৫ম অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর : গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে হিমালয়ের পাদদেশে কপিলাবস্তু রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রচারিত বৌদ্ধ ধর্ম প্রাচীন বাংলায় একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। পাল রাজাদের সুদীর্ঘ রাজত্বকালে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা-বিহার ছাড়িয়ে এ ধর্ম আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে।
৫ম অধ্যায় ইতিহাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : রিয়াজ সাহেব ইতালী সফরে গিয়ে রোম নগরীতে একটি বিশাল বৌদ্ধ বিহার দেখে বিস্মিত হন। জনাব রিয়াজ সাহেব ইতালীর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং আরো অনেক ছোট বড় বিহার পরিদর্শন করেন।
ক. জাতি হিসেবে কাদেরকে নিষাদ বলা হতো?
খ. সূর্য দেবতাকে কেন পূজা করা হতো?
গ. রোম নগরীর বৌদ্ধ বিহারের সাথে তোমার দেশে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার কোন বৌদ্ধ বিহারের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. শিক্ষাক্ষেত্রে উক্ত বিহারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বলে কি তোমার মনে হয়? মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : নমিতা তার পিসির মেয়ে শিখার বিয়ের উৎসবে যোগদানের জন্য পলাশপুর গ্রামে যায়। নমিতা দেখে বিয়ের উৎসবে আগত অতিথিরা জাকজমকপূর্ণ পোশাক পরেছে। নারীরা কানে কুণ্ডল, গলায় হার, আংটি, বালা, পায়ে মলও পরেছে। আলতা সিঁদুর ও কুমকুম-এর সাথে সুগন্ধি হিসাবে চন্দন ও কর্পূর ব্যবহার করেছে। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য ভাত, মাছ, মাংস, ক্ষীর ও মসলাযুক্ত পানেরও ব্যবস্থা ছিল।
ক. প্রাচীন বাংলায় কী ধরনের বর্ণ প্রথা প্রচলিত ছিল?
খ. সতীদাহ প্রথা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বাংলার কোন যুগের চিত্র ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সে যুগের গ্রামীণ জীবন ব্যবস্থার সাথে বর্তমানের গ্রামীণ জীবনের কোনো মিল আছে কি? মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : তৃনা নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে সিলেটে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে কৌতূহলবশত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পল্লীতে যায়। সে মেয়েদের রকমারী অলংকার, বিশেষ করে কানে কুণ্ডল, হাতে বালা, পায়ে মল ও সাজসজ্জা দেখে মুগ্ধ হয়। সেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই অলংকার ব্যবহার করে। বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানের উপস্থাপনও সে প্রত্যক্ষ করে। যেমন— নাচ, গান ইত্যাদি। এগুলোতে বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল ব্যবহার করা হয়।
ক. কার রাজত্বকালে ‘অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা’ পুঁথি রচিত হয়?
খ. কীভাবে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়?
গ. উদ্দীপকের বর্ণনার সাথে কোন যুগের অলংকার ও সাজসজ্জার মিল লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উক্ত যুগে বারো মাসে তেরো পার্বণ অনুষ্ঠিত হতো’— উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : মানিক চৌধুরীদের হিন্দু সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি বিদ্যমান। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র ইত্যাদি শ্রেণি রয়েছে। মানিক বইয়ে পড়েছে, প্রাচীন বাংলার একটি সমাজে এমন শ্রেণিব্যবস্থা ছিল। মানিক বলল যে, এখনকার মতো তখনও সমাজে এসব শ্রেণির মধ্যে অনেক বিধি নিষেধ ছিল।
ক. প্রাচীন বাংলার মানুষের ভাষার নাম কী ছিল?
খ. বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয় কেন?
গ. মানিক চৌধুরীর সমাজের সাথে প্রাচীন সমাজের শ্রেণিপ্রথার সামঞ্জস্য দেখাও ৷
ঘ. উদ্দীপকে মানিক চৌধুরীর সবশেষ কথার যথার্থতা নিরূপণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : ছাহাত তার নানার বাড়ি মাধবপুর এ বেড়াতে যায়। দুপুরবেলায় বাসযোগে সে তার নানার বাড়ি পৌঁছালে মামাতো ভাই জুনাঈদ তাকে বার্গার, কোমল পানীয়, হটডগ, ভেজিটেবল রোল ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করে। রাতের খাবারে ছাহাতের জন্য সবজি, মাছ, শুঁটকি ও দধির ব্যবস্থা করা হয়। ছাহাতের নানি রাত জেগে ছাহাতের জন্য নানা রকম পিঠাপুলি তৈরি করেন। প্রতি বেলা খাবারের পর ছাহাতকে মসলাযুক্ত পান দেওয়া হয়।
ক. সোমপুর বিহার কে প্রতিষ্ঠা করেন?
