হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ৮ম অধ্যায় : সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সম্পদ। সম্পদের প্রকৃতি বা ধরণ বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। আচরণের ভিত্তিতে সম্পদকে প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। চলতি সম্পদ ও স্থায়ী সম্পদ। স্থায়ী সম্পদ হল সেই সম্পদ যে সম্পদ থেকে একাধিক বছর ধরে সুবিধা পাওয়া যায়।
যেমন ভূমি, দালানকোঠা, কলকব্জা, আসবাবপত্র, প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক, সুনাম ইত্যাদি। স্থায়ী সম্পদ দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয়ই হতে পারে। দৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদের মধ্যে ভূমি, দালানকোঠা, কলকব্জা আসবাবপত্র অন্যতম। আর সুনাম, প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক অদৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ।
স্থায়ী সম্পদের ধারণা ও মূল্যায়ন
যে সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে কেনা হয় বা উৎপাদন করা হয় তাকে স্থায়ী সম্পদ বলে। স্থায়ী সম্পদ সাধারণত অপরিবর্তনীয়। ভূমি, দালানকোঠা, কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইতাদি স্থায়ী সম্পদ। এ ধরনের সম্পদ হতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে উপযোগিতা পেয়ে থাকে। তাই বলা যায়, এই সম্পদ স্থায়ী ভাবে কারবারের প্রয়োজনে নিযুক্ত করা হয়। স্থায়ী সম্পদকে প্রাকৃতিক, অপ্রাকৃতিক, দৃশ্যমান সম্পদ, অদৃশ্যমান বা অস্পর্শনীয় সম্পদে ভাগ করা যায়।
হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ৮ম অধ্যায়
প্রাকৃতিক স্থায়ী সম্পদ : যে স্থায়ী সম্পদ আমরা প্রকৃতিগতভাবে পেয়ে থাকি কিংবা মানুষ দ্বারা সৃষ্ট সম্পদ নয় তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। যেমন- ভূমি।
অপ্রাকৃতিক স্থায়ী সম্পদ : যে স্থায়ী সম্পদ মানুষ দ্বারা রূপান্তরিত তাকে অপ্রাকৃতিক স্থায়ী সম্পদ বলে। যেমন- যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি।
দৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ : যে সকল স্থায়ী সম্পদ বাস্তবে দেখা যায়, ধরা যায়, ছোঁয়া যায় তাদেরকে দৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ বলে। যেমন- দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, ভূমি ইত্যাদি।
অদৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ : যে সকল স্থায়ী সম্পদ বাস্তবে ধরা যায় না, দেখা যায় না ও ছোঁয়া যায় না তাকে অদৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ বলে। যেমন- সুনাম, প্যাটেন্ট, গ্রন্থস্বত্ব, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি অদৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ।
স্থায়ী সম্পদের মূল্যায়ন
