১. শীতের সকাল
প্রকৃতির অবারিত সৌন্দর্যভেলায় আনন্দ উপাদানের কোনো কমতি নেই। ঘর থেকে দু পা ফেলে বাইরে দৃষ্টি মেললেই চোখে পড়ে নিসগের্গর অমৃত লহরি। তার মধ্যে শীতের সকাল অন্যতম। বাংলাদেশের ঋতুচক্রে শীত আসে রূপ ও রসের ডালি সাজিয়ে। শীতের মোহনীয় নৈসর্গিক রূপ ধরা পড়ে শিশির স্নাত সকাল বেলায়। কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে চারপাশ। সূর্যিমামা মুখ লুকায় লজ্জায়, অভিমানে। ধীরে ধীরে মুখ বাড়িয়ে হাসে সোনালি সূর্য। ঘাসের ডগায় পড়ে থাকা শিশির বিন্দুতে রোদের আলো পড়ে মুক্তোর মতো চকচক করে। শীতের সকালে গ্রামে শুরু হয় পিঠা উৎসব। হিম শীতল ঠান্ডায় ভাপা, দুধপুলি, দুধচিতই, পাটিসাপটা প্রভৃতি পিঠা রসনায় আনে তৃপ্তির স্বাদ। চাদর মুড়ি দিয়ে রোদে বসে পিঠা খাওয়ার সে কী তৃপ্তি! অন্যদিকে গৃহহীন, বস্ত্রহীন মানুষ খোঁজে একটু আশ্রয়, প্রশান্তির উষ্ঞ চাদর। দরিদ্র ছেলেমেয়েরা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রোদের আদরের ভরসায়। রাত জাগে সকালের প্রত্যাশায়, সকাল জাগে সূর্যের স্পর্শ কামনায়। সবকিছু মিলিয়ে শীতের সকাল আমার প্রিয় মুহূর্ত যা অপূর্ব নৈসর্গিক উপাদানে ভাস্বর।
২. বিশ্বায়ন
ইংরেজি ‘Globalization’ এর বাংলা পরিভাষা বিশ্বায়ন। বিশ্বব্যাপী মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রযুক্তিগত নৈকট্য ও অভিন্নতার ধারাকে বলা যায় বিশ্বায়ন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় উন্নতির ফলে পৃথিবী ছোট হয়ে এসেছে। ফলে বিশ্বগ্রাম, বিশ্বনাগরিকত্ব, মুক্ত বাজার, মুক্ত সংষ্কৃতি ইত্যাদি শব্দগুলো সবার মনেই প্রভাব ফেলছে। সবাই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। এভাবেই সকল পেশার মানুষের একে অন্যের খুব কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে অর্থনীতের ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন হচ্ছে বিশ্বকে একক বাজারে পরিণত করে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। উন্নত দেশগুলো তাদের অলস পুঁজি অনুন্নত দেশগুলোতে বিনিয়োগের ফলে আর্থ-সামাজিক ব্যভস্থায় কিছুটা সমতা তৈরি হবে। সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বিশ্বায়নের প্রভঅব পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ ও জাতি তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। তবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাব উন্নত দেশগুলো কিছুটা ফায়দা লুটাবেই, আশার কথা সেক্ষেত্রেও সতর্ক হতে শুরু করেছে অনেক দেশ। শিল্প, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিনিময়ের মাধ্যমে অবশ্যই লাভবান হবে অনুন্নত দেশগুলো। কিন্তু কিছু কিছু দেশীয় প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারপরও বাংলাদেশ গার্মেন্টসসহ আরও কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করে নিজস্ব অর্থনীতি মজবুত করছে। আর নিজস্ব রাজনীতি, সংস্কৃতি, শিল্পের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশ্বায়নকে গ্রহণ করছে প্রকৃত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অংশীদার হিসেবে।
৩. যানজট
বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে প্রতিদিন যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা হলো যানজট। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা যানজটের শহর হিসেবেই বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে সকাল-দুপুর-বিকাল-রাত সব সময়ই যানজট থাকে। দুটি সিটি কর্পোরেশনে বিভক্ত এ মহানগরীর লোকসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। বাস, ট্রাক, কার, অটো-রিকশা ইথ্যাদি মিলিয়ে কয়েক লাখ যান চলাচল করে প্রতিদিন। এসব যানের সুশৃঙ্খলভাবে চলার জন্য প্রশস্ত রাস্তা এখানে খুব বেশি নেই। বাইক আর রিকশার দাপটে সাধারণ মানুষ ফুটপাতেও ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। এর ওপর রাস্তার পার্ক করা হয় কার, অটো বা রিক্শা। এছাড়া থাকে ছোট ছোট দোকানপাট, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালি-রড-সিমেন্ট-ইট-পাথর ইত্যাদি। আবার সারা বছরেই বিভিন্ন সংস্থা ইচ্ছেমতো রাস্তা কাটাকাটি করে। এসব কারণে যানজট অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। দুর্ভোগের শিকার হয় রোগী, ছাত্র-ছাত্রী, অফিসগামী মানুষ। ইতোমধ্যে যানজট নিরসনের জন্য সরকার উড়াল সেতু, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, নতুন রাস্তা বা লিংকরোড, মেট্রোরেল ইত্যাদি প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যভস্থার উন্নয়ন ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হলে যানজট অনেকখানি নিরসন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করেন।
