হেমাপ্যাথি এ্যালাপ্যাথি গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর : এ গল্পে লেখক সরস ভাষায় গ্রাম্য দুজন হাতুড়ে ডাক্তারের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলেছেন। হোমিওপ্যাথ ডাক্তারের নাম ছিল অঘোর এবং এ্যালোপ্যাথ ডাক্তারের নাম ছিল তোরাপ। ম্যালেরিয়ার প্রকোপে গ্রামের ছেলেবুড়ো সকলে কাতর হলে তোরাপের আয় রোজগারের সুবিধা হতো; আর অঘোর ডাক্তারের কাছে কেউ যেতই না। রোগীর অভাবে অঘোর ডাক্তারের সংসার চলাই দায় হয়ে উঠল।
তাই অঘোর ডাক্তার একদিন গোপনে বাজার থেকে সিরিঞ্জ আর কুইনাইন ইনজেকশন কিনে এনে এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা শুরুর চেষ্টা করলেন। অঘোর ডাক্তার কাঁপা কাঁপা হাতে ইদরিস নামের এক রোগীর কোমরের গভীর মাংসে সিরিঞ্জের সুচ ঢুকিয়ে দিতে গিয়ে সুচটা ভেঙে ফেললেন। ওই সময়ে একটি বুদ্ধিমান ছেলে বিষয়টার ভয়াবহ পরিণতি আঁচ করতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে দাঁত দিয়ে সুচটা বের করে নেয়। লজ্জা, ক্ষোভ, দুঃখ, অপমান ও অভিমানে অঘোর ডাক্তারের চোখে অশ্রু ঝরে। তিনি নিজের ভুলটা বুঝতে পারলেন।
হেমাপ্যাথি এ্যালাপ্যাথি গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—১: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও:
ক. অঘোর ডাক্তার কীভাবে তাঁর রোগীদের চিকিৎসা করতেন?
খ. তোরাপ ডাক্তার কীভাবে তাঁর রোগীদের চিকিৎসা করতেন এবং তাঁর চিকিৎসার সময় কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতো?
১ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. অঘোর ডাক্তার ছিলেন এক ধরনের অদ্ভুত চিকিৎসক, যিনি সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করতেন না। তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করতেন, তবে তার পদ্ধতি ছিল সাধারণত অতিরিক্ত অদ্ভুত এবং বাচ্চাদের জন্য হাস্যকর। তিনি রোগীদের খুব সহজেই সাদা ময়দার মতো গুঁড়ো বা স্পিরিট মেশানো পানির পুরিয়া দিতেন। তিনি রোগীদের বলতেন, ‘যা, খাগে যা,’ যা মূলত রোগীদের নির্দিষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা ছাড়া, শুধুমাত্র প্রেরণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল। কখনও কখনও তিনি রোগীদের টিউবওয়েলের পানিতে স্পিরিট মিশিয়ে পান করতে বলতেন, যার কোনো বাস্তব চিকিৎসাগত উপকারিতা ছিল না।
