হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ৭ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর : কার্যপত্র হল বহুঘর বিশিষ্ট একটি ছক। কার্যপত্রের ছকের বিভিন্ন ঘরগুলো সমন্বয় প্রক্রিয়া ও আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি সাধারণত বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা হয়।
হিসাবরক্ষক কর্তৃক সমন্বয় ও সমাপনী দাখিলাসমূহ এবং আর্থিক বিবরণীসমূহ প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করে থাকেন। কার্যপত্র প্রস্তুতের পর আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করলে ভুলত্রুটি অনেকাংশে কমে যায় এবং সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়া সহজ হয়। কার্যপত্র একটি ঐচ্ছিক বিষয়। এটি হিসাববিজ্ঞানের কোন অপরিহার্য অংশ নয়।
কার্যপত্রের কী?
কার্যপত্র এর অর্থ হলো কার্যবিবরণী বা তালিকা। এটি কোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাব প্রদর্শনের এমন একটি মাধ্যম যেখানে রেওয়ামিল থেকে শুরু করে চূড়ান্তভাবে আর্থিক অবস্থা প্রস্তুত করা পর্যন্ত একসাথে দেখানো যায়। হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কার্যপত্রের মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে একসাথে একই ছকে রেওয়ামিল, সমন্বয়, সমন্বিত রেওয়ামিল, আয় বিবরণী ও আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রকাশ করা যায় না।
তাই বলা যায়, বহুঘরবিশিষ্ট একপ্রস্থ কাগজ বা কম্পিউটার স্প্রেডশিট-এ হিসাবরক্ষক কর্তৃক হিসাবের শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য প্রস্তুতকৃত রেওয়ামিলের পাশাপাশি সমন্বয়, আয় বিবরণী ও আর্থিক অবস্থা বিবরণী তৈরির জন্য আরও কিছু কলাম তৈরি করে যে খসড়া প্রণয়ন করা হয় তাকে কার্যপত্র বলে।
হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়
সাধারণতঃ বড় প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সংখ্যা ও সমন্বয় সংক্রান্ত দফার পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে সেখানে কার্যপত্র প্রস্তুত করা অপরিহার্য। এটি প্রস্তুতের ফলে নির্ভুলভাবে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা সহজ হয়। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আর্থিক বিবরণী নির্ভুল এবং সঠিকভাবে প্রস্তুতে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে বহুঘরবিশিষ্ট একপ্রস্থ কাগজে লিপিবদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে কার্যপত্র বলে।
কার্যপত্রের উদ্দেশ্য
১. খতিয়ানের চূড়ান্ত জের একত্রে প্রদর্শন : প্রতিষ্ঠানের সকল খতিয়ানের চূড়ান্ত জের একত্রে প্রদর্শন করার উদ্দেশ্য কার্যপত্র প্রণয়ন করা হয়। কারণ, কারবার প্রতিষ্ঠানে যে সকল লেনদেন সংঘটিত হয় তার প্রতিটি খতিয়ানের জের রেওয়ামিলে দেয়া থাকে। আর এ রেওয়ামিলের সাথে রেওয়ামিল বহির্ভূত তথ্য সমন্বয় দাখিলার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করে ফলাফল একত্রে জানা যায়।
২. হিসাব কাল শেষের কার্যক্রম সহজীকরণ : কারবারের আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য হিসাবসংক্রান্ত অনেক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। হিসাবকাল শেষে কার্যপত্র তৈরি করলে এসব কার্যক্রম অনেক সহজ হয়।
৩. আর্থিক বিবরণী প্রণয়নে সহায়তা করা : কার্যপত্রের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আর্থিক বিবরণী প্রণয়নে সহায়তা করা। কারণ, আমরা জানি কার্যপত্র হলো এমন একটি খসড়া যার মাধ্যমে যে কোনো রেওয়ামিল, সমন্বয়, আয় বিবরণী, দায় ও সম্পদ একত্রে প্রকাশ করা হয়।
৪. অন্তর্বর্তীকালীন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি : কার্যপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে যেকোনো সময় আর্থিক বিবরণী তৈরি করা যায়। যা কারবার প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ধরণের আর্থিক নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই : খতিয়ানের হিসাবসমূহ বন্ধ না করে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে কার্যপত্র সাহায্য করে। ফলে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়।