৪. পরিবেশ দূষণ
আমরা যে পরিবেশে বাস করি তা প্রতিমুহূর্তেই দূষিত হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কলকারখানা ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। এগুলো বেশি পরিমাণে বিষাক্ত বাষ্প ও কার্বন মনোক্সাইড উ’পাদন করে বায়ু দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি আমরা যে ভূমিতে বিচরণ করি তাও ময়লা আবর্জণায় দূষিত। শিল্পবর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়। বন-জঙ্গল ও গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে আর এভাবে পারিপার্শ্বিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। মোটরযান, উড়োজাহাজ, গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি ইত্যাদি থেকে শব্দ দূষণ হয়। যা অন্যান্য দূষণ থেকে কম ক্ষতিকর নয়। আমরা দূষণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে না পারলেও এটি ব্যাপক অংশে কমাতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদেরকে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেফ গ্রহণ করতে হবে। আমি মনে করি, দূষণ কমাতে বিভিন্ন ধরনের দূষণ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা দৃষ্টি করা প্রয়োজন। বেশি পরিমাণে বৃক্ষরোপণ বায়ু দূষণ কমানের পূর্বশর্ত এবং কার্যকর পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালিও রক্ষণাবেক্ষণ পানিদূষণ অনেকাংশে কমাতে পারে। সর্বাগ্রে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত এবং রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি থেকে সৃষ্ট শব্দ মাত্রার মধ্যে রাখা উচিত। সর্বোপরি প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে।
৫. বই পড়া
বই পড়া শ্রেষ্ঠ শখ। উৎকৃষ্ট বই মানুষকে প্রকৃত আনন্দ ও সুখ দান করে। বইয়ের মাধ্যমে আমরা সব কালের সব দেশের মহৎ মানুষের সংস্পর্শ লাভ করি। অতীত ঐতিহ্য, নানা চিন্তার অনুশীলন ও বিচিত্র ভাবধারার সাাথে আমরা পরিচিত হই। বিচিত্র ধরনের বইয়ের মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে চেনে, নিজেকে জানে, বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করে। সেসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মানুষ ব্যক্তিজীবন তথা সমাজ ও জাতীয় জীবনকে উন্নত করে, সমৃদ্ধ করে। আমাদের মনের দিগন্ত উন্মোচিত ও প্রসারিত হয়, উদার ও মহৎ হয়। যাবতীয় অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে আমরা বিজ্ঞানমনষ্ক ও প্রগতিশীল হতে পারি কেবল ভালো বইয়ের সংষ্পর্শে এসে। এ কারণে পড়ার জন্য ভঅলো বই, আনন্দদায়ক বই, অধিক বই আমাদেরকে বেছে নিতে হবে। একসঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ৈর বই সংগ্রহ একার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। তাই আমাদের পাঠাগারে যেতে হবে। না থাকলে সমবেত প্রচেষ্টায় পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। তাতে যেমন সাহিত্য, সংষ্কৃতি, দর্শন, বিজ্ঞানের বই থাকবে, তেমনি থাকবে ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, রাজনীতি, নৃতত্ত্ব ও প্রত্নতত্ত্বের বই। বিশেষ করে আমাদের দেশ, জাতি ও সত্তাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বই অবশ্যই আমাদেরকে পড়তে হবে। বই পড়লে আমাদের মনে জাগ্রত হবে মানসিক চেতনা, দেশপ্রেম, মহৎ জীবন-ভাবনা, সত্য-সুন্দরের সাধনা, সৌহাদ্যৃ ও সম্প্রীতি, সময়ানুশীলন ও অধ্যবসায়ের সুদৃঢ় মানসিকতা, যা সুন্দর জীবন গঠনে, সমাজ গঠনে ও দেশ গঠনে উজ্জীবিত করবে। বই আমাদেরকে শোকে সান্ত্বনা, দুঃখে দুঃখ জয়ের ব্রত ওপরাজয়ে বা ব্যর্থতায় সহিষ্ণুতার দীক্ষা দেয়। নির্মল আনন্দ লাভের জন্য বইয়ের বিকল্প নেই।
