হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : প্রতিটি কোম্পানি তাদের আর্থিক লেনদেনের চিত্র আথিক বিবরণী তৈরির মাধ্যমে বার্ষিক প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণী পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। এই বার্ষিক প্রতিবেদনসমূহ মালিক, ঋণদাতা, এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়।
হিসাববিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নীতিমালা অনুসরণ করে এসব আর্থিক বিবরণী তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রতিটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হয় এবং তা শেয়ারহোল্ডারদের নিকট পাঠাতে হয়।
হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
প্রতিটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে যে চারটি প্রধান আর্থিক বিবরণী তৈরি করতে হয় তা হলো:
১. আর্থিক অবস্থার বিবরণী বা উদ্ধৃত্ত পত্র
২. আয় বিবরণী
৩. সংরক্ষিত আয় বিবরণী
৪. নগদ প্রবাহ বিবরণী
৫. আর্থিক বিবরণীর তথ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
তাই শুধু আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করলেই চলবে না, প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আর্থিক বিবরণীর বিশ্লেষণ করাও প্রয়োজন। একজন আর্থিক ব্যবস্থাপক সঠিকভাবে আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ও সেই সাথে কোম্পানির লক্ষ্য অর্জনে আর্থিক বিশ্লেষণ করে থাকে। আর্থিক বিবরণীর বিশ্লেষণ বলতে আর্থিক বিবরণীর আয় বিবরণী, উদ্ধৃত্ত পত্র ও নগদ প্রবাহ বিবরণীর মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় এবং মূল্যায়নকে বুঝায়। আর এ মূল্যায়নের মাধ্যমে এর ব্যবহারকারী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায় তারল্য অনুপাত বিশ্লেষণ করে ঋণ দাতা ঐ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিবে কি দিবে না সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। লভ্যাংশ অনুপাত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে ঐ কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে কি করবে না। নিম্নের এগুলো সম্পর্কে আলোচনা হলো:
১. আর্থিক অবস্থার বিবরণী: এটি মূলতঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ের কোম্পানির আর্থিক অবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণী। এটিকে সম্পত্তি ও দায়ের বিবরণীও বলা হয়। সম্পত্তিসমূহের যোগফল এবং দায়সমূহ ও মালিকানা মূলধনের যোগফল সমান হয়। অর্থাৎ, Assets = Liabilites + Owner’s Equity. এ বিবরণীকে অনেক সময় কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার দলিল ও বলা হয়।
২. আয় বিবরণী: আয় বিবরণীর মাধ্যমে মুনাফা বা ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়। নির্দিষ্ট হিসাবকালের মোট আয় হতে মোট ব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে সংশ্লিষ্ট হিসাব কালের নিট লাভ বা নিট ক্ষতি বলে। আয় বিবরণী একটি নির্দিষ্ট সময়ের কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যμমের সংক্ষিপ্ত আর্থিক চিত্র উপস্থাপন করে। হিসাবকাল বলতে সাধারণত ১ বছর অর্থাৎ ১ জানুয়ারী হতে ৩১ শে ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরকে বুঝায়। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানে আর্থিক বছর বলতে ১লা জুলাই হতে পরবর্তী বছরের ৩১ শে জুন পর্যন্ত সময়কে বুঝায়।
৩. সংরক্ষিত আয় বিবরণী: সাধারণত সংরক্ষিত আয় বিবরণীতে গত বছরের আয়ের সাথে চলতি হিসাবকালের নিট আয় যোগ করে তা হতে লভ্যাংশ, প্রস্তাবিত লভ্যাংশ, বিভিন্ন ফান্ড সৃষ্টি বাদ দিয়ে দেখাতে হয়। সংরক্ষিত আয় বিবরণীর ব্যালেন্স উদ্ধৃত্তপত্রে দেখাতে হয়। এ বিবরণীর মাধ্যমে মালিকপক্ষ তাদের মালিকানার বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে।
