ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর (PDF)

ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের নাগরিক : রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকলেই নাগরিক নয় কারণ নাগরিকত্ব লাভের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত এবং আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। অনেক দেশে নাগরিকত্ব পেতে হলে জন্মসূত্রে, পিতামাতার নাগরিকত্ব বা অন্য আইনি শর্ত পূরণ করতে হয়। অনেক শরণার্থী বা অভিবাসী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন না করেও বসবাস করতে পারেন, তবে তারা নাগরিক হন না। কিছু জাতিগত বা সামাজিক গোষ্ঠীও রাষ্ট্রে বৈষম্যের কারণে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত থাকতে পারে। এই সব কারণেই রাষ্ট্রে বসবাসকারী সবাই নাগরিক নন।

ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

১. জাকির সাহেব ও আফরিন দম্পতি চাকরি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছরের অধিক সময় ধরে বসবাস করছেন। সেখানে তাদের ছেলে স্বননের জন্ম হয়। তারা সেখানে নিজেদের আয় থেকে একটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ক্রয় করেন। সরকারকে নিয়মিত আয়কর দেন। দেশের আইনকানুন মেনে চলেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি তহবিল পরিচালনা করেন। এই দম্পতি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

ক. নাগরিক কিসের পরিচয়ে নাগরিকত্ব লাভ করে?
খ. রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকলেই নাগরিক নয় কেন?
গ. জাকির সাহেবের নাগরিকত্ব লাভের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জাকির সাহেব ও স্বননের নাগরিকতার পার্থক্য বিশ্লেষণ কর।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. নাগরিক তার জন্মস্থান, আইন, এবং রাষ্ট্রের অধিকারী হওয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভ করে।

খ. রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকলেই নাগরিক নয় কারণ নাগরিকত্ব লাভের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত এবং আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। অনেক দেশে নাগরিকত্ব পেতে হলে জন্মসূত্রে, পিতামাতার নাগরিকত্ব বা অন্য আইনি শর্ত পূরণ করতে হয়। অনেক শরণার্থী বা অভিবাসী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন না করেও বসবাস করতে পারেন, তবে তারা নাগরিক হন না। কিছু জাতিগত বা সামাজিক গোষ্ঠীও রাষ্ট্রে বৈষম্যের কারণে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত থাকতে পারে। এই সব কারণেই রাষ্ট্রে বসবাসকারী সবাই নাগরিক নন।

গ. উদ্দীপকের জাকির সাহেব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন এবং তিনি দেশের আইন-কানুন মেনে চলছেন। এ জন্য তিনি নাগরিকত্ব লাভের প্রক্রিয়ায় যোগ্য হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব লাভের জন্য সাধারণত দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছেÑপ্রাকৃতিকীকরণ (Naturalization) এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব। যেহেতু জাকির সাহেব জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক নন, তাই তিনি প্রাকৃতিকীকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভ করেছেন।
প্রাকৃতিকীকরণ প্রক্রিয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে, যেমন:

• নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত ৫ বছর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অব্যাহতভাবে বসবাস করা।
• নিয়মিত আয়কর প্রদান এবং দেশটির আইনের প্রতি আনুগত্য।
• ইংরেজি ভাষা ও মার্কিন সংস্কৃতি সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান।
• যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক আইন সম্পর্কে ধারণা।
• আইনজীবি বা অন্য কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন এবং সাক্ষাৎকার প্রদান।

এছাড়া, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য তহবিল পরিচালনা ও নিয়মিত কর প্রদান ইত্যাদি জাকির সাহেবের নাগরিকত্বের আবেদনকে সমর্থন করে এবং তার নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের প্রমাণ।

ঘ. জাকির সাহেব এবং তার ছেলে স্বননের নাগরিকত্বের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো তাদের নাগরিকত্ব লাভের প্রক্রিয়া ও ভিত্তি।

১. জাকির সাহেবের নাগরিকত্ব: জাকির সাহেব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বসবাস করছেন এবং তিনি প্রাকৃতিকীকরণের (Naturalization) মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। এর জন্য তিনি নির্দিষ্ট সময় ধরে দেশটিতে বসবাস, নিয়মিত আয়কর প্রদান এবং মার্কিন সংস্কৃতি ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। তিনি নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন এবং রাষ্ট্রের কাছে অনুমোদন পেয়েছেন।

২. স্বননের নাগরিকত্ব: স্বনন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার জন্মসূত্রে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেছেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, যে ব্যক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করে, সে ব্যক্তি নাগরিক হয়। অর্থাৎ, স্বনন কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভ করেননি, তিনি জন্মসূত্রে স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন নাগরিক।
এছাড়া, জাকির সাহেব প্রাকৃতিকীকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভ করলেও, স্বনন জন্মসূত্রে নাগরিক হিসেবে জন্মেছেন, যা তাদের নাগরিকত্বের পার্থক্য তৈরি করে।

