্ষা ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post