ভূগোল ও পরিবেশ ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর : পৃথিবী উৎপত্তির সময় একটি জ্বলন্ত বাষ্পপিণ্ড ছিল। এই বাষ্পপিণ্ডের মধ্যে জলীয়বাষ্প, লৌহ, নিকেল প্রভৃতি ধাতু এবং লবণ জাতীয় পদার্থের গ্যাস ছিল। এসকল গ্যাসের ভিতর হালকা গ্যাসগুলো উপরে ওঠে যায় আর ভারি গ্যাসগুলো নিচের দিকে সঞ্চিত হতে থাকে। পৃথিবী যত ঠাণ্ডা হতে থাকে ততই উপরিভাগ কঠিন আকার ধারণ করতে থাকে।
এভাবেই পৃথিবীর কঠিন বহিরাবরণের সৃষ্টি হয়। এর উপরিভাগের সকল স্থান একই রকম নয়। কোথাও সমভূমি, কোথাও মালভূমি আবার কোথাও পর্বত দেখা যায়। একইভাবে ভূঅভ্যন্তরেও রয়েছে বিভিন্ন স্তর যা’ অশ্মমণ্ডল, গুরুমণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডল নামে পরিচিত। এসব স্তর বিভিন্ন শিলা ও খনিজের সমন্বয়ে গঠিত। যেহেতু ভূপৃষ্ঠের উপর মানুষ ও জীবজগতের বসবাস তাই ভূত্বক ও এর অভ্যন্তরের স্তর এবং ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন ভূমিরূপ সম্পর্কে আমাদের জানা একান্ত প্রয়োজন।
ভূগোল ও পরিবেশ ৪র্থ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : কিছুদিন পূর্বে ফিলিপাইনে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। CNN প্রতিবেদন অনুযায়ী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬১৬ কি.মি. গভীরতায়। এছাড়া ফিলিপাইনে ১৯৯০ সালে বড় ধরনের একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যাতে প্রায় ১,৬২১ জন লোক মারা যায়।
ক. কোন শিলা রূপান্তরিত হয়ে কোয়ার্টজাইট উৎপন্ন হয়?
খ. ভূ-পৃষ্ঠের আকস্মিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা করো।
গ. ফিলিপাইনে যে ঘটনাটি ঘটল এ ধরনের ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাটির ফলাফলের ভয়াবহতা কী হতে পারে বলে তুমি মনে করো ।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ :
দৃশ্যকল্প-১: শফিক সাহেব টেলিভিশনে দেখলেন জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি শহর কেঁপে উঠছে এবং মুহূর্তের মধ্যে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছে।
দৃশ্যকল্প-২: রফিক সাহেব জিওগ্রাফিক চ্যানেলে দেখলেন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের একটি স্থানের ফাটল দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরের গলিত পদার্থ বের হয়ে আসছে।
ক. সুনামি অর্থ কী?
খ. সুনামি সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. দৃশ্যকল্প-২ এ ঘটে যাওয়া দুর্যোগটি সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘দৃশ্যকল্প-১’ এবং ‘দৃশ্যকল্প-২’ এর ঘটে যাওয়া দুর্যোগ দুটির ফলাফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : একদল পর্যটক সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপে বেড়াতে যান। তারা লক্ষ করেন, দ্বীপ দু’টির মধ্যবর্তী অংশে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বিরাট এক গহ্বরের সৃষ্টি হয়েছে।
ক. লাভা কী?
খ. আগ্নেয় হ্রদ কীভাবে সৃষ্টি হয়?
গ. পর্যটকদের দেখা গহ্বরটি কোন প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্টি হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উক্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগটি শুধু কুফল নয়, সুফলও বয়ে আনে”– মতামত দাও ।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : শাওন গত বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গিয়েছিল। সে জিপসামের তৈরি একটি শো পিস এবং তার ছোট বোনের জন্য লেখার স্লেট ও খেলার জন্য মার্বেল কিনেছিল।
ক. সুপ্ত আগ্নেয়গিরি কী?
খ. ভুত্বক কেন কঠিন আকার ধারণ করেছে?
গ. শাওনের ছোট বোনের জন্য কেনা জিনিগুলোর গঠন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো।
ঘ. শাওনের কেনা শোপিসটি যে শ্রেণির শিলা দ্বারা গঠিত হয় তার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : অনেকেই রেললাইনে প্রাপ্ত কঠিন পাথরকে শিলা বলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কঠিন, কোমল, বালি, কাদা সবই শিলার অন্তর্গত। অর্থাৎ পৃথিবী যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত তাদেরকেই শিলা বলা হয় । অর্থনৈতিক দিক থেকে শিলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক. শিলা কাকে বলে?
