হিমালয় দর্শন প্রশ্ন উত্তর : বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের লেখা হিমালয় দর্শন একটি ভ্রমণ বৃত্তান্ত। এখানে তিনি তার ভ্রমণ করা হিমালয়ের বিভিন্ন দৃশ্য এবং অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। মূলত হিমালয়ে গিয়ে লেখিকা প্রাকৃতিক বিভিন্ন সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। এখানকার নদী, লতা-পাতা আর মেঘ-বৃষ্টি সবকিছুই তাকে আকৃষ্ট করেছেন। প্রকৃতির এ অনাবিল সৌন্দর্য তিনি তার লেখনিতে অকৃপণতার সাথে তুলে ধরেছেন।
হিমালয় দর্শন প্রশ্ন উত্তর
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. ভুটানি রমণীরা কীভাবে নীচেকা আদমি’ দেৱ কাছ থকে অসৎ বিষয় শিখছে ?
উত্তর: ভুটানি রমণীরা নীচেকা আদমি’-দের কাছ থেকে শিখছে বাজারের পয়সা চুরি করা ও দুধে জল মেশানাে।
২. বড়াে ঝরনাৱ কল্লোল গীতি শুনে ঈশ্বৱভক্তিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে লেখিকা কী বলতে চাইলেন?
উত্তর: লেখিকা বলতে চাইলেন যে, প্রবহমান নিঝরের মতাে প্রাণটাও ঈশ্বরের পদপ্রান্তে কেন লুটিয়ে পড়ে না।
৩. পাহাড়ে এসে লেখিকা কী মনে করছেন?
উত্তর: পাহাড়ে এসে লেখিকা নিজেকে সুখী ও ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ মনে করছেন।
৪. প্রতিটি উচ্চশৃঙ্গা ও প্রতিটি ঝৱনা প্রথম দর্শনে কী বলে?
উত্তর: প্রতিটি উচ্চশৃঙ্গ ও প্রতিটি ঝরনা প্রথম দর্শনে বলে আমায় দেখ, আমায় দেখ।
৫. ঈশ্বৱেৱ সৃষ্ট মহাবিশ্বের তুলনায় হিমালয় লেখিকার কাছে কী মনে হয়েছে ?
উত্তর: মহাবিশ্বের তুলনায় লেখিকার কাছে মনে হয়েছে অতি ক্ষুদ্র বালুকণার চেয়েও ক্ষুদ্র।
৬. চক্ষু কর্ণ মন নিয়ে স্রষ্টা ঈশ্বৱেৱ গুণকীর্তন না করলে কী করা হয় বলে লেখকা মনে করেন?
উত্তর: চক্ষু কর্ণ মন নিয়ে স্রষ্টা ঈশ্বরের গুণকীর্তন না করলে লেখিকা মনে করেন কৃতঘ্নতার পরিচয় দেওয়া হয়।
৭. উপাসনার জন্য কী চাই বলে লেখিকা মনে করেন?
উত্তর: উপাসনার জন্য প্রাণের আবেগ থাকা চাই বলে লেখিক মনে করেন।
৮. মেঘখণ্ডকে কে তাড়িয়ে নিয়ে চলল?
উত্তর: কারসিয়াং-এর আকাশে ঘুরে বেড়ানাে মেঘকে ইতস্ত, বাতাস একদিক থেকে অন্যদিকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় ।
৯. সৌন্দর্যের রাজ্য রচনা করে কী?
উত্তর: কারসিয়াং-এ প্রতিদিন অস্তগামী সূর্যের সােনারােদ-। মাখা মেঘকে নিয়ে লুকোচুরি খেলাতেই সেখানে সৌন্দর্যে রাজ্য রচিত হয়।
১০. লেখিকা কোন্ গ্রন্থে কী পাঠ করেছিলেন?
উত্তর: লেখিকা ‘ভূতত্ত্ব’ গ্রন্থে পাঠ করেছিলেন কারবনিফেরাস যুগে বড়াে বড়াে টেকিতরু ছিল।
১১. নির্জন বনের মধ্যে লেখিকা কী দেখতে পলেন?
উত্তর: নির্জন বনের মধ্যে লেখিকা ছিনে সেঁক দেখতে পেলেন, কিন্তু সাপ দেখলেন না।
১২. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সময় মন প্রাণ স্বতঃই কী বলে উঠে?