৪. নগদ প্রবাহ বিবরণী: একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত লেনদেনের কারণে নগদ অর্থ আসে আবার চলে যায়। একে নগদ অর্থের আগমন ও নির্গমন বলে। নগদ অর্থের আগমন এবং নির্গমন সংক্রান্ত তথ্যের বিবরনী হলো নগদ প্রবাহ বিবরণী। একটি নির্দিষ্ট সময়ের নগদ প্রবাহের সংক্ষিপ্ত চিত্রই হলো নগদ প্রবাহ বিবরণী। এই বিবরণী থেকে ব্যবসা পরিচালনা, বিনিয়োগ এবং অর্থ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যাবলি হতে নগদ প্রবাহ সম্পর্কে জানা যায়।
আর্থিক বিশ্লেষণ
আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আর্থিক বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের আর্থিক বিবরণী যেমন- আয় বিবরণী, আর্থিক বিবরণী, নগদ প্রবাহ বিবরণী, লাভ-ক্ষতি হিসাব ও উদ্ধর্ত্তপত্র ইত্যাদি থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। আর এই তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে কোম্পানির সার্বিক আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
শেয়ারহোল্ডার, বিনিয়োগকারী, পাওনাদার সরকার এবং আর্থিক ব্যবস্থাপক এগুলো ব্যবহার করে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে)। সুতরাং আর্থিক বিশ্লেষণ হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আর্থিক বিবরণীর বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সম্পর্কে নির্ণয় করে একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা যায়।
আর্থিক বিশ্লেষণের কৌশল
১. তুলনামূলক আর্থিক বিবরণী: এই প্রক্রিয়ায় একটি কোম্পানির একটি নির্দিষ্ট বছরের সাথে বিগত বছরের আর্থিক বিবরণীর তুলনা করা হয় এবং বিভিন্ন হিসাব খাতের পরিবর্তন চিহ্নিত করা হয়। এরপর ঐ পরিবর্তনের কারণ খুঁজে বের করা হয় ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
উদাহরণস্বরূপ ক লিমিটেড এর ২০১৫ সালে স্থায়ী সম্পত্তি ছিল ১৫,০০,০০০ টাকা। ২০১৬ সালে স্থায়ী সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২০,০০,০০০ টাকা। এখানে বাৎসরিক পরিবর্তন হলো ৫,০০,০০০ টাকা। এ ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন কোম্পানির উন্নতি নির্দেশ করে।
২. সমআকার আর্থিক বিবরণী: কৌশলের সাহায্যে আর্থিক বিবরণীর প্রতিটি আইটেমকে টাকার অংকে থেকে শতকরায় প্রকাশ করা হয়। একই শিল্পের আওতায় দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনা করতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কারণ একই শিল্পের দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টাকার অংকে তুলনা করা যায় না। এ পদ্ধতিতে- (ক) আয় বিবরণীর প্রতিটি আইটেমকে বিক্রয়ের শতকরা কত ভাগ তা দেখানো হয় এবং (খ) আর্থিক অবস্থর বিবরণীর প্রতিটি আইটেমকে মোট সম্পত্তির শতকরা কতভাগ তা দেখানো হয়। সেজন্য খুব সহজে উভয় কোম্পানির আয় ও সম্পত্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
৩. অনুপাত বিশ্লেষণ: প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক সাফল্যের মাত্রা নির্ণয় করার কৌশল হচ্ছে অনুপাত বিশ্লেষণ। উদাহরণস্বরূপ ক লিমিটেড এর ২০১৬ সালে চলতি সম্পদ ও চলতি দায়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫,০০,০০০ ও ১০,০০,০০০ টাকা। চলতি সম্পদকে চলতি দায় দ্বারা ভাগ করলে চলতি অনুপাত পাওয়া যায়। এখানে চলতি অনুপাতের হলো ০.০৫ (৫,০০,০০০/১০,০০,০০০)।
অর্থাৎ ১ টাকা চলতি দায়ের বিপরীতে চলতি সম্পদ আছে ০.৫ টাকা। সুতরাং এই প্রতিষ্ঠানের তারল্য সমস্যা আছে। কারণ চলতি দায় মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ চলতি সম্পদের অভাব রয়েছে। সুতরাং অনুপাত বিশ্লেষণ মালিক, বিনিয়োগকারী ও ব্যবস্থাপকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ বহন করে।
