৬ষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : কুরআন মজিদ হলো মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী। আর মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)- এর বাণী, কর্ম ও মৌনসম্মতিকে বলা হয় হাদিস। কুরআন মজিদ ও হাদিস শরিফ হলো ইসলামের প্রধান দুটি উৎস। মহানবি (স.) বলেছেন, আমি তোমাদের নিকট দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরলে (মেনে চললে) তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। এ দুটি হলো আল্লাহর কিতাব (আল-কুরআন) ও তাঁর রাসুলের সুন্নত (আল-হাদিস)।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আব্দুর রহিম সুললিত কণ্ঠের অধিকারী হলেও তাড়াতাড়ি কুরআন তিলাওয়াত করেন। ফলে মাঝে মাঝে কিছু ভুল হয়ে যায়। অপরপক্ষে তাঁর সহপাঠী আব্দুল করিমের কণ্ঠস্বর সুমধুর নয়। কিন্তু তিনি দেখে ধীরে ধীরে ও সুস্পষ্টভাবে কুরআন তিলাওয়াত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন।
ক. আল-কুরআনের অবতীর্ণ পূর্ণাঙ্গ প্রথম সূরা কোনটি?
খ. ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর’—আয়াতটি ব্যাখ্যা কর।
গ. আব্দুর রহিমের কুরআন তিলাওয়াতে শরিয়তের কোন বিধানটি পালন হয়নি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আব্দুল করিমের কুরআন তিলাওয়াতের পদ্ধতিটি পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আল-কুরআনের অবতীর্ণ প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা হচ্ছে সূরা আল-ফাতিহা।
খ. ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর।’—এ আয়াতটি দ্বারা জ্ঞান অর্জনে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
আলোচ্য আয়াতটি আল-কুরআনের সূরা ত্ব-হার ১১৪ নম্বর আয়াত। এতে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য মুনাজাত করার কথা বলা হয়েছে। মূলত জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। কেননা শিক্ষা ও জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালাকে চিনতে পারি। জ্ঞানীরাই আল্লাহ তায়ালাকে বেশি ভয় করে। আর জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন।
গ. আব্দুর রহিমের তিলাওয়াতে তাজবিদের বিধানটি পালন করা হয়নি। তাজবিদ শব্দের অর্থ উত্তম বা সুন্দর করা। আল-কুরআনের আয়াতসমূহকে সুন্দর ও শুদ্ধ করে পড়াকে তাজবিদ বলা হয়। অর্থাৎ আল-কুরআনের প্রতিটি হরফকে মাখরাজ ও সিফাত অনুসারে বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করাই হচ্ছে তাজবিদ। তাজবিদ সহকারে কুরআন পড়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। যা আব্দুর রহিমের তিলাওয়াতে অনুপস্থিত।
আব্দুর রহিম সুললিত কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করলেও তিনি তাজবিদের মাখরাজ এবং সিফাত অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াত করেননি। তিনি অশুদ্ধভাবে তাড়াতাড়ি তিলাওয়াত করেন। তাই তার তিলাওয়াতে তাজবিদের বিধানটি পালিত হয়নি।
ঘ. আব্দুল করিমের কুরআন তিলাওয়াতের পদ্ধতিটি একটি উত্তম ইবাদত। আল-কুরআন দেখে দেখে পড়া হচ্ছে নাযিরা তিলাওয়াত। যা আল্লাহর দরবারে একটি উত্তম ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হয়। কুরআন মজিদ দেখে দেখে অথবা মুখস্থ যেভাবেই পাঠ করা হোক তাতে পুণ্য রয়েছে। তবে কুরআন মজিদ দেখে দেখে পাঠ করলে অধিক সওয়াব লাভ করা যায়।
