হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৮ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের যে সকল আয় অর্জিত হয় তার মধ্যে মূলধনজাতীয় আয় একটি। সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যপরিচালনার মাধ্যমে যে আয় বা মুনাফা হয় সেগুলো ব্যতীত সকল ধরণের আয়কে মূলধনজাতীয় আয় বলে।
এ জাতীয় আয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর বা বারবার সংঘঠিত হয় না। এটি অনিয়মিতভাবে হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, জনাব তানজিল ২০১০ সালে একখন্ড জমি ৫,০০,০০০ টাকায় ক্রয় করেন। যা ২০১৫ সালে ৮,০০,০০০ টাকায় বিক্রয় করেন। এখানে মূলধনজাতীয় আয়ের পরিমাণ হবে (৮,০০,০০০ – ৫,০০,০০০= ৩,০০,০০০ টাকা। মূলধনজাতীয় আয়ের কয়েকটি উদাহরণ হলো- ক. স্থায়ী সম্পত্তি বিμয়জনিত মুনাফা। খ. সম্পত্তি মূল্যায়নজনিত মুনাফা। গ. অধিহারে শেয়ার ও ঋণপত্র ইস্যু ইত্যাদি।
হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৮ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
মুনাফাজাতীয় আয়: কারবারের দৈনন্দিন কার্যμম পরিচালনার মাধ্যমে যে আয় বারবার অর্জিত হয় তাকে মুনাফাজাতীয় আয় বলে। যেমন- পণ্য বিক্রয়, এটি প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত আয়। তবে কিছু অনিয়মিত আয়ও রয়েছে। যেমন- বিনিয়োগের সুদ, পুরাতন খবরের কাগজ বিক্রি, লভ্যাংশ প্রাপ্তি ইত্যাদি। মুনাফাজাতীয় আয়কে বিশদ আয় বিবরণীতে দেখানো হয় এবং আয় যদি বকেয়া থাকে তা সংশ্লিষ্ঠ বৎসরের আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে দেখাতে হয়। মুনাফাজাতীয় আয়ের কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে তুলে ধরা হল: ক. সেবা আয়, খ. শিক্ষানবিশ সেলামি, গ. লভ্যাংশ প্রাপ্তি, ঘ. উপ-ভাড়া প্রাপ্তি, ঙ. বিনিয়োগের সুদ
মূলধনজাতীয় ব্যয়: যে সব ব্যয়ের কার্যকারিতা একাধিক বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকে এবং কারবারের স্থায়ী সম্পত্তি অর্জনের নিমিত্তে যে ব্যয় করা হয় তাকে মূলধনজাতীয় ব্যয় বলে। এ জাতীয় ব্যয়ের ফল দীর্ঘকাল ধরে ভোগ করা যায়। সুতরাং বলা যায় যে, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ে স্থায়ী সম্পদ অর্জনের জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় তাকে মূলধনজাতীয় ব্যয় বলে। মূলধনজাতীয় ব্যয় আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে সম্পদ পাশে দেখানো হয়। মূলধনজাতীয় ব্যয়ের কয়েকটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হল: ক. যন্ত্রপাতি, খ. আসবাবপত্র, গ. মোটরগাড়ী, ঘ. সুনাম, ঙ. টেড্র মার্ক
