হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ৯ম অধ্যায় : ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন করা। লাভ বা ক্ষতি যাই হোক না কেন তার পরিমাণ অবশ্যই জানা দরকার। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুনাফা বা ক্ষতির পরিমাণ জানা যায় না। তাই বছরের শেষে একটি আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন করা হয়।
এই আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে আপনি ব্যবসায়ে অর্জিত মুনাফা বা ক্ষতির পরিমাণ জানতে পারবেন। সেই সাথে ব্যবসায়ের প্রকৃত আর্থিক অবস্থাও জানতে পারবেন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ব্যবসায় জগতে আর্থিক বিবরণী প্রনয়ণের গুরুত্ব কত বেশি।
হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ৯ম অধ্যায়
হিসাব প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ। আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে ব্যবসায়ের মোট লাভ, নীট লাভ এবং আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। মুনাফা অর্জনই ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য। আর এ মুনাফা জানতে হলে আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন করতে হয়। যে বিবরণীর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তে ব্যবসায়ের সামগ্রিক আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা জানা যায় তাকে আর্থিক বিবরণী বলে। আর্থিক বিবরণী সম্পর্কে অনেকে বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা দিয়েছেন তা নিচে প্রদত্ত হল-
J.N. Mayer এর মতে, ‘‘কোন কারবারী প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত হিসাব কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে সম্পত্তি, দায় ও মূলধন জ্ঞাপনকারী উর্দ্বতপত্র এবং কোন নির্দিষ্ট সময় ধরে প্রতিষ্ঠানের কার্য নির্বাহের ফলাফল নির্দেশকারী আয় বিবরণী ইত্যাদি সরবরাহ করা হয় তাই হল আর্থিক বিবরণী।”
Smith & Ashburne এর মতে, আর্থিক হিসাবরক্ষণের চূড়ান্ত ফল একগুচ্ছ আর্থিক বিবরণী যা কোন কারবারের হিসাব রক্ষক প্রদান করেন এবং যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা সূচিত হয় এবং সে সঙ্গে সাম্প্রতিক কার্যাবলির ফলাফল এবং আয় দিয়ে কি করা হয়েছে তার বিশ্লেষণ করা হয়।”
আর্থিক বিবরণীর গুরুত্ব
১) ব্যবস্থাপনা : আর্থিক বিবরণী হতে মালিক কিংবা ব্যবস্থাপনা ব্যবসায়ের লাভ লোকসান বা আর্থিক অবস্থা জানতে পারে। ব্যবস্থাপনা ব্যবসায়ের লাভ লোকসান জেনে ভবিষ্যৎ ব্যবসা সম্প্রসারণ বা সংকোচন নীতি গ্রহণ করে থাকে।
২) বিনিয়োগ : বিনিয়োগকারী আর্থিক বিবরণীর সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছলতা আছে কিনা তা জেনে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে।
৩) পাওনাদারগণ : ব্যবসায়িক পাওনাদারকে অল্প সময়ের মধ্যে প্রদেয় টাকা পরিশোধ করতে হয়। এই দায় চলতি সম্পত্তি হতে পরিশোধ করে থাকে। এই সম্পদ পর্যাপ্ত আছে কিনা তা আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে জানা যায়।