আব্দুল করিমের কণ্ঠস্বর সুমধুর নয়। কিন্তু তিনি দেখে ধীরে ধীরে ও সুস্পষ্টভাবে কুরআন তিলাওয়াত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আর সুস্পষ্টভাবে কুরআন তিলাওয়াত করলে কুরআন আল্লাহর নিকট কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।
সুতরাং বলা যায়, আব্দুল করিমের দেখে ধীরে ধীরে ও স্পষ্টভাবে কুরআন মজিদ পাঠ করার গুরুত্ব অপরিসীম। এভাবে কুরআন তিলাওয়াত তার জন্য আখিরাতে কল্যাণ বয়ে আনবে। আমাদের উচিত যথানিয়মে কুরআন তিলাওয়াত করা।
সৃজনশীল প্রশ্ন—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সাদিয়া ও নাদিয়া একই অফিসে চাকরি করেন। তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উভয়কে ৬ মাসের জন্য একটি কাজের তালিকা দেন। তাঁরা উভয়ে উক্ত কাজ যথাসময়ে সমাপ্ত করার প্রতিজ্ঞা করেন। সাদিয়া নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করলে কর্তৃপক্ষ খুশি হয়ে তাঁকে পদোন্নতি প্রদান করেন। কিন্তু নাদিয়া যথাসময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় তিরস্কারের শিকার হন। ফলে নাদিয়া সাদিয়াকে হিংসা করতে শুরু করল। তখন সাদিয়া বলেন, ‘পরহিংসা নরক বাস, যুগে যুগে সর্বনাশ।’
ক. হাদিস শব্দের অর্থ কী?
খ. মাখরাজ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. সাদিয়ার কর্মে কী প্রকাশ পেয়েছে? পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নাদিয়ার কর্মকাণ্ডের পরিণাম সংশ্লিষ্ট হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হাদিস শব্দের অর্থ কথা বা বাণী।
খ. মাখরাজ বলতে অর্থাৎ ধ্বনির উৎপত্তিস্থান বোঝায়। এটি প্রতিটি আরবি অক্ষরের সঠিক উচ্চারণের স্থান এবং নিয়ম নির্দেশ করে। প্রতিটি অক্ষরের মাখরাজ আলাদা হয়, যেমন কিছু অক্ষরের মাখরাজ গলার গভীরে, কিছু অক্ষরের জিভের সামনে, এবং কিছু দাঁত বা ঠোঁটের কাছাকাছি। কুরআনের সঠিক তিলাওয়াতের জন্য মাখরাজের সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল উচ্চারণ কুরআনের অর্থ পরিবর্তন করতে পারে। তাই, কুরআন তিলাওয়াতে শুদ্ধতা বজায় রাখতে মাখরাজের প্রতি খেয়াল রাখা অপরিহার্য।
গ. সাদিয়ার কর্মে সময়ানুবর্তিতা, নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা এবং সততা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করেছেন, যা তার কর্মদক্ষতা এবং পেশাদারিত্ব নির্দেশ করে। ইসলামে সময়ের গুরুত্ব অনেক বেশি এবং একটি মুসলমানের জন্য সময়ানুবর্তিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাদিয়া তাঁর কাজের প্রতি আন্তরিকতা, সততা এবং কর্তব্যপরায়ণতা প্রদর্শন করেছেন, যার ফলে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন এবং পদোন্নতি লাভ করেছেন। সাদিয়ার কর্মে পরিশ্রম এবং আস্থাশীলতা প্রকাশ পায়, যা একজন আদর্শ কর্মী হিসেবে তাঁর গুরুত্ব এবং মানসিকতা প্রতিফলিত করে।
এছাড়া, সাদিয়া যখন নাদিয়ার হিংসার কথা শুনলেন, তখন তিনি উষ্মা না দেখিয়ে বরং ইসলামিক নৈতিকতা অনুসরণ করেছেন এবং পরহিংসার ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সাদিয়া জানেন যে, পরহিংসা মানুষের আধ্যাত্মিক ক্ষতি এবং সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। তিনি তাঁর কথা দিয়ে নাদিয়াকে হিংসা পরিহার করার এবং ঈমানী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। সাদিয়ার এই আচরণ ধৈর্য, সহানুভূতি, এবং সদ্ভাব প্রকাশ করে, যা ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে, সাদিয়া তাঁর কর্ম এবং আচরণে ইসলামী নৈতিকতা, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি এবং সততা বজায় রেখেছেন।
