৩য় অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর : পাণিনি প্রাচীন ভারতীয় লৌহ যুগের সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ। ড. আহমদ শরিফের মতে তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম শতকে বর্তমান ছিলেন। পাণিনি তার ‘অষ্টাধ্যায়ী’ নামক সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থের জন্য বিখ্যাত। তার রচিত গ্রন্থে সর্বপ্রথম গৌড় জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় পাণিনির রচনা আজও আকর হিসেবে বিবেচিত হয়।
৩য় অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : শ্রেণিকক্ষে আশরাফ স্যার জনপদ বিষয়টি পড়ানো শেষে একটি জনপদ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলেন যে, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা, এটি খুব নিচু ও আর্দ্র। নৌ চলাচলের জন্য জায়গাটি ছিল খুব উত্তম। প্রাচীনকালে এটি গুরুত্বপূর্ণ নৌ বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। এটি কোন জনপদ?
ক. চন্দ্রদ্বীপের বর্তমান নাম কী?
খ. প্রাচীন জনপদগুলোর পরিচয় জানা প্রয়োজন কেন?
গ. আশরাফ স্যারের বর্ণনার সাথে প্রাচীন যুগের কোন জনপদের মিল লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত জনপদের কোন দিকটি তোমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : হৃদিতা বাবার সাথে সিলেটের জাফলং বেড়াতে যায়। প্রতি বছর বহু পর্যটক সিলেটের এই পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে আসে। হৃদিতা শুধু সিলেটের জাফলং নয়, সে পরবর্তীতে বগুড়ার মহাস্থানগড়ও ঘুরে আসে।
ক. ইৎসিং কোন দেশের ভ্রমণকারী?
খ. ‘বঙ্গ’ নামের উৎপত্তি হয় কীভাবে?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত হৃদিতা প্রথমে যেখানে বেড়াতে যায় তা প্রাচীন কোন জনপদের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘হৃদিতা পরবর্তীতে যেখানে ঘুরতে যায়, তা ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ’ – বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : অস্ট্রেলিয়া থেকে একদল পর্যটক বাংলাদেশে আসেন। তারা রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর অঞ্চল ঘুরে দেখেন। এখানকার প্রাচীন স্থাপনাগুলো দেখে তারা মুগ্ধ হন। এরপর তারা যান দিনাজপুর ও বগুড়া। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তারা মুগ্ধ হন। বাংলাদেশেও যে এমন সমৃদ্ধ জায়গা থাকতে পারে, এটি তাদের ধারণার বাইরে ছিল।
ক. সমতট অঞ্চলের রাজধানী কোথায় ছিল?
খ. প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর বর্ণনা থেকে কী জানা যায়?
গ. অস্ট্রেলিয় পর্যটকগণ প্রথমে বাংলাদেশের যে সব অঞ্চল ঘুরে দেখেন সেগুলো প্রাচীন বাংলার কোন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পর্যটকদের পরবর্তীতে ঘুরে দেখা অঞ্চল প্রাচীন বাংলার যে জনপদে অবস্থিত তা ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ— উক্তিটির সপক্ষে তোমার মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : রহিম, করিম ও মাসুদ এস.এস.সি পরীক্ষা শেষে কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থিত শালবন বিহার পরিদর্শনে যায়। পরিদর্শনকালে তারা জানতে পারে যে, কুমিল্লা অঞ্চল প্রাচীনকালে একটি জনপদের অংশ ছিল । তারা আরও জানতে পারে উক্ত জনপদ একসময় চব্বিশ পরগনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
ক. চন্দ্রদ্বীপের বর্তমান নাম কী?
খ. প্রাচীন বাংলায় কী কী জনপদ ছিল?
গ. উদ্দীপকটি কোন প্রাচীন জনপদের ইঙ্গিত বহন করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত জনপদটি কেবল কুমিল্লা জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল— তোমার মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : জনাব আছিব সাহেব পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদ সম্পর্কে জানতে একটি ইতিহাস বই ক্রয় করেন । তিনি পাল রাজাদের আমলে যে জনপদটির জানতে পারেন। এক সময় এটি শশাংকের রাজধানী ছিল। শুধু তাই নয়, শশাংকের পরবর্তীকালে আরও অনেকের রাজধানী ছিল এ প্রাচীন জনপদটি।
ক. তৎকালীন কতটি জনপদের কথা জানা যায়?
খ. জনপদ বলতে কী বোঝায়?
