হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : এধরনের কোম্পানি তাদের গঠনতন্ত্র দ্বারাই মালিকদের মালিকানা হস্তান্তরের অধিকার সীমাবদ্ধ করে দেয় এবং জনগণের নিকট কখনই শেয়ার বিক্রি করতে পারে না। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যা ২ জন এবং সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ৫০ জন।
এক্ষেত্রে কার্যারম্ভ পত্র প্রাপ্তির প্রয়োজন হয় না। নিবন্ধনের পর পরই ব্যবসায় শুরু করা যায়। কোনো রকম বিধিবদ্ধ সভা আহ্বানের প্রয়োজন হয় না। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির তুলনায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মূলধনের পরিমাণ এবং কর্মপরিধি কম হয়ে থাকে।
হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী এ ধরনের কোম্পানি মূলধন বাজারে সাধারণ জনগণের নিকট শেয়ার বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করে থাকে। সর্বনিম্ন ৭ জন সদস্য ছাড়া এ ধরনের কোম্পানি গঠন করা যায় না।
সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা কত হবে সেটা নির্দিষ্ট নেই। তবে কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা দ্বারা এটা সীমাবদ্ধ। এ ধরনের কোম্পানির শেয়ার বা মালিকানা হস্তান্তরের কোনো বিধিনিষেধ নেই। কোম্পানি নিবন্ধনের পর কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র না পেলে ব্যবসায় শুরু করা যায় না। কোম্পানি গঠনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে বিধিবদ্ধ সভা আহ্বান করতে হয় এবং নিবন্ধকের নিকট প্রতিবেদন পেশ করতে হয়। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির পরিচালক হওয়ার জন্য যোগ্যতাসূচক শেয়ার ক্রয়ের প্রয়োজন হয়।
সারসংক্ষেপ
- শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানিসমূহকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বলা হয়।
- প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হলো এমন ধরনের কোম্পানি যার শেয়ার হস্তান্তরযোগ্য নয়।
- পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি মূলধন সংগ্রহের জন্য জনগণের মধ্যে শেয়ার ইস্যু করতে পারে।
- প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মূলধন সংগ্রহের জন্য জনগণের মধ্যে কোনো রকম শেয়ার ইস্যু করার সুযোগ নেই।
- পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যা ৭ জন এবং সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা অনুমোদিত মূলধনের শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমিত।
- প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যা ২ জন এবং সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ৫০ জন।
কোম্পানি সংগঠনের গঠন
যৌথমূলধনী ব্যবসায় বা কোম্পানি সংগঠন হলো আইন সৃষ্ট ব্যবসায় সংগঠন; যা গঠিত হয় একটি ধারাবাহিক পর্যায়ের মধ্য দিয়ে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুসারে এরূপ ব্যবসায় গঠনে যে সকল পর্যায় অতিক্রম করতে হয় তা নিচে বর্ণনা করা হলো:-
১. উদ্যোগ গ্রহণ পর্যায়: উদ্যোগ গ্রহণ বলতে কোম্পানি গঠনের জন্য উদ্যোক্তা বা প্রবর্তকগণের অনুসন্ধান, যাচাই ও সংগঠিত হওয়াকে বোঝায়। এ পর্যায়ে উদ্যোক্তাগণ ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ, সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রকল্প অনুমোদন, আর্থিক পরিকল্পনা, নাম নির্বাচন ও নামের ছাড়পত্র সংগ্রহ ইত্যাদি কার্য সম্পূর্ণ করে থাকেন।
২. দলিলপত্র প্রণয়ন পর্যায়: এ পর্যায়ে কোম্পানির পরিচালকগণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি দলিল প্রণয়ন করেন। যথা: (ক) স্মারকলিপি বা পরিমেলবন্ধ ও (খ) সংঘবিধি বা পরিমেল নিয়মাবলি। স্মারকলিপি কো¤পানির প্রধান দলিল বা সংবিধান বা গঠনতন্ত্র যাতে কোম্পানির নাম, ঠিকানা, উদ্দেশ্য, মোট মূলধন ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। আর সংঘবিধিতে কোম্পানি পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়ম-বিধি লেখা থাকে।
৩. নিবন্ধনপত্র সংগ্রহ পর্যায়: এ পর্যায়ে কো¤পানি নিবন্ধকের অফিস হতে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণপূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দলিল সংযুক্ত করে নিবন্ধকের নিকট জমা দেয়া হয়। আবেদনপত্র ও দলিল যাচাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিবন্ধক কোম্পানির নাম তালিকাভুক্ত করেন। তারপর প্রাইভেট লিমিটেড কো¤পানি কাজ শুরু করতে পারে। কিন্তু পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে কাজ শুরু করার জন্য কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয়।
৪. কার্যারম্ভ পর্যায়: পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র পাওয়ার জন্য ন্যূনতম মূলধন সংগৃহীত হয়েছে এ মর্মে ঘোষণাপত্র ও বিবরণপত্র দাখিল করতে হয়। উক্ত দলিলপত্র পেয়ে নিবন্ধক সন্তুষ্ট হলে কার্যারম্ভের অনুমতি প্রদান করেন। তারপর পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