৬. বর্তমান ও ভবিষ্যৎ খরচের ধারণা লাভ : কার্যপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে বর্তমানে পরিশোধিত খরচ এবং ভবিষ্যত প্রদেয় খরচ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
৭. সমন্বয় দাখিলা দেয়া সহজ হয় : কার্যপত্রে আলাদা সমন্বয় দাখিলার কলাম থাকে তাই সহজেই সমন্বয় দাখিলা দেয়া সহজ হয়।
৮. সমাপনী দাখিলা দেয়া সহজ হয় : সমন্বিত রেওয়ামিল হতে মুনাফা জাতীয় দফাসমূহ আয় বিবরণীতে স্থানান্তরিত হয় ফলে সমাপনী দাখিলা দেয়া সহজ হয়।
৯. সঠিকতা যাচাই : সমন্বিত রেওয়ামিলের সাথে খতিয়ান প্রদত্ত লেনদেনগুলোর চূড়ান্ত জের ঠিক আছে কি না তার সত্যতা কার্যপত্রের মাধ্যমে যাচাই করা যায়।
১০. আর্থিক অবস্থার ফলাফল ব্যাখ্যা : কারবারের সার্বিক অবস্থা জানার জন্যই কার্যপত্র প্রণয়ন করা হয়। তাই এটি প্রণয়নের মাধ্যমে কারবারের নিট লাভ বা ক্ষতি, দায় ও সম্পত্তির অবস্থা সম্পর্কে সহজে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
কার্যপত্রের বৈশিষ্ট্য
ক. কার্যপত্রের মাধ্যমে যে বিবরণী তৈরি করা হয় তা হলো একটি খসড়া আর্থিক বিবরণী। এটি হিসাববিজ্ঞানের অবশ্য করণীয় কোনো বিবরণী নয়।
খ. এটি আলগা পাতা বা পৃথক খাতায় প্রস্তুত করা হয়।
গ. এটি আভ্যন্তরীণ হিসাব তথ্যের উৎস হিসাবে কাজ করে।
ঘ. কার্যপত্রের মাধ্যমে বর্তমানে পরিশোধিত খরচ ও ভবিষ্যতে প্রদেয় খরচ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ঙ. এটি হিসাব নিকাশের সুবিধার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
চ. কার্যপত্র তৈরির পর সংশ্লিষ্ট কলামসমূহের সমষ্টি সমান হওয়ার পর আর্থিক প্রতিবেদন নির্ভুলভাবে প্রস্তুত করে গাণিতিক শুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
ছ. কার্যপত্র বহুঘর বিশিষ্ট হয়। যেমন : ৮ ঘর বিশিষ্ট, ১০ বিশিষ্ট এবং ১২ ঘর বিশষ্ট।
মূলধন ও মুনাফাজাতীয় আয় ব্যয়
মূলধনজাতীয় আয়: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের যে সকল আয় অর্জিত হয় তার মধ্যে মূলধনজাতীয় আয় একটি। সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যপরিচালনার মাধ্যমে যে আয় বা মুনাফা হয় সেগুলো ব্যতীত সকল ধরণের আয়কে মূলধনজাতীয় আয় বলে। এ জাতীয় আয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর বা বারবার সংঘঠিত হয় না। এটি অনিয়মিতভাবে হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, জনাব তানজিল ২০১০ সালে একখন্ড জমি ৫,০০,০০০ টাকায় ক্রয় করেন। যা ২০১৫ সালে ৮,০০,০০০ টাকায় বিক্রয় করেন। এখানে মূলধনজাতীয় আয়ের পরিমাণ হবে (৮,০০,০০০ – ৫,০০,০০০= ৩,০০,০০০ টাকা। মূলধনজাতীয় আয়ের কয়েকটি উদাহরণ হলো- ক. স্থায়ী সম্পত্তি বিক্রয়জনিত মুনাফা। খ. সম্পত্তি মূল্যায়নজনিত মুনাফা। গ. অধিহারে শেয়ার ও ঋণপত্র ইস্যু ইত্যাদি।
মুনাফাজাতীয় আয়: কারবারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে যে আয় বারবার অর্জিত হয় তাকে মুনাফাজাতীয় আয় বলে। যেমন- পণ্য বিক্রয়, এটি প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত আয়। তবে কিছু অনিয়মিত আয়ও রয়েছে। যেমন- বিনিয়োগের সুদ, পুরাতন খবরের কাগজ বিক্রি, লভ্যাংশ প্রাপ্তি ইত্যাদি। মুনাফাজাতীয় আয়কে বিশদ আয় বিবরণীতে দেখানো হয় এবং আয় যদি বকেয়া থাকে তা সংশ্লিষ্ঠ বৎসরের আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে দেখাতে হয়। মুনাফাজাতীয় আয়ের কয়েকটি উদাহরণ নিচে তুলে ধরা হল:
ক. সেবা আয়,
খ. শিক্ষানবিশ সেলামি,
গ. লভ্যাংশ প্রাপ্তি,
ঘ. উপ-ভাড়া প্রাপ্তি,
ঙ. বিনিয়োগের সুদ