৬. সত্যবাদিতা
সব কালে সব দেশে সত্যবাদিতা নন্দিত ও প্রশংসিত। সত্যবাদিতা সত্যের শক্তিতে বলীয়ান। এ শক্তি মানুষকে সৎ, নির্লোভ, ত্যাগী জীবনের দিকে পরিচালিত করে। আর মিথ্যা মানুষকে লোভ-লালসা, ভোগ ও স্বার্থপরতায় নিমজ্জিত করে। সত্যবাদী মানুষকে কোনো মূল্যেই কেনা যায় না। ন্যায়, সত্য ও সুন্দরের পূজারি সত্যবাদী সবসময়ই নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান। সে ব্যক্তিত্ববান, নিরপেক্ষ, কর্মবাদী ও পরোপকারী। সে কোনো হুমকি, জবরদস্তি, ভয়-ভীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও সত্য কথা বলতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। নিজের জন্য যেমন, তেমনি অন্যের কল্যাণেও নিজের অর্থ, শ্রম, মেধা ব্যয় করতে কিছুমাত্র ভাবে না। অথচ আমাদের সমাজে একেক সময় মিথ্যাবাদীরা সত্যকে চাপা দিয়ে তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে প্রমাণ করে। কিন্তু তারা জয়ী হলেও তা নিতান্ত সাময়িখ। কেননা সত্যের মহিমায় সত্যবাদিতা চিরকালই ছিল, চিরকালই থাকবে। অবশ্য মানুষ মূলত সৎ, সত্যবাদী। পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে পড়ে হয়তো মিথ্যাচারকে প্রশ্রয় দেয়, কিন্তু তা সব সময়ের জন্য নয়। মহৎ বরণীয় যাঁরা, তাঁরা সবাই ছিলেন সত্যবাদী। সত্যবাদিতাকেই তাঁরা সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। কারণ ব্যক্তি, সমাজ তথা জাতীয় কল্যাণ, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সত্যবাদিতার বিকল্প নেই।
৭. নারী শিক্ষা
বিশ্বের প্রতিটি শিশু মাতৃগর্ভ থেকে থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে চোখ খুলে দেখতে পায় মা ও মাতৃভূমির প্রতিকৃতি। বড় হয় মা ও মাটির স্নেহে। প্রথম শিক্ষাগ্রহণ করে মায়ের কাছ থেকে। শিক্ষিত মা মানেই শিক্ষিত সন্তান। শিক্ষিত সন্তান মানে উন্নত নাগরিক, উন্নত জাতি। তাই একটি জাতির শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে বড় হয়ে ওঠার প্রথম শর্ত শিক্ষিত মায়ের আঁচলে থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা। তাছাড়া নারী ও পুরুষ মানব সমাজের ভারসাম্য ও স্থিতির সমরূপ। তাদের পারস্পরিক সহযোগিতায় সমাজ-সভ্যথার ক্রমবিকাশ ঘটে। ফলে নারীকে পুরুষের সমান শিক্ষার সুযোগ না দিলে সে পিছিয়ে পড়বে। সভ্যতা বিকাশের গতি অনেকটা মন্থর হয়ে পড়বে। তাই প্রত্যেক ক্ষেত্রেই পুরুষ ও নারীকে সমান শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া খুবই জরুরী। উচ্চশিক্ষার ফলে নারী আজ সমাজের উন্নয়নে অর্থনীতি, রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিখ্ষা, সংস্কৃতি, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আজ নারীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। নারী শিক্ষার প্রসার আজ সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অত্যাবশ্যক। নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেয়া উচিত, সেগুলো হলো- ১. নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ২. প্রয়োজনীয় স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা যাতে শুধু নারী/মেয়েরা পড়ালেখা করতে পারে, ৩. নারী নির্যাতন বন্ধ করা, ৪. মেয়েদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবার জন্য পৃথক পরিবহন, ৫. বয়স্ক নারীদের শিক্ষঅর ব্যবস্থঅ করা, ৬. শিক্ষাব্যবস্থা অবৈতনিক ও বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা, ৭. শিক্ষাগ্রহণে নারীদের উৎসাহ প্রদান করা, ৮. উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা। সবশেষে বলা যায়, ‘‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।” একথা মনে রেখে, আমাদের স্বাধীন দেশে নারীকে শিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে হবে। তবেই দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব হবে।
৮. সড়ক দুর্ঘটনা