উত্তর: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সময় মনপ্রাণ নিজের থেকে বলে ওঠে, ঈশ্বর প্রশংসার যােগ্য ও তিনি ধন্য।
১৩. লেখিকাদেৱ ভুটিয়া চাকরানিটির নাম ও পােশাক কী ছিল?
উত্তর: লেখিকাদের ভুটিয়া চাকরানিটির নাম ছিল ভালু ও পােশাক ছিল পরনে সাতগজ কাপড়ের তৈরি ঘাঘরা, কোমরে জড়ানাে এক খণ্ড কাপড় এবং গায়ে জ্যাকেট।
১৪. কাকে নদী বলে মনে হয়?
উত্তর: কারসিয়াং যাওয়ার সময় নীচের উপত্যকার সাদা কুয়াশা দেখে নদী বলে মনে হয়েছে লেখিকার।
১৫. ৱেল পথে যাওয়ার সময় জলপ্রপাত বা ঝরনা দেখে লেখিকার কী মনে হলাে?
উত্তর: লেখিকার মনে হলাে জলপ্রপাত ও ঝরনার সৌন্দর্য বর্ণনার অতীত, তা ছাড়া ভীমবেগে প্রবাহিত জলধারা পাষাণ হৃদয় বিদীর্ণ করছে।
১৬. কীভাবে লেখিকার মনােৱথ পূর্ণ হলাে?
উত্তর: রেলগাড়ি একটি বড়াে ঝরনার কাছে ইঞ্জিনে জল নেওয়ার জন্য থেমে যাওয়ায় লেখিকার ঝরনা দেখার মনােরথ পূর্ণ হয়।
১৭. চার হাজার ফুট উচ্চতায় ওঠার পরেও লেখিকা কী অনুভব করলেন না?
উত্তর: চার হাজার ফুট উচ্চতায় ওঠার পরেও লেখিকা শীত অনুভব করলেন না।
১৮. লেখিকাৱা বাসায় হাজির হয়েও গৃহসুখ অনুভব করতে পারলেন না কেন?
উত্তর: গৃহসুখ অনুভব করতে পারলেন না, কারণ ভ্রমক্রমে তাঁদের ট্রাংকগুলি দার্জিলিং-এ -এর ঠিকানায় চলে যায়।
১৯. আসবাবপত্র ফিরে আসায় গৃহসুখে থেকে লেখিকাৱ কী উপলব্দি হলাে?
উত্তর: গৃহসুখে থেকে লেখিকার এই উপলব্ধি হলাে যে, আশ্রয় পেলেই গৃহসুখ আসে না, সেজন্য প্রয়ােজনীয় আসবাব সরঞ্জামও চাই।
২০. প্রাকৃতিক শােভা কীসের জন্য শতগুণ বৃদ্ধি পয়েছে ?
উত্তর: সবুজ চা-বাগানগুলির জন্য পার্বত্য অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২১. কাকে ধৱণীৱ সীমান্তের মতাে দেখায়?
উত্তর: দূর থেকে সারিবদ্ধ চা-বাগানের মধ্য দিয়ে মানুষের চলার সরু পথগুলিকে ধরণীর সীমান্তের মতাে দেখায়।
২২. ‘হিমালয় দর্শন’ ৱচনাংশে লেখিকা কীসেৱ সৌন্দর্যকে বর্ণনাতীত বলেছেন?
উত্তর: লেখিকা হিমালয়ান রেলপথ ধরে কারসিয়াং যাওয়ার সময় কতকগুলি জলপ্রপাত দেখেছিলেন, সেগুলির সৌন্দর্যকে..তি, বর্ণনাতীত বলেছেন।
২৩. লেখিকাৱা যে সময়ে কারসিয়াং-এ গেছেন সে সময়কার আবহাওয়া কেমন?
উত্তর: কারসিয়াং-এর তখনকার আবহাওয়া হলো না। গ্রীষ্ম, লেখিকার অভিমত অনুযায়ী পার্বত্য বসন্তকাল।
২৪. কাৱসিয়াং-এর জল ভালাে না থাকায় লেখিকাৱা ব্যবহারের জন্য কী করতেন?
উত্তর: কারসিয়াং-এর জল ভালাে না থাকায় লেখিক ব্যবহারের জন্য জল ফিলটারে হেঁকে নিতেন।
২৫. বায়ু তাে খুবই স্বাস্থ্যকর, কোন স্থানের বায়ু স্বাস্থ্যকর?