১. ভূমি : ভূমির ক্রয়মূল্য বলতে প্রদত্ত ক্রয়মূল্য এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খরচকে বুঝায়। ভূমির ক্রয়মূল্য নির্ধারণে ক্রয় মূল্যের সাথে নিবন্ধন খরচ, উকিল খরচ, ভূমি দালালের কমিশন, অন্যান্য বকেয়া কর ইত্যাদি যোগ করতে হয়। যেমন- একটি ভূমির নগদ ক্রয়মূল্য ২,০০,০০০ টাকা, নিবন্ধন খরচ ১৫,০০০ টাকা, পরিশোধিত বকেয়া কর ৫,০০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে ভূমির মূল্য হবে (২০০০০০ + ১৫০০০+ ৫০০০) = ২,২০,০০০ টাকা।
দালানকোঠা : দালান ক্রয় বা নির্মাণের সাথে জড়িত সকল ব্যয়কে দালান ব্যয় হিসাবে বিবেচনা করে দালানকে ডেবিট করা হয়। দালান ক্রয়ের ক্ষেত্রে দালানের ক্রয় মূল্য, উকিলের ফিস, মালিকানাস্বত্ব খরচ, বিমা খরচ, দালালের কমিশন ইত্যাদি দালানের সাথে অন্তর্ভুক্ত থাকে। ক্রয়কৃত দালান ব্যবহার উপযোগী করার জন্য যেসব খরচ হয় যেমন- বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত বা পুনঃস্থাপন ও দালানের মেঝে মেরামত খরচ দালান ক্রয়মূল্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
উদাহরণ – ১
জাওয়াদ এন্ড কোং ২৫,০০,০০০ টাকা মূল্যের একটি দালান ক্রয় করল। দালানটি ক্রয়ের জন্য উকিল ফিস ২০,০০০ টাকা, নিবন্ধন খরচ ১,০০,০০০ টাকা, দালালের কমিশন ২০,০০০ টাকা এবং মেঝে মেরামত খরচ ৫০,০০০ টাকা। এক্ষেত্রে দালানটির ক্রয় মূল্য হবে (২৫,০০,০০০ + ২০,০০০ + ১,০০,০০০ + ২০,০০০ + ৫০,০০০) = ২৬,৯০,০০০ টাকা।
যেমন দালান নির্মানের জন্য মাল, শ্রম এবং যুক্তি সঙ্গত উপরিব্যয়ের অংশ যোগ করে দালানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এ সঙ্গে স্থপতির ফি, অনুমোদন প্রাপ্তি খরচ, নির্মাণকালীন সময়ের গৃহীত ঋণের সুদ, বিমা খরচকে ও দালানের মূল্যের সাথে যোগ করতে হয়। তবে দালান নির্মাণ সম্পন্ন করার পর হতে যা পরিশোধ করা হবে তাকে ঋণের সুদ বাবদ খরচ হিসাবে দেখাতে হবে।
যদি বাইরের ঠিকাদারকে দালান নির্মাণের কাজে নিয়োজিত করা হয় তাহলে ঠিকাদারকে প্রদত্ত চুক্তি মূল্য, স্থপতির ফিস, অনুমোদন প্রাপ্তির ফিস এবং খনন খরচ ইত্যাদি দালান নির্মাণের ব্যয় হিসেবে ধরা হয়। দালান একটি অবচয়যোগ্য সম্পদ।
সরঞ্জাম : সরঞ্জাম বলতে কাখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা, আসবাবপত্র, ডেলিভারী ভ্যান, অফিস সরঞ্জাম ইত্যাদি স্থায়ী সম্পত্তিকে বুঝায়। সরঞ্জাম ব্যয় বলতে ক্রয় মূল্য, জাহাজ ভাড়া অথবা যানবাহন ভাড়া, বিমা খরচ, আমদানী শুল্ক, বিক্রয় কর, সংস্থাপন ব্যয়, ব্যবহার উপযোগী যাচাই করণ খরচ ইত্যাদির সমষ্টিকে বুঝায়।
সরঞ্জাম একটি অবচয়যোগ্য সম্পত্তি। মোটরগাড়ীর লাইসেন্স ফি এবং দূর্ঘনাজনিত বিমা খরচ সরঞ্জাম খরচের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এগুলোকে কালীন খরচ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অবচয় নির্ধারণের পদ্ধতি সমূহ
১) সরল রৈখিক পদ্ধতি
২) ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি
৩) দ্বৈত হ্রাসমান পদ্ধতি
৪) বর্ষ সংখ্যার সমষ্টি পদ্ধতি
৫) উৎপাদন একক পদ্ধতি
৬) যান্ত্রিক ঘণ্টা হার পদ্ধতি
৭) নিঃশেষকরণ পদ্ধতি
৮) পুনঃমূল্যায়ন পদ্ধতি
৯) বার্ষিক সমকিস্তি পদ্ধতি