২. বাংলাদেশের অধিবাসী সজীব সিঙ্গাপুরে মেরিন সার্ভিসে কর্মরত অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ান মেয়েকে তিন বছর হয় বিয়ে করেছেন। সিঙ্গাপুর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকার একটি জাহাজে করে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর পূর্বেই জাহাজে তাদের মেয়ে মারিয়ার জন্ম হয়। বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসা সজীবের ছোটো ভাই সাগর গত নির্বাচনে সেখানে ভোট দিতে পারেনি।

ক. বাংলাদেশের প্রথম সরকার কখন গঠিত হয়?
খ. দ্বৈত-নাগরিকত্ব বলতে কী বোঝায়?
গ. মারিয়া কোন দেশের নাগরিকত্ব লাভ করবে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘সজীব বা সাগরের নাগরিক অধিকার ভিন্ন’—উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. বাংলাদেশের প্রথম সরকার ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত হয়।

খ. দ্বৈত-নাগরিকত্ব বলতে একটি ব্যক্তি একাধিক দেশের নাগরিকত্ব ধারণ করা বোঝায়। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি একাধিক দেশের নাগরিক হতে পারে এবং প্রতিটি দেশের নাগরিক হিসেবে সেই দেশের অধিকার, দায়িত্ব এবং সুবিধা লাভ করতে পারে। দ্বৈত-নাগরিকত্বের অধিকারী ব্যক্তি দুই বা তার অধিক দেশের আইন ও নিয়ম অনুসরণ করে, এবং দুই দেশের নাগরিক হিসেবে দুটি দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকতে পারে।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত মারিয়া অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছে, তাই সে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব লাভ করবে। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের আইন অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করে এবং তার বাবা-মা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক না হন, তবেও সে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পেতে পারে। এই আইনটি ‘jus soli’ বা ভূমি অধিকার (birthright) আইন হিসেবে পরিচিত। এর মানে হল, যে ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ার ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করবে, সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হবে।

এছাড়া, মারিয়ার বাবা-মা বাংলাদেশের নাগরিক (সজীব) এবং তার মা সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তাই মারিয়া দুই দেশের নাগরিকত্বও পেতে পারে, যা দ্বৈত-নাগরিকত্ব হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের নাগরিকত্বের আইন অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশি নাগরিকের সন্তানেরা সাধারণত বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করে, যদি না তারা অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব পায়। এর ফলে, মারিয়া বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হতে পারে, অর্থাৎ দ্বৈত নাগরিক হয়ে উঠবে।

এভাবে, মারিয়া দুটো দেশের নাগরিকত্ব পেয়ে, দুটি দেশের অধিকার ও সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

ঘ. সজীব এবং সাগরের নাগরিক অধিকার ভিন্ন কারণ তাদের নাগরিকত্বের অবস্থা আলাদা। সজীব বাংলাদেশের নাগরিক হলেও, তিনি সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন এবং তার স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ান। সজীবের নাগরিক অধিকার বাংলাদেশি হিসেবে প্রযোজ্য, তবে তিনি সিঙ্গাপুরে থাকার কারণে সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী কিছু সুবিধা পেতে পারেন। তার নাগরিক অধিকার বাংলাদেশে প্রযোজ্য, যেমন ভোট দেওয়ার অধিকার এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী অন্যান্য সুবিধা।

অন্যদিকে, সাগরের নাগরিক অধিকার সজীবের তুলনায় ভিন্ন। সাগর বাংলাদেশের নাগরিক হলেও, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে গেছেন এবং সেখানে তার স্থায়ী বসবাস বা নাগরিকত্ব হয়নি। অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দেওয়ার অধিকার না পাওয়ার কারণ হলো, সাগর অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক নন। অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দেওয়ার জন্য নাগরিক হতে হয়, এবং নাগরিকত্বের ভিত্তিতে সাগর সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত।

এভাবে, সজীব এবং সাগরের নাগরিক অধিকার আলাদা, কারণ তাদের নাগরিকত্বের অবস্থান এবং বসবাসের দেশ ভিন্ন, এবং একে অপরের দেশে নাগরিক অধিকার সীমাবদ্ধ।

৩. সৌমিকের দেশটি একটি স্বাধীন দেশ। এদেশে মন্ত্রিপরিষদ বা সংসদীয় সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। দেশটিতে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা প্রচলিত এবং সরকার জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়। এছাড়া সরকারের সকল নিয়মকানুন ও আদেশ-নিষেধ জনগণ মেনে চলে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল দেশটির প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল।

ক. রাষ্ট্র কী?
খ. নাগরিক বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে সৌমিক যে দেশের নাগরিক সেটির ভূখণ্ডগত ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর সৌমিকের দেশটি একটি রাষ্ট্র? পাঠ্যবইয়ের আলোকে তা ব্যাখ্যা কর।

Answer Sheet

আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সকল অধ্যায়ের সমাধান

ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।