গ. আছিব সাহেবের বইটিতে প্রাচীন বাংলার যে জনপদটির প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে -তার বর্ণনা দাও।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উক্ত জনপদটি এক সময় সমগ্র বাংলাদেশকে নিয়েই পরিচিত ছিল? পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মতামত দাও।
এ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো
জনপদ : প্রাচীন যুগে বাংলা (বর্তমানের বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গ) এখনকার বাংলাদেশের মতো কোনো একক ও অখণ্ড রাষ্ট্র বা রাজ্য ছিল না। বাংলার বিভিন্ন অংশ তখন অনেকগুলো ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। আর প্রতিটি অঞ্চলের শাসক যার যার মতো শাসন করতেন। বাংলার এ অঞ্চলগুলোকে তখন সমষ্টিগতভাবে নাম দেয়া হয় ‘জনপদ’।
প্রাচীন বাংলার জনপদ : চার শতক হতে গুপ্ত যুগ, গুপ্ত পরবর্তী যুগ, পাল, সেন প্রভৃতি আমলের উৎকীর্ণ শিলালিপি ও সাহিত্য গ্রন্থে প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর নাম পাওয়া যায়। এসব জনপদ ঠিক কোথায় কতখানি জায়গা জুড়ে ছিল তা বলা যায় না। তবে প্রাচীন প্রাপ্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদান হতে তাদের অবস্থান সম্বন্ধে মোটামুটি আঁচ পাওয়া যায়। এসব জনপদের মধ্যে রয়েছে গৌড়, বঙ্গ, পুণ্ড্র, হরিকেল, সমতট, বরেন্দ্র, তাম্রলিপ্ত, চন্দ্রদ্বীপ প্রভৃতি।
গৌড় : গৌড় নামটি সুপরিচিত হলেও প্রাচীনকালে গৌড় বলতে ঠিক কোন অঞ্চলকে বোঝাত এ নিয়ে প্রচুর মতভেদ আছে। আর যে এলাকা গৌড় বলে অভিহিত হতো কেনই বা সে অঞ্চল এ নামে অভিহিত হতো আজ পর্যন্ত সেটাও সঠিকভাবে জানা যায় নি। পাল রাজাদের আমলে গৌড়ের নাম-ডাক ছিল সবচেয়ে বেশি। উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তখন গৌড়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মুসলমান যুগের শুরুতে মালদহ জেলার লক্ষণাবতী গৌড় নামে অভিহিত হতো। পরে গৌড় বলতে সমগ্র বাংলাকে বুঝাত।
বঙ্গ : বঙ্গ একটি অতি প্রাচীন জনপদ। অতি প্রাচীন পুঁথিতে একে মগধ ও কলিঙ্গ জনপদের প্রতিবেশী বলা হয়েছে। মহাভারতের উল্লেখ হতে বোঝা যায় যে, বঙ্গ পুন্ড্র, তাম্রলিপ্ত ও সুেহ্মর সংলগ্ন দেশ। সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে মনে হয়, গঙ্গা ও ভাগিরথীর মাঝখানের অঞ্চলকেই বঙ্গ বলা হতো।
পুন্ড্র : প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো পুন্ড্র। বলা হয় যে, ‘পুন্ড্র’ বলে এক জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল। বৈদিক সাহিত্য ও মহাভারতে এ জাতির উল্লেখ আছে। পুন্ড্রদের রাজ্যের রাজধানীর নাম পুন্ড্রনগর। পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়। সম্ভবত মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (২৭৩-২৩২ অব্দ) প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্য স্বাধীন সত্তা হারায়। সমৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকে তা পুন্ড্রবর্ধনে রূপান্তরিত হয়েছে। সে সময়কার পুন্ড্রবর্ধন অন্তত বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা জুড়ে বিস্তৃত ছিল।
হরিকেল : সাত শতকের লেখকেরা হরিকেল নামে অপর এক জনপদের বর্ণনা করেছেন। চীনা ভ্রমণকারী ইৎসিং বলেছেন, হরিকেল ছিল পূর্ব ভারতের শেষ সীমায়। আবার কারো কারো লিপিতে হরিকেলের যে পরিচয় পাওয়া যায় তাতে বর্তমান চট্টগ্রামেরও অংশ খুঁজে পাওয়া যায়। সমস্ত তথ্য পর্যালোচনা করে ধরে নেওয়া যায় যে, পূর্বে শ্রীহট্ট (সিলেট) থেকে চট্টগ্রামের অংশ বিশেষ পর্যন্ত হরিকেল জনপদ বিস্তৃত ছিল।
সমতট : পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বঙ্গের প্রতিবেশী জনপদ হিসেবে ছিল সমতটের অবস্থান। এ অঞ্চলটি ছিল আর্দ্র নিম্নভূমি। কেহ কেহ মনে করেন সমতট বর্তমান কুমিল্লার প্রাচীন নাম। আবার কেহ কেহ মনে করেন, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে সমতট গঠিত হয়েছিল।
বরেন্দ্র : বরেন্দ্রী, বরেন্দ্র বা বরেন্দ্র ভূমি নামে প্রাচীন বাংলায় অপর একটি জনপদের কথা জানা যায়। এটিও উত্তর বঙ্গের একটি জনপদ।
তাম্রলিপ্ত : হরিকেলের দক্ষিণে অবস্থিত ছিল তাম্রলিপ্ত জনপদ। বর্তমান মেদিনীপুর জেলার তমলুকই ছিল তাম্রলিপ্তের প্রাণকেন্দ্র। সমুদ্র উপকূলবর্তী এ এলাকা ছিল খুব নিচু ও আর্দ্র।
চন্দ্রদ্বীপ : বর্তমান বরিশাল জেলা ছিল চন্দ্রদ্বীপের মূল ভূখণ্ড ও প্রাণকেন্দ্র। এ প্রাচীন জনপদটি বালেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল।
SSC শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post