৩য় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর : আখলাকে যামিমা ক্ষতিকর। এর উদাহরণ হল মিথ্যা কথা বলা, অন্যের সমালোচনা করা, মারামারি করা, গালি দেওয়া, কাউকে না বলে তার কিছু নিয়ে যাওয়া, কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস পেয়ে ফেরত না দেওয়া ইত্যাদি। আমরা সর্বদা এই কাজগুলো থেকে বিরত থাকব।
তাই আমরা উত্তম চরিত্র গঠনের জন্য সর্বদা চেষ্টা করব। মহানবি (স.) এর আদর্শগুলো আমাদের জীবনে ধারণ করব। আব্বা আম্মার কথা শুনব। সহপাঠীদের সাহায্য করব। মেহমানের সাথে সুন্দর ব্যবহার করব। মানুষের সেবা করব। জীবে দয়া করব। সব সময় সত্য কথা বলব। সৎ পথে চলব। মিথ্যা কথা বলব না। পাপ কাজ করব না। সবাইকে সালাম দিব।
৩য় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
৫। সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
ক. নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি কী?
উত্তর: নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি হলো মানুষের চরিত্রের সেই বিশেষ গুণসমূহ, যা একজন ব্যক্তিকে সৎ, আদর্শবান ও মানবিক করে তোলে। এর মধ্যে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, সহমর্মিতা, উদারতা, ধৈর্য, বিনয়, শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, সত্যবাদিতা ও অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ অন্যতম।
খ. সহমর্মিতা কাকে বলে?
উত্তর: সহমর্মিতা হলো অন্যের দুঃখ-কষ্ট ও অনুভূতিকে উপলব্ধি করে তাদের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি ও সাহায্যের মনোভাব প্রদর্শন করা। এটি এমন একটি মানবিক গুণ, যা মানুষকে পরোপকারী হতে শেখায় এবং সমাজে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
গ. উদারতার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: উদারতা হলো অন্যের কল্যাণে স্বার্থহীনভাবে সহযোগিতা করার মানসিকতা। এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষকে সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে, দয়া ও সহানুভূতির মাধ্যমে সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে।
ঘ. দেশপ্রেম বলতে কী বুঝায়?
উত্তর: দেশপ্রেম হলো নিজের দেশ ও জাতির প্রতি গভীর ভালোবাসা, সম্মান ও আন্তরিকতাপূর্ণ দায়িত্ববোধ। দেশপ্রেমিক ব্যক্তি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সংস্কৃতি ও উন্নতির জন্য কাজ করে এবং দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করে।
ঙ. দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের কী করা উচিত?
উত্তর: দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের উচিত দেশের আইন-কানুন মেনে চলা, সৎ ও নৈতিক চরিত্র গঠন করা, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা, শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া।
৬। বর্ণনামূলক প্রশ্ন:
ক. পরস্পরের প্রতি সহমর্মী হয়ে যে কাজগুলো করবে তার তালিকা তৈরি কর।
উত্তর: পরস্পরের প্রতি সহমর্মী হয়ে আমরা নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারিÑ
- অসহায় ও দরিদ্রদের সাহায্য করা
- রোগীদের সেবা ও দেখাশোনা করা
- প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা
- শারীরিক বা মানসিকভাবে কষ্টে থাকা ব্যক্তিকে সান্ত¡না দেওয়া
- অসুস্থ বা বৃদ্ধ ব্যক্তিদের সহযোগিতা করা
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও তাদের সহায়তা করা
- শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনে পিছিয়ে থাকা ব্যক্তিদের সাহায্য করা
- বন্ধু বা সহকর্মীদের কঠিন সময়ে মানসিক সমর্থন দেওয়া
- পরিবার ও সমাজে সবার প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হওয়া
- অন্যের সমস্যার প্রতি সংবেদনশীল হওয়া ও যথাসম্ভব সহায়তা করা
এই কাজগুলো করলে সমাজে সৌহার্দ্য ও মানবিকতা বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষে মানুষে পারস্পরিক ভালোবাসা ও ঐক্য গড়ে উঠবে।
খ. মহানবি (স.) এর উদারতা সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর: মহানবি হজরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন উদারতার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি সবসময় মানুষের সঙ্গে সদয় ও সহানুভূতিশীল আচরণ করতেন, হাসিমুখে কথা বলতেন এবং কাউকে তিরস্কার করতেন না। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, মহানবি (স.) দশ বছরে কখনো কোনো কাজে তাকে তিরস্কার করেননি। তিনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিও উদারতা দেখিয়েছেন এবং তাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দিয়েছেন।
একবার এক অমুসলিম ব্যক্তি মসজিদে নববীতে প্রস্রাব করলে সাহাবিরা রাগান্বিত হলে মহানবি (স.) শান্তভাবে জায়গাটি পরিষ্কার করতে বলেন, যা তাঁর অসীম সহনশীলতার প্রমাণ। তাঁর সাহাবিগণও ছিলেন উদার ও পরোপকারী, যার উদাহরণ ছাগলের মাথা সাত ঘর ঘুরে আবার প্রথম ব্যক্তির ঘরে ফিরে আসার ঘটনা। মহানবি (স.) এর উদারতার শিক্ষা আমাদের সমাজে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতা বজায় রাখতে অনুপ্রেরণা দেয়।
গ. মহানবি (স.) এর দেশপ্রেম সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
উত্তর: মহানবি হজরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তিনি তাঁর জন্মভূমি মক্কাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং সেখানে ইসলামের বার্তা প্রচার করেছিলেন। কিন্তু মক্কার কাফিররা তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের ওপর চরম নির্যাতন চালালে তিনি আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করেন। মক্কা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তিনি কষ্টে অশ্রুসজল হয়ে বলেছিলেন যে, স্বজাতির নির্যাতন না থাকলে তিনি কখনো মক্কা ত্যাগ করতেন না। মদিনায় পৌঁছে তিনি একে নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং এর শান্তি ও উন্নয়নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেন।
তিনি মদিনা সনদ প্রণয়ন করেন, যা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাঁর দেশপ্রেম শুধু জন্মভূমির প্রতি আবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি যে ভূখণ্ডে বসবাস করতেন, তার কল্যাণ ও শান্তির জন্যও কাজ করেছেন। মহানবি (স.) আমাদের শিখিয়েছেন, প্রকৃত দেশপ্রেমিক হতে হলে শুধু দেশকে ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং তার উন্নতি ও শান্তির জন্য কাজ করাও অপরিহার্য।
আরও দেখো—তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা টিকচিহ্ন, শূন্যস্থান, মিলকরণ এবং শুদ্ধ-অশুদ্ধ
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের মূল বই থেকে ৩য় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও ইসলাম শিক্ষা বহুনির্বাচনি, শূন্যস্থান, মিলকরণ এবং শুদ্ধ-অশুদ্ধ প্রশ্নোত্তরের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post