ঘ. নাদিয়ার কর্মকাণ্ডের পরিণাম সংশ্লিষ্ট হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, তার হিংসা এবং পরহিংসার প্রবণতা তার আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। হাদিসে বলা হয়েছে, নবীজী (সা:) বলেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বিরত থাকবে। কেননা আগুন যেমন কাঠকে পুড়িয়ে দেয়, হিংসাও তেমনি নেক আমলসমূহকে ধ্বংস করে দেয়।’ (আবু দাউদ)।
এটি স্পষ্টভাবে বলে যে, হিংসা কেবল একজন মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি নষ্ট করে না, বরং তার নেক আমলও ধ্বংস করে দেয়। নাদিয়া যখন সাদিয়ার প্রতি হিংসা প্রদর্শন করল, তখন তার ভালো কাজ এবং আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ল। তার মধ্যে যে ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়েছে, তা তাকে ইসলামের মূল নৈতিকতার বিরুদ্ধে পরিচালিত করছে। হিংসার কারণে তার অন্তরে খারাপ মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে, যা তার শান্তি ও নৈতিকতা ধ্বংস করতে পারে।
এছাড়া, হিংসা মানুষের সম্পর্কেও দূরত্ব সৃষ্টি করে। নাদিয়ার মধ্যে হিংসা থাকা তার সহকর্মী সাদিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। ইসলামে সম্পর্কের সৌহার্দ্য এবং ভালোবাসার উপর অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং হিংসা একে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসের আলোকে, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি হিংসা রাখে, আল্লাহ তাকে রহমত থেকে বঞ্চিত করেন’ (সহীহ মুসলিম)। এটির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে যে, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া একে অপরকে হিংসা করার পরিণতি হতে পারে।
অতএব, নাদিয়ার হিংসার পরিণাম হতে পারে আধ্যাত্মিক ক্ষতি, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চনা, এবং পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি। হিংসা ও ঈর্ষা ইসলামি নৈতিকতার বিপরীত এবং এটি একে অপরকে ধ্বংস এবং বিভেদ সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
class 6 islam chapter 3 question answer
সৃজনশীল প্রশ্ন—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতির হিদায়াতের জন্য কিতাব দিয়ে অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। আরব বিশ্বের মানুষ যখন অন্ধকার পথে ধাবিত হচ্ছিল তখন আল্লাহ তা’য়ালা হযরত মুহাম্মদ (স.)কে একটি মূল্যবান কিতাব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান।
ক. জ্ঞানের ভাণ্ডার কোনটি?
খ. আল কুরআনের পরিচয় দাও।
গ. উদ্দীপকে কোন কিতাব নাযিলের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর গুরুত্বের দিক থেকে এ কিতাব অতুলনীয়? মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ধর্মীয় শিক্ষক বললেন, প্রতিটি ভাষারই একটি ব্যাকরণ আছে, তদ্রুপ কুরআন মজিদেরও একটি ব্যাকরণ আছে। এ ব্যাকরণ পাঠ ছাড়া কুরআন তিলাওয়াত শুদ্ধ হয় না। এজন্য আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কুরআন শুদ্ধ করে পড়ার অভ্যাস করতে হবে।
ক. তাজবিদ শব্দের অর্থ কী?
খ. সিফাত কাকে বলে?
গ. উদ্দীপকের ধর্মীয় বিষয় কুরআন মজিদের ব্যাকরণ বলতে কীসের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ধর্মীয় শিক্ষকের শেষোক্ত উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের মূল বই থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post