৪) ব্যাংক প্রতিষ্ঠান : ব্যাংক আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে তাদের প্রদত্ত ঋণের সুদ দিতে সক্ষম কিনা, ঋণ সুরক্ষিত আছে কিনা এবং ব্যবসায়ের আর্থিক সামর্থ্য আছে কিনা লক্ষ্য রাখে।
৫) সরকার : আর্থিক বিবরণীর সাহায্যে সরকার আয়কর, ভ্যাট ও বিভিন্ন প্রকার শুল্ক ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হয়ে তা আদায় করতে পারে। সরকারের নির্দিষ্ট নিয়মকানুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো মেনে চলছে কিনা তা আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে জানতে পারে।
৬) কর্মকর্তা ও কর্মচারী : কর্মকর্তা কর্মচারীগণ আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও অবনতি সম্পর্কে জানতে পারে।
৭) জনগণ : আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি সম্পর্কে জনগণ জেনে বেশ উপকৃত হন। কেননা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। আর দেশের উন্নতি মানে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনমাত্রার মান বৃদ্ধি করা।
আর্থিক বিবরণীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ
১) বিশদ আয় বিবরণী : যে বিবরণীর সাহায্যে কারবার প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট হিসাবকালের লাভ বা ক্ষতি নিরূপণ করা হয় তাকে বিশদ আয় বিবরণী বলে। মুনাফা জাতীয় আয় ও ব্যয় নিয়ে এ বিবরণী তৈরি করা হয়। সাধারণত এক বছর শেষে কত লাভ বা ক্ষতি হল তা এ বিবরণীর মাধ্যমে জানা যায়।
২) মালিকানাস্বত্ব বিবরণী : যে বিবরণীর মাধ্যমে মালিকের মূলধনের সাথে নীট লাভ, অতিরিক্ত মূলধন, মূলধনের সুদ যোগ করে উত্তোলন ও নীট ক্ষতি বিয়োগ করা হয় তাকে মালিকানা স্বত্ব বিবরণী বলা হয়। এটা সাধারণত এক মালিকানা কারবার ও অংশীদারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৩) আর্থিক অবস্থার বিবরণী : যে বিবরণীর সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানা যায় তাকে আর্থিক অবস্থার বিবরণী বলে। এই বিবরণীতে প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদ, মূলধন ও দায় নিয়ে প্রস্তুত করা হয়।
৪) নগদ প্রবাহ বিবরণী : যে সকল উৎস হতে নগদ অর্থের আগমন ঘটে তা যে বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে নগদ প্রবাহ বিবরণী বলে। কোন কোন উৎস হতে নগদ অর্থের আগমন ঘটে এবং কোন কোন খাতে নগদ অর্থের ব্যবহার হয় তা এ বিবরণীতে দেখানো হয়।
৫) আর্থিক বিবরণীর টিকাসমূহ : যে বিবরণীতে মূল আর্থিক বিবরণী উপেক্ষিত হয়েছে বা লিপিবদ্ধ হলেও সহজ বোধগম্য নয় তা সহজ ও বোধগম্য করার জন্য ব্যাখ্যা আকার টিকা বা হিসাব নোটের আকারে প্রকাশ করা হয় তাকে আর্থিক বিবরণীর টীকা বলে। আর্থিক বিবরণীতে যেসব টাকার অংক লিপিবদ্ধ করা, তার পেছনে অতিরিক্ত তথ্য প্রকাশের লক্ষ্যে বর্ণনামূলক বিবরণ আকারে সংযোজিত পাদটীকাকে আর্থিক বিবরণী টীকা বলে।
স্থায়ী সম্পদ, বিনিয়োগ, চলতি সম্পদ, দীর্ঘ মেয়াদী ও চলতি দায়ের পরিচিতি