খ. শিলার প্রকারভেদ লেখো।
গ. আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলার পার্থক্য তুলে ধরো।
ঘ. আলোচ্য বিষয়টির অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
এ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো
ভূত্বক : ভূপৃষ্ঠে যে শিলার কঠিন বহিরাবরণ দেখা যায় তাই ভূত্বক। ভূত্বক অশ্বমণ্ডলের উপরিভাগ। ভূত্বকের পুরুত্ব গড়ে ২০ কিলোমিটার। ভূত্বক বিভিন্ন প্রকার শিলা ও খনিজ উপাদানে গঠিত।
অশ্মমণ্ডল : সাধারণভাবে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে ভূঅভ্যন্তরের দিকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লঘু ধাতুর সংমিশ্রণে গঠিত মণ্ডলটিকে অশ্মমণ্ডল বলে।
গুরুমণ্ডল : অশ্মমণ্ডলের নিচে প্রায় ২,৮৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত মূলত ব্যাসল্ট শিলা দিয়ে গঠিত পুরুমণ্ডলকে গুরুমণ্ডল বলে।
কেন্দ্রমণ্ডল : গুরুমণ্ডলের নিচ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত মণ্ডলটিকে কেন্দ্রমণ্ডল বলে। এ স্তর প্রায় ৩,৪৮৬ কিলোমিটার পুরু।
শিলা : ভূত্বক নানা জাতীয় পদার্থ দ্বারা গঠিত। এদের মধ্যে পাথর, নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা প্রধান। ভূত্বক যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত তাদের সাধারণ নাম শিলা।
খনিজ : কতকগুলো মৌলিক উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে মিলিত হয়ে যে যৌগ গঠন করে তাই খনিজ। খনিজ হলো প্রাকৃতিক অজৈব পদার্থ, যার সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন এবং ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম রয়েছে।
আগ্নেয় শিলা : পৃথিবীর আদিম অবস্থা থেকে যে শিলা শীতল ও ঘনীভূত হয়ে কঠিন আকার ধারণ করেছে তাদের আগ্নেয় শিলা বলে। যেমন : গ্রানাইট, ব্যাসল্ট ইত্যাদি।
পাললিক শিলা : পলি সঞ্চিত হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাকে পাললিক শিলা বলে। এ শিলায় পলি সাধারণত স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। বেলেপাথর, কয়লা, চুনাপাথর, কাদাপাথর, কেওলিন পাললিক শিলার উদাহরণ।
রূপান্তরিত শিলা : আগ্নেয় ও পাললিক শিলা যখন প্রচণ্ড চাপ, উত্তাপ এবং রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে রূপ পরিবর্তন করে নতুন রূপ ধারণ করে তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে।
ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন : ভূপৃষ্ঠ বিভিন্ন শিলা দ্বারা গঠিত, যা পরিবর্তনশীল। ভূগর্ভ যতই ঠাণ্ডা হচ্ছে সেখানকার পদার্থের আয়তন ততই হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে ভূগর্ভে সবসময় একটা আলোড়ন চলছে। এই আলোড়নের ফলে সবসময় ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন হচ্ছে।
ভূমিকম্প : প্রাকৃতিক কারণবশত পৃথিবীর কঠিন ভূত্বকের কোনো কোনো অংশ সময়ে সময়ে ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে। এই কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।
আগ্নেয়গিরি : ভূপৃষ্ঠের দুর্বল ফাটল বা সুড়ঙ্গ দিয়ে ভূগর্ভস্থ ধূম, গ্যাস, লাভা, ধূলি, ভস্ম, উত্তপ্ত পাথর খণ্ড, কাদা এবং বিবিধ তরল বা কঠিন ধাতব পদার্থ নির্গত হয়ে ফাটল বা ছিদ্র মুখের চারদিকে জমাট বেঁধে উঁচু মোচাকৃতি যে পর্বতের সৃষ্টি করে তাকে আগ্নেয়গিরি বলে।
সুনামি : ‘সুনামি’ জাপানি শব্দ, যার অর্থ ‘পোতাশ্রয়ের ঢেউ’। কখনো কখনো সমুদ্রতলে ভূমিকম্প অনুভূত হলে সমুদ্রের উপরের পানিতলে প্রচণ্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এই প্রচণ্ড ঢেউগুলো উপকূলে পৌঁছে ব্যাপক জানমালের ক্ষতিসাধন করে। এই জাতীয় সামুদ্রিক ঢেউকে সুনামি বলে।