১০) বিমা পত্র পদ্ধতি
১১) প্রতিপূরক তহবিল পদ্ধতি
১২) মাইল হার পদ্ধতি
স্থায়ী সম্পত্তির ক্রয় ও বিক্রয় এবং অবচয় হিসাবভূক্তকরণ
১. যখন স্থায়ী সম্পত্তি নগদে ক্রয় করা হয়:
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ডেবিট
নগদান হিসাব ক্রেডিট
২. যখন স্থায়ী সম্পত্তি চেকে ক্রয় করা হয়:
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ডেবিট
ব্যাংক হিসাব ক্রেডিট
৩. যখন স্থায়ী সম্পত্তি ধারে বা বাকিতে ক্রয় করা হয়:
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ডেবিট
প্রদেয় হিসাব বা পাওনাদার হিসাব ক্রেডিট
৪. যখন স্থায়ী সম্পদ আনয়ন, শুল্ক, ভ্যাট ও সংস্থাপন খরচ পরিশোধ করা হয়:
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ডেবিট
নগদান হিসাব ক্রেডিট
৫. যখন বার্ষিক অবচয় ধার্য করা হয়:
অবচয় খরচ হিসাব ডেবিট
পুঞ্জিভূত অবচয় হিসাব ক্রেডিট
৬. হিসাব বছর শেষে যখন অবচয় হিসাব বন্ধ করা হয়:
আয় বিবরণী হিসাব ডেবিট
অবচয় খরচ হিসাব ক্রেডিট
৭. যখন কোন স্থায়ী সম্পত্তি বই মূল্যের সমান মূল্যে বিক্রয় করা হয়:
নগদান হিসাব ডেবিট
পুঞ্জিভূত অবচয় হিসাব ডেবিট
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ক্রেডিট
৮. যখন কোন স্থায়ী সম্পত্তি লাভে বিক্রয় করা হয়:
নগদান হিসাব ডেবিট
পুঞ্জিভূত অবচয় হিসাব ডেবিট
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ক্রেডিট
সম্পত্তি বিক্রয়ে লাভ হিসাব ক্রেডিট
৯. যখন কোন স্থায়ী সম্পত্তি ক্ষতিতে বিক্রয় করা হয়:
নগদান হিসাব ডেবিট
পুঞ্জিভূত অবচয় হিসাব ডেবিট
সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষতি ডেবিট
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ক্রেডিট
প্রাকৃতিক ও অদৃশ্যমান সম্পত্তির হিসাবরক্ষণ
প্রাকৃতিক সম্পদ : বনজ সম্পদ, তৈল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা খনি ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সম্পদ ক্ষয়শীল প্রকৃতির হয়ে থাকে। যেসব সম্পত্তির মূল্য ব্যবহারজনিত কারণে ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে তাকে ক্ষয়শীল সম্পত্তি বলে। এ সম্পদ ব্যবহারের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে সম্পত্তি ক্ষয় বা নিঃশেষ খরচ নির্ণয় করা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ দু’ভাবে অর্জিত হতে পারে। যথা-
(ক) ক্রয়ের মাধ্যমে
(খ) অনুসন্ধানের মাধ্যমে
প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রয় করা হলে এদের ক্রয়মূল্য সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। এরূপ ক্ষেত্রে ক্রয়কৃত সম্পদের পরিমাণ জানা যায়। ফলে হিসাবকালে নিঃশেষ খরচ সহজেই নির্ধারণ করা যায়। কিন্তু অনুসন্ধানের মাধ্যম খনিজ সম্পদ আবিস্কার করলে এর ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা খুব জটিল হয়ে যায়। অনুসন্ধান কার্যে ব্যয়িত খরচকে মূলধনায়িত করে খনিজ সম্পদের ব্যয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