স্থায়ী সম্পদ : সে সকল সম্পদ একবার ক্রয় করে বহুদিন ধরে এর সুবিধা ভোগ করা যায় তাকে স্থায়ী সম্পদ বলে। অর্থাৎ যে স্থায়ী সম্পদের দ্বারা বহু দিন ধরে মুনাফা অর্জন করা যায় কিংবা ভোগ করা যায় তাকে স্থায়ী সম্পদ বলে। স্থায়ী সম্পদ দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহৃত হয়। এ সকল সম্পদ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয় না বরং ব্যবসায়ের ব্যবহারের জন্য ক্রয় করা হয়। যেমন, ভূমি, দালানকোঠা, কলকব্জা, আসবাবপত্র, ট্রেডমার্ক, সুনাম ইত্যাদি।
বিনিয়োগ : যে অর্থ অতিরিক্ত আয় করার উদ্দেশ্য কাজে লাগানো হয় তাকে বিনিয়োগ বলে। বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার বা ঋণপত্র ক্রয় অথবা অন্য কোন লাভজনক খাতে অতিরিক্ত আয় করা উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করে থাকে। যে বিনিয়োগ এক বছর কিংবা তার কম সময়ের জন্য করা হলে তাকে স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগ পক্ষান্তরে এক বছরের অধিক সময়ের জন্য যে অর্থ খাটানো হয় তাকে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ বলে। স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগ চলতি সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
চলতি সম্পদ : যে সম্পদ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নগদ অর্থে পরিণত করা যায় তাকে চলতি সম্পদ বলে। এ সম্পদ বিক্রয়ের জন্য উৎপাদন ও সংগ্রহ করা হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে সম্পদের সুবিধা এক বছরের মত ভোগ করা যায় বা এক বছরের মধ্যে নগদ অর্থে পরিণত করা যায় তাকে চলতি সম্পদ বলে। চলতি সম্পদ সর্বদাই পরিবর্তনশীল। যেমন- হাতে নগদ, ব্যাংক জমা, প্রাপ্য হিসাব, প্রাপ্য বিল, মজুদ পণ্য, অগ্রিম খরচ।
দীর্ঘ মেয়াদী দায় : যে দায় এক বছরের অধিক সময় ধরে পরিশোধ করা যায় তাকে দীর্ঘ মেয়াদী দায় বলে। দীর্ঘ মেয়াদী দায় সাধারণত ১০ বা ২০ বছর বা তারও অধিক সময় ধরে পরিশোধ করা যায়। যেমন, ব্যাংক ঋণ, বন্ধকী ঋণ, ঋণপত্র, হাউজ বিল্ডিং ঋণ ইত্যাদি এর মেয়াদ দীর্ঘ সময়ে।
চলতি দায় : যে দায় এক বছর কিংবা তার কম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় তাকে চলতি দায় বলে। এই সকল দায় কম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় এর মেয়াদ স্বল্প সময়ের। যেমন বিবিধ পাওনাদার, প্রদেয় বিল, প্রদেয় হিসাব, বকেয়া খরচ, আয়কর সঞ্চিতি, প্রস্তাবিত লভ্যাংশ, অগ্রিম আয় ইত্যাদি।
আর্থিক অবস্থার বিবরণী ও প্রস্তুত প্রণালী
আর্থিক বিবরণী প্রণয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল আর্থিক অবস্থা বিবরণী। কোন নির্দিষ্ট তারিখে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা তথা সম্পত্তি দায় এবং মালিকানা স্বত্বের যে বিবরণী তৈরি করা হয় তাকে আর্থিক অবস্থার বিবরণী বলা হয়। এক বছরের প্রত্যক্ষ আয় ব্যয় সমূহ এবং পরোক্ষ আয়-ব্যয় সমূহ দ্বারা বিশদ আয় বিবরণী তৈরি করে মোট লাভ ও নীট লাভ জানা যায়।
অন্যদিকে হিসাবকাল শেষে একটি নির্দিষ্ট তারিখে সকল সম্পত্তি, দায় ও মালিকানা স্বত্ব জাতীয় হিসাবসমূহ দ্বারা আর্থিক অবস্থা বিবরণী তৈরি করা হয়। আর্থিক অবস্থার বিবরণী দ্বারা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা প্রকাশ করা হয়। এটি হিসাব সমীকরণ (সম্পত্তি = দায় + স্বত্বাধিকার) এর গাণিতিক প্রকাশ। আর তাই আর্থিক অবস্থার বিবরণী নতুন কোন উদ্বৃত্ত সৃষ্টি না করে উভয় দিকে যোগফলের সমতা সৃষ্টি করে।
