সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে বলে বাংলার জনমানুষের আকারে, অবয়বে, চেহারায় এত বৈচিত্র্য। তেমনি নানা ভাষাজাতির আগমনে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতেও বৈচিত্র্য দেখা যায়। তবে গ্রাম ও কৃষিপ্রধান এই দেশে গ্রামীণ জীবনের সংস্কৃতির প্রভাবই বেশি। আবার নদীর খেয়ালি আচরণ আর প্রকৃতির ঋতুবৈচিত্র্য বাঙালি মানসকে বিচিত্রভাবে সমৃদ্ধ করেছে। বাঙালির সংস্কৃতি বুঝতে তার এই বৈচিত্র্যময় পটভূমি লক্ষ রাখা দরকার।
বাংলাদেশের কৃষিকাজ প্রধানত মাটি, মেঘ, রোদ, বৃষ্টি অর্থাৎ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের মাটি খুবই উর্বর। এই উর্বর মাটিতে ভালো ফসল জন্মে। ফসল ও শস্য উৎপাদনের জন্য প্রচুর বৃষ্টির পানির প্রয়োজন হয়। আবার অনেক সময় অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের কৃষি প্রধানত প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।
সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
বাংলা প্রথম মাসের প্রথম দিন। ফরিবা, রাইসা, রুপন্তি, প্রিয়তী সকলে মিলে ঠিক করে তারা রমনার বটমূলে যাবে। সকলে লাল-সাদা রঙের শাড়ি পরবে। সেখানে মেলায় গান ও কবিতা শুনবে। প্রতি বছরই এখানে অনেক মানুষের সমাগম হয়। তারা মুখোশ পরে, গায়, গান অনেকে আবার মুখে বিভিন্ন ছবি আঁকে। সারাদিন আনন্দ উচ্ছ্বাসে কাটায়।
ক. বাংলা প্রথম মাসের নাম কি?
খ. বাংলাদেশের কৃষি প্রধানত কীসের উপর নির্ভরশীল? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বাংলার কোন মেলার কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিকাশে উদ্দীপকের বর্ণিত মেলার ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলা প্রথম মাসের নাম বৈশাখ।
খ. বাংলাদেশের কৃষিকাজ প্রধানত মাটি, মেঘ, রোদ, বৃষ্টি অর্থাৎ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের মাটি খুবই উর্বর। এই উর্বর মাটিতে ভালো ফসল জন্মে। ফসল ও শস্য উৎপাদনের জন্য প্রচুর বৃষ্টির পানির প্রয়োজন হয়। আবার অনেক সময় অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের কৃষি প্রধানত প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।
গ. উদ্দীপকে বাংলার বৈশাখী মেলার কথা বলা হয়েছে।
বৈশাখী মেলা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে হয়ে থাকে। নববর্ষকে উৎসবমুখর করে তুলতেই এ মেলার আয়োজন করা হয়। বৈশাখী মেলা এখন গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন এ মেলা কেবল গ্রামেই নয়, শহরগুলোতেও অত্যন্ত জাঁকজমকভাবেই হয়ে থাকে। নববর্ষের প্রথম দিনে দেশের সর্বত্রই উৎসবের আমেজে ভরপুর থাকে। ছেলেরা বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের ধারক যেমন—কুলা, তবলা, ডুগডুগি ইত্যাদির ছবি সংবলিত পাঞ্জাবি এবং মেয়েরা লাল-সাদা রঙের শাড়ি পরে দিনটিকে বরণ করে।
শহরের মেলায় উৎসবের গান ও কবিতার আসর বসে। মেলায় আসা মানুষ মুখোশ পরে গান গায়, অনেকে আবার মুখে বিভিন্ন ছবি আঁকে। তেমনি উদ্দীপকে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে ফারিবা, রাইসা, রুপন্তি ও প্রিয়তী লাল সাদা রঙের শাড়ি পরে রমনার বটমূলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে তারা গান ও কবিতা শুনবে। কারণ মেলা উপলক্ষে সেখানে প্রতিবছর অনেক নারী-পুরুষ আসে। তারা মুখোশ পরে গান গায়, মুখে বিভিন্ন ছবি আঁকে।
তাদের এসব কার্যকলাপ থেকে এটা সহজেই বলা যায় যে, উদ্দীপকে বাংলার বৈশাখী মেলার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ঘ. বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিকাশে উদ্দীপকের বর্ণিত মেলা তথা বৈশাখী মেলার অবদান অপরিসীম।
বাংলাদেশে যত মেলা হয়ে থাকে তার মধ্যে উদ্দীপকে উল্লিখিত বৈশাখী মেলাই সবচেয়ে বড় এবং উৎসবমুখর। বর্তমানে বৈশাখী মেলা একটি জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ দিনটা সরকারি ছুটির দিন। বৈশাখী উৎসব উদ্যাপন করা হয় নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। এদিন রমনার বটমূলে ছায়ানটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় বৈশাখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এছাড়াও শিশু একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। সারাদেশে শহরে ও গ্রামগুলোতে বৈশাখী মেলা বসে।
মেলাতে বাংলা সংস্কৃতি ও কৃষ্টির এক অপূর্ব সমাবেশ ঘটে। প্রায় সব মেলাতেই যাত্রা, থিয়েটার, পাঁচালি, কবিগান, কীর্তন, বাউল গানের আয়োজন থাকে। অনেক মেলাতে নাগরদোলা, ম্যাজিক, লাঠিখেলা, কুস্তি, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ ইত্যাদি থাকে। এগুলো সবই বাংলা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মেলাতে কুটিরশিল্প, হস্তশিল্প ও মৃৎশিল্পের নানা জিনিস বেচাকেনা হয়। বৈশাখী মেলা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সকল ধর্মের ও বর্ণের সম্মিলিত জাতীয় উৎসব। পহেলা বৈশাখে হালখাতাও বাংলা সংস্কৃতির একটি অতি পুরাতন প্রথা। প্রকৃতপক্ষে বৈশাখী মেলা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
শান্তা ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবারের সন্তান। অন্তরা শান্তার সাথে ময়মনসিংহ তার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সে দেখলো শান্তার বাবা শান্তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করে। শান্তা অন্তরাকে জানালো যে সে পরিবারের ছোট কন্যা হওয়াতে বিয়ের পরও এ বাড়িতে থাকবে এবং সমুদয় সম্পত্তির মালিক হবে। শান্তারা এক সময় গাছপালা, সমুদ্র, পাহাড় ইত্যাদির পূজা করতো। এখন তারা টিভি দেখে। তাদের এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। তাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা এখন ব্যাপকভাবে লেখাপড়া শিখছে ফলে তাদের খাওয়া-দাওয়া পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদিরও পরিবর্তন এসেছে।
ক. ‘গোপী নাচ’ কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসব?