সড়ক মহাসড়ক এখন দুর্ঘটনার আকর আর যান্ত্রিক যানগুলো ঘাতক-দৈত্য। আমরা কেউ জানিনা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে সুস্থ দেহে ফিরে আসতে পারব কি-না। কেননা অহরহ দুর্ঘটনার বলি হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। কেউ আহত হচ্ছে, কেউ জীবের তরে পঙ্গু হচ্ছে, আবার কেউ হারাচ্ছে অকালে তার মূল্যবান জীবন। একটা জীভন হারিয়ে পরিবারের অনেক মানুষ মারাত্মক দুর্ধশার শিকার হচ্ছে, অনেক পরিকার নিঃস্ব হয়ে পথে বসছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা। খাওয়া-পড়া জোটাতেই হিমশিম খাচ্ছে এসব পরিবারের সদস্যরা। অথচ দুর্ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, কিন্তু কোনো বিচার হচ্ছে না। এমনকি গাড়ির মালিকের পক্ষ থেকে বা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে না কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। ফলে অধিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সেই সমস্ত সাধারণ মানুষ। প্রতিবছর বাংলাদেশে অন্তত দশ হাজার দুর্ঘটনা ঘটে আর এসব দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আহত হয় কমপক্ষে দশ হাজার মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতি হয় প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। অনুন্নত সড়ক, অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, নানামুখী দুর্নীতি, জনগণের অসচেতনতা এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য সড়কগুলোর উন্নয়ন, বাইপাস সড়ক নির্মাণ, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, চালকদের প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন, দুর্নীতিরোধ, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধকরণ, আইন যুগোপযুগীকরণ ও গণসচেতনতা সৃষ্টি অত্যাবশ্যক।
৯. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য একটি অনিবার্য বিষয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে এদেশের নিরীহ ঘুমন্ত মানুষের ওপর আক্রমণ শুরু করলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতার এ ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, যুবকসহ নানা পেশার মানুষের সাথে বাঙালি সেনা, ইপিআর,পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এদেশের সর্বস্তরের মানুষ নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের অত্যাচার নির্যাতন, নির্বিচার হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণসহ নানাভাবে ভারত আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ সচেতন মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে হানাদারদের বিভিন্ন সেক্টরে হত্যা ও পরাজিত করতে থাকে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজিত হয়ে পালাতে থাকে ঢাকার দিকে। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৯৩ হাজার সেনা যৌথবাহিনীর কাছে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয় এবং আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্যকভাবে জানা অবশ্য কর্তব্য।
১০. বিজয় দিবস
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এক মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশের মানুষ হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে তাই এ দিনটি ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পরাজিত হয়। বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা এই দিনটি পেয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের দেশের সাহসী ছেলেরা স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের শহিদ। আমরা তাঁদের সাহসী যুদ্ধ এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের জন্য গর্বিত বিজয় দিবস একটি জাতীয় দিবস এবং প্রতিবছর আমরা এদিনটি সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করি। সচরাচর আমি এই দিনটি ভাবগম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করি। আমি শহিদদের বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া করি। দেশের জন্য ভালো কিছু করতে তাঁদের স্মৃতি আমাকে উৎসাহিত করে। এই মহান বিজয় দিবস অন্যায় অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রতীক।
শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post