বিচূর্ণীভবন ও ক্ষয়ীভবন : শিলারাশির চূর্ণবিচূর্ণ ও বিশ্লিষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়াকে বিচূর্ণীভবন বলে। সাধারণত প্রাকৃতিক কারণে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়, অপসারিত হয় না। বায়ুপ্রবাহ, নদীস্রোত ও হিমবাহ দ্বারা চূর্ণবিচূর্ণ শিলা অন্য স্থানে বাহিত হয়। এ প্রণালিকে ক্ষয়ীভবন বলে।
নগ্নীভবন : বিচূর্ণীভবনের সময় শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়। পরে ক্ষয়ীভবন দ্বারা ঐ শিলা অপসারিত হলে নিচে অবিকৃত শিলাগুলো নগ্ন হয়ে পড়ে। এরূপ কার্যকে নগ্নীভবন বলে।
অবক্ষেপণ : বায়ুপ্রবাহ, নদীস্রোত, হিমবাহ প্রভৃতি শক্তির প্রভাবে নানা স্থান থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাগুলো যে প্রক্রিয়ায় কোনো এক স্থানে এসে জমা হয়ে নতুন ভূমিরূপের সৃষ্টি করে তাকে অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় বলে।
নদী : উঁচু পর্বত, মালভূমি বা উঁচু কোনো স্থান থেকে বৃষ্টি, প্রস্রবণ, হিমবাহ বা বরফ গলা পানির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্রোতধারার মিলিত প্রবাহ যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত হয়ে সমভূমি বা নিম্নভূমির উপর দিয়ে কোনো বিশাল জলাশায় বা হ্রদ অথবা সমুদ্রের সঙ্গে মিলিত হয়, তাকে নদী বলে।
দোয়াব : প্রবহমান দুটি নদীর মধ্যবর্তী ভূমিকে দোয়াব বলে।
নদীসঙ্গম : দুই বা ততোধিক নদীর মিলনস্থলকে নদীসঙ্গম বলে।
উপনদী : পর্বত বা হ্রদ থেকে যেসব ছোট নদী উৎপন্ন হয়ে কোনো বড় নদীতে পতিত হয় তাকে সেই বড় নদীর উপনদী বলে। বাংলাদেশের তিস্তা ও করতোয়া হলো যমুনা নদীর উপনদী।
শাখানদী : মূল নদী থেকে যেসব নদী বের হয় তাকে শাখানদী বলে। বাংলাদেশের কুমার ও গড়াই হলো পদ্মা নদীর শাখানদী।
নদী উপত্যকা : যে খাতের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হয় সে খাতকে উক্ত নদীর উপত্যকা বলে।
নদীগর্ভ : নদী উপত্যকার তলদেশকে নদীগর্ভ বলে।
নদী অববাহিকা : উৎপত্তি স্থান থেকে শাখাপ্রশাখার মাধ্যমে যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র বা হ্রদে পতিত হয় সেই সমগ্র অঞ্চলই নদীর অববাহিকা।
পর্বত : ভূপৃষ্ঠের অতিউচ্চ, সুবিস্তৃত এবং খাড়া ঢালবিশিষ্ট শিলাস্তূপকে পর্বত বলে। উৎপত্তিগত বৈশিষ্ট্য ও গঠনপ্রকৃতির ভিত্তিতে পর্বত প্রধানত চার প্রকার। যথা : ১. ভঙ্গিল পর্বত; ২. আগ্নেয় পর্বত; ৩. চ্যুতি-স্তূপ পর্বত ও ৪. ল্যাকোলিথ পর্বত।
মালভূমি : পর্বত থেকে নিচু কিন্তু সমভূমি থেকে উঁচু খাড়া ঢালযুক্ত ঢেউ খেলানো বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিকে মালভূমি বলে। অবস্থানের ভিত্তিতে মালভূমি তিন ধরনের। যথা : ১. পর্বতমধ্যবর্তী মালভূমি; ২. পাদদেশীয় মালভূমি এবং ৩. মহাদেশীয় মালভূমি।
সমভূমি : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অল্প উঁচু মৃদু ঢালবিশিষ্ট সুবিস্তৃত ভূমিকে সমভূমি বলে। উৎপত্তির ধরনের ভিত্তিতে সমভূমিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ক্ষয়জাত সমভূমি ও সঞ্চয়জাত সমভূমি।
এছাড়াও এসএসসি অন্যান্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ সাজেশন রয়েছে কোর্সটিকায়। যা তোমরা বিনামূল্যে পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে ভূগোল সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরগুলো ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post