হিসাববিজ্ঞান ৮ম অধ্যায় : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লেনদেনসমূহকে আমরা নির্দিষ্ট একটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। মানদণ্ডটি হলো নগদ অর্থ। লেনদেনের সাথে নগদ অর্থের সম্পৃক্ততা থাকা এবং না থাকা। যে সকল লেনদেনের দ্বারা নগদ অর্থের প্রাপ্তি ও প্রদান ঘটে ওই লেনদেনসমূহকে একত্রিত করে যে বই প্রস্তুত করা হয় তাই নগদান বই। নগদান বই প্রাথমিক হিসাবের বই, জাবেদার একটি অন্যতম শাখা।
নগদান বইয়ের গুরুত্ব
- নগদ অর্থের যথার্থ লিপিবদ্ধকরণ ব্যবসায়ের গতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি বহু সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
- নগদান বই হতে মোট নগদ প্রাপ্তি ও মোট নগদ প্রদানের পরিমাণ জানা যায়।
- নির্দিষ্ট সময়ে নগদ উদ্বৃত্তের পরিমাণ জানা যায়।
- মোট নগদ ক্রয় ও মোট নগদ বিক্রয়ের পরিমাণ জানা সম্ভব হয়।
- নগদান বইয়ের উদ্বৃত্তের সাথে প্রকৃত হাতে নগদের তুলনা করে ভুল ও গরমিলসমূহ চিিহ্নত করে সংশোধন করা যায়।
- নির্দিষ্ট শ্রেণির নগদান বই প্রস্তুতের মাধ্যমে ব্যাংক সংক্রান্ত লেনদেন ও ব্যাংক উদ্বৃত্তের পরিমাণ জানা সম্ভব।
হিসাববিজ্ঞান ৮ম অধ্যায়
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সাধারণত চার প্রকারের নগদান বই দেখা যায়। নিচে নগদান বইয়ের প্রকারভেদ দেখানো হলো :
একঘরা নগদান বই : যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের মাধ্যমে কোনোরূপ লেনদেন না করে শুধুমাত্র নগদ অর্থের বিনিময়ে লেনদেন করে, তারাই একঘরা নগদান বই সংরক্ষণ করে। ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন নিরাপদ হওয়ায় এরূপ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং একঘরা নগদান বই সংরক্ষণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
দুইঘরা নগদান বই : যেসব প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থ লেনদেনের পাশাপাশি ব্যাংকের মাধ্যমেও লেনদেন সম্পন্ন করা হয় ঐ সকল প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্ট লেনদেন একত্রে লিপিবদ্ধের জন্য দুইঘরা নগদান বই প্রস্তুত করা হয়। নগদ অর্থের প্রাপ্তি প্রদানের পাশাপাশি ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের হ্রাস-বৃদ্ধির পরিমাণ ও ব্যাংক উদ্বৃত্তের পরিমাণ দুইঘরা নগদান বই হতে জানা সম্ভব।
তিনঘরা নগদান বই : নগদ অর্থ ও ব্যাংক সংক্রান্ত লেনদেনের পাশাপাশি দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিকালীন বাট্টা সহকারে তিনঘরা নগদান বই প্রস্তুত করা হয়। তিনঘরা নগদান বই প্রস্তুতের দ্বারা নগদ উদ্বৃত্ত, ব্যাংক উদ্বৃত্ত, মোট প্রদত্ত বাট্টা এবং মোট প্রাপ্ত বাট্টার পরিমাণ জানা যায়।
নগদ প্রাপ্তি জাবেদা : ব্যবসায়ের যেসব লেনদেনের ফলে আর্থিক প্রাপ্তি ঘটে, ঐ সকল লেনদেন নগদ প্রাপ্তি জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
