হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : প্রাচীনকালে মানুষ নিজের উদ্যেগে এককভাবে ব্যবসা করত। সময়ের বিবর্তনে সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে ব্যবসা- বাণিজ্যের উন্নতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিল্প-কারখানার উন্নতি শুরু হয়, ফলে একক ব্যক্তির দ্বারা অধিক পরিমাণে মূলধন সরবরাহ করা ও শ্রমের যোগান দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এজন্য মূলধনের যোগান বৃদ্ধি এবং কর্মশক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথ উদ্যেগের প্রয়োজন দেখা দেয়।
আর এ একাধিক পারস্পরিক উদ্যেগে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার নামই হলো অংশীদারী ব্যবসা। মূলতঃ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে একাধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে পারস্পরিক চুক্তির ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে যে ব্যবসা গঠন ও পরিচালনা করে তাকে অংশীদারী ব্যবসায় বলা হয়। ১৮৯০ সালে ব্রিটেনে স্বতন্ত্র অংশীদারী আইন সর্বপ্রথম পাশ হয়। এ উপমহাদেশে ১৯৩২ সালের ৮এপ্রিল ব্রিটেনের ঐ আইনের আলোকে The Partnership Act- 1932 প্রবর্তিত হয়। পাকিস্তান আমলেও এ আইন প্রচলিত ছিল এবং বাংলাদেশেও ঐ আইনই চলে আসছে। তবে এর কিছু কিছু সংশোধন করা হয়েছে।
হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সাধারণভাবে বলতে গেলে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মিলিত হয়ে যে ব্যবসায় পরিচালনা করে তাকে অংশীদারী ব্যবসায় বলে। কিন্তু এতে অংশীদারী ব্যবসার মূল কথা ফুটে ওঠে না। অংশীদারী ব্যবসায়ে চুক্তি হলো মূল ভিত্তি। আর ব্যবসার মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য থাকতেই হয়। আবার বেআইনী কোন ব্যবসার চুক্তি কখনও অংশীদারী ব্যবসা হতে পারে না।
তাই বলা যায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে চুক্তির ভিত্তিতে আইনসংগতভাবে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গঠন করে তাকে অংশীদারী ব্যবসা বলা হয়। কতিপয় উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল:
১৯৩২ সালের অংশীদারী আইনের ৪ নং ধারাতে বলা হয়েছে, “সবার দ্বারা বা সবার পক্ষে যে কোন একজন দ্বারা পরিচালিত ব্যবসার মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের লক্ষ্যে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের সৃষ্টি হয় তাকে অংশীদারী ব্যবসা বলে। যারা এরূপ অংশীদারী সম্পর্ক সৃষ্টি করে তাদের প্রত্যেককে অংশীদার এবং সম্মিলিতভাবে তাদের ব্যবসাকে অংশীদারী ব্যবসা (ফার্ম) বলা হয়।”
আমেরিকার The Uniform Partnership Act এর ৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, “অংশীদারী ব্যবসা হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মিলিত একটি সংস্থা যেখানে ব্যক্তিবর্গ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে সহ-মালিক হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করে।”
১৮৯০ সালের বৃটিশ অংশীদারী আইনের ১ ধারায় রয়েছে, “মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে যৌথভাবে পরিচালিত ব্যবসার কতিপয় ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে অংশীদারী বলে।”
Mr. Person এর মতে, “সাধারণ সুবিধা অর্জনের উদ্দেশ্যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি নিজস্ব পুঁজি, শ্রম বা দক্ষতা একত্রিত করে যে ব্যবসা গঠন করে তাকে অংশীদারী ব্যবসা বলা হয়।”
৯৩২ সালের অংশীদারী আইনে (বাংলাদেশে প্রযোজ্য) বলা হয়েছে, অংশীদারী ব্যবসার সদস্য হবে সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন। তবে ব্যাংকের ক্ষেত্রে হবে সর্বোচ্চ ১০ জন।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, কমপক্ষে ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন (ব্যাংকের ক্ষেত্রে ১০ জন) ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে চুক্তির ভিত্তিতে নিজেদের মূলধন, শ্রম, দক্ষতা ইত্যাদি একত্রিত করে সম্মিলিতভাবে যে ব্যবসা গঠন ও পরিচালনা করে তাকে অংশীদারী ব্যবসা বলে।
