ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সমাজ : ব্যক্তি ও গোষ্ঠীজীবনে সংস্কৃতি বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। সংস্কৃতি মানুষের মধ্যে বিশ্বাস, ধারণা, আদর্শ ও মূল্যবোধ জগিয়ে তোলে এবং ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। সংস্কৃতি গোষ্ঠীজীবনের স্বার্থে পারস্পরিক সুসংহত ও সুশৃঙ্খল করে তোলে। সংস্কৃতি ব্যক্তিকে রুচিশীল ও মার্জিত করে। ব্যক্তির বিকাশকে সহজ করে।
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
১. হাজেরা বাবার সাথে গ্রামে বেড়াতে যায়। তার ফুফাতো বোন জুলেখার পছন্দ সকালে পান্তাভাত ও মাছ দিয়ে নাস্তা করা ও ভাটিয়ালি গান শোনা। নাস্তায় মাছ-ভাত খেতে দিলে হাজেরার মন খারাপ হয়। কারণ তার পছন্দ বার্গার, পরোটা মাংস। পড়াশোনা শেষে তার সময় কাটে ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
ক. সংস্কৃতি কী?
খ. সংস্কৃতি উপাদানকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?
গ. জুলেখার মাধ্যমে বাংলাদেশের কোন সংস্কৃতি ফুটে উঠেছে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হাজেরার সংস্কৃতিতে বিশ্বায়নের প্রভাব লক্ষ করা যায় মতামত দাও।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সংস্কৃতি হলো মানুষের জীবনযাপনের এমন একটি সমষ্টি, যা তার আচরণ, বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, জ্ঞান, শিল্পকলা, নৈতিকতা, আইন এবং রীতিনীতির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
খ. সংস্কৃতির উপাদানগুলোকে সাধারণত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো—
১. বস্তুগত উপাদান: এগুলো হলো দৃশ্যমান এবং স্পর্শযোগ্য জিনিসপত্র যা মানুষ তৈরি করে এবং ব্যবহার করে। যেমন—পোশাক, ঘরবাড়ি, যানবাহন, আসবাবপত্র এবং প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।
২. অবস্তুগত উপাদান: এগুলো হলো চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস, আচরণ, রীতিনীতি এবং মূল্যবোধের মতো বিমূর্ত বিষয়, যা একটি সমাজের মানসিক ও নৈতিক দিককে প্রকাশ করে। যেমন—ভাষা, ধর্ম, মূল্যবোধ, আচার-অনুষ্ঠান এবং নীতিমালা ইত্যাদি।
এই দুই উপাদান একসঙ্গে একটি সমাজের সামগ্রিক সংস্কৃতি গঠন করে।
গ. উদ্দীপকে জুলেখার মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। তার পছন্দ পান্তাভাত ও মাছ দিয়ে নাস্তা করা, যা বাংলাদেশের প্রাচীন গ্রামীণ খাদ্যসংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন। এই ধরনের খাবার গ্রামাঞ্চলের মানুষের সাধারণ পছন্দ এবং জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তাছাড়া, জুলেখার ভাটিয়ালি গান শোনার অভ্যাসও বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিকে প্রকাশ করে। ভাটিয়ালি গান মূলত নদীমাতৃক বাংলার মানুষের আবেগ, জীবনযাত্রা ও প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি দেশের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই উপাদানগুলো বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির স্বকীয়তা, সরলতা এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে, যা আধুনিক শহুরে সংস্কৃতির থেকে আলাদা।
ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে হাজেরার সংস্কৃতিতে বিশ্বায়নের প্রভাব খুব স্পষ্ট। তার খাবারের পছন্দ, যেমন বার্গার বা পরোটা-মাংস, বিদেশি খাবার সংস্কৃতির প্রতি তার আকর্ষণকে প্রকাশ করে। এটি বিশ্বায়নের কারণে স্থানীয় খাবার সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাওয়ার একটি উদাহরণ। অন্যদিকে, হাজেরার সময় কাটানোর প্রধান মাধ্যম ইন্টারনেট, যা তাকে প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিক যোগাযোগের সঙ্গে যুক্ত রেখেছে।
বিশ্বায়নের কারণে মানুষ এখন সহজেই বৈশ্বিক সংস্কৃতি, জীবনধারা এবং প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে। হাজেরার ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট যে তার পছন্দ এবং অভ্যাস আধুনিক বিশ্বায়নের প্রভাব দ্বারা গঠিত। এর ফলে তার নিজস্ব স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি মনোযোগ কিছুটা কমে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে তার ফুফাতো বোন জুলেখা পান্তাভাত, মাছ এবং ভাটিয়ালি গানকে উপভোগ করে, হাজেরা সেই সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী নয় এবং তার পরিবর্তে আধুনিক খাবার ও প্রযুক্তিতে মগ্ন থাকে।
এটি প্রমাণ করে যে বিশ্বায়ন শুধু অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রেই নয়, বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতিতেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। এটি কখনো ইতিবাচক হতে পারে, আবার কখনো স্থানীয় সংস্কৃতিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
২. আবির সাহেব রূপনগরের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, আচার-আচরণ, অভ্যাস, বিশ্বাস প্রভৃতির মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। পাশাপাশি তিনি তার ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদেও নান্দনিকতার পরিচয় দেন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আবির সাহেব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
ক. কী ভেদে সংস্কৃতির প্রভাবের পার্থক্য রয়েছে?