উঃ পার্বত্য কারসিয়াং-এর বায়ু খুবই স্বাস্থ্যকর।
২৬. কাৱসিয়াং-এ লেখিকাৱা ঝরনার জল কীভাবে ব্যবহার করতেন?
উত্তর: কারসিয়াং-এ বেগম রােকেয়ারা পানীয় জল ফিলটা হেঁকে ব্যবহার করতেন।
২৭. ‘কেবল ভূ-তত্ত্ব গ্রন্থে পাঠ করিয়াছিলাম’ ভূতত্ত্ব গ্রন্থে লেখিকা কী পাঠ করেছিলেন?
উত্তর: কেবল ভূতত্ত্ব গ্রন্থে লেখিকা বেগম রােকেয়া পাঠ করেছিলেন যে, কারবনিফেরাস যুগে বড়াে বড়াে পেঁকিগাছ ছিল।
২৮. ‘মেঘখণ্ডকে তাড়াইয়া লইয়া চলিল। মেঘখণ্ডকে কে তাড়িয়ে নিয়ে চলল?
উত্তর; বাতাস ও মেঘের লুকোচুরি খেলায় উলটো দিক থেকে বয়ে আসা বাতাস মেঘখণ্ডকে তাড়িয়ে নিয়ে চলল।
২৯. কাৱসিয়াং-এ লেখিকার কী দেখে আনন্দ হলাে?
উত্তর: কারসিয়াং-এ কারবনিফেরাস যুগের পেঁকিগাছ দেখে লেখিকা বেগম রােকেয়ার ভারী আনন্দ হলাে।
৩০. কাদেৱ কী তামাশা দেখে লেখিকা সময় অতিবাহিত করেন?
উত্তর: অস্তগামী সূর্যের সােনারােদ মেখে সুকুমার মেঘগুলি বায়ু ভরে ইতস্তত ছােটাছুটি করে, সেই তামাশা দেখে লেখিকা সময় কাটান।
৩১. ‘হিমালয় দর্শন’ রচনাংশে কোন জিনিসটিকে লেকা বেশ সুন্দর (দংরলে মনে করেছেন?
উত্তর: হিমালয়ান রেলগাড়িগুলিকে খেলনা গাড়ির মতো সুন্দর দৈখায় বলে লেখিকা মনে করেছেন।
৩২. হিমালয়ান রেলগাড়ি আকৃতিতে, উচ্চতায় ও গাততে কেমন?
উত্তর: হিমালয়ান রেলগাড়ি আকারে ছােটো খেলনা গাড়ির মতাে, উচ্চতা খুব নীচু, গতি কম, অনায়াসে ওঠা-নামা সম্ভব।
৩৩. বেলগাড়ি কীভাবে চলতে লাগল?
উত্তর: রেলগাড়ি অনেক আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে ওপরে উঠতে লাগল।
হিমালয় দর্শন প্রশ্ন উত্তর
৩৪. পথের দু-পাশের দৃশ্য কেমন
উত্তর: পথের দু-পাশে মনােরম দৃশ্য—কোথাও খুব উঁচু পর্বতশৃঙ্গ, কোথাও নিবিড় বন।
৩৫. বেশ সুন্দর দেখায়। এখানে লেখিকা কোন্ দৃশ্যের কথা বলেছেন?
উত্তর: হিমালয়ান রেলগাড়ির ছােটো গাড়িগুলি খেলনার মতাে বেশ সুন্দর, লেখিকা বেগম রােকেয়া সেই দৃশ্যের কথা বলেছেন।
৩৬. পথের দুই ধাৱে মনােরম দৃশ্য—– মনােরম দৃশ্যটি লেখাে।
উত্তর: লেখিকা বেগম রােকেয়ার দেখা পথের দু-ধারে মনােরম দৃশ্যটি হলাে কোথাও অতি উচ্চ পর্বতচূড়া, কোথাও নিবিড় বন।
৩৭. ‘এখনও শীত বােধ হয় না,”—কত উচ্চতায়। অবস্থান কৱে লেখিকা শীত বােধ করছেন না?
উত্তর: লেখিকা বেগম রােকেয়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থান করা সত্ত্বেও শীত বােধ করছেন না।
৩৮. লেখিকাৱা তিন হাজার ফুট উঁচুতে উঠেও কী অনুভব করলেন না?