স্মারকলিপি/সংঘস্মারক/পরিমেল বন্ধ
উদ্ভাবন লিমিটেড একটি অর্গানিক খাবার পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। জৈব সার দ্বারা উৎপাদিত শাক-সবজি ও প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছ-মাংস রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করার নিমিত্তে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ফার্মগেটে এদের হেড অফিস হলেও কৃষি খামার ও বাগান রাজশাহীর রাজাবাজারে। প্রতিদিন ঢাকার বাজারে শাক-সবজি, ডেইরি ফার্মের দুধ, মাছ ও মাংস নিয়ে আসা হয়।
ঢাকার বাসিন্দাদের ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইডের মত বিষ মেশানো খাবার থেকে বাঁচাতে তাদের এই প্রচেষ্টা। তারা দশ বন্ধু সমভাবে ১০ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেন তাই তাদের দায়ও সমান সমান। উপরের ঘটনাটিতে উদ্ভাবন লিমিটেড কোম্পানির সমস্ত তথ্যাদি যেমন- ঠিকানা, উদ্দেশ্য, কার্যপরিধি, ক্ষমতার সীমা ও দায় ইত্যাদি বর্ণিত আছে।
এটিই উদ্ভাবন লিমিটেড কোম্পানির মূল দলিল যাকে স্মারকলিপি বা পরিমেলবন্ধ বলা হয়ে থাকে। স্মারকলিপি হলো কোম্পানির মূল দলিল, সনদ বা সংবিধান যাতে কোম্পানির মূল বিষয়াবলি বিশেষত উদ্দেশ্য, কার্যপরিধি ও ক্ষমতার সীমা নির্দেশ করা হয় এবং যা দ্বারা কোম্পানির সাথে শেয়ারহোল্ডার ও তৃতীয় পক্ষের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়। এটিকে কোম্পানির গঠনতন্ত্রও বলা হয়।
স্মারকলিপি বা পরিমেলবন্ধের বিষয়বস্তু বা ধারাসমূহ
স্মারকলিপি বা পরিমেলবন্ধে নিম্নোক্ত ৬টি ধারা বা বিষয়বস্তু বিদ্যমান থাকে। যথা:
১. নাম ধারা;
২. অবস্থান ও ঠিকানা ধারা;
৩. উদ্দেশ্য ধারা;
৪. মূলধন ধারা;
৫. দায় ধারা;
৬. সম্মতি ধারা।
পরিমেল নিয়মাবলি/সংঘবিধি
কোম্পানির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো পরিমেল নিয়মাবলি বা সংঘবিধি। এই দলিলে কোম্পানির দৈনন্দিন অভ্যন্তরীণ পরিচালনার নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ থাকে। স্মারকলিপিতে কোম্পানির উদ্দেশ্যসমূহ লিপিবদ্ধ থাকে, কিন্তু এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সেটা নির্দেশ করা হয় পরিমেল নিয়মাবলির মাধ্যমে। যদি কোনো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি পরিমেল নিয়মাবলি তৈরি করতে না পারে তাহলে ১৯৯৪ সালে কোম্পানি আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী কোম্পানি আইনের তফসিল-১ এ পরিমেল নমুনা হিসেবে প্রদত্ত টেবিল এ গ্রহণ করতে পারবে।
বিবরণপত্র
পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি নিবন্ধিত হবার পর মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্য নিয়ে জনগণকে কোম্পানির শেয়ার/ঋণপত্র ক্রয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে যে প্রচারপত্র বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, তাকে কোম্পানির বিবরণপত্র বলে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ১৪২ (১) ধারা অনুযায়ী যে দলিল দ্বারা জনগণের নিকট শেয়ার বা ডিবেঞ্চার (ঋণপত্র) বিক্রয়ের প্রস্তাব পেশ করা হয়, তাই বিবরণপত্র বা প্রসপেক্টাস।
কোম্পানির নিবন্ধনপত্র
আমরা আগেই জেনেছি যে, কোম্পানি একটি আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৪ সালের কোম্পানির আইন অনুযায়ী
বলা হয়েছে যে, সীমাহীন কিংবা সীমাবদ্ধ যে কোনো কোম্পানিকে ব্যবসায়ের কাজ শুরু করার জন্য নিবন্ধকের নিকট হতে নিবন্ধনপত্র সংগ্রহ করতে হয়। নিবন্ধনপত্র পেতে হলে কোম্পানির প্রবর্তক বা উদ্যোক্তাদের কিছু আইনগত আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়।
অর্থাৎ আবেদনপত্রের সাথে বিভিন্ন প্রকার দলিলপত্র, স্ট্যাম্প ফি, সরকারি ট্রেজারি চালান ফি, ইত্যাদি সংযুক্ত করে নিবন্ধকের নিকট জমা দিলে নিবন্ধক যদি সন্তুষ্ট হন, তাহলে তিনি নিবন্ধন সংক্রান্ত একটি পত্র ইস্যু করেন, এটাই নিবন্ধনপত্র। নিবন্ধনপত্র পাওয়ার পর পরই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ব্যবসায়ের কাজ শুরু করতে পারে।
কিন্তু পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে এরূপ দলিল পাওয়ার পরও কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করা না পর্যন্ত ব্যবসায়িক কাজ শুরু করতে পারে না। নিবন্ধনপত্র পাওয়ার পূর্বে কোম্পানি শেয়ার বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে না।
আরো দেখো: HSC হিসাববিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের জন্য হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করেছি। তোমাদের পরীক্ষার যেমন হবে, এটি সেই আলোকেই তৈরি করা হয়েছে। উপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে মডেল টেস্টের উত্তর সংগ্রহ করে নাও।
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post