উপাদান/বৈশিষ্ট্য:
১৯৩২ সালের অংশীদারী আইন (বাংলাদেশে প্রযোজ্য) এর ৪ ধারায় উল্লিখিত সংজ্ঞা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করলে অংশীদারী ব্যবসার কিছু মৌলিক উপাদান বা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় যার বর্ণনা নিম্ন প্রদত্ত হলো:
১. চুক্তিগত সম্পর্ক: ১৯৩২ সালের অংশীদারী আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, অংশীদারীর সম্পর্ক চুক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়, জন্মগত বা সামাজিক অধিকার বলে নয়। বেশ কিছু লোক জড় হয়ে বা একসাথে কোন বেচা-কেনা করলে বা উৎপাদনে জড়িত হলেই তা অংশীদারী হবে না, তাদের মধ্যে চুক্তিগত সম্পর্ক থাকতে হবে। সুতরাং একাধিক ব্যক্তির মধ্যে ব্যবসায়ের চুক্তি সম্পাদন অংশীদারী ব্যবসার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য/উপাদান।
২. একাধিক সদস্য: অংশীদারী ব্যবসার সদস্য সংখ্যা নূন্যতম ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন হতে হবে। তবে ব্যাংক ব্যবসার ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ১০ জন হতে পারে।
৩. আইন সম্মত ব্যবসা: একাধিক ব্যক্তি এবং তাদের মধ্যে চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক থাকলেই অংশীদারী ব্যবসা হতে পারে। তবে যে ব্যবসা করবে তা অবশ্যই আইনসম্মত হতে হবে। যেমন: চোরাচালান, অবৈধ পণ্যের ব্যবসা ইত্যাদি অংশীদারী ব্যবসা নয়।
৪. মুনাফা অর্জন ও বণ্টন: ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য থাকে মুনাফা অর্জন। অংশীদারী ব্যবসার ক্ষেত্রে মুনাফা অর্জন ও বণ্টন একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য বা উপাদান। একাধিক ব্যক্তি সখ করে যদি যাত্রা দল তৈরী করে বা নাট্য ক্লাব গঠন করে তবে তাকে অংশীদারী ব্যবসায় বলা যাবে না। অর্থাৎ সৌখিন বা সমাজসেবামূলক কাজ কখনো অংশীদারী ব্যবসা বলে গণ্য হবে না।
৫. পারস্পরিক প্রতিনিধিত্ব: অংশীদারী ব্যবসার সংজ্ঞাতে দেখেছি, এটা হলো সবার দ্বারা বা সবার পক্ষে একজনের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসা। সুতরাং অংশীদারী ব্যবসা পারস্পরিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবসা। এক্ষেত্রে একজনের কাজে অন্য সবাই দায়বদ্ধ থাকে। এ ব্যবসায় সবাই সবার প্রতিনিধি ও মুখ্যব্যক্তি।
৬. পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস: অংশীদারী ব্যবসা পারস্পরিক সদ্বিশ্বাস ও আস্থার ফলশ্র“তিতে গঠিত হয়। এ সম্পর্ক থাকা অপরিহার্য বলে অংশীদারী ব্যবসার চুক্তিকে “পরম সদ্বিশ্বাসে চুক্তি” বলে এবং এদের মধ্যেকার সম্পর্ককে “চূড়ান্ত সদ্বিশ্বাসের সম্পর্ক” বলে। এ উপাদানের ভিত্তিতেই মূলতঃ একজনের কাজের জন্য অন্যজন দায়বদ্ধ থাকে।
৭. দায়-দায়িত্ব: অংশীদারী ব্যবসার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর সদস্যদের দায় অসীম। যেহেতেু প্রত্যেক সদস্য একক ও যৌথভাবে একে অপরের নিকট দায়বদ্ধ থাকে তাই সাধারণভাবে একজনের কাজের ফলে কোন দায় সৃষ্টি হলে তা পরিশোধের জন্য সবাই দায়ী থাকে। তবে চুক্তিতে থাকলে দায় সসীমও করা যায় অন্যদিকে সাধারণভাবে ব্যবসায়ের কোন দেনার ক্ষেত্রে সম্পদের অপর্যাপ্ততা দেখা দিলে তা অংশীদারদের ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে পরিশোধ করতে হবে।
৮. চুক্তিবদ্ধ হওয়ার যোগ্যতা: অংশীদারী ব্যবসার অন্যতম বৈশিষ্ট্য বা উপাদান হলো সবার চুক্তিবদ্ধ হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। নাবালক, দেউলিয়া, পাগল প্রভৃতি কোন অংশীদারী ব্যবসার অংশীদার হতে পারবে না। কারণ তাদের চুক্তি করার কোন যোগ্যতা নেই । এভাবে কোন কোম্পানী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও অংশীদার হতে পারে না।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১. অংশীদারী ব্যবসায়ের সর্বনিু সদস্য কতজন হতে পারে?