উত্তর: লেখিকারা ক্রমে সমুদ্রতল থেকে তিন হাজার ফুট উচ্চতায় উঠেও শীত অনুভব করলেন না।
৩৯. লেখিকা নীচের উপত্যকাকে কেমন দেখলেন?
উত্তর: লেখিকা নীচের উপত্যকায় দেখলেন সাদা কুয়াশা এবং তা দেখে হঠাৎ তার নদী বলে মনে হলো।
৪০. চায়ের খেতগুলি দেখে বেগম রােকেয়ার কী মনে হলাে?
উত্তর: চায়ের হরিৎবর্ণ খেতগুলি দেখে বেগম রােকেয়ার মনে হলাে সেগুলি প্রাকৃতিক শোভাকে শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
১. কাৱসিয়াং-এর বাসায় লেখিকা কিছু সময়ের – জন্য গৃহসুখ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন কেন এবং এ ব্যাপারে তাঁর অভিজ্ঞতাই বা কী? সেখানকার জলবায়ু সম্পর্কে লেখাে।
উত্তর: গৃহসুখ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ : এ ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা : কারসিয়াং রেলস্টেশনে নেমে লেখিকা বেগম রােকেয়া কিছুটা দূরে বাসায় পৌঁছেছিলেন। ভুল করে তাঁদের আসবাবপত্রের ট্রাংক দার্জিলিং-এর ঠিকানায় চলে যাওয়ায় তাঁরা কিছু সময় গৃহসুখ থেকে বঞ্চিত হন। অবশ্য সন্ধ্যার গাড়িতে ট্রাংকগুলি ফিরে আসে। তখন সেগুলি যথারীতি বাসায় পৌঁছায়।
তারপর গৃহসুখ অনুভব করতে পারেন। লেখিকার মনে হয়, তাঁরা দার্জিলিং যাওয়ার আগে তাঁদের জিনিসপত্র দার্জিলিং-এর বায়ু সেবন করে নিজেদের চরিতার্থ করে। এই ঘটনা থেকে লেখিকার অভিজ্ঞতা হলাে যে, কেবল বাস করার আশ্রয় পেলেই বাস করা সুখের হয় । প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র আসবাব সরঞ্জাম থাকলে তবেই গৃহে সুখপ্রাপ্তি পূর্ণতা পায় ।
জলবায়ু : লেখিকা যে সময়ে গিয়েছেন সেখানে তখন না শীত না গ্রীষ্ম।
পার্বত্য বসন্তকাল বলা যায়। অবশ্য সূর্যকিরণ প্রখর। একদিন সামান্য বৃষ্টিও হয়েছে। বায়ু খুব স্বাস্থ্যকর। জল নাকি ভালাে নয়। সেজন্য লেখিকারা জল ফিলটার করে ব্যবহার করছেন। জল দেখতে স্বচ্ছ। জলের সরবরাহ কূপ ও নদী থেকে নয়, ঝরনা থেকে। জল ঠান্ডা, বাতাসও ঠান্ডা, তাতে প্রাণ জুড়ায়।
২. ‘হিমালয় দর্শন’ ভ্রমণবৃত্তান্তের শেষাংশে লেখিকা বেগম রােকেয়াৱ ঈশ্বৱভক্তিৱ যে পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে তা আলােচনা করাে।
অথবা, “ঈশ্বৱই প্রশংসার যােগ্য। তিনিই ধন্য।’ উদ্ধৃতিৱ তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর: ঈশ্বৱভক্তি : হিমালয় দর্শন’ ভ্রমণবৃত্তান্তের ‘ শেষাংশে প্রকাশিত হয়েছে লেখিকা বেগম রােকেয়ার ঈশ্বরভক্তি। কারসিয়াং-এর বাসা থেকে মাইলখানেক দূরের বড়ােসড়াে এক ঝরনার বিরামহীন কল্লোল গীতি শ্রবণে লেখিকার ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির উচ্ছ্বাস দু-তিন গুণ বেগে ধাবিত হয়েছে। তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছে ‘প্রাণটাও কেন ঐ নিঝরের ন্যায় বহিয়া গিয়া পরমেশ্বরের চরণপ্রান্তে লুটাইয়া পড়ে না? তিনি হিমালয়ে এসে পর্বতের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে অত্যন্ত সুখী। সেজন্য তিনি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ।
