হিসাববিজ্ঞান ৩য় অধ্যায় : সমগ্র বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহে হিসাব সংরক্ষণের জন্য নির্ভরযোগ্য, বিজ্ঞানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি হিসেবে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত। দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে অর্থ বা আর্থিক মূল্যে পরিমাপযোগ্য প্রতিটি লেনদেনকে দৈত স্বত্বায় প্রকাশ করা হয়। ব্যবসায়ের সঠিক ফলাফল ও প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানার জন্য দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই।
হিসাববিজ্ঞান ৩য় অধ্যায়
ইতালির প্রসিদ্ধ গণিতবিদ লুকা প্যাসিওলি ১৪৯৪ সালে আর্থিক ঘটনাবলি সঠিকভাবে ও সুচারুরূপে লিপিবদ্ধ করার যে পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন তা দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি নামে পরিচিত। এটি হিসাবরক্ষণের একমাত্র নির্ভরযোগ্য, বিজ্ঞানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের সাথে দুটি পক্ষ জড়িত থাকে, যা দাতা ও গ্রহীতা নামে পরিচিত। যে পক্ষ সুবিধা পায় তাকে গ্রহীতা (Debitor) ও যে পক্ষ সুবিধা দিয়ে থাকে তাকে দাতা (Creditor) বলে। সুতরাং সঠিকভাবে হিসাব প্রণয়নের জন্য যে ব্যবস্থায় লেনদেনসমূহের দ্বৈতস্বত্তা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে।
দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য বা মূলনীতি
- দ্বৈতস্বত্তা : প্রতিটি লেনদেনে কমপক্ষে দুটি পক্ষ থাকে।
- দাতা ও গ্রহীতা : প্রতিটি লেনদেনে সুবিধা গ্রহণকারী গ্রহীতা ও সুবিধা প্রদানকারী দাতা হিসাবে কাজ করে।
- ডেবিট ও ক্রেডিট করা : সুবিধা গ্রহণকারী হিসাবকে ডেবিট ও সুবিধা প্রদানকারী হিসাবকে ক্রেডিট করা হয়।
- সমান অঙ্কের আদান-প্রদান : প্রতিটি লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট টাকার পরিমাণ সমান হবে।
- সামগ্রিক ফলাফল : প্রতিটি লেনদেন ডেবিট ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে সমপরিমাণ টাকা দ্বারা লিপিবদ্ধ করায় সামগ্রিক ফলাফল নির্ণয় সহজ হয়।
দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধাসমূহ:
১. পরিপূর্ণ হিসাব সংরক্ষণ
২. লাভ লোকসান নিরূপণ
৩. গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই
৪. আর্থিক অবস্থা নিরূপণ
৫. ভুলত্রুটি ও জালিয়াতি উদঘাটন ও প্রতিরোধ
৬. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ
৭. মোট দেনা পাওনার পরিমাণ নির্ণয়
৮. সঠিক কর নির্ধারণ
৯. সহজ প্রয়োগ
১০. সার্বজনীন স্বীকৃতি
হিসাবের ধারাবাহিকতা রক্ষা পদ্ধতি
চলমান ধারণার নীতি অনুসারে প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। এ কারণে চলতি বছরের সম্পদ ও দায়ের সমাপনী জেরসমূহকে পরবর্তী বছরের প্রারম্ভিক জের হিসেবে দেখানো হয়। চলতি বছরের শেষ তারিখের সম্পদসমূহকে ডেবিট এবং দায়সমূহকে ক্রেডিট করে পরবর্তী হিসাব বছরের শুরুতে প্রারম্ভিক দাখিলা প্রদানের মাধ্যমে হিসাবের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়।
একতরফা দাখিলা পদ্ধতি
যে সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আয়তন ছোট ও লেনদেনের সংখ্যা কম সে সকল প্রতিষ্ঠানে একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেন লিপিবদ্ধের সময় কখনো এক পক্ষ, কখনো দুই পক্ষ আবার কখনো কোনপক্ষই লিপিবদ্ধ হয় না বলে এটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি নয়। এ পদ্ধতিতে সম্পদ ও দায়ের হিসাবগুলোই বেশি লিপিবদ্ধ করা হয়।
এ অধ্যায়ের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি-