খ. প্রাচীন বাংলার যোগাযোগব্যবস্থা কেমন ছিল? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয়াংশের খাবারগুলো বাংলার কোন যুগের ইঙ্গিত বহন করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত খাবারগুলো উক্ত যুগের খাবার-দাবারের আংশিক প্রতিফলন— বিশ্লেষণ করো।
এ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো
প্রাচীন বাংলার সামাজিক জীবন : মৌর্য শাসনের পূর্বে ব্যাপক অর্থে বাংলার অধিবাসীদের মধ্যে রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে ওঠেনি। এ সময়ে সমাজ বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিল। একে বলা হতো কৌম সমাজ। আর্যদের পূর্বে কিছু কিছু ধর্মচিন্তা পরবর্তী সময়ে এদেশের হিন্দুধর্মে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা যায় কর্মফল, জন্মান্তরবাদ, যোগ সাধনা ইত্যাদি।
প্রাচীন বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা : বাংলা চিরকালই কৃষি প্রধান দেশ। প্রাচীনকালে বাংলার অধিবাসীদের বেশির ভাগ লোকই গ্রামে বাস করত। তারা সবাই মিলে একসাথে গ্রাম গড়ে তুলত। আর গ্রামের আশপাশের ভূমি চাষ করে সংসার চালাত। যারা চাষ করত বা অন্য কোনো প্রকারে জমি ভোগ করত, বিনিময়ে তাদের কতকগুলো নির্দিষ্ট কর দিতে হতো। অনেক সময় ব্রাহ্মণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূমি দান করা হতো। এ জমির জন্য কোনো কর দিতে হতো না।
প্রাচীন স্থাপত্য-ভাস্কর্য ও শিল্পকলা : বাংলাদেশের নানা স্থানে প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রশিল্পের বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে। নানাবিধ কারণে প্রাচীন বাংলার শিল্পকলা ধ্বংস হয়ে গেছে। তবুও নিঃসন্দেহে বলা যায়, প্রাচীন যুগে বাংলার শিল্পকলা খুবই উন্নত ছিল।
স্থাপত্য : প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন অতি সামান্যই আবিষ্কৃত হয়েছে। চীন দেশের ভ্রমণকারী ফা-হিয়েন ও হিউয়েন-সাং-এর বিবরণী ও প্রাচীন শিলালিপি থেকে প্রাচীন যুগে বাংলার কারুকার্যময় বহু হর্ম্য, (চূড়া, শিখা) মন্দির, স্তূপ ও বিহারের কিছু পরিচয় পাওয়া যায়।
ভাস্কর্য : খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে অথবা এর পূর্ব বর্ষ হতে বাংলায় স্থাপত্য শিল্পের পাশাপাশি ভাস্কর্য শিল্পের চর্চাও হতো। প্রাচীন বাংলায় বহু মন্দির ছিল। তাই, ভাস্কর্য শিল্পকলাও যে উন্নত ছিল তাতে সন্দেহ নেই। অনেক স্থানে মন্দির ধ্বংস হলেও তার মধ্যে দেবমূর্তি রক্ষিত হয়েছে। কেবলমাত্র পুরস্করণ, তমলুক, মহাস্থান প্রভৃতি অঞ্চলে গ্প্তু-পূর্ব যুগের কয়েকটি পোড়ামাটির মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।
প্রাচীন বাংলার শিল্পকলার ক্ষেত্রে পাল যুগ স্মরণীয়। নবম থেকে দ্বাদশ শতক-এ চার শতক পর্যন্ত এ যুগের শিল্পকে সাধারণত পাল যুগের শিল্পকলা বলে আখ্যায়িত করা হয়। কারণ এ যুগের শিল্পনীতিই পরবর্তী সেন যুগেও অব্যাহত ছিল। প্রস্তর ও ধাতু নির্মিত দেব-দেবীর মূর্তি এ যুগের শিল্পকলার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলে বিবেচিত হয়। এতে ধর্মভাবের প্রভাবই ছিল বেশি।