হিমালয়ের অসীম সৌন্দর্য দর্শন তাঁর দর্শন পিপাসাকে যেন শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে বলেছেন, কিন্তু কেবল দুইটি চক্ষু দিয়াছেন, তাহা আর কত দেখিব ? প্রভু অনেকগুলি চক্ষু দেন নাই কেন ? পর্বতশৃঙ্গ ও ঝরনা দেখে চোখ যখন বিস্ময়-বিস্ফারিত, তখন সেই পর্বতশৃঙ্গ ও ঝরনা যেন ভূকুটি হেনে বলে, তাদের না দেখে তাদের যিনি স্রষ্টা সেই বিশ্বস্রষ্টা মহাশিল্পীকে যেন স্মরণ করা হয়। এই সত্যতা উপলব্ধি লেখিকার ভগবদ্ভক্তির অন্যতম পরিচয়।
মানুষের চোখ, কান, মন, সবই তাে ঈশ্বরের দান। সেজন্য তাঁর গুণকীর্তন না করা কৃতঘ্নতার পরিচয়। মনপ্রাণ একাগ্র করে ঈশ্বর উপাসনায় তৃপ্তি আসে। নইলে টিয়াপাখির মতাে কতকগুলি শব্দ উচ্চারণে উপাসনা হয় না। উপাসনায় প্রাণের আবেগ থাকা চাই। “প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শনকালে মন প্রাণ স্বতঃই সমস্বরে বলিয়া উঠে, “ঈশ্বরই প্রশংসার যােগ্য। তিনিই ধন্য।”
হিমালয় দর্শন বড় প্রশ্ন উত্তর
৩. “ইহাদেৱ এই তামাশা দেখিতেই আমার সময় অতিবাহিত হয়।–“ইহাদেৱ’ বলতে কী? তাদেৱ তামাশাৱ বর্ণনা দাও।
উত্তর: ‘ইহাদের’ বলতে বায়ুভরে ইতস্তত ছুটে বেড়ানাে মেঘ। খণ্ড খণ্ড মেঘেৱ তামাশা : কারসিয়াং-এর বাতাস যেমন পরিষ্কার তেমনি হালকা। বাতাস আর মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখতে চমৎকার। মেঘ একদিকে তাে বাতাস তার উলটো দিকে। যেই বাতাস ধেয়ে এল, অমনি মেঘখণ্ড তাড়া খেয়ে চলতে লাগল। প্রতিদিন বেলা শেষে ওই পার্বত্যদেশে অপূর্ব দৃশ্যের ছবি তৈরি হয়। অস্তগামী সূর্য বাতাস আর মেঘ নিয়ে অতি মনােহর সৌন্দর্যের রাজ্য গড়ে তােলে। অস্তমান সূর্য পশ্চিম আকাশের গায়ে পাহাড়ে যেন তরল সােনা ঢেলে দেয়। আসলে অস্তায়মান সূর্যের রক্তরশ্মি পাহাড়ের গা-কে যেন তরল সােনায় রাঙিয়ে তােলে।
আকাশে তখন খণ্ড খণ্ড শিশু মেঘের সমারােহ। তারা গায়ে সােনা রং মেখে নেয়। আর তখনই বাতাসের প্রবাহ তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। ফলে সােনামাখা মেঘখণ্ডগুলি এখানে-ওখানে ছােটাছুটি করতে থাকে। লেখিকার মনে হয় এ যেন বিচিত্র তামাশা। মেঘ ২ ও বাতাসের ওই বিচিত্র তামাশা দেখে লেখিকা সময় অতিবাহিত করেন। আত্মহারাও হন। তখন তাঁর পক্ষে কোনাে কাজ করা সম্ভব হয় না।
৪. ‘প্রাণটাও কেন ঐ নিঝৱেৱ ন্যায় বহিয়া গিয়া পরমেশ্বৱেৱ চৱণপ্রান্তে লুটাইয়া পড়ে না? –উদ্ধৃতিৱ প্রসঙ্গ নির্দেশসহ তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। ‘এখন সে সাধও পূর্ণ হইল।’—কী সাধ কীভাবে পূর্ণ হলাে?