অঘোর ডাক্তার তাঁর রোগীদের মনে সাহস জোগাতেন, কিন্তু তাঁর চিকিৎসা ছিল প্রায় অব্যবহারিক। যখন রোগীরা জানতো না যে, তাঁদের অসুখ ভালো হবে কি না, তখন অঘোর ডাক্তার হতাশ না হয়ে বলতেন, ‘ভালো হয়ে উপচে পড়বে, যা, ওষুধ খাগে।’ এই ধরনের আশ্বাস দিয়ে তিনি রোগীদের মনে একটা আত্মবিশ্বাস জোগাতেন, যদিও তার চিকিৎসা কার্যকর বা বৈজ্ঞানিক ছিল না। তাঁর চিকিৎসার ধরন ছিল অনেকটা হাস্যরসিক, যা অনেক রোগীকে কোনোভাবে আশ্বস্ত করতো। কিন্তু এই চিকিৎসায় কোনো দৃশ্যমান বা শক্তিশালী ফল পাওয়া যেত না, যা রোগীদের আরও হতাশ করত। অর্থাৎ, অঘোর ডাক্তার তাঁর রোগীদেরকে হাস্যকর উপায়ে আশ্বস্ত করতেন, কিন্তু তাঁর চিকিৎসার আসল কার্যকারিতা ছিল সন্দেহজনক।
খ. তোরাপ ডাক্তার ছিলেন একজন এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক, যিনি বেশ অভিজ্ঞ ছিলেন এবং বিভিন্ন কঠোর চিকিৎসার জন্য পরিচিত ছিলেন। তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল অনেকটা ভয়াবহ এবং কঠোর। তিনি রোগীদের জন্য ইনজেকশন, বড় বড় সিরিঞ্জ ও সুঁই ব্যবহার করতেন, যা রোগীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করত। বিশেষ করে, তাঁর সিরিঞ্জগুলো ছিল খুবই মোটা এবং ভয়ঙ্কর, যা দেখে রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ত। রোগীরা প্রায়ই তাঁর কাছে যাওয়ার সময় কাঁপত, কারণ ইনজেকশনের যন্ত্রণা অনেকটা অস্বস্তির সৃষ্টি করত।
তোরাপ ডাক্তার ম্যালেরিয়া জ্বরের মতো গুরুতর রোগের চিকিৎসা করার জন্য রোগীদের ইনজেকশন দিতেন। কিন্তু তাঁর ইনজেকশন পদ্ধতি ছিল এতটাই কঠোর যে, অনেক রোগী তা সহ্য করতে পারতেন না। কিছু রোগী ইনজেকশনের পর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা অনুভব করতেন, যেমন তারা কালো হয়ে যেত বা তাদের শরীরের কিছু অংশ পঙ্গু হয়ে যেত। কিছু রোগী দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির শিকার হতেন। তাছাড়া, তোরাপ ডাক্তার রোগীদেরকে প্রথমে টাকা দিতে বলতেন এবং তারপরই চিকিৎসা শুরু করতেন, যা রোগীদের জন্য কিছুটা অসম্মানজনক এবং কুৎসিত মনে হতো। এমনকি, অনেক রোগী ছিল যারা ভয়ে তাঁর কাছে আসত, কারণ তাদের কাছে বিকল্প চিকিৎসা পাওয়ার উপায় ছিল না।
এছাড়া, তোরাপ ডাক্তার রোগীদেরকে তাঁর নির্ধারিত উপায় অনুসরণ করার জন্য জোর করতেন, যার ফলে কিছু রোগী তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে বিপদে পড়ত। তাঁর চিকিৎসার সময় ঘটে যাওয়া এইসব সমস্যা এবং অসন্তোষজনক ফলাফলগুলো রোগীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল।
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—২: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও:
ক. অঘোর ডাক্তারের চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে তার রোগীদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
খ. তোরাপ ডাক্তারের চিকিৎসার সময় রোগীরা কী ধরনের শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় থাকত?
২ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. অঘোর ডাক্তার তাঁর অদ্ভুত ও হাস্যকর চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য রোগীদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সাধারণত খুব সহজ, কিন্তু একেবারে অচিন্তনীয় পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতেন। তার চিকিৎসার মূল অঙ্গ ছিল সাদামাটা গুঁড়ো বা পানির পুরিয়া দেওয়া, যা রোগীদের বিশ্বাসে খুব বেশি কার্যকর ছিল না। তবুও, অঘোর ডাক্তারের রোগীরা তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতিতে বেশিরভাগ সময় হতাশ হতো না, বরং তাঁর হাস্যরসাত্মক উপস্থাপনা এবং আশ্বাসে অনেকটা সাহস পেত। তিনি রোগীদের বলতেন, ‘ভালো হয়ে উপচে পড়বে, যা, ওষুধ খাগে,’ যা রোগীদের মনে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস সঞ্চারিত করত।
তবে বাস্তবে, অঘোর ডাক্তার যে চিকিৎসা করতেন, তা কার্যকরী ছিল না এবং এতে রোগীরা কিছুটা বিভ্রান্ত ও হতাশ হত। তার চিকিৎসায় কোনো দৃশ্যমান ফলাফল দেখা যেত না, তবে রোগীরা তাঁর কাছে আসার সময় কিছুটা আশাবাদী হয়ে আসত। বিশেষ করে বাচ্চারা তাঁর চিকিৎসায় খুবই হাস্যকর অনুভূতি অনুভব করত, যা অনেক সময় তাদের সৃষ্টিশীলতা বা মজা লাগত।
অপরদিকে, অনেক রোগী এমন ছিলেন যারা অঘোর ডাক্তারের চিকিৎসার ফলাফল নিয়ে সন্দিহান ছিল, কিন্তু তার মজার আচরণ এবং আশ্বাসের কারণে তারা কিছুটা শান্ত থাকতেন। সব মিলিয়ে, অঘোর ডাক্তারের চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীরা বিশেষভাবে উপকৃত হতো না, কিন্তু তাঁর অদ্ভুত আচরণ এবং আশ্বাসে তারা কিছুটা মনোবল পেত।
খ. তোরাপ ডাক্তার ছিলেন একজন কঠোর এবং অল্প একটু ভীতিজনক চিকিৎসক। তার চিকিৎসার ধরন ছিল অনেকটাই ভয়াবহ, বিশেষ করে তিনি যে ইনজেকশন ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতেন তা রোগীদের মধ্যে তীব্র ভীতি সৃষ্টি করত। তোরাপ ডাক্তার যখন তাঁর রোগীদের চিকিৎসা করতেন, তখন তাদের শারীরিক অবস্থা ছিল যথেষ্ট উদ্বেগজনক এবং মানসিকভাবে তাঁরা ছিল বেশ চাপগ্রস্ত। অনেক রোগী তো ইনজেকশন দেওয়ার জন্য তোরাপ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময়ই কাঁপত, কারণ সিরিঞ্জগুলোর আকৃতি ছিল অনেক বড় এবং যন্ত্রণা সহ্য করা খুব কঠিন ছিল।
এছাড়া, রোগীরা সাধারণত ভয়ে কাঁপত এবং তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি ছিল, কারণ তাদের শরীরের কোনো অংশে ইনজেকশন বা চিকিৎসার কারণে ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা কখনও কখনও অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা দেখা দিত। এই ধরনের চিকিৎসার সময় রোগীদের শারীরিক ও মানসিক চাপ অনেক বৃদ্ধি পেত। অনেক রোগী তখন দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতো, যেমন শরীরের কোনো অংশ পঙ্গু হয়ে যাওয়া বা কালো হয়ে যাওয়া।
রোগীদের মানসিক অবস্থা ছিল বেশ উদ্বেগপূর্ণ, কারণ তারা জানত না যে চিকিৎসা শেষে তারা সুস্থ হবে, না আরও বিপদে পড়বে। তাছাড়া, তোরাপ ডাক্তার রোগীদের জন্য প্রথমে টাকা নিতে বলতেন, যা রোগীদের মনে অস্বস্তি সৃষ্টি করত এবং এই চাপ আরও বাড়িয়ে দিত। অধিকাংশ রোগী তাকে ভয়ে ভয়েই চিকিৎসা করাতে আসত, কারণ তাঁদের কাছে অন্য কোনো উপায় ছিল না। তোরাপ ডাক্তারের চিকিৎসার সময় রোগীরা প্রায়ই শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় থাকত, এবং তারা জানত না যে তাদের ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কতোটা।
আরও দেখো—অষ্টম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে হেমাপ্যাথি এ্যালাপ্যাথি গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post