চিত্রশিল্প : পাল যুগের পূর্বেকার কোনো চিত্র আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রাচীনকালেই বাংলায় যে চিত্র অঙ্কনের চর্চা ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সাধারণত বৌদ্ধ বিহার ও মন্দিরের দেয়াল সৌন্দর্যময় করার জন্য চিত্রাঙ্কন করার রীতি প্রচলিত ছিল।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য – উদ্ভব ও বিকাশ : আর্যদের প্রাচীন বাংলায় আগমনের পূর্বে এখানে নানা জাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোক বসবাস করত। তারা আর্যভাষী হিন্দু ছিল না। কিন্তু তারা যে কোন ভাষায় কথা বলত তা সঠিকভাবে আজও নির্ণয় করা যায় নি। গোষ্ঠী বিভাগের সাথে মানব জাতির ভাষা বিভাগের সংমিশ্রণ না ঘটিয়ে একথা বলা যায় যে, বাংলার প্রাচীন অধিবাসীরা নানা ভাষা-ভাষী লোক ছিল না।
বাংলার প্রাচীনতম অধিবাসীরা সম্ভবত ছিল অস্ট্রিক গোষ্ঠীর অস্ট্রো-এশিয়াটিক জাতির মানুষ। তারা ব্রহ্মদেশে (মায়ানমার) ও শ্যামদেশের (থাইল্যান্ড) মোন এবং কম্বোজের ক্ষের শাখার মানুষের আত্মীয়। এ জাতীয় মানুষকেই বোধ হয় বলা হতো ‘নিষাদ’ কিংবা ‘নাগ’; আর পরবর্তীকালে ‘কোল্ল’, ‘ভিল্ল’ ইত্যাদি। অনুমান করা যেতে পারে, তাদের ভাষাও ছিল অস্ট্রিক গোষ্ঠীর মোন, ক্ষের শাখার ভাষার মতোই। তবে নয় ও দশ শতকের আগে বাংলা ভাষার রূপ সম্পর্কে জানবার উপায় নেই। চর্যাপদ এক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রাচীনতম সাহিত্যিক নিদর্শন। তাই বলা যায়, আট শতক হতে বারো শতক পর্যন্ত এ পাঁচশত বছরই হলো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীন যুগ।
প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় অবস্থা : প্রাচীন বাংলায় আর্যধর্ম প্রতিষ্ঠার পূর্বে কোন ধর্ম প্রচলিত ছিল, সে সম্পর্কে সঠিক কোনো কিছু জানা যায় না। কারণ সে সকল আদিম অধিবাসীদের ধর্ম-কর্মের ইতিহাস হলো জনপদবদ্ধ প্রাচীন বাংলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকদের পূজা-অর্চনা, ভয়-ভক্তি, বিশ্বাস ও সংস্কারের ইতিহাস। তখন দেশব্যাপী ধর্মের প্রকৃতি একই রকম ছিল না। বরং বর্ণ, শ্রেণি, কৌম, জনপদ ইত্যাদির বিভিন্নতার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ম-কর্মেও বিভিন্নতা দেখা দিয়েছিল। তদুপরি, তাদের প্রাচীন ধর্মমত, সংস্কার, পূজা-পদ্ধতি প্রভৃতি রূপান্তরিত হয়ে আর্যধর্মের সাথে মিলে গিয়েছে।
প্রাচীন বাংলার আচার-অনুষ্ঠান, উৎসব ও রীতি-নীতি : প্রাচীন বাংলায় পূজা-পার্বন ও আমোদ প্রমোদের প্রচুর ব্যবস্থা ছিল। উমা অর্থাৎ দুর্গার অর্চনা উপলক্ষে বরেন্দ্রে বিপুল উৎসব হতো। বিজয়া দশমীর দিন ‘শাবোরৎসব’ নামে একপ্রকার নৃত্যগীতের অনুষ্ঠান হতো। এসব পূজা-পার্বণে অনুষ্ঠিত নানাবিধ আমোদ-উৎসব ব্যতীত হিন্দুধর্মের অনেক লৌকিক অনুষ্ঠানও প্রাচীনকালের সামাজিক জীবনে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছিল।
SSC শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন সাজেশান্স ও নোট পেতে আমাদের Facebook Page এ Like দিয়ে রাখো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post