আর্থিক অবস্থার বিবরণীর বৈশিষ্ট্য
আর্থিক অবস্থার বিবরণী হল কোন নির্দিষ্ট তারিখে প্রস্তুতকৃত সম্পত্তি, দায় ও মালিকানা স্বত্বের একটি বিবরণী যা থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক চিত্র জানা যায়। আর্থিক অবস্থার বিবরণী নিম্নরূপঃ
১) আর্থিক অবস্থার বিবরণী হল প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি, দায় ও মালিকানা স্বত্বের একটি তালিকা।
২) আর্থিক অবস্থার বিবরণী দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ের একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করে।
৩) আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে উপরিভাগে সম্পদ এবং নিম্ন ভাগে দায় ও মালিকানা দাবী দেখানো হয়। ফলে সম্পত্তি ও দায়ের পারিস্পরিক মূল্যায়ন সম্ভব হয়।
৪) মূলধন জাতীয় আয় ও ব্যয়, সম্পত্তি ও দায় সংক্রান্ত অথবা ব্যক্তিবাচক হিসাব দ্বারা আর্থিক অবস্থার বিবরণী তৈরি করা হয়।
৫) আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে মোট সম্পদ এবং দায় ও মালিকানা স্বত্বের সমষ্টি সমান হয়ে থাকে। অর্থাৎ সম্পদ = দায় + মালিকানা স্বত্ব।
আর্থিক অবস্থা বিবরণীর উদ্দেশ্য
১) আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরা আর্থিক অবস্থা বিবরণীর অন্যতম উদ্দেশ্য।
২) প্রতিষ্ঠানের সম্পদ সমূহের প্রকৃতি ও সঠিক মূল্যয়ন করা আর্থিক অবস্থা বিবরণীর অপর উদ্দেশ্য।
৩) প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকার দেনার প্রকৃতি ও পরিমাণ সঠিকভাবে ও শ্রেণীবদ্ধভাবে উল্লেখ করাও আর্থিক অবস্থারঅন্যতম উদ্দেশ্য।
৪) ব্যবসায়ের বকেয়া পাওনা ও দেনা এবং অগ্রিম আয়-ব্যয় সম্পর্কে অবগত করা আর্থিক অবস্থা বিবরণীর উদ্দেশ্য।
৫) আর্থিক অবস্থা বিবরণীর মাধ্যমে কারবারের কার্যকরী মূলধন সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
আর্থিক বিবরণীতে যা থাকে
১. বকেয়া খরচ : ধরুন একটি প্রতিষ্ঠানে চলতি বছরের বেতন বাবদ ২,০০০ টাকা বকেয়া রয়েছে অথচ হিসাবভুক্ত হয়নি। এক্ষেত্রে বিশদ আয় বিবরণীতে বেতন খরচ হিসাবে দেখাতে হবে। আবার সমপরিমাণ টাকা বকেয়া বেতন চলতি দায় হিসাবে আর্থিক অবস্থা বিবরণীতে দেখতে হবে।
২. অগ্রিম ব্যয় : কোন প্রতিষ্ঠানের চলতি বছরের কোন খরচের মধ্যে অগ্রিম প্রদত্ত কোন খরচ অন্তর্ভূক্ত হলে তা বিশদ আয় বিবরণীতে চলতি সম্পত্তি হিসাবে দেখাতে হবে।
৩. বকেয়া আয় : কোন প্রতিষ্ঠনের নির্দিষ্ট হিসাবকালে কোন মুনাফা জাতীয় আয় বকেয়া থাকলে বিশদ আয় বিবরণীতে সংশ্লিষ্ট আয়ের সাথে যোগ এবং আর্থিক অবস্থা বিবরণীতে প্রাপ্য বা বকেয়া আয় হিসাবে চলতি সম্পদ দেখাতে হবে।