নগদ প্রদান জাবেদা : লেনদেনের দ্বারা নগদ অর্থ প্রদান করা হলে নগদ প্রদান জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। ব্যবসায়ের প্রয়োজনে ব্যাংক হতে উত্তোলন এবং প্রতিষ্ঠান হতে নগদ অর্থ ব্যাংকে জমা, দুটি লেনদেনের কোনটিই নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান জাবেদায় লিপিবদ্ধ হবে না। কারণ এদের দ্বারা ব্যবসায়ের মোট নগদ তারল্যের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকবে। ব্যাংক সুদ মঞ্জুর নগদ প্রাপ্তি জাবেদায় এবং ব্যাংক চার্জ ও ব্যাংক জমাতিরিক্তের সুদ নগদ প্রদান জাবেদায় লিপিবদ্ধ হবে।
কন্ট্রা এন্ট্রি
যে সকল লেনদেনের ফলে নগদান হিসাব ও ব্যাংক হিসাব দুটোই একসাথে প্রভাবিত হয় ওই সকল লেনদেনসমূহকে কন্ট্রা দাখিলা নামে অভিহিত করা হয়। কন্ট্রা দাখিলা নগদান বইয়ের উভয়দিকে পোস্টিং-এর পর খ. পৃ. কলামে ‘সি’ বা ‘ঈ’ বা ‘ক’ লিখে দিতে হবে।
ব্যাংক বিবরণী
ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হলে সর্বপ্রথম ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে হিসাব খোলে তাকে আমানতকারী বলা হয়। আমানতকারীর ব্যাংক হিসাবের পূর্ণ বিবরণ উল্লেখ করে ব্যাংক যে বিবরণী প্রস্তুত করে তাকে ব্যাংক বিবরণী বলে। টাকা বা চেক ব্যাংকে জমা, ব্যাংক হতে চেকের মাধ্যমে উত্তোলন বা পরিশোধ, ব্যাংক সুদ ও ব্যাংক চার্জসহ যাবতীয় তথ্য তারিখ সহকারে ব্যাংক বিবরণী হতে পাওয়া যায়। আমানতকারী চাহিবামাত্র ব্যাংক এই বিবরণী সরবরাহ করে।
ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী
কোনো নির্দিষ্ট তারিখে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার ক্যাশ বইয়ের ব্যাংক ঘরের উদ্বৃত্ত এবং ব্যাংক বিবরণীর উদ্বৃত্তের গরমিলের প্রকৃত কারণ দেখিয়ে উদ্বৃত্তের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য যে বিবরণী প্রস্তুত করে তাকে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী বলা হয়।
নগদান বইয়ের ব্যাংক কলাম ও ব্যাংক বিবরণীর উদ্বৃত্তের মধ্যে গরমিলের কারণ:
- চেক ইস্যু করা হয়েছে কিন্তু তা ব্যাংকে সময়মতো উপস্থাপন করা হয়নি।
- ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনও আদায় হয়নি।
- তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক সরাসরি ব্যাংকে জমা দান।
- চেক প্রত্যাখ্যান।
- ব্যাংক আমানতকারীর পক্ষ হয়ে কোন খরচ পরিশোধ এবং আয় আদায়।
গাণিতিক সূত্রাবলি
১. নগদ তহবিলের পরিমাণ = প্রারম্ভিক নগদ তহবিল + মালিক কর্তৃক নগদ বিনিয়োগ + যাবতীয় (মূলধন ও মুনাফা জাতীয়) নগদ প্রাপ্তি – যাবতীয় (মূলধন ও মুনাফা জাতীয়) নগদ পরিশোধ।
২. ব্যাংক জমার উদ্বৃত্ত = ব্যাংক জমার প্রারম্ভিক উদ্বৃত্ত + যাবতীয় ব্যাংক জমা (যা দ্বারা ব্যাংকে জমার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়) – ব্যাংক কর্তৃক যাবতীয় পরিশোধ।
৩. ব্যাংক জমাতিরিক্তের উদ্বৃত্ত = ব্যাংক জমাতিরিক্তের প্রারম্ভিক ব্যালেন্স + ব্যাংক কর্তৃক যাবতীয় নগদ পরিশোধ – ব্যাংকে যাবতীয় জমা (যা দ্বারা ব্যাংক জমার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়)।
৪. একঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকের যোগফল = প্রারম্ভিক নগদ তহবিল + যাবতীয় নগদ প্রাপ্তি + ব্যাংক কর্তৃক যাবতীয় পরিশোধ।
