হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনযৌথমূলধনী ব্যবসায় বা কোম্পানি সংগঠন হলো আইনসৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী এমন এক ধরনের বৃহদায়তন ব্যবসায় সংগঠন যা অদৃশ্য, চিরন্তন অস্তিত্বের অধিকারী, যা নিজের নাম ও সিল দ্বারা পরিচিত ও পরিচালিত হয়, যেখানে মালিকানা সীমিত দায়বিশিষ্ট শেয়ার সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত।
হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
কোম্পানির বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত করে ১৮৮২ সালে প্রথম ভারতীয় কোম্পানি আইন প্রণয়ন করা হয়। পরে এর ব্যাপক পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন করা হয় ১৯১৩ সালে। আবার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন প্রবর্তিত হয়, যা আজও কার্যকর রয়েছে।
কোম্পানি সংগঠনের বৈশিষ্ট্য
কোম্পানি সংগঠন আইন অনুযায়ী গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই এরূপ সংগঠনের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে এর বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ করা হলো:
১. আইন দ্বারা সৃষ্টি: কোম্পানি একটি আইন সৃষ্ট সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৪ সালের আইন দ্বারা অথবা সরকারের বিশেষ অধ্যাদেশ বলে এ ব্যবসায় গঠিত হয়। আইন সৃষ্ট হওয়ার জন্য এর গঠন প্রক্রিয়া বেশ জটিল।
২. কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা: কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা বলতে এমন এক প্রকার সত্তাকে বোঝায় যা কোনো ব্যক্তি না হয়েও আইনগতভাবে ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করে। আইন দ্বারা সৃষ্ট বলে কোম্পানি সংগঠনকে তার শেয়ার মালিক থেকে আলাদা অস্তিত্ব সম্পন্ন কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
৩. চিরন্তন অস্তিত্ব: কোম্পানি আইন সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং সে সুবাদে কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী হওয়ায় এর অস্তিত্ব বিলোপের ক্ষেত্রেও আইনগত দিক অনুসরন করতে হয়। সকল শেয়ার মালিক ও ব্যবসায়ের কর্মচারিরা দেউলিয়া বা মৃত্যুবরণ করলেও যৌথমূলধনী ব্যবসায়ের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয় না।
৪. সীমাবদ্ধ দায়: কোম্পানির শেয়ার মালিকদের দায় সীমাবদ্ধ থাকে। এখানে ক্রয়কৃত শেয়ার মালিকরা দায়বদ্ধ থাকেন। উদাহরণস্বরূপ কেউ যদি ১০ টাকা মূল্যের ১০০টি শেয়ার ক্রয় করে তাহলে তার দায় (১০ × ১০০) = ১০০০ টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে।
৫. নিজস্ব সিলমোহর: কোম্পানি কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা হওয়ার ফলে তার নিজ নামে সিলমোহর থাকে। কোম্পানির সাথে তৃতীয় পক্ষের লেনদেনের সময় এই সিলমোহর ব্যবহার করা হয় এবং কোম্পানির সকল নথিপত্রে সিল ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।
৬. শেয়ার মূলধন: কোম্পানির মোট মূলধনকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমান অংশে ভাগ করা হয়, একে শেয়ার বলে। শেয়ার মালিক তার নিজ অংশের শেয়ার অন্য পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারে।
৭. সদস্য সংখ্যা: কোম্পানির সদস্য সংখ্যা আইন দ্বারা নির্দিষ্ট থাকে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৫০ জন সদস্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৭ জন এবং সর্বোচ্চ স্মারকলিপিতে বর্ণিত শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে।
উপরে আলোচিত বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য বর্তমানে কোম্পানি সংগঠনকে “ব্যবসায়ী জগতের কান্ডারি” হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কোম্পানি সংগঠনের গুরুত্ব
মূলত একমালিকানা ব্যবসায় এবং অংশীদারি ব্যবসায়ের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে কোম্পানি সংগঠনের গুরুত্ব বেড়ে যায় এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে এটি পরিচিতি লাভ করে। শিল্প বিপ্লবের পর হতেই এ ধরনের সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে এবং বৃহদায়তন উৎপাদনের মাধ্যমে বিপুল জনগণের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে অল্প সময়ের ব্যবধানে সমগ্র বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করে।
বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য অধিক মূলধনের প্রয়োজন। কোম্পানি সংগঠন বিপুল পরিমাণ শেয়ার ও ঋণপত্র বিক্রয় করে মূলধন গঠন করে এবং দক্ষ ব্যবস্থাপক নিয়োগ করে সহজেই এ ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনা করতে পারে। কোম্পানি সংগঠন চিরন্তন অস্তিত্ব, আইনগত সত্ত্বা, সীমিত দায় ইত্যাদির কারণে এটি একটি উত্তম বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত।
এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা, লভ্যাংশের প্রাপ্তি ইত্যাদির সুবিধা থাকে বিধায় সাধারণ ব্যক্তিরা সঞ্চয়ে উৎসাহিত হয় এবং মূলধন গঠন করে। একমালিকানা ব্যবসায় কিংবা অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠন কখনই বড় ধরনের ঝুঁকি কিংবা বিনিয়োগ করে না। সমস্ত বিশ্বে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোম্পানি সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো থেকে হোল্ডিং কোম্পানি, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করায় অনেক নতুন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয় এবং সেক্ষেত্রে বহু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এছাড়া যৌথমূলধনী ব্যবসায় সংগঠন আর্থিক সামর্থ্যতার কারণে তথ্য প্রযুক্তির ও কলা কৌশলের ব্যবহার নিশ্চিত করে। সমাজের বিভিন্ন পক্ষের প্রতি দায়িত্ব পালন, অর্থাৎ ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা ইত্যাদিতে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ের সাথে পরিচিতিকরণ, পণ্য ও সেবার বাজারজাতকরণ ইত্যাদিতে বৃহদায়তন ব্যবসায় হিসেবে কোম্পানি সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পণ্য ও সেবার গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় কোম্পানি সংগঠন। একদিকে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়, সভ্যতার উনড়বয়ন ঘটে এবং সর্বোপরি ব্যবস্থাপনার পেশাগত দিক উন্নয়ন ঘটে।
সারসংক্ষেপ
যৌথমূলধনী ব্যবসায় সংগঠন বা কো¤পানি হলো আইনসৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী এমন এক ধরনের বৃহদায়তন ব্যবসায় সংগঠন যা অদৃশ্য, চিরন্তন অস্তিত্বের অধিকারী: যা নিজের নাম ও সিল দ্বারা পরিচিত ও পরিচালিত হয়, যেখানে মালিকানা সীমিত দায়বিশিষ্ট শেয়ার সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত।
- ১৯৯৪ সালে কোম্পানি আইন দ্বারা এ ব্যবসায় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
- আইন সৃষ্ট হওয়ায় এ ব্যবসায় সংগঠন গঠন করা বেশ জটিল।
- এ ব্যবসায় কোনো ব্যক্তি না হয়েও আইনগতভাবে ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করে।
- কোম্পানির শেয়ার মালিকদের দায় সীমাবদ্ধ থাকে।
- কোম্পানি কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা হওয়ার ফলে তার নিজ নামে সিলমোহর থাকে।
- কোম্পানির মোট মূলধনকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমান অংশে ভাগ করা হয়, একে শেয়ার বলে।
- শেয়ার মালিক তার নিজ অংশের শেয়ার অন্য পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারে।
- প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৫০ জন সদস্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
- পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৭ জন এবং সর্বোচ্চ স্মারকলিপিতে বর্ণিত শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দাও
১. আইনের দ্বারা সৃষ্ট ব্যবসায় হলো-
(ক) অংশীদারি
(খ) যৌথমূলধনী
(গ) একমালিকানা
(ঘ) আইন ব্যবসায়
২. চিরন্তন অস্তিত্বসম্পন্ন ব্যবসায় হলো-
(ক) সমবায় সমিতি
(খ) রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়
(গ) যৌথমূলধনী
(ঘ) একমালিকানা
৩. সর্বপ্রথম কোন সালে যৌথমূলধনী কোম্পানি আইন প্রণয়ন করা হয়?
(ক) ১৭৫৭
(খ) ১৮৮২
(গ) ১৯১৩
(ঘ) ১৯৯৪
৪. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যা হলো-
(ক) ২ জন
(খ) ৩ জন
(গ) ৫জন
(ঘ) ৭ জন
৫. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যা হলো-
(ক) ২ জন
(খ) ৭ জন
(গ) ৯ জন
(ঘ) ১১ জন
৬. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা হলো-
(ক) পঞ্চাশ জন
(খ) চুক্তিপত্রে উল্লেখিত উদোক্তার সংখ্যা
(গ) একশত জন
(ঘ) স্মারকলিপিতে বর্ণিত শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ
আরো দেখো: HSC হিসাববিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের জন্য হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করেছি। তোমাদের পরীক্ষার যেমন হবে, এটি সেই আলোকেই তৈরি করা হয়েছে। উপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে মডেল টেস্টের উত্তর সংগ্রহ করে নাও।
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post