ক. রিপোটিং পদ্ধতি
খ. আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি
গ. লিপিবদ্ধকরণ পদ্ধতি
ঘ. ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ধারণ পদ্ধতি
২. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হলো-
i. এ পদ্ধতিতে দাতা ও গ্রহীতা দুটি পক্ষ থাকবে
ii. মোট ডেবিট অঙ্ক সর্বদাই মোট ক্রেডিট অঙ্কের সমান হবে
iii. গ্রহীতার হিসাব ক্রেডিট ও দাতার হিসাব ডেবিট হবে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ i ও iii
গ ii ও iii
ঘ i, ii ও iii
নিম্নের তথ্যের আলোকে ৩, ৪ ও ৫নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
ব্যবসায়ী জনাব সুবীর রায় প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্রয় বই, বিক্রয় বই, প্রাপ্য বিল বই, প্রদেয় বিল বই ইত্যাদি সংরক্ষণ করেন। এছাড়া হিসাব সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকার কারণে বাট্টাজনিত দাখিলা অন্যভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা অবগত হওয়ার জন্য আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রণয়ন করেন এবং এভাবে ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠানের হিসাব পরিচালনা করেন।
৩. জনাব সুবীর রায় এর ক্রয় বইতে লিপিবদ্ধ করেন-
ক. ধারে ক্রয়
খ. ধারে বিক্রয়
গ. নগদে ক্রয়
ঘ. ক্রয় ফেরত
৪. জনাব সুবীর রায় বাট্টাজনিত দাখিলা লিপিবদ্ধ করেন-
ক. নগদান বইতে
খ. বিক্রয় ফেরত বইতে
গ. প্রাপ্য বিল বইতে
ঘ. প্রকৃত জাবেদায়
৫. জনাব সুবীর রায়ের প্রারম্ভিক জাবেদা দাখিলার প্রয়োজন হয় কেন?
ক হিসাব চক্রের ধারা অনুসরণ করার জন্য
খ. পরবর্তী হিসাব কালের যাত্রা শুরু করার জন্য
গ. হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য
ঘ. বর্তমান হিসাবকালের আর্থিক অবস্থা জানার জন্য
৬. একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে সাধারণত কোন শ্রেণির হিসাব সংরক্ষণ করা হয় না?
i. সম্পদ
ii. দায়
iii. ব্যয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক i ও ii
খ i ও iii
গ ii ও iii
ঘ i, ii ও iii
৩৩. লুকা প্যাসিওলি কোন দেশের গণিতবিদ ছিলেন?
ক. জার্মানের
খ. ইংল্যান্ডের
গ. যুক্তরাষ্ট্রের
ঘ. ইতালির
৩৪. লুকা প্যাসিওলি কত সালে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন?
ক. ১৪৯৪
খ. ১৫৯৪
গ. ১৬৯৪
ঘ. ১৭৯৪
৩৫. হিসাব সংরক্ষণের জন্য নির্ভরযোগ্য, বিজ্ঞানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ হিসাব পদ্ধতি কোনটি?
ক. একতরফা দাখিলা পদ্ধতি
খ. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি
গ. লেনদেন চিিহ্নতকরণ পদ্ধতি
ঘ. আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি
৩৬. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি বলার কারণ কী?
ক. নিট আয়ের পরিমাণ জানা যায়
খ. সম্পদ ও দায়ের সঠিক পরিমাণ জানা যায়
গ. হিসাব বিজ্ঞানের সূত্র প্রয়োগ করা যায়
ঘ. হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়
৩৭. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি পূর্ণাঙ্গ হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতি। এর যুক্তিযুক্ত কারণ কোনটি?
ক. ব্যবসায়ের প্রতিটি ঘটনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়
খ. প্রতিটি লেনদেনের সংশ্লিষ্ট পক্ষ দুটিকে হিসাবভুক্ত করা হয়
গ. প্রতিটি লেনদেনের সংশ্লিষ্ট হিসাব খাতকে সমান অঙ্কে লিপিবদ্ধ করা হয়
ঘ. প্রতিটি লেনদেনের জন্য মাত্র দুটি হিসাব খাতকে লিপিবদ্ধ করা হয়
৩৮. নিচের কোনটি দু’তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতির স্বরূপ প্রকাশ করে?