মূলধনজাতীয় ব্যয়: যে সব ব্যয়ের কার্যকারিতা একাধিক বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকে এবং কারবারের স্থায়ী সম্পত্তি অর্জনের নিমিত্তে যে ব্যয় করা হয় তাকে মূলধনজাতীয় ব্যয় বলে। এ জাতীয় ব্যয়ের ফল দীর্ঘকাল ধরে ভোগ করা যায়। সুতরাং বলা যায় যে, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ে স্থায়ী সম্পদ অর্জনের জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় তাকে মূলধনজাতীয় ব্যয় বলে। মূলধনজাতীয় ব্যয় আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে সম্পদ পাশে দেখানো হয়। মূলধনজাতীয় ব্যয়ের কয়েকটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হল:
ক. যন্ত্রপাতি,
খ. আসবাবপত্র,
গ. মোটরগাড়ী,
ঘ. সুনাম,
ঙ. ট্রেডমাক
কার্যপত্র প্রস্তুত করার নিয়মাবলী
১. নাম ও তারিখ: কার্যপত্র প্রস্তুতের সময় ছকের উপরে প্রতিষ্ঠানের নাম ও প্রস্তুতের তারিখ লিখতে হয়।
২. ঘর অঙ্কন ও শিরোনাম লিখন: প্রয়োজনীয় ঘর অঙ্কন করে প্রত্যেক ঘরের শিরোনাম লিখতে হবে।
৩. রেওয়ামিল: কার্যপত্র প্রণয়নের জন্য যে রেওয়ামিল দেয়া থাকে সে রেওয়ামিলের ডেবিট উদ্বৃত্তগুলো ডেবিট এর ঘরে এবং ক্রেডিট উদ্বৃত্তগুলো ক্রেডিটের ঘরে লিপিবদ্ধ করে যোগফল সমান আছে কি না তা যাচাই করে নেয়া হয়। এরূপ রেওয়ামিলকে সমন্বয় পূর্ব রেওয়ামিল বলে।
৪. সমন্বয়: রেওয়ামিলের নিচে যে অতিরিক্ত লেনদেনগুলো দেয়া থাকে সেগুলোকে সমন্বয়ের ঘরে ডেবিট ও ক্রেডিট বিন্যাস করে হিসাবভুক্ত করতে হয়। তবে উক্ত লেনদেনগুলো সমন্বয় সাধনের ডেবিট বা ক্রেডিট করার মতো কোনো দফা রেওয়ামিলে না থাকলে উক্ত হিসাবের যথাযথ নামকরণ করে রেওয়ামিলের সমষ্টির নিচে সমন্বয়ের ঘরগুলোতে লিখতে হবে। এরপর সমন্বয়ের ডেবিট ও ক্রেডিট ঘর দু’টি যোগ করে যোগফলের সমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়।
৫. সমন্বিত রেওয়ামিল: সমন্বয় ঘরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় সমন্বয়গুলো লিখার পর প্রদত্ত রেওয়ামিলের টাকার অঙ্কের সাথে সমন্বয় ঘরের টাকার অঙ্ক যোগ-বিয়োগ করে সমন্বিত রেওয়ামিল করা হয়। রেওয়ামিলের যে দফার পাশে সমন্বয় ঘরে কোনো টাকা থাকে না সে সকল লেনদেন রেওয়ামিল হতে সরাসরি সমন্বিত রেওয়ামিলে যাবে। সবশেষে উভয় পার্শ্বের যোগফল বের করে গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করতে হয়।
৬. বিশদ আয় বিবরণী: সমন্বিত রেওয়ামিল হতে মুনাফাজাতীয় আয় ও ব্যয়সমূহ এ বিবরণীতে লিখতে হয়। এ বিবরণীর ডেবিট দিকে মুনাফাজাতীয় খরচগুলো আর ক্রেডিট দিকে মুনাফাজাতীয় আয়গুলো বসাতে হয়। বিশদ আয় বিবরণীর আয়ের সমষ্টি, ব্যয়ের সমষ্টি অপেক্ষা বেশি হলে পার্থক্যকে নিট লাভ বলা হয়। অপরদিকে ব্যয়ের সমষ্টি, আয়ের সমষ্টির চেয়ে বেশি হলে তাকে নিট ক্ষতি বলে।
৭. সংরক্ষিত আয় বিবরণী: কোম্পানির ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আয় বিবরণী নামে একটি অতিরিক্ত কলাম আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে পূর্বে সংযুক্ত করতে হবে। এ বিবরণীতে কোম্পানির মুনাফা বণ্টন সংক্রান্ত লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন : লভ্যাংশ প্রদান, আয়কর ইত্যাদি। তাছাড়া বিশদ আয় বিবরণী থেকে নির্ণীত নিট লাভ ও বিবরণীর ক্রেডিট দিকে আয় নির্ণীত কার্য ডেবিট দিকে বসবে।
৮. আর্থিক অবস্থার বিবরণী: সমন্বিত রেওয়ামিল থেকে সম্পত্তি জাতীয় দফাগুলো আর্থিক অবস্থার বিবরণীর ডেবিট দিকে এবং দায় স্বত্ত্বাধিকার সংক্রান্ত দফাগুলো ক্রেডিট দিকে লিখতে হয়।
শিক্ষার্থীরা হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ৭ম অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর পেতে উপরের বাটনে ক্লিক করো। কোর্সটিকায় রয়েছে এইচএসসি সকল বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর। যা তোমরা পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। তাই নিয়মিত আমাদের শীট ও সাজেশনগুলাের আপডেট পেতে কোর্সটিকার YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করে নাও।
Discussion about this post