উত্তর: প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য ; কারসিয়াং-এ লেখিকা বেগম রােকেয়ার বাসা থেকে মাইলখানেক দূরে একটা বড়ােসড়াে ঝরনা ছিল। বাসা থেকে ওই ঝরনার দুধের মতাে সাদা জলস্রোত দেখা যেত। স্রোতের কলগীতি দিনরাত্তির লেখিকার কানে আসত। ওই কল্লোল গীত শুনে ঈশ্বরের প্রতি লেখিকার ভক্তির আবেগ ও উচ্ছ্বাস দু-তিন গুণ বেগে প্রবাহিত হতাে।
তার মনে প্রশ্ন জাগত ওই নিঝরের প্রবাহিত জলধারার মতাে প্রাণ কেন ধাবিত হয়ে ভূতলে পতিত জলধারার মতাে ঈশ্বরের চরণপ্রান্তে লুটিয়ে পড়ছে না। এখানে বেগবান জলধারার সঙ্গে প্রাণের এবং ভূমিতলে পতিত জলধারার সঙ্গে ঈশ্বরের চরণে লুটিয়ে পড়া প্রাণের তুলনা করা হয়েছে।
সাধ পূৱণ : লেখিকার সে সাধ হলাে হিমালয় দর্শনের সাধ। তিনি বঙ্গোপসাগর দেখেছেন। তাতে তাঁর সাগর দেখার সাধ পূর্ণ হয়েছে। তবে অপূর্ণ থেকেছে পাহাড় দেখার সাধ। সৌভাগ্যবশত হিমালয় দর্শনের সুযােগ এসে যায়। লেখিকা প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যথাসময়ে শিলিগুড়ি স্টেশনে এসে যান। হিমালয়ান রেলগাড়ি চড়ে রওনা হওয়ায় তাঁর পাহাড় দেখার অপূর্ণ সাধ পূর্ণ হওয়ার পথে এগিয়ে চলে। কারসিয়াং-এর বাসায় অবস্থানকালে সেই সাধ পূরণের কথা তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন।
৫. লেখিকা বেগম রােকেয়াৱ লেখা ‘হিমালয় দর্শন’ রচনাৱ ভ্রমণবৃত্তান্ত অনুসৱণে অৱণ্য প্রকৃতির বর্ণনা করাে।
উত্তর: অৱণ্য প্রকৃতির বিশেষ ভূমিকা : সুখ্যাত লেখিকা বেগম রােকেয়ার ‘হিমালয় দর্শন’ রচনায় লেখিকাদের শিলিগুড়ি রেলস্টেশন থেকে কারসিয়াং পর্যন্ত হিমালয়ান । রেলগাড়িতে ভ্রমণবৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘পথের দুই ধারে মনােরম দৃশ্য—কোথাও অতি উচ্চ চূড়া, কোথাও নিবিড় অরণ্য। পার্বত্য অঞ্চলে অরণ্য প্রকৃতির বিশেষ ভূমিকা আছে।
ধৱিত্ৰীৱ কেশপাশ : ভ্রমণযাত্রী লেখিকার চোখে ‘তরু, লতা, ঘাস, পাতা, সকলই মনােহর। নিবিড় শ্যামল বন যেন ধরিত্রীর কেশপাশ, আর তার মাঝ দিয়ে পায়ে হাঁটা পথ যেন আঁকাবাঁকা সিঁথি।
কাৱসিয়াং-এৱ অৱণ্য প্রকৃতি : কারসিয়াং-এ থাকার এ সময় অরণ্য প্রকৃতির সঙ্গে লেখিকার সরাসরি পরিচয় হয়। ২০/২৫ ফুট উঁচু চেঁকি গাছ দেখে তাঁর ভারী আনন্দ হয়। কারসিয়াংএর কোনাে কোনাে জায়গায় খুব ঘন বন দেখেন। বনে বেড়ানাে ছিল বেশ নির্ভয়। কারণ ওই বনে বাঘ নেই। নির্জন বনপথে বেড়াতে লেখিকা ভালােবাসতেন। বনে অবশ্য সাপ ও জোঁক ছিল। সাপের সঙ্গে লেখিকাদের সাক্ষাৎ হয়নি। জোঁক দু-তিন বার রক্ত শোষণ করেছে।
আরো দেখো: নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন উত্তর ও সাজেশন
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে হিমালয় দর্শন প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। এছাড়াও মাধ্যমিক অন্যান্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ সাজেশন রয়েছে কোর্সটিকায়। যা তোমরা বিনামূল্যে পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post