৫. একঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকের যোগফল = যাবতীয় নগদ পরিশোধ + ব্যাংকে নগদ জমা দান + ব্যাংক কর্তৃক পরিশোধ।
৬. একঘরা নগদান বইয়ের নগদ তহবিল নির্ণয় = প্রারম্ভিক নগদ তহবিল + যাবতীয় নগদ প্রাপ্তি + ব্যাংক কর্তৃক পরিশোধ + যাবতীয় নগদ পরিশোধ – ব্যাংক নগদ জমা – ব্যাংক কর্তৃক পরিশোধ।
৭. নগদ বাট্টার পরিমাণ = প্রদত্ত বাট্টা + প্রাপ্তি বাট্টা।
৮. প্রদত্ত বাট্টা = মোট দেনাদার – পূর্ণ নিষ্পত্তিতে প্রাপ্ত অর্থ।
৯. প্রাপ্ত বাট্টা = মোট পাওনাদার – পূর্ণ নিষ্পত্তিতে প্রদত্ত অর্থ।
১০. নগদে বিক্রয় = নগদে বিক্রয়কৃত পণ্যের সমষ্টি।
১১. নগদে ক্রয় = নগদে ক্রয়কৃত পণ্যের সমষ্টি।
১২. ক্রয় বাট্টা = ক্রয়কৃত পণ্যের মোট পরিমাণ – কারবারি বাট্টার শতকরা হার।
১৩. বিক্রয় বাট্টা = বিক্রয়কৃত পণ্যের মোট পরিমাণ – কারবারি বাট্টার শতকরা হার।
১৪. মোট ক্রয় = নগদে ক্রয় + চেকে ক্রয় + বিলের মাধ্যমে ক্রয় + বাকিতে ক্রয় – ক্রয় ফেরত ক্রয় বাট্টা।
১৫. মোট বিক্রয় = নগদে বিক্রয় + চেকে বিক্রয় + বিলের বিনিময়ে বিক্রয় + বাকিতে বিক্রয় + অলিখিত বিক্রয় + বিক্রয় মূল্যে পণ্য উত্তোলন – বিক্রয় বাট্টা – বিক্রয় ফেরত ইত্যাদি।
নগদান বই প্রস্তুতের গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলি :
ক. প্রথমে প্রশ্ন ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিতে হবে কত ঘরা নগদান বই করতে হবে একঘরা, দুঘরা না তিনঘরা। এক্ষেত্রে
i. যদি বলা থাকে দুইঘরা নগদান বই বা যদি বলা থাকে নগদ ও ব্যাংক সংযুক্ত নগদান বই সেক্ষেত্রে (বাট্টার লেনদেন থাকলেও) দুইঘরা নগদান বই প্রস্তুত করতে হবে।
ii. যদি বলা থাকে উপযুক্ত নগদান বই প্রস্তুত কর, সেক্ষেত্রে বাট্টার লেনদেন থাকলে তিনঘরা আর বাট্টার লেনদেন না থাকলে দুইঘরা নগদান বই প্রস্তুত করতে হবে এবং ব্যাংক সংক্রান্ত লেনদেন না থাকলে একঘরা নগদান বই প্রস্তুত করতে হবে।
খ. ঘটনাটি লেনদেন কিনা তা দেখতে হবে । কেননা যা লেনদেন নয় তা জাবেদাভুক্ত হয় না। আর জাবেদাভুক্ত না হলে নগদানভুক্ত হয় না।
গ. ঘটনাটি লেনদেন বলে বিবেচিত হলে দেখতে হবে ঐ লেনদেনের দ্বারা নগদ / ব্যাংকের অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, না হ্রাস পেয়েছে। কারণসমস্ত রকমের প্রাপ্তি নগদান বইয়ের ডেবিট এবং সমস্ত রকমের পরিশোধ নগদান বইয়ের ক্রেডিট হয়।
ঘ. ঘটনাটি লেনদেন বলে বিবেচিত হলেই তাকে নগদানভুক্ত করা যাবে না কারণ ঘটনাটি দ্বারা নগদ / ব্যাংকের অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি কিংবা হ্রাস না পেলে তা নগদানভুক্ত হবে না। যেমন :
i. ধারে মাল ক্রয়/বিক্রয় করা হলে।
ii. বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য পণ্য বিতরণ করা হলে।
iii. কারবারি বাট্টা।
একঘরা নগদান বই
একঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট ও ক্রেডিট দিকে বিভিন্ন দফা লিপিবদ্ধ করার নিয়মাবলি নিচে আলোচনা করা হলো –