খ. ব্যক্তি ও গোষ্ঠীজীবনে সংস্কৃতির প্রভাব ব্যাখ্যা কর
গ. আবির সাহেবের মধ্যে পাঠ্যবইয়ের কোন ধারণার পরিচয় পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত বিষয়টি সর্বদা পরিবর্তনশীল? যুক্তি দাও।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দেশ ও সমাজ ভেদে সংস্কৃতির প্রভাবের পার্থক্য রয়েছে।
খ. ব্যক্তি ও গোষ্ঠীজীবনে সংস্কৃতি বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। সংস্কৃতি মানুষের মধ্যে বিশ্বাস, ধারণা, আদর্শ ও মূল্যবোধ জগিয়ে তোলে এবং ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। সংস্কৃতি গোষ্ঠীজীবনের স্বার্থে পারস্পরিক সুসংহত ও সুশৃঙ্খল করে তোলে। সংস্কৃতি ব্যক্তিকে রুচিশীল ও মার্জিত করে। ব্যক্তির বিকাশকে সহজ করে।
গ. আবির সাহেবের মধ্যে পাঠ্যবইয়ের সংস্কৃতির ধারণার পরিচয় পাওয়া যায়। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ যে সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করে তাকেই সংস্কৃতি বলা হয়। আর মানুষ হচ্ছে সংস্কৃতি সৃজনকারী প্রাণী। একজন ব্যক্তি তার জীবনে যা কিছু করে সবই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ সংস্কৃতি হলো আমাদের গোটা জীবনধারা। মূলত মানুষের চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, আচার-ব্যবহার, অভ্যাস, বিশ্বাস ইত্যাদিকে বোঝানোর জন্য সংস্কৃতি প্রত্যয়টি ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষের অন্তর্গত এবং বহির্জগতের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করাই সংস্কৃতির কাজ। উদ্দীপকেও দেখা যায়, আবির সাহেবের চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা, আচার-আচরণ, অভ্যাস, বিশ্বাস প্রভৃতির মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠেছে। আবির সাহেবের এই ব্যক্তিত্বই সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। অতএব, উদ্দীপকে আবির সাহেবের ব্যক্তিত্ব পাঠ্যবইয়ের সংস্কৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি উক্ত বিষয় অর্থাৎ সংস্কৃতি সর্বদা পরিবর্তনশীল। সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের জীবনযাপনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। মানুষ তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য
সমাজজীবনে কোনো উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে যা কিছু চিন্তা ও কর্ম করে তাই তার সংস্কৃতি। উদ্দীপকের আবির সাহেবের চিন্তা-ভাবনা, আচার-আচরণ, অভ্যাস, বিশ্বাস প্রভৃতির মাধ্যমে তার সংস্কৃতির পাওয়া যায়। এছাড়াও তিনি ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদেও আধুনিক। তিনি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলেন। যুগের সাথে তার এ তাল মিলিয়ে চলা পরিবর্তনশীল সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। তদ্রুপ মানুষ যখন লিখতে শিখল তখন পাথরে খোদাই করে কিংবা গাছের ডালে বা পাতায় লিখত। তারপর কাগজ আবিষ্কৃত হলে কালিতে পাখির পালক ডুবিয়ে লিখত।
এভাবে আস্তে আস্তে মানুষ কাগজের ওপর লিখতে শুরু করল। এরপর মানুষ টাইপ রাইটার আবিষ্কার করে তার মাধ্যমে লেখা শুরু করল এবং সর্বশেষ কম্পিউটার আবিষ্কার করল। মানুষ যে লেখার বিভিন্ন মাধ্যম আবিষ্কার করল এগুলো সবই সংস্কৃতির একটি অংশ। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, যুগে যুগে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, রুচিবোধ, অভ্যাস প্রভৃতির পরিবর্তনের মাধ্যমে সংস্কৃতিরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, সংস্কৃতি সর্বদা পরিবর্তনশীল।
৩. জোলেখা আমেরিকার নাগরিক। ফেসবুকে পরিচয়সূত্রে সে তালহার বন্ধু হয়েছে। তালহার আমন্ত্রণে সে তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। সে দেখল, তালহাদের বাড়িতে পুরুষরা পায়জামা, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি পরে আর মেয়েরা শাড়ি, ব্লাউজ পরে। জোসেফকে আপ্যায়নের জন্য পুকুর থেকে বড় মাছ, পোষা মুরগি আর খেতের ডাল রান্না করেন। আবার জোসেফকে যে ঘরটিতে থাকতে দেওয়া হয় সেটি ছিল টিনের তৈরি। জোসেফ লক্ষ করল, তালহার পরিবারের সকলের মধ্যে আদর্শ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা অত্যন্ত প্রখর।
ক. সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় করে কোনটি?
খ. বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির বর্ণনা দাও।
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের সংস্কৃতির কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উক্ত দিকটি কোনোভাবেই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়”—তুমি কি এ বক্তব্যের সাথে একমত? তোমার মতের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সকল অধ্যায়ের সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post