মুনাফাজাতীয় ব্যয়: কারবারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যেসব ব্যয় বারবার সংঘটিত হয় এবং যে সব ব্যয়ের উপোযোগ ও কার্যকারিতা স্বল্প সময়ের মধ্যে নিঃশেষিত হয় এ জাতীয় ব্যয়কে মুনাফাজাতীয় ব্যয় বলে। মুনাফাজাতীয় ব্যয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ই হয়। যে সকল ব্যয় সরাসরি উৎপাদনের সাথে জড়িত সে সকল ব্যয়কে প্রত্যক্ষ মুনাফাজাতীয় ব্যয় বলে। আর যে সকল ব্যয় সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নয়, ঐগুলোকে পরোক্ষ মুনাফাজাতীয় ব্যয় বলে। মুনাফাজাতীয় ব্যয়কে বিশদ আয় বিবরণীতে দেখানো হয়। নিচে মুনাফাজাতীয় ব্যয়ের কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হল: ক. মাল ক্রয়, খ. মজুরি, গ. বেতন, ঘ. অফিস ভাড়া, ঙ. মূলধনের সুদ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দাও
১. ব্যবসায়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয় না-
ক. মুনাফাজাতীয় আয়
খ. মূলধনজাতীয় আয়
গ. অপরিচালন আয়
ঘ. বিলম্বিত আয়
২. ব্যবসায়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়-
ক. মূলধনজাতীয় আয়
খ. পরোক্ষ আয়
গ. মুনাফাজাতীয় আয়
ঘ. অপরিচালন আয়
৩. নিচের কোনটি মুনাফাজাতীয় আয়-
ক. সেবা আয়
খ. শেয়ার অবহার
গ. মূলধনের সুদ
ঘ. সম্পত্তি বিষয়ে মুনাফা
৪. নিচের কোনটি মুনাফাজাতীয় ব্যয়-
ক. যন্ত্রপাতি ক্রয়
খ. আসবাবপত্র ক্রয়
গ. মাল ক্রয়
ঘ. বিনিয়োগের সুদ
৪. জনাব বেলায়েতের মোটরগাড়ি ক্রয় কোন জাতীয় ব্যয়?
ক. মূলধনজাতীয় ব্যয়
খ. মুনাফাজাতীয় ব্যয়
গ. বিলম্বিত মুনাফাজাতীয় ব্যয়
ঘ. মূলধনজাতীয় প্রাপ্তি
৫. জনাব বেলায়েতের মূলধনজাতীয় আয় কত হবে?
ক. ২০,০০০ টাকা
খ. ৪০,০০০ টাকা
গ. ৬০,০০০ টাকা
ঘ. ৫০,০০০ টাকা
৬. জনাব বেলায়েতের মূলধনজাতীয় প্রাপ্তি কত?
ক. ২,০০,০০০ টাকা
খ. ৩,০০,০০০ টাকা
গ. ৩,৫০,০০০ টাকা
ঘ. ৪,০০,০০০ টাকা
নগদ ভিত্তিক হিসাববিজ্ঞান: এ পদ্ধতিতে আয় তখনই আয় বলে গণ্য হবে, যখন আয় নগদে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট হিসবাকাল বছরে নগদে প্রাপ্তি সংশ্লিষ্ট বছরের আয় হিসাবে বিবেচিত হবে। এ পদ্ধতিতে বকেয়া আয় হিসাবভুক্ত হয় না। এ পদ্ধতিতে মালিক কর্তৃক অতিরিক্ত মূলধন বিনিয়োগ এবং ঋণকৃত মূলধন নগদে প্রাপ্ত হলে এদেরকেও আয় অর্জিত লেনদেন বলে চিহ্নিত করা হবে। নগদ প্রাপ্তি ও প্রদানের পার্থক্যই হবে নিট লাভ।
এ পদ্ধতি অনেকের কাছে সমাদৃত কারণ এর গণনাকার্য সহজ, খুবই বাস্তবপূর্ণ। যদিও এ পদ্ধতি অনেকের পছন্দ তবুও এ পদ্ধতির অনেক কিছুর অভাব রয়েছে। তাই হিসাবরক্ষকগণ বকেয়া ভিত্তিক হিসাব বেশি পছন্দ করেন। কেননা এ পদ্ধতি অনেক যুক্তিনির্ভর ও বিজ্ঞানভিত্তিক। সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছোট কারবারি প্রতিষ্ঠান, পেশাদার ব্যক্তি, আইনজীবি, ডাক্তার তাদের হিসাব নগদ ভিত্তিতে করে থাকেন।