ক. ২
খ. ৩
গ. ৪
ঘ. ৫
২. অংশীদারী ব্যবসার মূল ভিত্তি কি?
ক. মূলধন
খ. চুক্তি
গ. সহজ গঠন
ঘ. পরিচালনা
৩. কোনটি অংশীদারী ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য নয়?
ক. চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক
খ. বৈধ ব্যবসা
গ. নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা
ঘ. একাধিক সদস্য।
৪. বাংলাদেশে প্রচলিত অংশীদারী আইন কত সালের?
ক. ১৯২০
খ. ১৮৯০
গ. ১৯৭১
ঘ. ১৯৩২।
৫. সাধারণ অংশীদারী ব্যবসায়ের সদস্য সর্বোচ্চ কয়জন?
ক. ১০
খ. ২০
গ. ৩০
ঘ. ৪০
৬. ব্যাংকিং -এর ক্ষেত্রে অংশিদারী ব্যবসার সর্বোচ্চ সদস্য কয়জন?
ক. ১০
খ. ২০
গ. ৩০
ঘ. ৪০
অংশীদারী ব্যবসার দলিল
চুক্তি অংশীদারী ব্যবসার মূল ভিত্তি। এ চুক্তি মৌখিক, লিখিত, নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত হতে পারে। তবে মৌখিক চুক্তি না হওয়াই উত্তম। অংশীদারী ব্যবসার এ লিখিত চুক্তিনামাকে বলা হয় অংশীদারী ব্যবসার দলিল। হারম্যানসন ও অন্যান্যের মতে, “অংশীদারী ব্যবসার দলিল হলো সমস্ত অংশীদার কর্তৃক স্বীকৃত/গৃহীত নীতি ও শর্ত যা অংশীদারী ব্যবসার কার্য পরিচালনা ও অবসায়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।”
যদিও এ দলিলের নিবন্ধন শর্ত নয়, তথাপি এটা নিবন্ধিত হওয়া ভাল। কারন এর মাধ্যমে ব্যবসাটি অধিক আইনগত মর্যাদা লাভ করে। পরিশেষে বলা যায়, দুই বা ততোধিক (সর্বোচ্চ ২০ জন, ব্যংকিং ব্যবসায় ১০ জন) ব্যক্তি মুনাফা অর্জন ও বণ্টনের লক্ষ্যে কোন ব্যবসা গঠন ও পরিচালনা বা অবসায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত যে দলিলে স্বাক্ষর করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অংশীদারী ব্যবসা গঠন করে তাকে অংশীদারী ব্যবসার দলিল বা চুক্তিপত্র বলে।
অংশীদারী ব্যবসার দলিলের/চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তু
অংশীদারী ব্যবসার ভিত্তি চুক্তি। আর এ দলিল হলো সেই চুক্তিনামা। এতে ব্যবসার কার্যাবলী, পরিচালনা, বিলোপ সাধন ইত্যাদি বিষয়ে সবিশেষ লিখিত থাকে। সুতরাং ভবিষ্যতে যাতে কোন সমস্যার সমাধান খুঁজতে হিমশিম খেতে না হয় এজন্য এ দলিলে ভবিষ্যতের সমস্ত দিক-নির্দেশনার উল্লেখ থাকে। এর আলোকেই সমস্ত সমস্যার সমাধান করা হয়ে থাকে।
আরো দেখো: HSC হিসাববিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের জন্য হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করেছি। তোমাদের পরীক্ষার যেমন হবে, এটি সেই আলোকেই তৈরি করা হয়েছে। উপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে মডেল টেস্টের উত্তর সংগ্রহ করে নাও।
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post