খ. ‘বৈসাবি’ বলতে কী বোঝায়?
গ. শান্তা কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত? উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “শান্তার মতো অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে”—বক্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘গোপী নাচ’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মণিপুরিদের উৎসব।
খ. বাংলাদেশের প্রায় সকল নৃগোষ্ঠীর মানুষ নাচ-গানের মধ্য দিয়ে আনন্দ-উৎসব পালন করে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈশাখ সাংগ্রাই ও বিজু এ তিনটিকে সমন্বয় করে বর্তমানে সবাই একত্রে পালন করে ‘বৈসাবি।’
গ. শান্তা গারো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
গারোদের সমাজ মাতৃসৃত্রীয়। তাদের সমাজে মাতা হলেন পরিবারের প্রধান। সন্তানেরা মায়ের উপাধি ধারণ করে। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ কন্যা পরিবারে সমুদয় সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে। গারো পরিবারের পিতা সংসার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে এবং বিয়ের পর স্ত্রীর বাড়িতে বসবাস করে।
গারো সমাজের মূলে রয়েছে মাহারি বা মাতৃগোত্র পরিচয়। তাই মেয়েরা বিয়ের পর নিজের বাড়িতে বসবাস করে। উদ্দীপকেও দেখা যায়, শান্তার বাবা তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করে এবং তাদের সমাজে ছোট মেয়েদের বিয়ের পর তাদের কর্তৃত্ব ও পরিচয়ে পরিবার পরিচালিত হয়।
ঘ. শান্তাদের নৃগোষ্ঠীর মতো অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে।
উদ্দীপকে শান্তার পরিবার এক সময় গাছপালা, সমুদ্র, পাহাড় ইত্যাদির পূজা করত। বর্তমানে তারা টিভি দেখে, তাদের এলাকার রাস্তাঘাটের অনেক উন্নতি হয়েছে। শান্তারা গারো নৃগোষ্ঠীর অন্তর্গত। তাদের মতো অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর লোকেরাও তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। পূর্বে কৃষিতে তারা জুমচাষ পদ্ধতি ব্যবহার করত বর্তমানে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার করছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের নিজস্ব উৎসব পালন করত।
বর্তমানে তারা টিভি দেখে বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা যেখানে বসবাস করে সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সম্পৃৃক্ততা বাড়ছে। তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাওয়া-দাওয়া ও পোশাক-পরিচ্ছদ ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন করার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রায় উন্নতি ঘটাচ্ছে।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, শান্তাদের মতো অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাও তাদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
সৃজনশীল—৩—নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আজ ঈদের দিন। মাইকেল, পাভেল বড়ুয়া ও সুমন পাল মেহেদীদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। মেহেদীর আম্মু তাদেরকে সেমাই খেতে দেন। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব তাদের। এ সময়ে ঝগড়াতো দূরের কথা, কেউ কাউকে না দেখলে একটা দিনও থাকতে পারেনি। তারা সবাই একটি উৎসবে যোগদান করে আনন্দে মেতে ওঠে।
ক. মানুষের ব্যক্তি ও সমাজজীবনে কোনটি বড় ভূমিকা পালন করে?
খ. বাঙালি সংস্কৃতির বৈচিত্র্যতা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে কোন বিষয়ের ভাব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর মাইকেল, পাভেল, সুমন ও মেহেদী ধর্মীয়ভাবে একে অপর থেকে আলাদা হলেও তাদের মূল্যবোধ একই? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল—৪: নিচের চিত্রদুটি লক্ষ্য করো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
চিত্র-১: ঈদ এবং ঈদের আনন্দ।
চিত্র-২: দূর্গা পূজা
ক. গ্রামীণ জীবন প্রধানত কীসের সাথে জড়িত?
খ. গ্রামীণ সংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়
গ. চিত্র-১ ও চিত্র-২ এ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কোন দিকটি তুলে ধরা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পেতে উদ্দীপকের চিত্র দুটিই যথেষ্ট? যুক্তিপূর্ণ মতামত দাও।
আরও দেখো—সপ্তম শ্রেণির BGS সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য এ অধ্যায় থেকে মোট ৪টি সৃজনশীল উত্তরসহ রয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post