মুনাফা অর্জিত হয়েছে কিন্তু নগদে পাওয়া যায়নি বলে হিসাবভুক্ত হবে না এটি আয় চিহ্নিতকরণ নীতির পরিপন্থী এবং আয়-ব্যয় সংযোগ ধারণা অনুযায়ী আয়ের বিপক্ষে সঠিকভাবে হিসাব লিপিবদ্ধ হয় না তাই নগদ ভিত্তিক হিসাব পদ্ধতি অনেক সময় আর্থিক বিবরণীকে ভুল পথে পরিচালিত করে।
নগদভিত্তিক হিসাব পদ্ধতি GAAP পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে চলতে ব্যর্থ হয়। নগদ ভিত্তিক হিসাববিজ্ঞান অনুযায়ী সম্পত্তি ক্রয় করা হলে খরচ হিসাবে হিসাবভুক্ত করা হয়। এ ব্যবস্থায় আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে সম্পদ পাশে শুধু নগদ তহবিল এবং দায় পাশে শুধু মূলধন থাকবে।
বকেয়া ভিত্তিক হিসাব: এ হিসাব পদ্ধতি দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ নিয়মনীতি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বছরের প্রাপ্য আয় ও প্রদেয় ব্যয়ের হিসাব আয়-ব্যয়ের হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে আয়-ব্যয়ের হিসাব করা হয়। এক্ষেত্রে লেনদেনটির জন্য নগদ অর্থ-প্রদান বা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা বিবেচনা করা হয় না। চলতি বছরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার আয় ও খরচগুলো হিসাবভুক্ত করা হয়। প্রাপ্য ও প্রদেয় ভিত্তিক হিসাব পদ্ধতির মূল কথা হলো যে, লেনদেন যদি সংঘটিত হয়ে থাকে বা ঘটনা যদি ঘটে থাকে এর পরিণতি দেখা দিবেই। পরিনামকে হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হবে যদিও নগদে লেনদেনের নিষ্পত্তি কিছুকাল পরে হবে। এরূপ লেনদেনের লিপিবদ্ধকরণ ছাড়া হিসাব তথ্য অসম্পূর্ণ, এমনকি বিভ্রান্তিকরও হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বাবদ ২০১৫ সালে মাসিক ১,০০০ টাকা হিসাবে সম্পূর্ণ বছরে মোট ১২,০০০ টাকা ভাড়া প্রদান করতে হবে। সারা বছর ভাড়া বাবদ মোট ১০,০০০ টাকা নগদে প্রদান করা হলে বছরে ক্ষেত্রে বকেয়া থাকবে (১২,০০০ – ১০,০০০) = ২,০০০ টাকা। এখানে বকেয়া ভিত্তিক হিসাব ব্যবস্থায় আয় বিবরণীতে ভাড়া খরচ প্রদর্শন করার সময় ১০,০০০ টাকার সাথে ২,০০০ টাকা বকেয়া ভাড়া যোগ করে মোট ১২,০০০ টাকা দেখাতে হবে। উপরের আলোচনা হতে বলা যায় যে, একটি হিসাবকালের শেষে ঐ হিসাবকালের যাবতীয় প্রাপ্ত ও প্রাপ্য বা অনাদায়ী আয় এবং প্রদত্ত ও অপ্রদত্ত বা বকেয়া খরচসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে কাবারের লাভ-লোকসান নির্ণয় পদ্ধতিতে প্রাপ্য ও প্রদেয় ভিত্তিক হিসাব বলে।
আরো দেখো: HSC হিসাববিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের জন্য হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্র ৮ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করেছি। তোমাদের পরীক্ষার যেমন হবে, এটি সেই আলোকেই তৈরি করা হয়েছে। উপরে দেওয়া Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে মডেল টেস্টের উত্তর সংগ্রহ করে নাও।
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post