৪. অগ্রিম প্রাপ্ত আয় : অগ্রিম প্রাপ্ত আয় চলতি বছরে আয় হিসাবে বিবেচনা না করে এবং চলতি বছরের আয়ের মধ্যে অগ্রিম প্রাপ্ত আয় অন্তর্ভূক্ত থাকলে বিশদ আয় বিবরণীতে সংশ্লিষ্ট আয় থেকে বিয়োগ এবং আর্থিক অবস্থা বিবরণীতে চলতি দায় হিসাবে দেখাতে হবে। উদাহরণঃ শিক্ষানবিশ সেলামী ৩ বছরের জন্য পাওয়া গিয়াছে ৯,০০০ টাকা। এক্ষেত্রে শিক্ষানবিস সেলামী ২ বৎসরের অগ্রিম ৬,০০০ টাকা বিশদ আয় বিবরণীতে শিক্ষানবিস সেলামী থেকে বিয়োগ করতে হবে এবং আর্থিক অবস্থা বিবরণীকে চলতি দায় অগ্রিম প্রাপ্ত শিক্ষানবিশ সেলামী হিসাবে ৬,০০০ টাকা দেখাতে হবে।
৫. সমাপনী মুজদ পণ্য : ব্যবসা একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্দিষ্ট সময়ের শেষ দিনে কিছু না কিছু পণ্য অবিক্রিত থেকে যায় এটাই সমাপনী মজুদ পণ্য। সমাপনী মজুদ পণ্যের ক্রয়মূল্য বা বাজারমূল্য কম বেশী হলে হিসাব বিজ্ঞানের রক্ষণশীল নীতি অনুসারে এই দুই মূল্যের মধ্যে যেটি কম সেটিই সমাপনী মজুদ পণ্য হিসাবে ধরতে হয়। সমাপনী মজুদ পণ্য বিশদ আয় বিবরণীতে ক্রয় থেকে বিয়োগ এবং আর্থিক অবস্থা বিবরণীতে চলতি সম্পদ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
৬. অবচয় : সম্পত্তি ব্যবহারের ফলে ব্যবহারজনিত ক্ষতি হয়। এই ব্যবহারজনিত ক্ষতিকেই অবচয় বলা হয়। অবচয় বিশদ আয় বিবরণীতে অবচয় খরচ হিসাবে দেখাতে হবে এবং আর্থিক অবস্থা বিবরণীতে পুঞ্জিভূত অবচয় সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি থেকে বিয়োগ করে দেখাতে হবে।
৭. অনাদায়ী পাওনা : ধারে বিক্রয়ের পুরো টাকা আদায় করা সম্ভব হয় না। যে অংশ আদায় হয় না তাকে অনাদায়ী পাওনা বলে। অনাদায়ী পাওনা র) বিশদ আয় বিবরনীতে পরিচালনা খরচ হিসাবে দেখাতে হবে এবং রর) আর্থিক অবস্থা বিবরণীতে প্রাপ্য হিসাব বা দেনাদার হিসাব থেকে বিয়োগ করতে হবে।
৮. অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি : দেনাদার বা প্রাপ্য হিসাব সম্পূর্ণ আদায় নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই দেনাদার বা প্রাপ্য হিসাবের যে অংশ আদায় হবে না তা বাদ দেওয়ার পর অবশিষ্ট দেনাদারের উপর নির্দিষ্ট শতকরা হারে অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি সৃষ্টি করা হয়। এই সঞ্চিতি বিশদ আয় বিবরণীতে পরিচালনা খরচ হিসাবে দেখাতে হবে এবং আর্থিক অবস্থা বিবরণীতে দেনাদার থেকে বিয়োগ করতে হবে।
৯. অব্যবহৃত মনিহারি : মনিহারি বলতে ফাইল, খাতা, কলম এবং অন্যন্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রকে বুঝায়। অব্যবহৃত মনিহারি বিশদ আয় বিবরণীতে মনিহারি খরচ থেকে বিয়োগ করতে হবে এবং আর্থিক অবস্থা বিবরণীতে চলতি সম্পদে অব্যবহৃত মনিহারি হিসাবে দেখাতে হবে।
১০. মূলধনের সুদ : মূলধনের সুদ ব্যবসায়ের একটি খরচ। মূলধনের সুদ বিশদ আয় বিবরণীতে অপরিচালনা খরচ হিসাবে দেখাতে হবে এবং আর্থিক অবস্থা বিবরণীতে মূলধনের সাথে যোগ করে দেখাতে হবে।
শিক্ষার্থীরা হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ৯ম অধ্যায় প্রশ্নের উত্তর পেতে উপরের বাটনে ক্লিক করো। কোর্সটিকায় রয়েছে এইচএসসি সকল বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর। যা তোমরা পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। তাই নিয়মিত আমাদের শীট ও সাজেশনগুলাের আপডেট পেতে কোর্সটিকার YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করে নাও।
Discussion about this post