ক. দ্বিগুণ কাজের হিসাব পদ্ধতি
খ. একটি আংশিক হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি
গ. একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি
ঘ. প্রাচীন হিসাব পদ্ধতি
৩৯. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে আর্থিক মূল্যে পরিমাপযোগ্য প্রতিটি লেনদেনকে কোন স্বত্বায় প্রকাশ করা হয়?
ক. একক স্বত্বায়
খ. দ্বৈত স্বত্বায়
গ. ত্রি-স্বত্বায়
ঘ. পঞ্চ-স্বত্বায়
৪০. হিসাবরক্ষক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষণ করেন কেন?
ক. ভারসাম্য, সনাতন ও পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি বলে
খ. নির্ভরযোগ্য, কৌশলগত ও নীতিগত পদ্ধতি বলে
গ. কৌশলগত, ভারসাম্য ও পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি বলে
ঘ. নির্ভরযোগ্য, বিজ্ঞানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি বলে
৪১. দু’তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
ক. দু’প্রস্থ হিসাবের বইতে দাখিলা
খ. প্রতিটি হিসাবকে একবার লিপিবদ্ধকরণ
গ. একই হিসাব বইতে লেনদেনের দ্বৈতস্বত্বা লিপিবদ্ধকরণ
ঘ. দুই তারিখের দুটি হিসাব একত্রে লিপিবদ্ধকরণ
৪২. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি প্রতিটি লেনদেনকে কীভাবে প্রকাশ করে?
ক. একটি পক্ষকে লিপিবদ্ধ করে
খ দুটি পক্ষকে সমান অঙ্কে লিপিবদ্ধ করে
গ. দুটি পক্ষকে অসমান অঙ্কে লিপিবদ্ধ করে
ঘ. দুটি পক্ষকে ভিন্ন তারিখে লিপিবদ্ধ করে
৪৩. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে মোট ডেবিট টাকার অঙ্ক এবং মোট ক্রেডিট টাকার অঙ্ক কী হয়?
ক. অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসমান
খ. অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমান
গ. সর্বদা সমান
ঘ. সর্বদা অসমান
৪৪. বছরের যেকোনো সময় মোট ডেবিট টাকা মোট ক্রেডিট টাকার সমান হয় কেন?
ক. ডেবিট ও ক্রেডিট সমান করার নিয়ম থাকায়
খ. ডেবিট অঙ্ক কম হলে লাভ যোগ করে সমান করা হয়
গ. ক্রেডিট অঙ্ক কম হলে ক্ষতি ধরে সমান করা হয়
ঘ. প্রতিটি লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট সমান অঙ্কের থাকায়
৪৫. হিসাবরক্ষণের মূল ভিত্তি কী?
ক. জাবেদা
খ. মিশ্র দাখিলা পদ্ধতি
গ. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি
ঘ. একতরফা দাখিলা পদ্ধতি
৪৬. লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট উভয়দিক লিপিবদ্ধ করা হয় কোন পদ্ধতিতে?
ক. এক তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে
খ. বিশেষ দাখিলা পদ্ধতিতে
গ. মিশ্র দাখিলা পদ্ধতিতে
ঘ. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে
৪৭. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি কীভাবে পরিমাপযোগ্য হয়?
ক. ব্যাখ্যা আকারে
থ. আর্থিক মূল্যে
গ. তারিখের ক্রমানুসারে
ঘ. ছক আকারে
৪৮. সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হিসাব সংরক্ষণে কোন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়?
ক. একতরফা দাখিলা পদ্ধতি
খ. বিশেষ দাখিলা পদ্ধতি
গ. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি
ঘ. মিশ্র দাখিলা পদ্ধতি
৪৯. জনাব নাজিম একজন খুচরা ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসায়ের সঠিক ফলাফল নির্ণয় করতে কোন পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করবেন?
ক. একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে
খ. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে
গ. বিশেষ হিসাব পদ্ধতিতে
ঘ. বিশেষ দাখিলা পদ্ধতিতে
৫০. মি. সাদানের নিকট থেকে ৫০,০০০ টাকা পাওয়া গেল। এখানে সুবিধা প্রদানকারী পক্ষ কোনটি?
ক. মি. সাদান
খ. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান
গ. নগদান হিসাব
ঘ. যে ব্যক্তি অর্থ পেল
►► আরো দেখো: হিসাববিজ্ঞান বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির হিসাববিজ্ঞান ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post