৪. নগদ প্রবাহ বিশ্লেষণ: নগদ প্রবাহ বিশ্লেষণ হলো নগদ প্রবাহ বিবরণী বিভিনড়ব খাতের নগদ আন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রাবাহের তুলনা। এর মাধ্যমে একটি কোম্পানির নগদ প্রবাহ সৃষ্টি করার ক্ষমতা, ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা,মুনাফা অর্জন করার ক্ষমতা এবং ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
৫. ব্রেক ইভেন বিশ্লেষণ: এটি হচ্ছে এমন একটি কৌশল যার সাহায্যে বিক্রিত পণ্য সামগ্রীর উৎপাদন ব্যয়, বিক্রয়লব্ধ আয়ের পরিমাণ ও উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় থেকে অর্জিত মুনাফার মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক জানা যায়। একটি কোম্পানি ব্রেক ইভেনে থাকলে বুঝতে হবে দীর্ঘমেয়াদে এর মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
নগদ প্রবাহ
নগদ প্রবাহ বলতে সাধারণত নগদ অর্থের গ্রহণ এবং প্রদানকে বুঝায়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লেনদেনের মাধ্যমে নগদ অর্থের আন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহ ঘটে। যেমন- পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে নগদ আন্তঃপ্রবাহ এবং পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে নগদ বহিঃপ্রবাহ ঘটে। একটি প্রতিষ্ঠানে পণ্যদ্রব্যের উৎপাদন ও বিক্রয়ের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নগদ প্রবাহকে পরিচালন নগদ প্রবাহ বলে। পরিচালন নগদ প্রবাহ ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকতে পারে না।
সারসংক্ষেপ
আর্থিক বিশ্লেষণ বলতে বিভিনড়ব ধরনের বিবরণী যেমন- আয় বিবরণী, আর্থিক বিবরণী, নগদ প্রবাহ বিবরণী, লাভ-ক্ষতি হিসাব ও উদ্ধর্ত্তপত্র ইত্যাদি বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিভিনড়ব খাতের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে কোম্পানির সার্বিক আর্থিক অবস্থা চিহ্নিত করাকে বুঝায়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের হিসাবকালের শেষ দিনে ব্যবসায়ের সকল সম্পদ, দায় ও মুলধন নিয়ে যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাকে আর্থিক অবস্থার বিবরণী বলে।
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট হিসাবকালে মুনাফা বা ক্ষতি যে বিবরণীর সাাহয্যে জানা যায় তাকে আয় বিবরণী বলে। সাধারনত সংরক্ষিত আয় বিবরণীতে বিগত বছরের আয়ের সাথে চলতি হিসাবকালের নিট আয় যোগ করে তা হতে লভ্যাংশ, প্রস্তাবিত লভ্যাংশ, বিভিনড়ব ফান্ড সৃষ্টি বাদ দিয়ে দেখাতে হয়। নগদ অর্থের আগমন এবং নির্গমন সংক্রান্ত তথ্যের বিবরনী হলো নগদ প্রবাহ বিবরণী।
নগদ প্রবাহ বলতে সাধারনত নগদ অর্থের গ্রহণ এবং প্রদানকে বুঝায়। যেমন- (ক) পরিচালনা কার্যক্রম হতে নগদ প্রবাহ, (খ) বিনিয়োগ কার্যক্রম হতে নগদ প্রবাহ ও (গ) অর্থায়ন কার্যক্রম হতে নগদ প্রবাহ। নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুতের দু’টি পদ্ধতি রয়েছে, যেমন- (ক) যে পদ্ধতিতে নিট আয় অর্থাৎ কর পরবর্তী আয় নিয়ে শুরু করা হয় এবং নিট আয়কে সমন্বয় করে পরিচালন কার্যক্রম কর্তৃক প্রদত্ত নিট নগদ প্রবাহ নির্ণয় করা হয় পরোক্ষ পদ্ধতি বলে এবং (খ) প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে নগদ প্রাপ্তি ও নগদ পরিশোধ সমূহের পার্থক্যকে পরিচালন কার্যক্রম কর্তৃক প্রদত্ত নিট নগদ প্রবাহ বলে।
আরো দেখো: HSC হিসাববিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের জন্য হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করেছি। তোমাদের পরীক্ষার যেমন হবে, এটি সেই আলোকেই তৈরি করা হয়েছে। উপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে মডেল টেস্টের উত্তর সংগ্রহ করে নাও।
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post