১. প্রারম্ভিক মূলধন : নতুন কারবারে যে নগদ টাকা নিয়ে ব্যবসায় শুরু করা হয় তাকে প্রারম্ভিক মূলধন বলে। উক্ত প্রারম্ভিক মূলধন একঘরা নগদান বইয়ের ডেবিটের দিকে লেখা হবে। যেমন ৫০,০০০ টাকা মূলধন হিসাবে ব্যবসায়ে আনা হয়। নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে মূলধন হিসাব নামে ৫০,০০০ টাকা লিখতে হবে।
২. প্রারম্ভিক নগদ তহবিল : প্রারম্ভিক নগদ তহবিল নগদান বইয়ের ডেবিটের দিকে প্রথম দফা হিসাব লিখতে হবে। পুরাতন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এরূপ নগদ তহবিল থাকতে পারে।
৩. নগদ প্রাপ্ত টাকা : নগদ প্রাপ্তি নগদান বইয়ের ডেবিটের দিকে লিখতে হয়। যে খাতে নগদ টাকা পাওয়া যায় সেটি ডেবিট দিকে বিবরণের ঘরে বসবে। যেমন : কাশেমের নিকট থেকে ২০,০০০ টাকা পাওয়া গেল। নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে কাশেম হিসাব ২০,০০০ টাকা লিখতে হবে।
৪. নগদে পরিশোধ : যে খাতে নগদ টাকা পরিশোধ করা হয় ক্রেডিট দিকে সে খাতটির নাম লিখতে হয়। যেমন : ২০,০০০ টাকার মাল নগদে ক্রয় করা হল। নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে মাল ক্রয় হিসাব ২০,০০০ টাকা লিখতে হবে।
দুইঘরা নগদান বই
দুইঘরা নগদান বই প্রস্তুত করার সময় বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, সকল প্রকার নগদ প্রাপ্তি ও বইয়ের ডেবিট দিকের নগদ ঘরে লিখতে হবে। ব্যাংকে জমা ও দেনাদারের কাছ থেকে চেক প্রাপ্তি ও বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে। সকল প্রকার নগদ পরিশোধ এ বইয়ের ক্রেডিট দিকে নগদ কলামে লিখতে হবে এবং চেকের মাধ্যমে পরিশোধ ক্রেডিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে। দুইঘরা নগদান বইয়ের কতগুলো দফা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. প্রারম্ভিক নগদ তহবিল এবং ব্যাংক জমা : দুইঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যালেন্স বি/ডি বাবদ নগদ জমা নগদ কলামে এবং ব্যাংক জমা ব্যাংক কলামে লিখতে হবে। ব্যাংক জমাতিরিক্ত থাকলে ক্রেডিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে।
২. নগদ প্রাপ্তি : দুইঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে নগদ কলামে লিখতে হবে।
৩. নগদ পরিশোধ : দুইঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিটের দিকে নগদ কলামে লিখতে হবে।
৪. চেকের মাধ্যমে প্রাপ্তি : পণ্য বিক্রয় করে বা দেনাদারের নিকট হতে পাওনা আদায় বাবদ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চেক প্রাপ্তি হলে তা দাগকাটা চেক হিসাবে গণ্য হবে এবং দুইঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাংক কলামে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৫. চেকের মাধ্যমে পরিশোধ : চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করলে দুইঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে। যেমন : ‘করিমকে’ চেকের মাধ্যমে তার পাওনা পরিশোধ করা হলো ৫,০০০ টাকা। ‘করিম’ হিসাব ৫,০০০ টাকা দুইঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে।