অদৃশ্য সম্পদের হিসাবরক্ষণ
যে সকল সম্পদের বাস্তব অস্তিত্ব দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না তাদেরকে অদৃশ্য সম্পদ বলে। এ সকল সম্পদের বাস্তব অস্তিত্ব বা আকার না থাকলেও ব্যবসায়ের আয় উপার্জনে এরা সেবা সরবরাহ করে এবং অর্থ উপার্জনে ভূমিকা রাখে। সুনাম, প্যাটেন্টস্বত্ব, ব্রান্ড, লাইসেন্স, ফরমুলা, ফ্রেনচাইজ, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি অদৃশ্য সম্পত্তির উদাহরণ। এরূপ সম্পত্তি দীর্ঘমেয়াদী। এই সম্পত্তি অর্জন করতে যে ব্যয় হয় তা একটি মূলধন জাতীয় ব্যয়।
এই সম্পত্তিগুলি যেহেতু দীর্ঘমেয়াদী তাই এই সম্পত্তিগুলো দীর্ঘ দিন ধরে হিসাব বইতে সংরক্ষণ করতে হয়। অদৃশ্য সম্পত্তির হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি এবং অন্যান্য স্থায়ী সম্পত্তির হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি একই। অদৃশ্য সম্পত্তির ক্রয়মূল্যে হিসাবভুক্তি করতে হয় এবং এই খরচ অদৃশ্য সম্পত্তির কার্যকর আয়ুস্কালের মধ্যে যুক্তি সঙ্গত ভিত্তিতে খরচ দেখানো হয়। পরিত্যাগের সময় এ সম্পত্তির বইমূল্য হ্রাস পায় ফলে লাভ বা ক্ষতি হলে অন্যান্য স্থায়ী সম্পত্তির অনুরূপ হিসাবভুক্ত করা হয়। তবে অস্পর্শনীয় সম্পত্তির ক্ষেত্রে অবচয়ে এর স্থলে অবলোপন খরচ নামে হিসাবভুক্ত করা হয়।
বুলেট তথ্য
- Depreciation শব্দটি এসেছে – ল্যাটিন শব্দ “Depertium” থেকে।
- অবচয় কে আর্থিক বিবরণীতে দেখানো হয় পরিচালন – ব্যয় হিসেবে।
- অনগদ খরচ – অবচয়।
- স্থায়ী সম্পদকে বলা হয় – পরিসম্পদ।
- স্থায়ী সম্পদের ক্রয়মূল্য থেকে অবচয় বাদ দিয়ে দেখানো হয় – চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা অনুযায়ী।
- বিমাকৃত স্থায়ী সম্পদ লিপিবদ্ধ করা হয় – বাজারমূল্যে।
- সরলরৈখিক পদ্ধতির আরেক নাম – স্থির কিস্তি পদ্ধতি।
- সুদসহ সম্পদের ক্রয়মূল্যের উপর অবচয় ধার্য করা হয় – বার্ষিক সমকিস্তি পদ্ধতিতে।
- ভগ্নাবশেষ মূল্য বিবেচিত হয় না – ক্রমহ্রাসমান জের পদ্ধতিতে।
- কলকব্জা, দালানকোঠা ও আসবাবপত্র ইত্যাদির জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি – ক্রমহ্রাসমান জের পদ্ধতি।
- ইজারা সম্পত্তি, প্যাটেন্ট, গ্রন্থস্বত্ব ইত্যাদির জন্য উপযুক্ত – সরলরৈখিক পদ্ধতি।
- বাংলাদেশে কপিরাইটের মেয়াদ – ৪০ বছর।
- যানবাহনের উপর অবচয় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে উপযোগী – মাইল হার পদ্ধতি।
- পুঞ্জিভূত অবচয় একটি – বিপরীত সম্পদ হিসাব।
শিক্ষার্থীরা হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ৮ম অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর পেতে উপরের বাটনে ক্লিক করো। কোর্সটিকায় রয়েছে এইচএসসি সকল বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর। যা তোমরা পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। তাই নিয়মিত আমাদের শীট ও সাজেশনগুলাের আপডেট পেতে কোর্সটিকার YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করে নাও।
Discussion about this post