৬. চেক পেয়ে তা সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে জমা দিলে : চেক পেয়ে তৎক্ষণাৎ ব্যাংকে জমা দিলে তা দুইঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে।
৭. মালিকের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন : এ টাকা মালিকের নিকট সরাসরি চলে যায় বলে দুইঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে।
৮. একজনের নিকট থেকে চেক পেয়ে তা আরেকজনকে প্রদান : প্রাপ্ত চেকটি নগদ প্রাপ্তি হিসেবে নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে নগদ কলামে বসবে। পরে আবার যাকে দেয়া হলো তার নামে উক্ত টাকা ক্রেডিটের দিকে নগদ কলামে বসবে।
৯. ব্যাংকে নগদ জমা দেওয়া এবং ব্যাংক থেকে অফিসের কাজে উত্তোলন : ব্যাংকে নগদ জমা দিলে তা দুইঘরা নগদান বইয়ের দুদিকে লিখতে হবে।
ব্যাংকে নগদ জমা দিলে একদিকে নগদ টাকা চলে যায় এবং অপরদিকে ব্যাংক জমা বোঝায়। সুতরাং এটি দুইঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাংক কলামে এবং ক্রেডিট দিকে নগদ কলামে লিখতে হবে। ব্যাংক থেকে অফিসের কাজে টাকা উত্তোলন দুইঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে নগদ কলামে লিখতে হবে এবং পুনরায় ক্রেডিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে। এরূপ উত্তোলন একদিকে নগদ জমা অপরদিকে ব্যাংকের জন্য পরিশোধ বোঝায়। এ দুটি বিপরীতমুখী দাখিলাকে কন্ট্রা এন্ট্রি বলা হয়। এ দাখিলার সামনে ‘সি’ সংকেত লেখা হয়।
১০. ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত সুদ : ব্যাংক জমা টাকার উপর সুদ প্রদান করে। এ সুদের জন্য ব্যাংকে জমা টাকা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং ব্যাংক সুদ দুইঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে।
১১. ব্যাংক কর্তৃক চার্জকৃত সুদ ও চার্জ : ব্যাংক কর্তৃক চার্জকৃত সুদ ও চার্জ দুইঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে ব্যাংক কলামে লিখতে হবে। কারণ উক্ত টাকা ব্যাংক মক্কেলের হিসাব থেকে কেটে রাখে।
কন্ট্রা দাখিলা : যে সকল লেনদেনের দ্বারা নগদান হিসাব ও ব্যাংক হিসাব দুটোই একত্রে প্রভাবিত হয় ঐ সকল লেনদেনের জন্য কন্ট্রা দাখিলা দিতে হয়। নগদান ও ব্যাংক উভয়ই সম্পদ শ্রেণির হিসাব। তাই একটি লেনদেনের ফলে নগদান হিসাব বৃদ্ধি পেলে ব্যাংক হিসাব হ্রাস পাবে। অর্থাৎ একটি হিসাব ডেবিট হলে অপরটি ক্রেডিট হবে। এরূপ দাখিলা নগদান বইয়ে লিপিবদ্ধ করার সময় ‘খ: পৃ:’ কলামে ‘সি’ বা ‘ঈ’ বা ‘ক’ লিখতে হয়হিসাববিজ্ঞান: ৮ম অধ্যায়।
তিনঘরা নগদান বই
তিনঘরা নগদান বইয়ের প্রস্তুত প্রণালি অনেকটা দুইঘরা নগদান বইয়ের মতোই। তবে ব্যতিক্রম হচ্ছে দুইঘরা নগদান বইতে প্রাপ্ত বাট্টা ও প্রদত্ত বাট্টা লিপিবদ্ধ না হলেও তিনঘরা নগদান বইতে লিপিবদ্ধ হয়। তবে কারবারি বাট্টা কোন নগদান বইতেই লিপিবদ্ধ হয় না। প্রদত্ত বাট্টা তিনঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে এবং প্রাপ্ত বাট্টা ক্রেডিট দিকে লিপিবদ্ধ হয়।
►► আরো দেখো: হিসাববিজ্ঞান বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির হিসাববিজ্ঞান ৮ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post